মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ মাস দুয়েক আগের কথা। সিলেট মহানগরীর পথে পথে হাটতে
গিয়ে বিভিন্ন স্থানে একটি ব্যানার নজর কাড়তো। আর তাহলো "মওদূদীবাদের স্বরূপ উম্মোচন মহা
সম্মেলন"। খবর নিয়ে জানতে পারি-সম্মেলনটা প্রতিবছর সিলেটের
রেজিষ্টারী মাঠে হয়ে থাকে। আগে হতো আয়োজকদের নিজ খরচে আর এখন হয় সরকারী খরচ আর
পৃষ্ঠপোষকতায়।
সম্মেলনটিতে যাওয়ার খুবই ইচ্ছা ছিল।
কিন্তু প্রবাসী হিসাবে নির্ধারিত দিনের অনেক আগেই আমাকে প্রবাসে ফাঁড়ি জমাতে
হয়েছে। সম্মেলনে যেতে পারবোনা বলে জানতাম। তাই ওখানে গতবারে কি কি আলোচনা হয়েছে তা
জেনে নেয়ার চেষ্টা করেছি।
সম্মেলনটিতে নতুন কোন বিষয় আলোচনা
হয়না। ওটা শাহবাগ চত্ত্বরের মতোই একটি সমাবেশ। পার্থক্য এতোটুকু যে, শাহবাগে নাস্তিকেরা করে
আর ওখানে আস্তিকেরা। শাহবাগে স্বাধীনতা আর দেশ প্রেমের দলীল দেয়া হয় আর ওখানে
রাসূল প্রেম আর ঈমান আক্বীদার দলীল দেয়া হয়। কিন্তু দাবী একই ধরণের। আর তাহলোঃ জামায়াত শিবিরের
রাজনীতি নিষিদ্ধ করণ। কারণ ওরা মওদূদীবাদের বিশ্বাসী।
জামায়াতের আকীদা যে একটা ভ্রান্ত
আকীদা এই কথাটা মাইক লাগিয়ে জনগনকে যারা জানাতে দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের প্রায় সকলেই এখন
হেফাজতের ব্যানারের আশেপাশে। অবশ্য তাদের এখনকার দাবী গুলোতে ঐ এজেন্ডাটা নেই।
তাদের দাবী ১৩ দফা। আর দাবী যাদের কাছে জানানো হয়েছে তারা নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষক।
হেফাজতে ইসলামের সাথে যারা জড়িত, তারা নিজস্ব আঙ্গিকে আবার
বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের সাথে জড়িত। হেফাজতে ইসলাম ঐ সকল সংগঠনের মিলন মেলা বা
অরাজনৈতিক প্লাট ফরম। আর তারা সবাইই জামায়াতকে হয় কাফের, না হয় মুনাফেক বা ফাসেক
বলতে অভ্যস্ত এবং সিদ্ধহস্ত। আমি আমার পোষ্টের উপসংহারে নির্বিগ্নে পৌছার লক্ষ্যে
তাদের সেই দাবীর সাথে একাত্বতা ঘোষনা করতঃ সামনের দিকে যেতে চাই।
জামায়াত একটি কাফের দল। জামায়াত একটি
ফাসেক দল। জামায়াত মওদূদীবাদের অনুসারী একটি দল। এ গুলো হেফাজতের ব্যানারের আশে
পাশে অবস্থানকারিদের বক্তব্য।
হেফাজত রাজনৈতিক দল না হলেও উনারা
সবাই ভোটার। আর ভোটার হওয়ার কারণে তারা হয় বিএনপি নয়তোবা আওয়ামীলীগ-কাউকে না কাউকে
ভোট দেনই। উনারা যে জামায়াতকে ভোট দেননা, একথা হলফ করে বলতে পারি।
গত বছরের নির্বাচনে মরহুম শায়খুল
হাদীসের সাথে সমঝতার ভিত্তিতে তিনারা আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়েছিলেন বলে আওয়ামীলীগ
ক্ষমতায় এসেছে। অপর দিকে এর আগের বছর শায়খুল হাদীস বিরাগভাজন হয়ে বিএনপিকে ভোট
দেয়াতে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল।
জামায়াত কাফের দল হলে বিএনপি আর
আওয়ামীলীগকে মুসলমান ফতোয়া দেয়া একটু দূঃসাহসিক কাজ। তাই আমরা ধরে নিতে পারিঃ ১. জামায়াত কাফের। ২.
বিএনপি কাফের। ৩. আওয়ামীলীগ কাফের। ৪. জাতীয় পাটি কাফের। ৫. এধরণের সবাই কাফের।
এমতাবস্থায় হেফাজতিরা কাকে ভোট দেবেন? হেফাজতিদের ১৩দফা বাস্তবায়নে কাদের গরজ বেশী বা কাদেরকে বেশী বিশ্বাস করা যায়? আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কাদেরকে বেশী বিশ্বাস করা যায়? কওমী মাদ্রাসাকে সরকারী স্বীকৃতির জন্য কাদের বেশী বিশ্বাস করা যায়? কুরআন সুন্নাহ বিরুধী কোন আইন পাশ না করার ব্যাপারে কাদের বেশী আস্থা রাখা যায়?
এমতাবস্থায় হেফাজতিরা কাকে ভোট দেবেন? হেফাজতিদের ১৩দফা বাস্তবায়নে কাদের গরজ বেশী বা কাদেরকে বেশী বিশ্বাস করা যায়? আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কাদেরকে বেশী বিশ্বাস করা যায়? কওমী মাদ্রাসাকে সরকারী স্বীকৃতির জন্য কাদের বেশী বিশ্বাস করা যায়? কুরআন সুন্নাহ বিরুধী কোন আইন পাশ না করার ব্যাপারে কাদের বেশী আস্থা রাখা যায়?
আমার যতটুকু বিশ্বাস এ ক্ষেত্রে
হেফাজতিরা জামায়াতকেই বেশী বিশ্বাস করতে পারেন। আর যদি তাই হয়, তাহলে কেবল মাত্র
রাজনৈতিক স্বার্থে এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠার আশায় নয় বা জামায়াতকে একটি ইসলামী দল
হিসাবে না ভেবে আসুন জামায়াতকে নিছক একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে বিবেচনা করে
হেফাজতিরা জামায়াতকে আগামী নির্বাচনে সকল ইসলামী দল মিলে একজোট হয়ে সমর্থন
করি।আমার মনে হয় কাফের জামাত হেফাজতিদের যতটুকু কাজে আসবে, অন্য কেউ নয়।
অতএব আসুন! ধর্মীয় বিষয়ে নিজস্ব
অভিমতকে রাজনীতির বিষয় না বানিয়ে রাজনৈতিক ভাবে জামায়াতকে সমর্থন জানাই।
২০১৩, ২১ মে
************************************************************************
জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কিত বই সমূহ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
মাওলানা মওদূদী লিখিত বই সমূহ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
মাওলানা মওদূদী সম্পর্কিত বই সমূহ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
0 Comments