হযরত উমর রা. সম্পর্কিত মনে রাখার মতো কিছু কথা – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম




হযরত উমর রা.ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। উমর ইবনুল খাত্তাব, যিনি উমরে ফারুক নামেও পরিচিত। আবু হাফস নামে তাকে ডাকা হতো।

হযরত উমরা রা. এর বসবাসের বাড়ী বা এলাকাকে এখন জবলে উমর নামে পরিচিত।

হযরত উমর রা. ইসলাম কবুল করেন নাবুয়াতের ৬ষ্ট বছরে-হযরত হামযা রা. ইসলাম কবুল করার ৩দিন পর।

হযরত উমরা রা. এর জন্য নবী সা. দোয়া করেছিলেনঃ
اللهم أعز الإسلام بأحب الرجلين إليك، بعمر بن الخطاب أو بعمرو بن هشام
اللهم هذا عمر بن الخطاب، اللهم أعز الإسلام بعمر بن الخطاب

সূরা ত্বা-হা পাঠ করার পর হযরত উমরা রা. এর উক্তিঃ
ما أحسن هذا الكلام وأكرمه؟ دلوني على محمد ** ما أطيب هذا الكلام وأحسنة

হযরত উমরা রা. এর ইসলাম কবুলের ভাষাঃ
أشهد أن لآ إله إلا الله وأنك رسول الله

ইসলাম কবুলের পর আবু জেহেলকে উদ্দেশ্য করে হযরত উমর রা. যে উক্তি করেনঃ
جئت لأخبرك أني قد آمنت بالله ورسوله محمد وصدقت بما جاء به.

হাজারে আসওয়াদকে উদ্দেশ্য করে হযরত উমর রা. যে উক্তি করেনঃ
إني أعلم أنك حجر لا  تضر ولا تنفع ولولا أني رأيت النبي (صـ) يقبلك ما قبلتك.
রাসূলে করীম সা. এর নবুয়াত প্রাপ্তির সময়ে গোঠা কুরাইশ বংশে মাত্র সতের জন  লেখা-পড়া জানতেন। তাদের মধ্যে হযরত উমর রা. ছিলেন একজন।

বদরের যুদ্ধে কুরাইশ বংশের প্রতিটি শাখা থেকে লোকজন অংশ গ্রহণ করে। কিন্তু আদিশাখা-যা হযরত উমর রা. এর বংশীয় শাখা-থেকে একটি লোকও অংশ গ্রহণ করেনি। হযরত উমর রা. এর প্রভাবেই এমনটি হয়েছিল। ঐ যুদ্ধে ইসলামের পক্ষে হযরত উমর রা. এর গোত্রের ১২জন লোক অংশ নেয়। যে যুদ্ধে হযরত উমরা রা. নিজ হাতে তার মামা আসী ইবনে হিসামকে হত্যা করেন।


হযরত উমর রা. এর স্মৃতি চারণ মূলক উক্তিঃ
   এমন এক সময় ছিল যখন আমি পশমী জামা পরে এই মাঠে প্রখর রোদে খাব্বাবের উট চরাতাম। খাব্বাব ছিলেন অত্যন্ত কঠোর ও নিরস ব্যক্তি। ক্লান্ত হয়ে একটু বিশ্রাম নিলে পিতার হাতে নির্মম প্রহৃত হতাম। কিন্তু আজ আমার এমন দিন এসেছে যে, এক আল্লাহ ছাড়া আমার উপর কর্তৃত্ব করার আর কেউ নেই।

⏩ হযরত উমর রা. এর একটি ঘটনা এবং

একদিন এক সাহাবীর সাথে তার স্ত্রী রাগারাগি করছিলো।এইটা আনো নাই কেনো? ঐটা করসো কেনো? এত ভুলে গেলে চলে নাকি? ইত্যাদি বলে চিল্লাচিল্লি করছিলো।  তো ঐ সাহাবী একপর্যায় বিরক্ত হয়ে হজরত ওমর(রা:) বাসায় গেলো তার স্ত্রীর নামে নালিশ করতে।
যখন তিনি হজরত ওমর(রা:) বাসার দরজার সামনে গিয়ে নক করতে যাবে ঠিক তখনি তিনি শুনতে পেলেন, ওমর(রা:) স্ত্রী উনার ওপর রাগারাগি করছে,আর ওমর(রা:) চুপচাপ হয়ে তার রাগারাগি সহ্য করছে, প্রতিউত্তরে কিছুই বলছেনা!!! তখন ঐ সাহাবী ভাবলো উনাকে নালিশ দিয়ে আর কি হবে উনি নিজেইতো আমার মত অবস্থায় আছে। তখন ঐ সাহাবী ওমর(রা:)কে আর ডাক না দিয়ে ফিরে চলে যাচ্ছিলো। ঠিক ঐসময় হজরত ওমর(রা:) বাসা থেকে বের হলেন এবং
তাকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলেন। ঐ সাহাবী যখন দাড়ালো তখন ওমর(রা:) তাকে নিজের বাসায় আসার কারন জিজ্ঞাসা করলো? তখন ঐ সাহাবী পুরো ঘটনা খুলে বললো আর সাথে এটাও জিজ্ঞাস করলো যে হে আমিরুল মুমেনীন, একটা বিষয়ে আমি খুব অবাক হচ্ছি যে, আপনার নাম শুনলে যেখানে শত্রুদের ভেতর কাঁপুনি শুরু হয়ে যায়! আপনি যেখানে মুসলমানদের খেলাফতের নেতা! আপনার কথা যেখানে আমাদের ভেতর বজ্রপাতের হুংকারের মত দিলে আঘাত হানে! সেই আপনাকে যখন আপনার স্ত্রী বকাবকি করছিলো, তখন আপনি চুপচাপ হয়ে ছিলেন কেনো???
তখন ওমর(রা:) বললেন, দেখো ভাই আমরা সারাদিন নানারকম প্রয়োজনে বাইরে থাকি, দরকার না থাকলেও বন্ধুদের সাথে গল্প করি,আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা সংসার চালানোর জন্য যা লাগে সেটা এনে দিয়েই আমাদের কাজ শেষ। কিন্তুু আমাদের স্ত্রীরা সারাদিন ঘর-সংসারের কাজ করে, এরপর আবার আমাদের সন্তানদের দেখাশোনা করে,তাদের গোসল করানো হতে শুরু করে তাদের বুকে জড়িয়ে ঘুম পাড়ানোর কাজটাও একাই করে!! পুরো সংসারটা একাই গুছায় রাখে!! এতসব কাজ করতে করতে তারা একঘেয়া হয়ে যায়। তখন তারা যদি আমাদের ওপর কিছুটা রাগারাগি বা চিল্লাচিল্লি করে, আমাদের সেটা মেনে নেয়াই উচিৎ কারন আমরা ছাড়া আর তাদের আছে কে? তারা তাদের কষ্ট আমাদেরকে না বললে আর কাকে বলবে? সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর তাদের মন-মেজাজ ভালো নাই থাকতে পারে। আর তাছাড়াও তাদের যে হক তারা আমাদের কাছে প্রাপ্য আমরাতো সেটাও পরিপূর্ণ ভাবে তাদেরকে দিতে পারিনা তাইনা? তাই তারা যখন আমাদের সাথে কিছুটা রাগারাগি করে আমাদের সেটা মেনে নেয়াই উত্তম। আর আমি সারা মুসলমানদের খলিফা হতে পারি কিন্তু আমার স্ত্রীর কাছে আমি শুধু তার স্বামী। আর এটা কখনোই উচিৎ নয় যে আমি আমার বাইরের পদমর্যাদা আমার স্ত্রীর কাছেও আশা করবো!!!
আমাদের সমাজে এমন অনেক পুরুষ আছে যারা স্ত্রী যদি ২-১টা কথা বলে এতেই ক্ষেপে যায়। তাদের স্ত্রীরা তাদের কাছে নিজেদের ভালো লাগা বা মন্দ লাগা বিষয়গুলো বললে তারা সেইকথাগুলোর কোনো মূল্যায়নই করেনা। যার ফলাফল হয়ে থাকে মারধোর বা ডিভোরস! কিন্তুু তারা যদি একটু সহ্য করে তাদের স্ত্রীদের কথা শুনতো তবে পড়িবারগুলোতে এত অশান্তি হতনা।
ভাইরে আপনার স্ত্রীর ওপর যেমন আপনার হক আছে তেমনি এটা ভুলে গেলে চলবে না যে আপনার ওপরও আপনার স্ত্রীর সমান হক আছে। যেমন আল্লাহপাক কোরআনে বলছেন"আর যেমন পুরুষদের অধিকার রয়েছে নারীদের ওপর, তেমনিভাবে নারীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর, নিয়ম অনুযায়ী। (সূরা:আল-বাকারাহ,আয়াত:২২৮)
আল্লাহপাক কোরআনে আরোও বলছেন"নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন করো। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ করো, তবে হয়তো তোমরা এমন এক জিনিষকে অপছন্দ করছো, যাতে আল্লাহপাক অনেক কল্যান রেখেছেন"!!!!! (সূরা:আন-নিসা,আয়াত:১৯)
আবার রাসূল(সা:) বলেছেন,"তোমাদের ভেতর সর্বত্তম পুরুষ সে,যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম"!!!!! (সহীহ বুখারী)
তাই সবাই নিজেদের স্ত্রীদের কিছুটা জালাতন সহ্য করে নেন। আল্লাহ কথা, রাসুল(সা:)এর কথা, সাহাবীদের ঘটনা অনুসরণ করেন। তবেই সবার সাংসারিক জীবন সুখের হবে।
(সংগৃহীত)


Post a Comment

0 Comments