গ্রুপ আলোচনাঃ আদেশ ও আনুগত্য


ভূমিকাঃ 
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি নিখিল জাহানের রব। দরুদ এবং ছালাম রাছুল (ছ:) এর উপর। অতপরঃ আমরা জানি মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের মালিক, মুনিব, পালনকর্তা ও হুকুমকর্তা। আর আমরা তাঁর বান্দা বা গোলাম। সুতরাং তিনিই আমাদের আদেশ ও নির্দেশ দাতা। আর আমরা তাঁর আদেশ-নিষেধের আনুগত্যকারী। তাই আমাদের নাম মুসলিম।
মূলত তাঁর সব আদেশ ও নিষেধ আমাদেরই কল্যাণের জন্য। আর এই আদেশ-নিষেধ গুলি মানুষের ব্যক্তি জীবন থেকে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত পরিপূর্ণ ও নির্ভূল।  এজন্যই এর নাম আদ্বীন বা পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এই জীবন বিধান আল্লাহ আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন আল্ কুরআন এবং রাসুল (ছ) মাধ্যমে। আল্ কুরআনে আমরা দেখতে পাই আল্লাহ  তাঁর পক্ষ থেকে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, মানুষকে আদেশ-নিষেধ করতে (তা-মুরুনা বিল মা’রুফি,ওয়া তানহাওনা আনিল মুনকার)। মূলতঃ এ আদেশ আমাদের পক্ষ থেকে নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ্ যদিও নির্দেশ দিয়েছেন তাঁর আদেশ পালনের সাথে সাথে রাসুল (স) এবং আমাদের উপর কর্তৃত্বশীলদের আদেশ পালন করার জন্য, কিন্তু সে আদেশ মূলত আল্লাহর। প্রকৃত পক্ষে আদেশ দানের মালিক একমাত্র আল্লাহ্ (ইনিল্ হুক্মু ইল্লা লিল্লাহ্ )। তাই দেখা যায় রাসুল(স) নিজেও কোন নির্দেশ দেননি আল্লাহর অহী ছাড়া।(ওয়ামা-ইয়ান্ত্বিক্বু আ’নিল হাওয়া)। এজন্যই রাসুলের(স) আদেশ ও আমাদের জন্য আল্লাহর আদেশের অনুরূপ। আর আমাদের কর্তৃত্বশীলদের আদেশ  যদি আল্লাহ্ ও রাসুলের (স) আদেশের বিপরীত না হয়, তাহলে সে আদেশ আল্লাহ্ ও রাসুলের (স) আদেশের অনুরূপ, বিধায় আমাদের দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করা ও আমাদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।
এখন আমরা আনুগত্য সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবঃ
হারিস আল আশআরী  রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে পাঁচটি জিনিসের আদেশ করছি, অন্য বর্ণনায়, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি, যে গুলো সম্পর্কে আমার আল্লাহ্ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সে গুলো হচ্ছে, জামায়াত বদ্ধ হওয়া, আদেশ শুনা, আনুগত্য করা, হিজরত করা ও আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (আহমদ, হাকিম, তিরমিজি)
হাদীস শরীফে যে পাঁচটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে এর ২য়টি হচ্ছে, আদেশ মন দিয়ে শ্রবণ করা এবং ৩য়টি হচ্ছে নিষ্ঠার সাথে আনুগত্য করা।
السمع والطاعة  শুনা এবং মানা মুমিন জীবনের একান্ত অপরিহার্য ফরজ রূপী দায়িত্ব। এ দু’টি কাজ এক ও অভিন্ন। কুরআন ও হাদীসে এ দু’টি নির্দেশ একসাথে পাশাপাশি পেশ করা হয়েছে।
বিষয়টি এখানে পাঁচটি পয়েন্ট আকারে পেশ করা যেতে পারেঃ-
১. আনুগত্য কি এবং ইসলামের সাথে আনুগত্যের সম্পর্ক ।
২. আনুগত্যের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা।
৩. আনুগত্যের পূর্বশর্ত।
৪. আনুগত্যের পথে অন্তরায় ও ওজর পেশ করা।
৫. আনুগত্য না করার পরিনাম।
একঃ আনুগত্য কি এবং ইসলামের সাথে আনুগত্যের সম্পর্কঃ
আনুগত্য শব্দের কুরআন সুন্নাহ বর্ণিত প্রতিশব্দ হলোঃ إطاعت ، الطاعـــة  যার অর্থ হলোঃ মান্য করা, মেনে চলা, অনুসরণ-অনুকরণ করা, আদেশ-নিষেধ পালন করা। আর এর বিপরীত শব্দ হলোঃ معصية ، معصت ، عصيان  যার অর্থ হলোঃ নাফরমানী করা, অমান্য করা, নির্দেশ না মানা, আদেশ-নিষেধ পালন না করা, গুনাহ্ করা। 
এক কথায়ঃ আনুগত্য ও নাফরমানী দু’টি বিপরীতমূখী পথ বা ধারা। আনুগত্য ও নাফরমানী একসাথে পাশাপাশি থাকতে পারেনা।
ইসলাম ও আনুগত্য এক ও অভিন্ন বিষয়। অর্থাৎ ইসলামই আনুগত্য আর আনুগত্যই ইসলাম।
لاإسلام إلا بجماعة ، ولاجماعة إلا بإمارة ، ولا إمارة إلا بطاعــة . হযরত উমর রাঃ বলেন-ইসলাম নেই সংগঠন ছাড়া, সংগঠন নেই নেতৃত্ব ছাড়া এবং নেতৃত্ব নেই আনুগত্য ছাড়া। 
দুইঃ আনুগত্যের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতাঃ
আনুগত্যের মূল অধিকারী হচ্ছেন আল্লাহ্, আর আল্লাহর আনুগত্যের জন্যই রাসূলের সা. আনুগত্য অপরিহার্য। আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর আদেশ শুনা ও মানা ফরজ। আল্লাহ্ ও রাসূল সা. এর আনুগত্য করতে হবে বিনা প্রশ্নে-বিনা শর্তে। আর ইহাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য করণীয়-ফরজ।
আর আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্যের জন্যই আমীরের আনুগত্য ওয়জিব। আমীরের আনুগত্য হবে শর্ত সাপেক্ষে। অর্থাৎ আমীর যতক্ষন আল্লাহ্ ও রাসূলের নির্দেশ ও আনুগত্যের ভিত্তিতে আদেশ করবেন, ততক্ষন আমীরের আনুগত্য করা ওয়াজিব। এব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ‘হে ঈমানদারগন! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের সা., আর তোমাদের আমীরের। অতঃপর এ সমস্ত বিষয়ে তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে  ফিরিয়ে দাও, যে সমস্ত বিষয়ে তোমাদের মতানৈক্য হয়। যদি তোমরা আসলেই আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো। ইহাই উত্তম ও সঠিক কর্মনীতি।’’(সূরা আন নিসাঃ ৫৯)
আল্লাহর রাসূল (সা) এরশাদ করেনঃ “যে আমার আনুগত্য করলো, সে আল্লাহর আনুগত্য করলো। আর যে আমার নাফরমানী করলো, সে আল্লাহর নাফরমানী করলো। যে আমীরের আনুগত্য করলো, সে আমারই আনুগত্য করলো। আর যে আমীরের নাফরমানী করলো, সে আমারই নাফরমানী করলো। (বুখারী-মুসলিম)
তিনঃ আনুগত্যের পূর্বশর্ত ও দাবীঃ
আনুগত্যের পূর্বশর্ত ও দাবী হলো السمــع   বা سمعت   অর্থাৎ শোনা বা বুঝা। অর্থাৎ আনুগত্য করার পূর্বে বিষয়টি ভাল ভাবে শ্রবণ করা এবং ভালভাবে বুঝে নেয়া প্রয়োজন। এইভাবে মুমিন আদিষ্ট واسمعـوا واطـيــوا   অর্থাৎ তোমরা শুনো এবং তোমরা আনুগত্য কর।
আল্লাহর রাসূল সা. এর নির্দেশ-قال اوصيكم بتقوى الله والسمع والطاعة وان عبد حبشي ، অর্থ-তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি-আল্লাহকে ভয় করার এবং আদেশ শুনার ও মানার। যদিও সে হয় হাবসী গোলাম।
চারঃ আনুগত্যের পথে অন্তরায় ও ওজর পেশ করাঃ
আনুগত্যের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে এ কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলোঃ
১.পরকালের জবাবদিহীর অনুভূতির অভাব।
২.আখিরাতের জীবনের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেয়া।
৩.গর্ব, অহংকার, আত্মপূজা ও আত্মম্ভরিতা।
৪.হৃদয়ের বক্রতা ও কুটিলতা।
৫.অন্তরের দ্বিধা-দ্বন্ধ ও সন্দেহ-সংশয়ের প্রবণতা।
পাঁচঃ আনুগত্য হীনতার পরিণামঃ
১. আনুগত্যহীনতা জীবনের সমস্ত নেক আমলকে বরবাদ করে দেয়।
২. আনুগত্যহীন জীবন সব সময় শয়তানের ধোঁকায় পতিত হয়।
৩. আনুগত্যহীনতা হচ্ছে জামায়াত ত্যাগের শামিল আর পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম। 
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে সর্বাবস্থায় তার আনুগত্যের মাঝে জীবন অতিবাহিত করার তাওফীক দিন। আমীন।।
সমাপ্ত

Post a Comment

0 Comments