বই নোট - চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান - মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম


বই নোট - চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান

লেখকঃ নঈম সিদ্দিকী

অনুবাদঃ আব্দুল মান্নান তালিব

লেখক পরিচিতি

  

➧ লেখক নঈম সিদ্দিকী।

 উপমহাদেশের ইসলামী আন্দালনের শীর্ষ নেতাদের অন্যতম।

 জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন।

 মাওলানা মওদূদীর ইনতেকালের পর তরজমানুল কুরআনের সম্পাদক।

 মার্কসবাদী সাহিত্যের ধর্মবেদ্বেষ ও শ্রেণী সংগ্রামের বিরুদ্ধে কবিতা ও গল্পের মাধ্যমে ইসলামের মানবিক নৈতিকাবাদ প্রচারক চল্লিশের দশকে।

 উর্দূ সাহিত্য পত্রিকা ‘চেরাগে রাহ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক।

 কবি, উপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, গবেষক।

 সীরাত গ্রন্থ ‘মুহসিনে ইনসানিয়াত’ এর লেখক।

 চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান একটি প্রবন্ধ। যা নঈম সিদ্দিকী লিখেন ষাট দশকের প্রথম দিকে “তা’মীরে সীরাতকে লাওয়াযিম” শিরোনামে।

চরিত্র

 Character, Nature,  خلق، سجيّة، طبع

 আল্লাহ বলেছেনঃ إنك لعلى خلق عظيم

 রাসূল সা. বলেছেনঃ إنما بعثت لأتمم مكارم الأخلاق

 হযরত আয়েশা বলেছেনঃ كان خلقه القرآن

 ইংরেজীতে একটা কথা আছেঃ Money is lost-nothing lost, Health is lost- something lost, but character is lost-everything lost.

 মানুষের যাবতীয় কার্যক্রমই চরিত্র।

 চরিত্র মানে মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন-মুমিন জীবন।

 মানুষের গুণবাচক ও প্রশংসা সূচক কাজকে বলে চরিত্র।

 চরিত্র ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মূখ্য হাতিয়ার।

 চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান” ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উদ্দেশ্যে।

ভূমিকা

 মানুষ যখন তৎপর হয়শয়তান তখন আরো তৎপর হয়ে উঠে অনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে।

 বর্তমান যুগের পৃথিবীর অবস্থা প্রমাণ করছে মানব সৃষ্টির সূচনায় শয়তান যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলতার হুবহু চিত্র ফুটে উঠেছে।

➧ শয়তানের চ্যালেঞ্জঃ

ثُمَّ لآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ وَلاَ تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ

“এর পর তাদের কাছে আসবো তাদের সামনের দিক থেকে, পিছনের দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে শুকর গোজারদের মধ্যে পাবেন না।” (আরাফঃ১৭)

➧ বর্তমান সময়ে ২টি শক্তি শয়তানের অনিষ্ঠতার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

১.  পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ও স্বার্থপূজারী সভ্যতা।

২.  সমাজতন্ত্রের নাস্তিক্যবাদী হামলা।

➧ পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ও স্বার্থপূজারী সভ্যতা।

যার মাধ্যমে জাতির নৈতিক চরিত্র নষ্ঠ করে দেয়া হচ্ছে। যেমনঃ মসজিদ থেকে কি প্রফিট/হজ্জ ওয়েস্ট/তাবলীগ ওয়েষ্ট।

➧ সমাজতন্ত্রের নাস্তিক্যবাদী হামলা।

যার মাধ্যমে জাতির ঈমান আকীদার মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইসলামের প্রতি ভালবাসার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেমনঃ মানুষ অর্থনৈতিক জীব, Unsigned is nothing, Religion is opium for the people, Eat drink be marry.

➧ সমাজ সাধারণ অবস্থায় থাকলে নৈতিকতার উপর ঠিকে থাকা যায়। কিন্তু নৈতিক উশৃংখলায় সমাজ আক্রান্ত হলে নৈতিক বৃত্তির উপর ঠিকে থাকা সহজ ব্যাপার নয়।

➧ দুইটি উদাহরণঃ

ক. সমাজকে যদি একটা মহামারী আক্রান্ত এলাকা (Epidemic affected aria-المنطقة الوبائية) ধরে নেয়া হয়, তাহলে স্বাস্থ্য রক্ষায় এখান থেকে পলায়ন স্বার্থপরতা। তেমনি কল্যাণকামী বন্ধুদের মুসলমানিত্ব টিকানোর পরামর্শও স্বার্থপরতা।

খ.  আলোহীন দস্যু আক্রান্ত কাফেলার জন্য মাজারের বাতিগুলো যেমন অর্থহীন, তেমনি মসজিদে আশ্রয় সন্ধানী ঈমান, ইসলাম এবং তাকওয়া মহামারী আক্রান্ত সমাজের মানুষের জন্য অর্থহীন এবং স্বর্ণালংকার স্বরূপ।

➧ Unproductive মূলধনের থাকা না থাকা সমান। মূলধন বাজারে Circulation করার মাঝেই মূলধনের স্বার্থকতা। বিনিয়োগকারীর যোগ্যতা প্রমাণিত হয় Capital বাজারে ছাড়লে।

➧ মূলধন যারা বাজারে ছাড়তে রাজিতাদেরকে বলে ইসলামী আন্দোলনের কর্মী। তাদের ঈধঢ়রঃধষ হলো চরিত্র ও ঈমান।

➧ বিনিয়োগকারীর প্রতি পরামর্শঃ

১.  শুধু ক্ষতির আশংকা হতে বাঁচা নয়, বরং অধিক মূনাফা অর্জনের ব্যবস্থা গ্রহণ।

২.  সতর্কতা ও উপায় অবলম্বন করতে হবে ‘স্বল্প পূঁজিদার’ ব্যবসায়ীর ন্যায়।

৩.  মহামারীতে শুধুর রোগীর সেবা নয়, বরং নিজের প্রতিও নজর রাখা।

➧ নৈতিক চরিত্রকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা আর ঈমান আকীদাকে প্রকৃত অবস্থানে ধরে রাখার মাধ্যমে একজন মানুষকে তার ফিতরাতের উপর চলার জন্য এবং একজন মানুষের পুরো জীবনকে নৈতিকতার উপর টিকেয়ে রাখার কাজ হলো চরিত্র গঠন।

চরিত্র গঠনের মূল উপাদান ৩টি

১.  আল্লাহর সাথে সম্পর্ক।

২.  সংগঠনের সাথে সম্পর্ক।

৩.  সহযোগিদের সাথে সম্পর্ক।

আল্লাহর সাথে যথাযথ সম্পর্ক

➧ সমাজের অবস্থা যেহেতু খারাপ-মহামারির মতো। বিধায় এটা একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র। আর এখানে প্রধান ও প্রথম প্রয়োজন-আল্লাহর সাথে সম্পর্ক।

➧ আল্লাহর সাথে সম্পর্কে একটা Standerd আছে। তা সর্বনিম্ন মানে নেমে আসলে ৩টি ক্ষতি হয়ঃ

১.  আমাদের কার্যক্রম দুনিয়ার রঙে রঙিন হয়ে উঠে।

২.  মনের দরজা শয়তানের জন্য ওপেন হয়ে যায়।

৩.  গোনাহের সিপাহীরা বিবেকে প্রবেশে বাঁধা থাকেনা।

➧ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বজায় ও উন্নতি রাখার জন্য করণীয়ঃ

১.  মৌলিক ইবাদত সমূহ পালন।

২.  কুরআন ও হাদীস সরাসরি অধ্যয়ন।

৩.  ইফল ইবাদতের উপর যথাসম্ভব গুরুত্বারোপ।

৪.  সার্বক্ষনিক যিকির ও দোয়া।

১. মৌলিক ইবাদত সমূহ পালনঃ

-    আশার দিকঃ কর্মীরা মৌলিক ইবাদত পরিত্যাগ করেন না।

-    নিরাশার দিকঃ ইবাদতের কাংখিত মানের নিচে আমাদের অবস্থান।

-    আশংকাঃ এ অবস্থা নিযে বড় বড় সংগ্রামে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে-এমনকি জীবন সংগ্রামও।

-    লক্ষনীয়ঃ

১.  নিয়মানুভর্তিতা।

২.  আল্লাহর ভয়ে ভীত, নত এবং বিনম্র হওয়া।

৩.  আনুষ্ঠানিকতাকে যথেষ্ট মনে না করা।

৪.  ইবাদতের মাধ্যমে লক্ষ্য কি তা কুরআন হাদীস হতে জানা। যেমনঃ

ইবাদতঃ    يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

নামাযঃ      إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ

রোযাঃ      يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

কিসাসঃ     وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَاْ أُولِيْ الأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

হজ্জঃ        বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ় করণ।

যাকাতঃ     সম্পদের লোভ কমানো, গরীরের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা।

৫.  জামায়াতে নামায আদায়ের লোভ।

৬.  ইবাদতের সাথে সাথে আত্মবিচার। 

২. কুরআন ও হাদীস সরাসরি অধ্যয়নঃ

➧ এ আমলের লক্ষ্য হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্কের বিকাশ ও পরিপুষ্টি সাধন।

➧ সমাজের যে অবস্থা তাতে আমাদের অতিক্রম করতে হবে-

১.  জাহেলিয়াতের অন্ধকার গলিপথ।

২.  দস্যু দলের বুহ্য ভেদ করে।

➧ এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন জ্ঞানের ও দ্বীনি শিক্ষার প্রদীপ।

➧ সরাসরি অধ্যয়ন মানেঃ

১.  মূল কিতাব থেকে অধ্যয়ন।

২.  পটভূমি মানসে নিয়ে এসে অধ্যয়ন।

➧ কুরআন হাদীস আমাদের আদর্শ ও মতবাদের উৎসা এবং হকের ঔষধ। এগুলো নিয়মিত সেবন করলে আদর্শ বিরোধী বাস্প হতে রক্ষা করবে।

➧ কিছু বই পড়ে সবজান্তা মনে করা বা মাত্র একবার অধ্যয়নকারীকে বারবার ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন জরুরী।

৩. নফল ইবাদতের উপর যথা সম্ভব গুরুত্বারোপঃ

➧ এ আমল সসম্পর্ককে সূদৃঢ় করার জন্য।

➧ নফল ইবাদত করতে হবে নিয়মিত এবং গোপনীয় ভাবে।

➧ এক্ষেত্রেঃ

১.  তাহাজ্জুদ নামায-যা সৈন্যদের কঠিন পর্যায় অতিক্রমে সর্বোত্তম সহায়ক।

২.  নফল রোযা-মাসে ৩দিন।

৩.  আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়-

-      একটা অংশ দ্বীনের জন্য আলাদা করা।

-      আন্দোলনের শিরা উপশিরায় রক্ত সঞ্চালনে বায়তুলমালে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ।

-      সাহাবীদের উদাহরণ সামনে রাখা।

৪. সার্বক্ষনিক যিকির ও দোয়াঃ

➧ সন্যাসী যিকির নয়বরং দৈনন্দিন কাজে নবীর শিখানো যিকির ও দোয়া।

➧ দোয়া গুলো পড়তে হবে সচেতন ভাবেনিজেকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত রেখে।

➧ প্রত্যেক কর্মীকে সচেতন মনে সার্বক্ষনিক যিকিরে অভ্যস্ত হতে হবে।

➧ সে যিকির ফলদায়ক নয়যা-

১.  যাতে মানসিক অবস্থার যোগ নেই।

২.  যা আল্লাহর উপস্থিতির অনুভূতিহীন।

৩.  যা প্রদর্শনেচ্ছার কলুষ যুক্ত।

৪.  যা নিছক স্নায়ুবিক ব্যামের পর্যায়ভূক্ত।

সংগঠনের সাথে সম্পর্ক

  ঢিলে সংগঠন নিয়ে বিরাট অভিযানে যওয়া যায়না। যেমনঃ ভাংগা গাড়ী---

     সংগঠন দলের স্বাভাবিক প্রয়োজন হলেও আমাদের নিকট প্রয়োজন ৪টি কারণেঃ

১. দ্বীনদারী।

২. নৈতিকতা।

৩. আল্লাহর গোলামী।

৪. রাসূলের আনুগত্য।

 সাংগঠনিক দূর্বলতা স্বাভাবিক ভাবে কাজের ক্ষতি করে। আমাদের নিকট সাংগঠনিক দূর্বলতা পরকালীন ক্ষতির কারণ।

 সংগঠনকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে প্রত্যেককে প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে ৪টি পয়েন্টঃ

১.  আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য সংগঠনের মেরুদন্ড।

২.  আনুগত্য কেবল সৎকর্মে।

৩.  ব্যক্তির পরিবর্তনে আনুগত্যের পরিবর্তন হয়না।

৪.  দায়িত্বশীলের কর্তব্য।

১. আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য সংগঠনের মেরুদন্ড।

➧ গুরুত্বঃ

১.  এ ভারসাম্য ছাড়া সংগঠনের অস্তিত্ব অর্থহীন।

২.  এ ভারসাম্য নষ্ট করা গুনাহের শামীল।

৩.  এ ভারসাম্য নষ্ট করা আল্লাহ ও রাসূলের নাফরমানীর শামীল।

৪.  এ অপরাধের পর দুনিয়া-আখেরাতে সাফল্য সম্ভব নয়।

➧ আনুগত্য ৩ প্রকার এবং তা ওয়াজিবঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ

“আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং আনুগত্য করো তোমাদের মধ্যে যে কর্তৃত্বশীল” (সূরা আন নিসাঃ ৫৮)

১.  আল্লাহর আনুগত্য।

২.  রাসূল সা. এর আনুগত্য।

৩.  কর্তৃত্বশীলদের আনুগত্য।

➧ আনুগত্য সম্পর্কে হাদীসঃ

من أطاعني فقد أطاع الله ومن عصاني فقط عصى الله ومن يطع الأمير فقد أطاعني ومن عصى الأمير  فقد عصاني

“যে আমার আনুগত্য করে, সে আল্রাহর আনুগত্য করে এবং যে আমার নাফরমানী করে, সে আল্লাহর নাফরমানী করে। আর যে আমার (অর্থাৎ রাসূলের নিযুক্ত অথবা তাঁর আনুগত্যকারী) আমীরের আনুগত্য করে, সে আমার আনুগত্য করে এবং আমার আমীরের নাফরমানী করে, সে আমার নাফরমানী করে।”

➧ হযরত আবু হুরায়রা রা. এর উক্তিঃ নেতৃবৃন্দের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্য, তাদের নাফরমানী আল্লাহর নাফরমানীর শামীল।

➧ হাদীস সমূহের বক্তব্যঃ সৎ কর্মসমূহে নেতৃত্বের আনুগত্য করা শরীয়াতের গুরুত্বপূর্ণ ফরয ও ওয়াজিব সমূহের অন্তর্ভূক্ত।

➧ হাদীসঃ নাক কাটা হাবশীকেও যদি আমীর করা হয়, তাহলেও তার আনুগত্য অপরিহার্য।

➧ হাদীসঃ যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে কিয়ামতে আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার কোন দলীল থাকবেনা।

➧ ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মর্যাদা দুনিয়াবী দল সমূহের নেতৃবৃন্দের ন্যায় নয়। বরং রয়েছে একটি শরয়ী মর্যাদা। তাদের অধিকার, কর্তব্য এবং সুযোগ-সুবিধা নির্ধারিত হবে শরীয়াতের ভিত্তিতে।

➧ কুরআন সুন্নাহ হতে প্রকাশ্য সরে দাড়াননি, এমন দায়িত্বশীলদের সাথে নিম্নোক্ত আচরণ কবিরা গুনাহের অন্তর্ভূক্তঃ

১.  নির্দেশ লংঘন করা।

২.  অসন্তুষ্ট চিত্তে আনুগত্য করা/সানন্দ ও সাগ্রহে আনুগত্য না করা।

৩.  হিংসা-বিদ্বেষ করা।

৪.  কল্যাণ কামনা না করা।

৫.  সানন্দ ও সাগ্রহে আনুগত্য না করা।

৬.  ষড়যন্ত্র করা।

৭.  গীবত করা।

৮.  তার বিরুদ্ধে অসন্তুষ সৃষ্টি করা।

৯.  যথার্থ অবস্থা ও ঘটনাবলী অবগত না করা।

১০.     নির্ভূল পরামর্শ দানের ব্যাপারে কার্পন্য করা।

১১. তাঁর গোপন কথা প্রকাশ করে বেড়ানো।

➧ এগুলো মানুষের আখেরাত নষ্ট করে মুনাফিক বানিয়ে ফেলে।

২. আনুগত্য কেবল সৎকর্মেঃ

➧ আয়াতঃ وَلاَ تَعَاوَنُواْ عَلَى الإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ “গোনাহ ও আল্লাহর নির্ধারিত সীমালংঘনমূলক কাজে পরস্পরের সহযোগী হয়ো না।” (সূরা আল মায়িদাহঃ ০২)

➧ হযরত উমর রাঃ  “বন্ধুগন! তোমাদের কেউ যদি আমার নীতি ও কাজে বক্র দেখে, তাহলে আমার এই বক্রতাকে সোজা করে দেয়া তার কর্তব্য হয়ে দাড়াবে।”

➧ নিজের দৃষ্টিভংগীর সাথে না মিলার কারণে আনুগত্য না করার সুযোগ নেই। তবে অধীনস্থদের জন্য কর্তৃত্বশীলদের গঠনমূলক সমালোচনার অধিকার আছে।

➧ ইসলামী আন্দোলনের সমালোচনার বৈশিষ্টঃ

১.  সন্দেহ সংশয়ের ভিত্তিতে সমালোচনা করা নয়্

২.  সমালোচনা হয় সু-ধারণার ভিত্তিতে।

৩.  আপত্তি ও অভিযোগের পরিবর্তে কল্যানকামিতা ও সৎপরামর্শেও সুর।

৪.  সমালোচকের তিক্তহীন মনোভাব-শ্রোতার বিরক্তিহীন মনভাব।

৫.  প্রতিশোধ স্পৃহাহীন সমালোচক।

৬.  সমালোচনা হয় সামনা সামনী-গীবতমুক্ত।

➧ সমালোচনার অধিকারের অতিপ্রয়োগ বিপর্যয়ের কারণ।

➧ অন্যায় সমালোচনার বড় আলামত-আনুগত্যের পথে বাঁধা।

৩. ব্যক্তির পরিবর্তনে আনুগত্যের পরিবর্তন হয়নাঃ

➧ সংগঠনের নানা যোগ্যতার ও নানা রুচির দায়িত্বশীলের আগমন ঘটে। যা স্বাভাবিক। আর এক্ষেত্রে সবার সকল আচরণ সকলের সব সময় পছন্দ না হওয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আনুগত্য হবে হাদীসের আলোকে।

➧ হাদীসঃ “একজন নাককাটা হাবশীকেও যদি তোমাদে ইমাম করা হয়, তাহলে তার নির্দেশ শ্রবণ কর এবং তার প্রতি আনুগত্য কর। এক্ষেত্রে তার চেহারা সুরত লেবাস ও রুচির দিকে সৃষ্টিপাত করোনা।

➧ নেতৃত্ব ব্যক্তিত্বের চারিদিকে আবর্তিত হয়না।

➧ যেমন ইতিহাসঃ নবী, আবুবকর, উমার, উসমান, আলী।

৪. দায়িত্বশীলের কর্তব্যঃ

➧ কর্মীরা তখনই যথার্থ আনুগত্য করতে পারে, যখন দায়িত্বশীল কর্তৃত্বের ব্যাপারে নিজেদের দায়িত্ব পুরোপুরি আদায় করে।

➧ দায়িত্বশীলদের কর্তব্য ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশঃ

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّهِ لِنتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنتَ فَظّاً غَلِيظَ الْقَلْبِ لاَنفَضُّواْ مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّهِ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ

“এটা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ যে, আপনি এদের (মুসলমানদের) প্রতি কোমল। যদি আপনি কঠোরভাষী ও তিক্ত মেজাজ সম্পন্ন হতেন, তাহলে এরা আপনার চারপাশ থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেতো। কাজেই এদের ত্রুটিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখুন, এদের জন্য সাফায়াত চান এবং বিভিন্ন বিষয়ে এদের সাথে পরামর্শ করুন। অতঃপর পরামর্শের পর যখন কোন বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প হয়ে যায়, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ (তার উপর) ভরসাকারীকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৫৯)

১.  ব্যবহারে সমতা এবং প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার।

২.  ধৈর্য ও ক্ষমার মানসিকতা।

৩.  পারস্পরিক পরামর্শ গ্রহণ।

৪.  সিদ্ধান্তে অনড়।

৫.  বিবিধ।

➧ ব্যবহারে সমতা এবং প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার।

আল্লামা ইকবালের মতেঃ “সংগঠনের বিচিছন্ন হয়ে যদি কেউ হারামের দিকে সংশিয়িত হয়, তাহলে বুঝতে হবে ঐ সংগঠনের দায়িত্বশীলের ব্যবহার প্রতিপূর্ণ নয়।”

➧ ধৈর্য ও ক্ষমার মানসিকতা।

-   অধীনস্তদের দূর্বলতা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা এবং দোয়া করা।

➧ পারস্পরিক পরামর্শ গ্রহণ।

-   পারামর্শের উপকারিতাঃ ৭টি-

১.  পারস্পরিক আস্তা বৃদ্ধি পায়।

২.  সন্দেহ সংশয় দূরীভূত হয়।

৩.  সিদ্ধান্তকে কার্যকরী করা সহজ হয়।

৪.  সংগঠন মজবুত হয়।

৫.  বিভিন্ন মন মিস্তিষ্কের মিলন ঘটে।

৬.  পারস্পরিক ঐক্য স্থাপিত হয়।

৭.  জনশক্তি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রস্তুত থাকে।

-   পরামর্শের শরয়ী মর্যাদা-ফরয।

-   যিনি যে বিষয়ে পরামর্শ দানের যোগ্য তার নিকট থেকে সে বিষয়ে পরামর্শ চাইতে হবে।

➧ সিদ্ধান্তে অনড়।

-   সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর মতবিরোধ এবং নানা মতামত আসতে পারে। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলানো যাবেনা।

-   সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তা বদলানো ক্ষতিকর দিকঃ

১.  সাফল্যের সাথে কোন একদিকে অগ্রসর হওয়া যায়না।

২.  দায়িত্বশীলের মনে ইতস্তত ও চিন্তার সৃষ্টি হয়।

৩.  দলে স্থায়ী অস্তিরতার সৃষ্টি হয়।

➧ বিবিধ।

১.  চিঠি-সার্কূলারের শরয়ী মর্যাদা আমর বিল মারুফ সমতূল্য। বিধায় আনুগত ্য করতে হবে উলিল আমর মনে করে।

২.  সময়ানুবর্তিতাঃ আমরা প্রত্যেকে একটা চলন্ত মেশিনের ন্যায়।

৩.  আল্লাহর নিকট জবাবদিহির মনোভাব নিয়ে কর্তৃত্ব ও আনুগত্য করা।

৪.  আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গিকার স্মরণে রেখে সাংগঠনিক শৃংখলাকে আমানত মনে করে দায়িত্ব পালন।

সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক

  ইসলামের চাহিদানুযায়ী কর্তৃত্ব ও আনুগত্য ঠিক মত প্রবর্তিত হয়, সেখানে ব্যক্তিদের পারস্পরিক সম্পর্ক নৈতিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে।

 ➧  সহযোগীদের সাথে সম্পর্কের নৈতিক ভিত্তি ৬টিঃ

১.  সংবাদ গ্রহণ করা যাচাই করে।

২.  মানবিক দূর্বলতার কারণে সৃষ্ট মনমালিন্য দূর করে ভ্রাতৃত্ব পূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি।

৩.  বিদ্রুপ, দোষ খোঁজা এবং অসম্মান জনক নাম ব্যবহার হতে বিরত থাকা।

৪.  কূ-ধারণা থেকে বিরত থাকা।

৫.  গোয়েন্দাগিরি না করা।

৬.  গীবত না করা।

১. সংবাদ গ্রহণ করা যাচাই করে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْماً بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ

“হে ঈমানদারগন! যদি কোন ফাসেক ব্যক্তি তোমাদের নিকট কোন খবর নিয়ে আসে, তাহলে (সে সম্পর্কে চিন্তা গ্রহনের পূর্বে) অনুসন্ধান করো, যাতে করে তোমরা অজ্ঞাতে (বিক্ষুদ্ধ হয়ে) কোন দলের উপর আক্রমণ না করো এবঙ পরে এজন্য পস্তাতে না হয়।” (সূরা আল হুজুরাতেঃ ০৬)

২. মানবিক দূর্বলতার কারণে সৃষ্ট মনমালিন্য দূর করে ভ্রাতৃত্ব পূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি।

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

“ঈমানদারের পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই নিজের ভাইদের মধ্যে সদ্ভাব প্রতিষ্ঠিত করো।” (সূরা আল হুজুরাতঃ ১০)

৩. বিদ্রুপ, দোষ খোঁজা এবং অসম্মান জনক নাম ব্যবহার হতে বিরত থাকা।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْراً مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْراً مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের একদল যেন অন্য দলের প্রতি বিদ্রুপ না করে, কেননা হতে পারে তারা এদের তুলনায় ভালো লোক। আর তোমাদের মেয়েরা যেন অন্য মেয়েদের বিদ্রুপ না করে, কেননা হতে পারে তারা এদের তুলনায় ভালৈা। আর তোমরা পরস্পরের দোষ খুঁজে বেড়িয়েঅ না, পরস্পরের জন্য অসম্মাণজনক নাম ব্যবহার করো না। কেউ ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। এসব কাজ থেকে যারা তাওবা করে তারা জালেম।” (সুরা আল হুজুরাতঃ ১১)

৪. কূ-ধারণা থেকে বিরত থাকা।


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيراً مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضاً أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتاً فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ

“হে ঈমানদাগণ! খুব বেশী কু-ধারণা পোষণ থেকে বিরত থাক। কেননা অনেক কু-ধারণা গোনাহর নামান্তর। অন্যের অবস্থা জানবার জন্য গোয়েন্দাগিরি করো না এবং কারুর গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? (না, করবে না) বরং তোমরা তা ঘৃণা কর। আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুলকারী ও দয়াময়।” (সূরা আল হুজুরাতঃ ১২)

§   - সন্দেহ –সংশয়।

§   - পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ।

§   - এদিক ওদিক শুনে দোষের পাহাড় গড়া যাবেনা।

§   - ভিত্তিহীন দোষারোপ একটি গোনাহ।

৫. গোয়েন্দাগিরি না করা।

§   وَلَا تَجَسَّسُوا এবং অন্যের অবস্থা জানবার জন্য গোয়েন্দাগিরি করো না।

§   - নিম্নোক্ত কাজ গোয়েন্দাগিরির অন্তর্ভূক্ত-

১. দোষ খোঁজে বেড়ানো।

২. গোপন কথা জানার জন্য টু-মারা।

৩. বিভিন্ন বৈঠকের কথা জানার তৎপরতা।

৬. গীবত না করা।

وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضاً أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتاً فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ

“এবং কারুর গীবত করো না। তোমাদের কেউ কি নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? (না, করবে না) বরং তোমরা তা ঘৃণা কর। আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা কবুলকারী ও দয়াময়।” (সূরা আল হুজুরাতঃ ১২)

উপসংহার

 ➧ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন, দলীয় নীতি ও শৃংখলার আনুগত্য এবং নৈতিক গোনাবলী নিজেদের মাঝে সৃষ্টি করে যদি কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ি, তাহলে পূঁজি কয়েকগুণ মুনাফাসহ ফিরে আসবে।

অন্যান্য আরো বইয়ের নোট পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।


Post a Comment

0 Comments