ঈদুল আযহা - দুই ডজন করণীয় বর্জনীয় – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম


(প্রথম প্রকাশঃ ৮ নভেম্বর ২০১০, ফেইসবুক এবং সোনার বাংলাদেশ ব্লগ)

ঈদ মুসলামদের একমাত্র আনন্দ উৎসব। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশী। বিখ্যাত আরবী অভিধান 'আল মাওরিদ' এ ঈদ শব্দের অর্থ বলা হয়েছে feast আর feast নামক ইংরেজী শব্দের বাংলা তরজমা হলো অনেক। যেমন-ভোজ, ধর্মোৎসব, পর্ব, তীব্র আনন্দ, ভূরিভোজন করা, ভোজ দেওয়া, ভূরিভোজন করানো, পরিতৃপ্ত করা ইত্যাদি। ঈদ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তীব্র আনন্দ করার উৎসব। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দাওয়াত। বিধায় ঐদিন হলো ভূরিভোজনের সুযোগ, বেশী বেশী করে খাওয়ার দিন, রোযা না রাখার দিন। আর মুসলমানদের জীবনে ঈদ বছরে দুইটি। এক ঈদুল ফিতর আর অপরটি ঈদুল আযহা।
ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে পাঠককূলকে অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা "ঈদ মুবারক"। সকলের ঈদ হোক আনন্দময় এবং ত্যাগের মহিমায় ভাষ্মর এ প্রত্যাশায় ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে করণীয় আর বর্জনীয় বিষয়ে সংক্ষিপ্ত নির্দেশিকা উপস্থাপনের প্রয়াস চালানো হলোঃ
১. আরাফাতের রোযাঃ আপনার ঈদ উৎসব শুরু হোক আরাফাতের রোযা রাখার মাধ্যমে। আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেনصِيَامُ يَومِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ علَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتي قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الَّتي بَعْدَهُ "আরাফার দিবসের রোযা সামনের এবং পিছনের দুই বছরে গুনাহ ঢেকে ফেলে" (মুসলিম)। তবে যারা হজ্জ করতে আরাফাতে ময়দানে অবস্থান করবেন, তাদের জন্য আরাফার দিবসে কোন রোযা নেই।
عن عائشة (رضـ) قالت: إن رسول الله (صـ)  قال: ما من يوم أكثر من أن يعتق الله فيه عبدا من النار من يوم عرفة، وإنه ليدنو ثم يباهي بهم الملائكة فيقول: ما أراد هؤلاء؟ (رواه مسلم)
قال رسول الله (صـ) : صوم يوم عرفة يكفر سنتين، ماضية ومستقبلة. (رواه مسلم)
২. তাকবির বলাঃ ১০ই যিলহাজ্জ ঈদের দিন। আপনি ঈদের দিবসকে অভ্যর্থনা জানান তাকবীরের মাধ্যমে। কেননা রাসূল সা. বলেছেন-"তোমারা তোমাদের ঈদগুলোকে তাকবীর বলার মাধ্যমে সুন্দর, আনন্দময় এবং জাঁকজমকপূর্ণ করে তোল"। আর তাকবির হলো-
الله أكبر الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله الله أكبر الله أكبر ولله الحمد
(আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আল্লাহ আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ)। আল্লাহর শ্রেষ্টত্বের এই ঘোষনা শুরু হবে আরাফার দিনের ফজর নামাযের পর থেকে আর শেষ হবে আইয়াম তাশরীকের শেষ দিনের আছর নামায পড়ে। তাকবীর বলতে হবে উচ্চ আওয়াজে, ফরয নামাযের পর, ইমামের নেতৃত্বে, বলিষ্ট কন্ঠে (অবশ্য তাকবীর শুরু ও শেষের সময় নিয়ে মতবেদ রয়েছে)। তাকবির বলার সময় মনের মাঝে এই অনুভূতি লালন্ করতে হবে যে, সারা জাহানের মালিক আমার প্রভূ, সকল রাজাধিরাজের রাজ আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্টত্ব ঘোষনা করছি-আমি তাঁরই সৈনিক, আমি তাঁরই গোলাম।
৩. ঈদের গোসলঃ পবিত্রতা ঈমানের অংগ। তাই পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে শুরু হবে মুসলমানের ঈদ। ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে আপনি ভালভাবে গোসল করে নিন। আর এই গোসল সুন্নাত গোসল গুলোর অন্যতম।
৪. মেসওয়াক করাঃ মুখমন্ডলের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রতিদিনের মতো আপনি মেসওয়াক করে নিন। মনে রাখতে হবে মেসওয়াক করা রাসূল সা. এর দৈনন্দিন সুন্নাত সমূহের একটি অন্যতম সুন্নাত।
৫. উত্তম পোষাক পরিধানঃ ঈদের দিন রাসূল সা. ভাল পোষাক পরতেন। হাদীসে আছে-রাসূল সা. এর লাল ও সবুজ ডোরার একটি চাদর ছিল, তিনি তা দুই ঈদ এবং জুমুয়ার দিন পরিধান করতেন। অপর দিকে রাসূল সা. তার সকল দাসীকে ঈদের দিনে হাতে পায়ে মেহদী লাগানোর নির্দেশ দিতেন। বিধায় সামর্থ অনুযায়ী নতুন পোষাক ক্রয় করুন অথবা পুরাতন পোষাকটাকে পরিষ্কার করে ইস্রি দিয়ে ব্যবহার করুন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পোষাকের ব্যবস্থা করুন। প্রতিবেশীর শিশুদের জন্য সামর্থ অনুযায়ী পোষাকের ব্যবস্থা নিন।
৬. সুগন্ধি ব্যবহারঃ সুগন্ধি ব্যবহার সুন্নাত। আর ঈদের দিনে রাসূল সা. বিশেষ ভাবে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। রাসূল সা. এর তিনটি পছন্দনীয় জিনিসের মাঝে একটি হলো সুগন্ধি। তাই ঈদের দিনের পোষাক পরিধানের পর সুগন্ধি ব্যবহার করতে হবে। সুগন্ধি মানে এলকোহল মিশ্রিত ভ্যাপসা গন্ধ সম্পন্ন স্প্রে নয়, বরং দেহনাল উদ বা আতর ব্যবহার করুন।
৭. ঈদের দিনের খাওয়া দাওয়াঃ ঈদুল আযহার দিনে সুবহে সাদিকে পর কিছু খাবেন না। না খেয়ে ঈদগাহে চলে যান। ঈদের নামায সেরে এসে প্রথমে কুরবানী দিন। এর পর কিছু খান। মনে রাখবেন, ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাবার কালে বেজুড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া সুন্নাত। কিন্তু ঈদুল আযহার দিন তার বিপরীত। ঈদুল আযহার দিনে সুবহে সাদিক থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত কিছু না খাওয়া সুন্নাত।
৮. ঈদগাহে যাওয়া আসার রাস্তা নির্বাচনঃ আল্লাহর রাসূল সা. এক পথে ঈদগাহে যেতেন, আরেক পথে আসতেন। বিধায় আপনিও যাবেন একই নীতি অনুসরণে। আপনার ঈদগাহে যাওয়ার এবং আসার পথ পূর্বেই নির্বাচন করে নিন। এতে করে আপনার বেশী সংখ্যক লোকের সাথে সাক্ষাত করার সুযোগ হবে। যাওয়া আসার পথে লোকদের সাথে সালাম, মুসাফাহা, মুয়ানাকা, মুছাদারাহ করুন। শুভেচ্ছা বিনিময় করুন। দোয়া করুন।
৯. শুভেচ্ছা বিনিময়ঃ ঈদের দিনে ছোট বড় সকলের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করুন। ঈদের দিনে সাহাবায়ে কিরামদের সম্ভাষণ ছিল-اللهم تقبل الله منا ومنكم أجمعين (আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্না ওয়া মিনকা)। বিধায় আপনিও সাহাবায়ে কিরামদের সম্ভাষণ ব্যবহারে অভ্যস্ত হোন। ঈদ মুবারক বলুন, পারস্পরিক দোয়া বিনিময় করুন।
১০. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়াঃ রাসূল সা. ঈদগাহে পায়ে হেটে যেতেন, এবং পায়ে হেটে ফেরত আসতেন। আপনিও আপনার নেতা মুহাম্মদ সা. এর অনুসরণ করুন। মটর সাইকেল বা গাড়ীতে করে ঈদগাহে যাবেন না, এতে করে ঈদগাহে দেরীকে করে যাওয়া হয়, তাড়াতাড়ি ফিরা হয়। কোন লোকজনের সাথে সাক্ষাত হয় না, গাড়ী থেকে টাটা হয়। গাড়ী ব্যবহার করে অযথা ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করবেন না। ঈদের দিনে খুশীর দিনে মানুষকে বিরক্ত করার কারণ হবেন না, কাউকে বিরক্ত করবেন না। অনেক দূর পথ অতিক্রম করে জাতীয় ঈদগাহে যাওয়ার কোন দরকার নেই, নিজের এলাকার মানুষের সাথে এলাকার ঈদগাহে নামায পড়ুন। প্রবাসে যারা বাস করছেন, তারা অনেক দূরে জাতীয় ঈদগাহ বা গ্র্যান্ড মসজিদে না গিয়ে আপনার আবাসের পাশের ঈদগাহে নামায পড়ুন। এতে করে আপনার প্রতিবেশীদের সাথে আপনার সাক্ষাতের সুযোগ হবে, শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ হবে।
১১. স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ঈদগাহে যাওয়াঃ ঈদের দিনে আল্লাহর রাসূল সা. স্ত্রী কন্যাদের নিয়ে ঈদগাহে যেতেন। বিধায় আপনিও আপনার স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে ঈদগাহে যান। মহিলারা যাতে পর্দার সাথে যায়, সে দিকে লক্ষ্য রাখুন। যে সব মহিলার মাসিক অসুখ রয়েছে, তারাও ঈদগাতে যেতে পারবে, তবে নামায পড়তে পারবেনা, শুধু খুতবা শুনবে।
১২. ঈদগাহে ভিআইপি প্রটোকলঃ ভিআইপি প্রটোকল নিয়ে ঈদগাহে যাবেন না, কাউকে ঈদগাহে ভিআইপি প্রটোকল দেবেন না। যিনি ঈদগাহে প্রথমে হাজির হবেন, তাকে প্রথম কাতারে বা ইমামের পিছনে নামাযের সুযোগ দিন। বিশিষ্ট ব্যক্তি যদি পরে আসেন, তাহলে যেখানে জায়গা পান, সেখানে দাড়িয়ে যান। আজ ঈদের দিন, আমীর ফকীর সবাই সমান-এ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করুন।
১৩. ঈদের নামায আদায়ঃ ঈদের নামায শুরু হয় ১ম হিজরীতে| নবী সা. ঈদের নামায নিয়মিত আদায় করেছেন এবং মুসলামানদের ঈদের জামায়াতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন।ঈদের নামায সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। ঈদের নামায সকল নফল সালাতের মাঝে ফজিলতপূর্ণ। ঈদের নামাযের পূর্বে এবং ফজরের নামযের পরে কোন নামায নেই। ঈদের নামাযের কোন আযান এবং একামাতও নেই। ঈদের নামাযে সুরা আলা ও গাশিয়াহ বা সূরা ক্বাফ ও কামার পড়া সুন্নাত। প্রবাসে অবস্থানরত বিশেষ করে যারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অবস্থান করছেন, তাদের ঈদের নামায হবে ১২ তাকবিরে। ১ম রাকাতে ৭ তাকবির এবং শেষ রাকাতে ৫ তাকবির। নবী সা, থেকে বর্ণিত- أن النبي صلى الله عليه وسلم كبر في عيد ثنتي عشرة تكبيرة : سبعا في الأولى ، وخمسا في الآخرة ، ولم يصل قبلها ولا بعدها } "নবী সা. দুই ঈদে প্রথম রাকাতে ক্বিরাতের পূর্বে সাত তাকবীর আর শেষ রাকাতে কিরাতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন।" অবশ্য হানাফী মাযহাব অনুযায়ী প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমার পর ৩ তাকবীর আর দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর আগে ৩ তাকবীর দেয়ার বিধান রয়েছে। এবং এ ব্যাপারে হাদীদে শক্ত দলীল রয়েছে। ঈদের নামায ছুটে গেলে একা একা পড়া যায়।
১৪. ঈদগাহে ঈদের নামাযঃ বৃষ্টি ছাড়া অন্য কোন কারণে ঈদের নামায মসজিদে পড়ার কোন সুযোগ নাই। রাসূল সা. ঈদের নামায পড়েছেন মসজিদের নব্বীর ৫০০ গজ দূরে "বাত্বহান" নামক স্থানে। তাঁর জীবনে মাত্র একবার বৃষ্টির কারণে মসজিদে নববীতে ঈদের নামায পড়া হয়। বিধায় পাইকারী হারে সকল মসজিদে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠানের কোন সুযোগ নেই, যা রাজধানী এবং বড় বড় শহর গুলোতে দেখা যায়। প্রয়োজনে রাজপথে ঈদের নামায আদায় করা যেতে।
১৫. মহিলাদের ঈদের নামাযঃ মহিলারা ঈদের নামায পড়বে ঈদগাহে গিয়ে। কিন্তু ঈদগাহে না গেলে যে কোন বাসা বাড়ীতে অথবা কোন হল বা মিলনায়তনে একত্রিত হয়ে একা একা ঈদের নামায পড়তে পারবে। কিন্তু নিজ বাড়ীতে নিজে একা একা ঈদের নামায পড়ার কোন সুযোগ নেই।
১৬. খুতবা শ্রবণঃ ঈদের নামাযের পর খুতবা প্রদান করতে হয়। এই খুতবা শুনা অত্যন্ত জরুরী। অত্যন্ত মনযোগের সাথে এই খুতবা শ্রবণ করুন। খুতবাতে দেশ, জাতি এবং বিশ্বের সমসাময়িক অবস্থা ও পরিস্থতি, সারা বিশ্বের মুসলমানদের অবস্থা এবং বিশ্বপরিস্থিতিতে মুসলমানদের করনীয় আলোচিত হওয়া দরকার।
১৭. কুরবানী আদায়ঃ কুরবানীর জন্য ক্রয় করা পশু কুরবানী করতে হবে ঈদের নামায থেকে ফিরে। নিজের করবানী নিজেই যবেহ করা ভাল। কুরবানীর পশু জবাই করার সময় হযরত ইব্রাহীম আ. এর পরীক্ষার কথা স্মরণ করা, ত্যাগের চেতনায় নিজেকে উজ্জিবিত করা আর জীবন সংগ্রামের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ বা কুরবানী করার শপথ নেয়া। নিজের বলতে যা আছে, সব আল্লাহর জন্য নিবেদিত করার ঘোষনা দেয়া। বিশেষ করে হায়াতে জিন্দেগীর মূল্যবান সময়টা আল্লাহর পথে ব্যয় করার ঘোষনা প্রদান-قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ "নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু, সবই আল্লাহ জন্য যিনি বিশ্ব জাহানের রব"।
একটি বিষয় বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য যে, কুরবানী ঈদের পরে আরো ৩দিনের যে কোন সময়ে দিনের বেলা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। বিধায় আপনি যদি একাধিক পশু কুরবানী দেন, তাহলে একটি পশু শেষ দিনে কুরবানী দিয়ে গরীরদের প্রদান করলে তারা বেশী উপকৃত হতে পারে। কেননা ঈদের দিনে গরীবদের কাছে অনেক অনেক গোশত জমা হয়, কিন্তু তৃতীয় দিবসে তার কাছে কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা।
১৮. কুরবানীর গোশত বিতরণঃ কুরবানীর গোশত দেরী না করে তাড়াতাড়ি বিতরণ করা দরকার। বিশেষ করে গরীবদেরকে তাড়াতাড়ি দিয়ে দেওয়া উচিত। সম্ভব হলে গোশত পাক করার জন্য মশলা কেনার সামান্য পয়সাও হাদিয়া দেওয়া। কুরবানীর গোশত কাটাকাটির কাজে যারা সহযোগিতা করবে, তাদেরকে অর্থ পারিশ্রমিক দিতে হবে। কুরবানীর গোশত পারিশ্রমিক হিসাবে না দেয়া। কুরবানীর গোশত ফ্রিজে ভরে না রাখা। গরীর-দুঃখী, আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়ানো।
১৯. ঈদের দিনে রোযাঃ ঈদের দিনে রোযা রাখা হারাম। নবী সা. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোযা রাখতে নিষেধ করেছে।"(বুখারী) ঈদুল ফিতরের পর শাওয়াল মাসে ৬টি রোযা রাখা সুন্নত এবং অনেক ফজিলতের কাজ। রাসূল সা. বলেছেন-من صام رمضان ثم أتبعه ستاً من شوال فكأنما صام الدهر كله "যে রামাদ্বানের রোযা রাখলো এবং একই ভাবে শাওয়াল মাসে ৬টি রোযা রাখলো, সে যেন একযুগ রোযা রাখলো।" কিন্তু ঈদুল আযহার কথা ভিন্ন। ঈদুল আযহার দিন এবং এর পরবর্তী আরো ৩দিন রোযা রাখার সুযোগ নেই, রোযা রাখা হারাম।
২০. ঈদের দিনে জুমুয়াঃ জুমুয়ার দিন ঈদ হলে ঈদ এবং জুমুয়া দু'টিই পড়তে হবে। তবে যারা ঈদের নামায পড়েছেন, তাদের জন্য জুমুয়ার নামায পড়া অপরিহার্য নয়। তবে যিনি জুমুয়ার নামায পড়বেন না, তাকে ঐ দিনের জোহরের নামায পড়তে হবে।
২১. ঈদের দিনে খেলাধুলাঃ ঈদের দিন নির্দোষ খেলাধুলা করার সুযোগ রয়েছে। রাসূল সা. এর সাথে থেকে হযরত আয়েশা রা. খেলা দেখেছেন ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। বিধায় ঈদের দিনের আনন্দকে আরো আনন্দময় করা জন্য নানা রকমের রুচিশীল খেলাধুলা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে।
২২. ঈদের দিনে কবর যিয়ারতঃ রাসূল সা. প্রথমতঃ কবর যিয়ারত নিষেধ করলেও পরে তিনিই মানুষকে কবর যিয়ারতের নির্দেশ দিয়েছেন। আর তা এজন্য যে, কবর যিয়ারত করলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। কবর যিয়ারতের জন্য রয়েছে বছরের ৩৬৫ দিন এবং রাত। যে যখন খুশী তখন কবর যিয়ারতের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু ঈদ নামক বস্তুর সাথে সম্পর্ক শুধু জীবিতদের, মৃতদের কোন সম্পর্ক নেই। রাসূল সা. ঈদের দিন কবরস্থানে গিয়েছেন বলে কোন বর্ণনা আমাদের চোখে পড়েনি বা ঈদের দিনে কবর যিয়ারতের ফজিলত সম্পর্কেও আমাদের জানা নেই। যেহেতু ঈদের দিন খুশীর দিন। বিধায় সারা দিন খুশী করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত। কবরস্থানে গেলে মা-বাবা, স্ত্রী-পুত্র এবং হারানো স্বজনদের কথা মনে পড়বে। তখন মন খারাপ হবে, কান্না আসবে। ঈদের দিনে কান্না না করে মন ভালো রাখার জন্য কবরস্থানে না যাওয়াই উত্তম। (ঈদের দিনে কবর যিয়ারতে শরীয়াত কিন্তু কোন বাঁধা দেয়নি)।
২৩. ঈদ সমাবেশঃ ঈদের দিন বিকালে আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব মিলে পূর্বনির্ধারিত সময়ে কোন একস্থানে মিলিত হতে পারেন। যেখানে হালকা মিষ্টান্ন, ফ্লাক্স ভর্তি চা নিয়ে যাওয়া হবে প্রতিটি পরিবার থেকে। কোন পার্ক বা খোলা মাঠ বা কোন বাড়ীর আঙ্গিনাও হতে পারে এই মিলনের স্থান। সমবেত সকলে পর্দার ব্যাপারে বিশেষ যত্নবান হবেন। এখানে অনুষ্ঠিত হতে পারে ৩টি পৃথক পৃথক সমাবেশ। মহিলাদের জন্য ১টি, শিশুদের জন্য ১টি আর পুরুষদের জন্য ১টি। যেখানে আলোচিত হতে পারে মুসলমানদের পূর্বসূরীদের ত্যাগের ইতিহাস। বিশেষ ভাবে আলোচিত হতে পারে হযরত ইব্রাহীম আ. এর ত্যাগের কাহিনী এবং তা থেকে উম্মতের জন্য কি শিক্ষা ইত্যাদি।
২৪. ঈদ পূণর্মিলনীঃ এলাকার সকল মানুষের সাথে একত্রিত হয়ে ঈদ পালনের জন্য ঈদের দিন বা ঈদের পরদিন ঈদ পূণর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। যেখানে অতিসহজে মোলাকাত হতে পারে আপনার প্রাইমারী স্কুলের সহপাঠীর সাথেও। দেখা হয়ে যেতে পারে এমন জনের সাথে, যার সাথে কেটেছে আপনার শৈশব আর কৈশোর-অথচ বছরের পর বছর চলে যায়, তার সাথে আপনার দেখা করার সুযোগ ঘটেনি। বিধায় এ সুযোগটা গ্রহণ করা দরকার। আপনি যদি গ্রামের বাড়ীতে বসবাস না করেন, তাহলে গ্রামের একদল যুবককে অনুষ্ঠান আয়োজনে উত্সাহিত করতে পারেন। আবার এ অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য এই অনুষ্ঠানেই আলোচনা করতে পারেন। সাথে সাথে ঈদুল আযহার শিক্ষা সম্পর্কে অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে।
নানাবিধ অনুষ্ঠান আর আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি শরীয়াতের সীমার মাঝে অবস্থান করে রাসূল সা. এর দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী আমরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করি। ঈদকে ফেইসবুক আর সেলফী চর্চার মাঝে সীমাবদ্ধ যেন না রাখি। অপসংস্কৃতির দুষ্ঠু প্রভাবে বেহায়াপনা আর অশ্লীলতার সয়লাবে আমরা যেন ভেসে না যাই। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে, আমাদের মিল্লাতের পিতা, আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম আ. এর ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে আমরা যেন ঈদ উৎসব পালন করি এই হোক আমাদের প্রত্যয়। যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন ইসলামী রেনেসাঁর কবিঃ
যতদিন না কায়েম হবে, খোদার ধরায় তাঁরই দ্বীন। কোথায় আবার ঈদের খুশী, সেই অনুষ্ঠান অর্থহীন।।

ঈদুল আযহা সম্পর্কে আমার আরেকটি লিখাঃ ঈদুল আযহার কথকথা-পড়তে ক্লিক করুন এখানে।

Post a Comment

3 Comments

Unknown said…
জাযাকাল্লাহ
Unknown said…
জাযাকাল্লাহ খাইরান।
Anonymous said…
মা শা আল্লাহ, জাযাকাল্লাহ খাইরান