সাঈদী সাহেব মুচকী হেসে বললেন-দুনিয়াতো আরামের জায়গা না, আরামের জায়গা তো জান্নাত – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম


মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ কিশোর বেলার গল্প। তখন রাজপথের টগবগে কর্মী। একাধারে ২/৩দিন না ঘুমিয়ে কাটাতে কোন সমস্যা ছিলনা। ৯০এর দশকে কথা। এরশাদ সাহেব তখনও ক্ষমতায়। আমি তখন একটি ছাত্র সংগঠনের ছোট নেতা। আমি তখন সিলেটের মৌলভী বাজার শহরে থাকি। আবাস স্থল শাহ মোস্তাফা রোডের দেওয়ান মনজিল। মুলি বাশের তৈরী অফিস কক্ষের একটি রোমে আমার আবাস।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদী। যিনি এ যাবত মৌলভী বাজারে কোন তাফসীর মাহফিলে তাফসির পেশ করেননি। এবার প্রথম আসবেন মৌলভী বাজারে। তাফসীর করবেন মৌলভী বাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সবার মাঝে একটা রোমঞ্চকর ভাব। মৌলভী বাজারের সবসময়ের হাসি মাখা মুখ জনাব সিরাজুল ইসলাম মতলিবের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সাঈদী সাহেব যথা সময়ে মৌলভী বাজার আসলেন, তাফসির করলেন, হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতে তাফসীর মাহফিল অত্যন্ত সুন্দর ভাবে শেষ হলো।

তাফসীর মাহফিলের পরের দিনে কথা। শীতের সকাল। ভোরের সূর্য উঁকি দিয়েছে অনেক আগে। রোদ ইতিমধ্যে নিজের মাঝে মিষ্টি মিষ্টি ভাব তৈরী করতে পেরেছে। আমরা সবাই একটু রিলাক্স মোডে। সাঈদী সাহেবের বিশ্রামের জায়গা ছিল জনাব সিরাজুল ইসলাম মতলিব সাহেবের বাসায়। হঠাৎ সাঈদী সাহেবকে নিয়ে মতলিব সাহেব বের হলেন। দেওয়ান মনজিলের আঙিনায় একটা বেতের চেয়ার দেয়া হলো। ডেকোরেটর থেকে নেয়া চেয়ারের বিশাল সমাবেশ যেখানে আগে থেকেই ছিল। সাঈদী সাহেব মিষ্টি রোদের মিষ্টি নিতে সেই বেতেন চেয়ারে আসন গ্রহণ করলেন। আর সাঈদী সাহেব থেকে মিষ্টি নেয়ার জন্য আমরা যারা এতক্ষণ রিলাক্স মোডে সময় পার করছিলাম তারা জড়ো হলাম তার আশে পাশে।

এমন ফ্রী হালতে সাঈদী সাহেবকে পাওয়া যায়না। সুযোগ বুঝে নানাজন তার ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন ইত্যাদি নিয়ে নানান কথা জুড়ে দিলেন। আমি চুনোপুটিও সুযোগ নিলাম। কিন্তু সাঈদী সাহেব বলে কথা। উনার সামনে কথা বলার এমন সাহস আছে নাকি। কিন্তু কেন জানি সাঈদী সাহেব আমাকে কাছে ডেকে নিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ কেমন আছেন? বললামঃ এই ঠান্ডার সময় বাহিরে বের না হয়ে একটু আরাম করতে পারতেন। সাঈদী সাহেব মুচকী হেসে বললেন-দুনিয়াতো আরামের জায়গা না, আরামের জায়গা তো জান্নাত।

সময় চলে গেছে অনেক। সেই দেওয়ান মনজিল এখন বদলে গেছে। হয়ে উঠেছে ডিএম কমিউনিটি সেন্টার। সেই সময়ের ছোট নেতা এক সময়ে বড়নেতা হয়ে এখন আবার তিমিরে। এখনকার বড় বড় নেতাদের তুমি তুমি সম্বোধন করতে ভালই লাগে। নিজের সময়ের অনেকেই নেই আর সেই মিছিলে, আবার অনেকে মিছিলের নেতৃত্বে। সিরাজুল ইসলাম মতলিবের হাতে গড়া লোকেরা এখন ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত করছে। নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, বসার মতো নিরাপদ আশ্রয় নেই, নিজের বাসায় ঘুমানো সুযোগ নেই, দূঃখ পেয়ে আওয়াজ করে কান্নার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু সাঈদী সাহেব!

হ্যাঁ সাঈদী সাহেব এগিয়ে চলছেন তার গন্তব্যের দিকে। সেই অতি আরামের জায়গা জান্নাতের দিকে যাওয়ার জন্য তার যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করে এখন প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন।

হে প্রিয় সাঈদী! তুমিতো বলেছো "নিজের পছন্দনীয় জিনিসটা প্রিয়জনকে দিতে হয়"আমি দাবী করিঃ আমি তোমার একজন প্রিয়জন। আমি তোমার পছন্দনীয় একটা জিনিস তোমার কাছে চাই। তুমি কি দেবে? তোমার মনের মাঝে লালিত পছন্দনীয় সেই আরামের জায়গায় আমি যেতে চাই। তুমি থেকো এখানে, কুরআনের কথা বলে মানুষকে পথ দেখাও। আমার মতো যারা দুনিয়াবাসী মানুষের কল্যাণে কিছু করার মতো নেই, তাদেরকে ঐ জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ দাও।

হে প্রিয় সাঈদী! তুমিতো বলেছোঃ জান্নাতে যাওয়ার সহজ পথ শহীদি মৃত্যু। তোমার বর্ণিত ও আকাংখিত সেই প্রিয় জান্নাতে যেতে শহীদ হওয়ার জন্য তৈরী এই অধম। তুমি দয়া করে তোমার রবের কাছে একটু বলে দাও এই অধমের কথা-যাতে চলে যেতে পারি সেই সুন্দর আঙিনায় শহীদ হয়ে।

২০১৩, ১২ ফেব্রুয়ারী

Post a Comment

0 Comments