এমাজ উদ্দিন সাহেবকে একজন জামায়াত কর্মীর নসিহতঃ ০২ – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম


মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ ২০১৬ সালে মুহতারাম এমাজ উদ্দিন সাহেবকে এমাজ উদ্দিন সাহেবকে একজন জামায়াত কর্মীর নসিহত শিরোনামে একটা লিখা লিখেছিলাম। আজকের বিবরণ অনুযায়ী সেই লেখাটির পাঠক সংখ্যা হচ্ছেনঃ ৪৪৬২৯ জন। লেখাটি সেই সময়ে সোসাল মিডিয়াতে ব্যাপক শেয়ার করা হয়।

আজ ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ তারিখে জনাব এমাজ উদ্দিনের একটা বক্তব্য মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। যার শিরোনামঃ বিএনপি থেকে ব্যর্থ জামায়াত বেরিয়ে যাক: ড. এমাজউদ্দীন আহমদ
বিস্তারিত খবরে বলা হয়ঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ চেঞ্জ টিভি. প্রেসকে বলেছেন, জামায়াত বেরিয়ে গেলে খুশি হবে দেশবাসী। বিএনপিরও উচিত হবে না আর জামায়াতকে ২০ দলীয় জোটে যুক্ত রাখা। কারণ, এই মুহূর্তে জামায়াতকে সঙ্গে রাখা লাভজনক কোন ব্যাপার নয়, বরং দায় হয়ে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, জামায়াত এখন একটি পঙ্গু সংগঠনে পরিণত হয়েছে। পঙ্গু হয়ে যাওয়া কাউকে কাঁধে নিয়ে হাঁটা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। জামায়াত নিজেদের মতো করে বদ্ধ কুয়োর পানিতে লম্ফঝম্ফ করুক, সেটাই উত্তম।’
তিনি জামায়াতে ইসলামীকে ব্যর্থ সংগঠন হিসেবেও উল্লেখ করেন ।

২০১৬ সালের লিখায় আমি নিজেকে চতূর্থ গ্রেডের জামায়াত কর্মী হিসাবে উল্লেখ করে জনাব এমাজ উদ্দিন সাহেবকে যে ৭টি প্রশ্ন করেছিলাম, তা পূণরায় উল্লেখ করছিঃ
১. জামায়াতে ইসলামী কি দরখাস্ত দিয়ে জোটে নাম লিখিয়ে ছিল, না জামায়াতে ইসলামী বিএনপির মতো একটি দল হিসাবে সমান অংশীদারিত্ব নিয়ে জোটের রাজনীতি শুরু করেছিল।
২. জামায়াতে ইসলামী কি কোন ধরণের কোন বৈঠকে কড়জোরে নিবেদন করেছিল যে, তাদেরকে জোটে রাখতেই হবে-নাহলে তাদের অবস্থা সাড়ে ১২টা বেঁজে যাবে।
৩. জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যে সীমাহীন অত্যাচার চালানো হয়েছিল, তার প্রতিবিধান কল্পে কখনো কি জামায়াতকে সহযোগিতা করার জন্য বিএনপির দারস্ত হয়েছিল।
৪. জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি হওয়ার পর বিএনপি যেভাবে মুখে কুলুপ দিয়েছিল, তাতে করে জামায়াত কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলো।
৫. বিগত কয়েক বছরের আন্দোলনের ইতিহাসে কখনো কি এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, জামায়াত বিএনপির উপর নির্ভরশীল।
৬. বিগত নির্বাচন সমূহের কোন একটিতে বা কোন একটি এলাকায় কি বিএনপি জামায়াতকে নূন্যমত ছাড় দিয়েছে?
৭. এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় কখনো কি জামায়াতে ইসলামী এই সম্মানিত বুদ্ধিজীবির কাছে দারস্ত হয়ে ‍‌‍বাঁচার দরখাস্ত করেছিলো।

আজকে খবরের শিরোনাম দেখে ২০১৬ সালে উত্থাপিত সেই প্রশ্নগুলো আবার জনাব এমাজ উদ্দিন সাহেবকে রিপিট করলাম। একই সাথে জনাব এমাজ উদ্দিন সাহেবকে বলতে চাইঃ
১। জামায়াতে ইসলামী এসি রুমে বসে বা কোট টাই পরে কারো দয়ার উপর ভরসা করে রাজনীতি করেনা। জামায়াতে ইসলামী এদেশের চাষী, শ্রমিক আর মেহনতি মানুষের প্রিয় সংগঠন। শহর থেকে গ্রামের পথে যতই গহীনে যাওয়া যায়, জামায়াতের জনপ্রিয়তার প্রমাণ ততই ব্যাপকতর হতে থাকে। বিধায়, জামায়াত কোন ধরণের সংগঠন, তা ঢাকায় কোট টাই পরে এসি রুমে বসে কল্পনা করা কঠিন।
২। জামায়াত পিঠ বাঁচানোর রাজনীতি করেনা। যে দলের একজন নেতার কেবল ফাঁসির আদেশ হয়ে শোনে তার কর্মীরা দুই শতের উপরে জীবন দিতে জানে, তারাই যখন দেখে তাদের সহযোগী একটা সংগঠনের শীর্ষ নেতাকে জুডিশিয়াল পলিটিক্সের মাধ্যমে কারাগারে নিয়ে যায়, আর সেই দলের নেতা কর্মীরা দোয়ার মাহফিল করে-তখন বুঝতে বাকী থাকেনা যে, বিএনপি কত শক্তিশালী দল।
৩। জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি জানে বলে, নির্বাচনের দিন দুপুরেই একযোগে নির্বাচন বর্জন করে, আর সেই শক্তিশালী দলের মহাসচিব বলেন, বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
৪। যে দল ভোট ডাকাতির পর রাজপথে আন্দোলনের পরিবর্তে আদালতে যাওয়ার চিন্তা করে, সেই দলের মুরিদানেরা নিজেদের দোষ চাপা দিতে অন্য দলের গাড়ে সওয়ার হওয়া ছাড়া বিকল্প নাই।
জনাব এমাজ উদ্দিন, তাই আপনাকে অনুরোধ করবো, নিজেদের দলের করুন এই অবস্থায় দলকে কিভাবে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে সচল করা যায়, সে চিন্তা করুন। অন্যদের উপর দোষ চাপানো যেমন ভাল নয়, অন্যদের উপর ভর করে ক্ষমতায় যাবেন, এমন আশা করাও ভাল নয়। জামায়াত রক্ত দিয়ে, শ্রম দিয়ে, শহীদ হয়ে আপনাদেরকে ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে দেবে, সেই যামানা সে দিন শেষ হয়ে গেছে, যে দিন আপনাদের নেত্রী “চল চল ঢাকা চল” ডাক দিয়ে ছিলেন আর আপনাদের নেতা কর্মীরা পিঠ বাঁচানোর জন্য ইদুরের গর্তে আশ্রয় নিয়েছিল।

তারিখঃ ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ঃ দোহা-কাতার।

এমাজ উদ্দিন সাহেবকে একজন জামায়াত কর্মীর নসিহতঃ ০১ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

Post a Comment

0 Comments