মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ সম্প্রতি বাংলাদেশের ভিতরে
অবস্থিতি অন্যরাষ্ট্র আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের বাসায় জামায়াত আওয়ামীলীগের বৈঠক নিয়ে
পত্রিকাওয়ালারা বেশ সরগরম। জামায়াত বিনএপি নামক পবিত্র (?) সত্তাকে
না জানিয়ে আওয়ামীলীগের সাথে বৈঠক করেছে। এক্ষেত্রে কেউ আওয়ামীলীগের নৈতিকতা নিয়ে
কোন প্রশ্ন না করে এমন ভাবে হাই লাইট করছেন যে, জামায়াত এ কাজ করে বিরাট একটা
গোনাহের কাজ করে ফেলেছে।
এযাবত
কাল পর্যন্ত কোনদিন আমি অন্তত পড়িনি বা জানিনি যে, জামায়াত বলেছে যে-আওয়ামীলীগের
সাথে বৈঠক করবেনা। বরং সেই ৪দলীয় জোটের সময় থেকে একটাই কথা ছিল যে, জামায়াত
বৈঠকে থাকতে চায় আর আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধীদের সাথে বসতে চায়না। সেই প্রেক্ষাপটে
ঐতিহাসিক অশ্বডিম প্রসবিত আলোচিত ও সমালোচিত মান্নান ভূইয়া ও আব্দুল জালিল বৈঠক
অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
জামায়াত
কি বিএনপির অংগসংগঠন?
জামায়াত ১৮দলীয় জোটের একটি শক্তিশালী অংশীদার। যেমন অংশীদার
মহাজোটের অংশীদার জাতীয়পার্টি। এখানে সকলের নিজস্ব দল আছে, আদর্শ
আছে, কর্মসূচী আছে। সাময়িক সময়ের জন্য এই জোট-যা চির জীবনের জন্য নয়।
পাঠকের কাছে জিজ্ঞাসাঃ
ক’দিন আগে মির্যা
ফখরুল ইসলাম আলমগীর এরশাদের সাথে যে বৈঠক করেছিলেন, তাতে কি জামায়াতকে বলে করা হয়েছে?
আমাদের
হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেক রাহমান যখন এরশাদকে আংকেল ডেকে প্রেসিডেন্ট পার্কে গিয়ে
মিটিং করলেন, তখন কি জামায়াত বা ৪দলীয় জোটের বৈঠকে তা আলোচনা করে করা হয়েছিল?
গতকাল
আমাদের মুহতারাম মওদূদ সাহেব (যিনি ছিলেন এক সময় এরশাদ নামক স্বৈরাচারের অনুগত
দাস) এরশাদের ইফতারে গেলেন,
তিনি বা তিনারা কি ১৮ দলীয় জোটের মিটিং-এ আলোচনা করে গেলেন?
যদি তা
না হয়ে থাকে, তাহলে জামায়াত এতো কি পানিতে পড়েছে যে, কখন কার সাথে কি মিটিং করবে, তার জন্য
বিএনপিকে জানতে হবে।
জামায়াতের
এখন বিস্তর সমস্যা। জামায়াতকে বাঁচানোর জন্য বিএনপি কিছু করবে এমন প্রত্যাশা
জামায়াত কখনো করেনা। আবার কিছু করার যোগ্যতা আছে বলে আমি মনে করিনা। আর কিছু করেছে
বলে আমাদের জানা নেই। বরং বিএনপির বিভিন্ন সংকটে জামায়াত সাহায্য না করলে বিএনপিকে
এখন অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খোঁজে পাওয়া যেতো কি না, তা জাতির প্রশ্ন হতে পারে।
জামায়াত
এক সময় আওয়ামীলীগের সাথে যুগপথ আন্দোলন করেছিলো। তার পর বিএনপির সাথে আছে। সমস্যাটা
কোথায়? কিন্তু কেন এ প্রশ্ন পত্রিকা ওয়ালারা করে না যে, জামায়াত নামক যুদ্ধাপরাধী
অপবিত্রদের সাথে আওয়ামীলীগ নামক মহাপবিত্ররা যে মিটিং-এ বসলো, এতে করে
কি তাদের অজু নষ্ট হয়নি,
তাদের পবিত্রতা হরণ হয়নি। আমারতো মনে হয় জামায়াত অত্যন্ত
কৌশলে আওয়ামীলীগকে রাজনৈতিক ধর্ষণ করেছে। আর আওয়ামীলীগ অবলা নারীর মতো ধর্ষিতা
হয়েছে।
বাস্তবতাটা কি?
১।
আওয়ামীলীগ তার ক্ষমতার লিপ্সাতে নীতি নৈতিকতাকে কুরবানী নিয়ে বারবার তাদের ভাষায়
অপবিত্র জামায়াতের কাছে ঘুর ঘুর করে এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে।
২।
বিএনপি একই কায়দায় জামায়াতকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে বা করতে চায়।
৩।
জামায়াত একটি অতি ক্ষুদ্র দল হিসাবে নিজের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখার জন্য যেখানে যা
পায়, তা নিয়েই ভেসে থাকতে চায়।
৪।
জামায়াত এ পর্যন্ত নিজের কথার বরখেলাপ করেছে এমন নজির নাই। জামায়াতের বিরুদ্ধে
এযাবত যা বলা হয় বা লেখা হয়, তা সব আন্দাজ অনুমান নির্ভর এবং ডকুমেন্টহীন।
অতএব,
জামায়াতকে
জামায়াতের মতো চলতে দিন,
বিএনপিকে চলতে দিন বিএনপির মতো, আর
আওয়ামীলীগ চলুক তার নিজেদের মতো। রাজনৈতিক প্রয়োজনে হোক ইস্যু ভিত্তিক ঐক্য।
আদর্শিক ঐক্য ওখানে অপ্রয়োজনীয়।
২০১৩, ১৩ জুলাই
0 Comments