বই নোট - সাহাবায়ে কিরামের মর্যাদা- মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

বই বই নোট - সাহাবায়ে কিরামের মর্যাদা- মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

বই নোটসাহাবায়ে কিরামের মর্যাদা

সাইয়েদ আবুল লা মওদূদী

অনুবাদ সংকলনঃ আবদুস শহীদ নাসিম

আমাদের কথাঃ

 রাসূল সাঃ বলেছেনঃ সাহাবীরা উম্মতের সর্বোত্তম মানুষ

 কুরআনের ঘোষনাঃ সাহাবীদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন

 সাহাবায়ে কিরামের জীবনের সকল কর্ম ছিল কিতাবুল্লাহ সুন্নাতে রাসূলের পরিপূর্ণ রূপায়ন

 সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন এক একটি উঁচু আলোর মিনারঃ

-    ব্যক্তিগত জীবনে ঈমান, দীনের ইলম, নিষ্ঠা, বিশ্বাস, আমল, দীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে কুরবানীর মাধ্যমে

-    সামষ্ঠিক জীবনে ভ্রাতৃত্ব, ভালবাসা, দয়া, অনুগ্রহ, আত্মত্যাগ, কল্যাণ কামনা, সংঘবদ্ধতা, চিন্তার ঐক্য, সৎ কাজের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে

 সাহাবায়ে কিরামের মর্যাদা আর গুণাবলী নিয়ে লিখেছেন মুহতারাম মাওলানা তার তাফসীর, সীরাত আলোচনা বাস্তব জীবনে কুরআনের সমাজ গঠনের সংগ্রামে

 এই বইতে তাফহীমূল কুরআন মাওলানা অন্যান্য গ্রন্থ থেকে এবং আসেম নুমানী সাহেবের বই থেকে সংকলন করা হয়েছে

﴿مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا ۖ سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ ۚ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ﴾

মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল৷ আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং নিজেরা পরস্পর দয়া পরবশ৷ তোমরা যখনই দেখবে তখন তাদেরকে চেহারায় সিজদার চিহ্ন বর্তমান যা দিয়ে তাদেরকে আলাদা চিনে নেয়া যায়৷ তাদের এ পরিচয় তাওরাতে দেয়া হয়েছে৷ আর ইনযীলে তাদের উপমা পেশ করা হয়েছে.........৷ (সূরা আল ফাতহঃ ২৯)

রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবীগন

০১. সাহাবায়ে কিরামের আদর্শঃ

 কুরআনে হাকীমের সূরা আহযাবে ২১ এবং ২২ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় মাওলানা রাহি, তাফহীমুল কুরআনে যে কথাগুলো বলেছেন, তার সারাংশ এখানে তুলে ধরা হয়েছে

 সূরা আল আহযাবের ২২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ

﴿وَلَمَّا رَأَى الْمُؤْمِنُونَ الْأَحْزَابَ قَالُوا هَٰذَا مَا وَعَدَنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَصَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ۚ وَمَا زَادَهُمْ إِلَّا إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا﴾

আর সাচ্চা মুমিনদের (অবস্থা সে সময় এমন ছিল,)যখন আক্রমণকারী সেনাদলকে দেখলো তারা চিৎকার করে উঠলো, “এতো সেই জিনিসই যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ ও তাঁর রসূল আমাদের দিয়েছিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা পুরোপুরি সত্য ছিল৷” এ ঘটনা তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণ আরো বেশী বাড়িয়ে দিল৷

 সূরার ২১ নম্বর আয়াতে ﴿لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ﴾ রাসূলের জীবনেই আদর্শ রয়েছে বলার সাথে সাথে এই ২২ নম্বর আয়াতে সাহাবায়ে কিরামদের কর্মনীতিকে মুসলমানদের জন্য আদর্শ নমুনা হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে

-      এর মাধ্যমে মুসলমান কাফেলায় থাকা বাহ্যিক ঘোষনাদানকারী তথা মুনাফিকদের পৃথক করা হয়েছে যারা একসাথে নামাযের জামায়াতে শামীল হতো কিন্তু আন্দোলনের কঠিন পরীক্ষার সময় দুই পক্ষকে চিনা যেতো কে সত্যিকার মুসলমান আর কে নামকাওয়াস্তে

০২. সাহাবায়ে কিরাম, কুরাইশ নেতৃবৃন্দ এবং রাসূলে খোদা সাঃ

 কুরআনে হাকীমের সূরা আল কাহফ ২৮ নম্বর আয়াতে ব্যাখ্যায় মাওলানা যে কথাগুলো বলেছেন, তার সারাংশ এখানে তুলে ধরা হয়েছে

 এখানে রাসূল সা. এর সাথে সাহাবায়ে কিরাম বনাম সাহাবায়ে কিরামের আচরণ কি ধরণের হবে, সেই দিকে রাসূলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে

 কুরাইশদের দৃষ্টিভংগী ছিল তারা সমাজের নিচু বা কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে উঠবস করাটা নিজেদের আত্মসম্মাণে হানি মনে করতো

 রাসূল সা. চাচাত ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণিত একটি হাদীসে যে অবস্থাটা বর্ণনা করা হয়েছেঃ

কুরাইশ নেতা রাসূল সা.কে বলতোঃ বেলা, সুহাইব, খাব্বাব আর ইবনে মাসউদ এর মতো দরিদ্র মানুষ সব সময় তোমার সাথে থাকে আমরা তো তাদের সাথে বসতে পারিনা এদের সরিয়ে দাও, তখন আমরা তোমার কাছে আসা যাওয়া করতে পারি এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারবো-তুমি আসলে কি বুঝাতে চাও

 কুরাইশদের এই দৃষ্টিভংগীর বিরুদ্ধে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলে দিলেনঃ

﴿وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ ۖ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا﴾

আর নিজের অন্তরকে তাদের সংগ লাভে নিশ্চিন্ত করো যারা নিজেদের রবের সন্তুষ্টির সন্ধানে সকাল-ঝাঁঝে তাঁকে ডাকে এবং কখনো তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরাবে না৷ তুমি কি পার্থিব সৌন্দর্য পছন্দ করো? (সূরা আল কাফহঃ ২৮)

 রাসূল সা.কে নসিহত করা হলোঃ

কুরাইশদের চেয়ে আন্দোলনের সাথী যারা, তাদের আর্থিক সামাজিক অবস্থা যত নিচেই হোক, তারাই গুরুত্বপূর্ণ

০৩. সাহাবায়ে কিরামের জন্যে ফেরেশতাদের দোয়াঃ

 কুরআনে সূরা আল মুমিনঃ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ

﴿الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا﴾

যারা আল্লাহর আরশ বহন করছে আর যারা উপস্থিত রয়েছে তাঁর চারপাশে তারা সকলেই তাদের রবের হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ করছে তারা তাঁর প্রতি ঈমান রাখে আর যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্যে মাগফিরাতের দোয়া করে

-    সাহাবায়ে কিরামদের ব্যাপারে কুরাইশদের আচরণ, যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, এর কারণে কাফেরা তাদের ব্যাপারে চলছিলঃ তীব্র বিরোধী কথাবার্তা, চলছিল যুলুম নিপীড়ন আর তারা নিজেরা ছিলেন কাফেরদের তুলনায় অক্ষম অসহায়

-    অবস্থায় সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন মনভাংগা

 উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে সাহাবায়ে কিরামদের সান্তনা দেয়া হলো বলা হলোঃ

তোমাদের মর্যাদা এতো বড় যে, সাধারণ ফেরেশতা নয়-বরং আল্লাহর আরশ বহণকারী ফেরেশতারা তোমাদের সাহায্য কারা, তারা তোমাদের ন্য সুপারিশ করে, ফেরেশতাদের মাঝে যারা সবচেয়ে বড় তারাও তোমাদের প্রতি বিশেষ আগ্রহী সহানুভূতিশীল বিধায়, এই কাফেরদের আচরণে মনভাংগা হওয়ার কোন কারণ নাই

০৪. রাসূলুল্লাহ সা. এর তত্ত্বাবধান ও ফয়েজপ্রাপ্তঃ

 এখানে দুইজন সাহাবীর কথা বিবেচ্যঃ . হযরত উমর রা. . হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা.

 একজন ছিলেন শীর্ষ নেতা, আরেকজন দিগবিজয়ী সিপাহসালার কিন্তু হযরত উমর রা. এক সময় এই দিগবিজয়ীকে তার পদ থেকে পদচ্যুত করে মদীনায় ফিরিয়ে আনেন কিন্তু দুইজনই রাসূলের তত্ত্বাবধান ফয়েজপ্রাপ্ত

 এই দুইজন সাংঘাতিক ধরণের বুজুর্গ ব্যক্তি এবং দ্বীনের খেদমত অনস্বীকার্য

 সাহাবায়ে কিরামদের সাথে হিংসা বিদ্বেষ করা ইসলাম রাসূল সা. এর সাথে দুশমনী করার সমান

 হযরত উমরঃ

-    ইসলামের প্রচার, প্রসার, প্রতিষ্ঠা শ্রেষ্টত্বে জন্য হযরত উমরের যে অবদান, তা আল্লাহর ফয়েজ আর রাসূল সা. এর সুহবতে ফসল

-    হযরত আবু বকর, উসমান, আলী রা. সহ সকল সাহাবী যে উৎসা থেকে ফয়েজপ্রাপ্ত হোন, হযরত উমর একই উৎস থেকে ফয়েজ প্রাপ্ত হয়েছেন

-    হযরত উমরের এই বিকাশ তার একা ছিল না, রাসূল সা. বিশ্বমানবতার বিকাশের যে নমুনা পেশ করেছিলেন, তিনি তারই একজন

০৫. সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন সর্বোত্তম মানুষঃ

 কুরআনে সাহাবায়ে কিরামদের পরিচয় দিতে কুরআনে বলা হয়েছেঃ

﴿سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ﴾

তাদের মুখমন্ডলে সিজদা সমুহে চিহ্ন ভাস্বর হয়ে আছে, যার দ্বারা তারা স্বাতন্ত্র সহকারে পরিচিত (সূরা আল ফাতহঃ ২৯)

 সাহাবীদের দেখলেই বুঝা যায় ওরা সর্বোত্তম মানুষ

-    আল্লাহর আনুগত্যের নূর তাদের চেহায় ফুটে উঠে জ্বলজ্বল করে

-    এটা হয় তাদের আল্লাহভীতি, বিশাল হৃদয়, মর্যাদ, মহত্ব, নৈতিকতা ইত্যাদির প্রভাবে

-    সিজদা করতে করতে কপালে দাগের চিহ্ন পড়া নয়, বরং আল্লাহর দরবারে নত হওয়ার কারণে তাদের চরিত্রে ও চেহারার নূরানীতে ফুটে উঠে

-    মানুষের চেহারা খোলা বইয়ের মতো-যার পাতায় পাতায় মানুষের মনের অবস্থা অংকিত হয়

-    অহংকারী মানুষের চেহারা আর নম্র কোমল মানুষের চেহারায় পার্থক্য থাকে

-    দুশ্চরিত্র আর সচ্চরিত্র ও সৎমনা মানুষের চেহারা আলাদা করা যায়

-    গুন্ড ও দূশ্চরিত্রবানের চেহারা আর আকৃতি এবং সম্ভ্রান্ত ও পবিত্র মানুষের চেহারা ও আকৃতিতে পার্থক্য থাকে

-    রাসূল সা. এর সংগী সাথীদের দেখা মাত্রই অনুধাবন করা যায় যে, ওরা সৃষ্টি সেরা মানুষ তাদের চেহারায় থাকে আল্লাহ ভীতির আলো

 ইমাম মালিক বলেনঃ

সাহাবায়ে কিরামরা যখন তাদের বাহিনীকে নিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে, তখন সেখানের খৃষ্টানরা বলতে লাগলোঃ ঈসা . এর হাওয়ারীদের যে গুণ এবং বৈশিষ্ট আমরা শুনে এসেছি, এরা দেখছি সেই গুণবৈশিষ্ট্যের অধিকারী

০৬. সাহাবায়ে কিরামের ত্যাগ ও কুরবানিঃ

একঃ আকাবার শপথঃ

আকবার শপথের কাহিনী উল্লেখ করে সাহাবায়ে কিরামদের ত্যাগ কুরবানীর কথা বলা হয়েছে

 নবয়াতের ১২ তম বছরে রাসূল সা. হজ্জের মওসুমে রাতের আধাঁরে মদীনা থেকে আসা ৭৫জনের একটি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ করেন

-    মদীনার আগের নাম ছিল ইয়াসবি যেখানে নবুয়াতে তিন-চার বছর সময়ে দাওয়াত পৌছে

-    মক্কার মানুষ ইসলামের দাওয়াত কবুল না করলেও মদীনার মানুষ তুলনামুলক সহজে এবং নির্দ্বিধায় ইসলাম গ্রহণ করে

 প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে রাসূল সা. তার সাহাবীদের নিজেদের দেশে হিজরতে অনুরোধ করে তাদেরকে সকল ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন

-    তারা রাসূলকে শুধু আশ্রয় নয় বরং তাদের নেতা ও শাসক হিসাবে হিজরতের আহবান করেন

-    তারা সাহাবায়ে কিরামদের শুধু আশ্রয় নয় বরং তাদেরকে একটি শক্তি হিসাবে গ্রহণ করে দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা মুসলমানদের এক জায়গায় জমা করে মদীনায় একটি শক্তিশালী সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন

 এই সুযোগটা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় অনুগ্রহ এবং একটি দূর্লভ সুযোগ-যা ইসলামের ইতিহাসে একটি বৈপ্লবিক পট পরিবর্তন নিয়ে আসে

-    রাসূল সা. তাদের প্রস্তাবে সম্মাতি দেন এবং হিজরত করে ইয়াসরিবকে মদীনাতুল ইসলাম  এবং দারুল ইসলাম গড়ে তুলেন

-    এই সম্পর্কে সূরা আল আনফালের ভূমিকায় তাফহীমুল কুরআনে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে

 মদীনার মানুষের এই ধরণের উদ্যোগের পরিণাম ছিলঃ

একটি ছোট্ট শহরকে আরবের খোলা তরবারী এবং পুরো দেশকে অর্থনৈতি, সামাজিক সাংস্কৃতিক বয়কটের সামনে দাড় করানো

 আকাবাতে জড়ো হওয়া ৭৫জনের প্রতিনিধিদল অত্যন্ত জেনে বুঝে নিজেদেরকে এই পরিণামের সম্মুখীন করেছিলেন এবং শপথ গ্রহণ করেছিলেন

-    সেই বাইয়াতকে আকাবার দ্বিতীয় শপথ নামে আখ্যা দেয়া হয়  তদানিন্তন সময়ের কিছু উক্তি তার প্রমাণ পেশ করে যেমনঃ

. যেখানে সবচেয়ে ছোট্ট সদস্য ছিলেন আসআদ ইবনে জাররাহ রা. তার উক্তিটি ছিল এমনঃ

رُوَيدًا يا أهلَ يَثرِبَ، إنَّا لم نَضرِبْ إليه أكْبادَ المَطيِّ إلَّا ونحن نَعلَمُ أنَّه رسولُ اللهِ، إنَّ إخْراجَه اليومَ مُفارَقةُ العَرَبِ كافَّةً، وقَتْلُ خيارِكُم، وأنْ تَعَضَّكُم السُّيوفُ، فإمَّا أنتم قَومٌ تَصْبِرون على السُّيوفِ إذا مَسَّتْكُم، وعلى قَتْلِ خيارِكُم، وعلى مُفارَقةِ العَرَبِ كافَّةً، فخُذوه وأجْرُكُم على اللهِ، وإمَّا أنتُم قَومٌ تَخافون مِن أنفُسِكُم خيفةً فذَروه، فهو أعْذَرُ عِندَ الله

থামো, হে ইয়াসরেব বাসীরা! আমরা একথা জেনে বুঝেই এঁর কাছে এসেছি যে, ইনি আল্লাহর রসূল এবং আজ এখান থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া মানে হচ্ছে সমগ্র আরববাসীর শত্রুতার ঝুঁকি নেয়া। এর ফলে তোমাদের শিশু সন্তানদেরকে হত্যর করা হবে এবং তোমাদের ওপর তরবারি বর্ষিত হবে। কাজেই যদি তোমাদের এ আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা থাকে তাহলে এঁর দায়িত্ব গ্রহণ করো। আল্লাহ এর প্রতিদান দেবেনআর যদি তোমরা নিজেদের প্রাণকে প্রিয়তর মনে করে থাকো তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দাও এবং পরিষ্কার ভাষায় নিজেদের অক্ষমতা জানিয়ে দাও। কারণ এ সময় অক্ষমতা প্রকাশ করা আল্লাহর কাছে বেশী গ্রহণযোগ্য হতে পারে”

২. আব্বাস ইবনে উবাদাহ ইবনে নাদলাহ রা. এর উক্তিঃ

هَلْ تَدْرُونَ عَلامَ تُبَايِعُونَ هَذَا الرَّجُلَ؟ قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: إِنَّكُمْ تُبَايِعُونَ عَلَى حَرْبِ الأَحْمَرِ وَالأَسْوَدِ مِنَ النَّاسِ، وَإِنْ كُنْتُمْ تَرَوْنَ أَنَّكُمْ إِذَا نَهَكَتْ أَمْوَالَكُمْ مُصِيبَةٌ، وَأَشْرَافُكُمْ قَتْلَى أَسْلَمْتُمُوهُ، فَمِنَ الآنَ فَهُوَ وَاللَّهِ إِنْ فَعَلْتُمْ خِزْيُ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، وَإِنْ كُنْتُمْ تَرَوْنَ أَنَّكُمْ وَافُونَ لَهُ بِمَا دَعَوْتُمُوهُ إِلَيْهِ عَلَى نُهْكَةِ الأَمْوَالِ وَقَتْلِ الأَشْرَافِ فَخُذُوهُ، فَهُوَ وَاللَّهِ خَيْرُ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ .

তোমরা কি জানো, এ ব্যক্তির হাতে কিসের বাইআত করছো? (ধ্বনিঃ হাঁ আমরা জানি) তোমরা এঁর হাতে বাইআত করে সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঝুঁকি নিচ্ছো।কাজেই যদি তোমরা মনে করে থাকো, যখন তোমাদের ধন-সম্পদ ধ্বংসের মুখোমুখি হবে এবং তোমাদের নেতৃস্থানীয় লোকদের নিহত হবার আশংকা দেখা দেবে তখন তোমরা এঁকে শত্রুদের হাতে সোপর্দ করে দেবে, তাহলে আজই বরং এঁকে ত্যাগ করাই ভাল। কারণ আল্লাহর কসম,এটা দুনিয়ায় ও আখেরাতের সবখানেই লাঞ্চনার কারণ হবে। আর যদি তোমরা মনে করে থাকো, এ ব্যক্তিকে তোমরা যে, আহবান জানাচ্ছো, নিজেদের ধন-সম্পদ ধ্বংস ও নেতৃস্থানীয় লোকেদের জীবন নাশ সত্ত্বেও তোমরা তা পালন করতে প্রস্তুত থাকবে, তাহলে অবশ্যি তাঁর হাতে আকড়ে ধরো। কারণ আল্লাহর কসম, এরই মধ্যে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ”।

৩. আর প্রতিনিধি দলের সকল সদস্য একসাথে যা বলেছিলেনঃ

فَإِنَّا وَاللَّهِ نَأْخُذُهُ عَلَى مُصِيبَةِ الأَمْوَالِ وَقَتْلِ الأَشْرَافِ

আমরা এঁকে গ্রহণ করে আমাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করতে ও নেতৃস্থানীয় লোকদের নিহত হবার ঝুকি নিতে প্রস্তুত”।

দুইঃ বদর যুদ্ধঃ

এই যুদ্ধ সাহাবায়ে কিরামদের জন্য ছিল সবচেয়ে কটিন পরীক্ষা কারণ তাদেরকে যুদ্ধ করতে হয়েছে নিজ বাপ, ভাই, ছেলে, চাচা, মামার বিরুদ্ধে

  প্রস্তুতিকালে মুসলমানদের সামনে একদিকে বানিজ্য কাফেলা, অন্যদিকে কুরাইশ সেনা দল রাসূল সা. আল্লাহর ওয়াদা সাহাবায়ে কিরামদের শুনালেনঃ দুটির মধ্য থেকে একটি তোমরা পেয়ে যাবে

 রাসূল সা. সাহাবীদের প্রশ্ন করলেনঃ

এর মধ্য থেকে তোমরা কোনটি চাও অধিকাংশ সাহাবী বানিজ্য কাফেলায় আক্রমনের পক্ষে মত দিলেন রাসূল সা. অন্য কিছু চাচ্ছিলেন বলে আবার প্রশ্ন রিপিট করলেন

 মুহাজির সাহাবী মিকদাদ ইবনে আমর রা. এর উক্তিঃ

يا رسول الله ﷺ امض لما أمرك الله فانا معك حيثما احببت، لا نقول لك كما قال بنو إسرائيل لموسى "اذهب أنت وربك فقاتلا إنا ههنا قاعدون"، ولكن اذهب أنت وربك فقاتلا إنا معكما مقاتلون، مادامت عين مناتطرف.

হে আল্লাহর রসূল! আপনার রব আপনাকে যেদিকে যাবার হুকুম দিচ্ছেন সেদিকে চলুন। আপনি যেদিকে যাবেন আমরা আপনার সাথে আছি। আমরা বনী ইসরাঈলের মত একথা বলবো নাঃ যাও তুমি তোমার আল্লাহ দুজনে লড়াই করো, আমরা তো এখানেই বসে রইলাম। বরং আমরা বলছিঃ চলুন আপনি ও আপনার আল্লাহ দুজনে লড়ুন আর আমরা ও আপনাদের সাথে জানপ্রাণ দিয়ে লড়াই করবো। যতক্ষণ আমাদের একটি চোখের তারাও নড়াচড়া করতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত” ।

 আকাবায় শপথ নেয়া আনসার সাহাবীদের পরীক্ষার সুযোগ এসে গেল রাসূল সা. আবারও একই প্রশ্ন করলেন  জবাবে হযরত সাদ ইবনে মুআয রা. বললেনঃ সম্ববত আপনি আমাদের সম্বোধন করে বলছেন? জবাব দিলেনঃ হ্যাঁ সাদ বললেনঃ

فقد آمنا بك، فصدقناك، وشهدنا أن ما جئت به هو الحق، وأعطيناك على ذلك عهودنا ومواثيقنا على السمع والطاعة، فامض يا رسول الله ﷺ لما أردت فو الذي بعثك بالحق لو استعرضت بنا هذا البحر فخضته لخضناه معك، ما تخلف منا رجل واحد، وما نكره أن تلقى بنا عدوًّا غدًا إنا لصبر في الحرب، صدق في اللقاء، ولعل الله يريك منا ما تقر به عينك، فسر بنا على بركة الله

আমরা আপনার ওপর ঈমান এনেছি। আপনি যা কিছু এনেছেন তাকে সত্য বলে ঘোষনা করেছি। আপনার কথা শুনার ও আপনার আনুগত্য করার দৃঢ় শপথ নিয়েছি। কাজেই হে আল্লাহর রসূল! আপনি যা সংকল্প করেছেন তা করে ফেলুন। সেই সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আপনি যদি আমাদের নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দেন তালে আমরাও আপনার সাথে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়বো। আমাদের একজনও পিছনে পড়ে থাকবে না। আপনি কালই আমাদের দুশমনদের সাথে যুদ্ধ শুরু করুন।এটা আমাদের কাছে মোটেই অপছন্দনীয় নয়। আমরা যুদ্ধে অবিচল ও দৃঢ়পদে থাকবো।মোকাবিলায় আমরা সত্যিকার প্রাণ উৎসর্গীতার প্রমাণ দেবো। সম্ভবত আল্লাহ আমাদের থেকে আপনাকে এমন কিছু কৃতিত্ব দেখিয়ে দেবেন, যাতে আপনার চোখ শীতল হবে। কাজেই আল্লাহর বরকতের ভরসায় আপনি আমাদের নিয়ে চলুন”।

 এটা কোন যেন তেন সিদ্ধান্ত ছিল না।এ সংক্ষিপ্ত সময়ে যারা যুদ্ধ করতে এগিয়ে এলেন,

-    তাদের সংখ্যা ছিল তিনশর কিছু বেশী (৮৬ জন মোহাজির, ৬১ আওস গোত্রের এবং ১৭০ জন খাযরাজ গোত্রের)।

-    এদের মধ্যে মাত্র দুতিন জনের কাছে ঘোড়া ছিল।

-    আর বাকি লোকদের জন্য ৭০ টির বেশী উট ছিল না। এগুলোর পিঠে তারা তিন চারজন করে পালাক্রমে সওয়ার হচ্ছিলেন।

-    যদ্ধাস্ত্রও ছিল একেবারেই অপ্রতুল।

-    মাত্র ৬০ জনের কাছে বর্ম ছিল।

 বদরের যুদ্ধঃ

-    এই অভিযান ছিল জেনে বুঝে মৃত্যুর মুখে এগিয়ে যাওয়ার মতো

-    কিছু সুবিধাবাদী-যারা ইসলামে দাখিল হলেও ইসলামের জন্য ধনপ্রাণ দিতে ছিল সংশয়িত-তারা এই অভিযানকে নিছক পাগলামী বলে অভিহিত করলো

-    সাচ্চাদিল ঈমানদাররা অনুভব করছিলেনঃ এটাই প্রাণ উৎসর্গ করার উপযুক্ত সময়

-    যুদ্ধে সাহাবায়ে কিরামদের অবিচল ঈমান ও সত্যনিষ্ঠার কারণে আল্লাহর সাহায্য আসলো এবং মুসলমানরা বিজয়ী হলো

-    ইসলাম বদর যুদ্ধের আগে ছিল একটি ধর্ম ও রাষ্ট্র বদর যুদ্ধের পর ইসলাম হয়ে গেল নিজেই রাষ্ট্র

তিনঃ গোটা আরবে ইসলামের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হওয়াঃ

 আরবদের অর্থনৈতিক অবরোধ, মদীনাবাসীদের বাঁচার পথ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া, মদীনা পার্শবর্তী মুশরিকদের শত্রুতা, মদীনার ভিতরে ইহুদী আর মুনাফিকদের বিষধর সাপের ভূমিকা এই সকল সমস্যা মোকাবেলা করে ইসলাম পুরো আরবে প্রভাব সৃষ্টি করে কেবলমাত্র রাসূল সা. এর দৃঢ় নেতৃত্ব, বুদ্ধি কৌশল আর সাহাবায়ে কিরামদের সীমাহীন ত্যাগ ও কুরবানীর ফলে

০৭. সাহাবায়ে কিরামের বৈশিষ্ট্যঃ

 এখানে সাহাবায়ে কিরামের বৈশিষ্ট আলোচনায় তাফহীমুল কুরআনের সূরা আশ শুআরা এর ১৩৯ নম্বর টীকাটি হুবহু উদ্বৃত্ত করা হয়েছে

 কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু মুহাম্মদ সা. সাথীদের আলোচনায় বলেছেন, মুহাম্মদ সা. এর ব্যক্তিগত আমল এবং তার সাহাবীদের আমল পর্যবেক্ষণে মুহাম্মদ সা. এর ভূমিকার প্রতি আল্লাহ লক্ষ্য রাখেন

﴿وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ﴾﴿الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ﴾﴿وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ﴾

আর সেই পরাক্রান্ত ও দয়াময়ের উপর নির্ভর করো যিনি তোমাকে দেখতে থাকেন যখন তুমি ওঠো এবং সিজ্‌দাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা ও নড়া-চড়ার প্রতি দৃষ্টি রাখেন৷ (সূরা আশ শুয়ারাঃ ২১৭-২১৯)

 “লক্ষ্য রাখেন” মানেঃ

. রাসূল যখন জামায়াতের সাথে নামায আদায় করেন, তখন তার সকল একটিভিটি আল্লাহ দেখেন

. সাহাবীরা হচ্ছেন তারা, যারা রাতের বেলা সিজদাতে অবনত থাকে আর সেই সিজদাবনত লোকদের অবস্থা রাসূল জেগে জেগে অনুসন্ধান করেন এজন্য যে, তারা তাদের পরকালের উন্নতির জন্য কি কি করছেন, তা বুঝা আর রাসূলের এই তত্ত্বাবধান কাজের প্রতিও আল্লাহ নজর রাখেন

. রাসূল ও সাহাবী মিলে সাংগঠনিক ভাবে মানুষের সংশোধনের জন্য যে কাজ সমূহ করেন, তাও আল্লাহ দেখেন

. সাহাবায়ে কিরামদের নিয়ে রাসূলের সকল পদক্ষেপ, আত্মগঠনের পরিকল্পনা এই সবকিছু আল্লাহর নজরে রয়েছে

০৮. সাহাবায়ে কিরামের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরোপ করার ভ্রান্তিঃ

 কুরআনে হাকীমে আল্লাহ বলছেনঃ

﴿وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ ۚ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ﴾

আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেমন জিহাদ করলে তার হক আদায় হয়৷তিনি নিজের কাজের জন্য তোমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি। (সূরা হজ্জঃ ৭৮)

 তাফহীমুল কুরআনে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সূরা হজ্জের ১২৯ নম্বর টীকায় বলা হয়েছেঃ

-    কুরআনে সাহাবায়ে কিরামদের মর্যাদা সম্পর্কে যে সব আয়াত এসেছে, সূরা হজ্জের শেষ আয়াতটি তার মধ্যে অন্যতম

-    সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে যারা অভিযোগ উত্থাপন করেন, এই আয়াত তাদের ভ্রান্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ

-    এই আয়াতে আল্লাহ জিহাদকে নিজের কাজ হিসাবে উল্লেখ করে এই কাজের জন্য যাদেরকে বাছাই করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন, তারা হচ্ছেন সাহাবায়ে কিরাম

-    সূরা বাকারার ১৪৩ নম্বর আয়াতে সাহাবায়ে কিরামদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا﴾

আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মাতে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা দুনিয়াবাসীদের ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী৷  

-    সূরা আলে ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে একই ভাবে বলা হয়েছেঃ

﴿كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّه﴾

এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য৷ তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷ 

০৯. সাহাবায়ে কিরামের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা নিষেধঃ

 কুরআনে হাকীমে সূরা হাশরে বলা হয়েছেঃ

﴿وَالَّذِينَ جَاءُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ﴾

(তা সেই সব লোকের জন্যও) যারা এসব অগ্রবর্তী লোকদের পরে এসেছে৷ যারা বলে: হে আমাদের রব, আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মাফ করে দাও যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে৷ আর আমাদের মনে ঈমানদারদের জন্য কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না৷ হে আমাদের রব, তুমি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু৷ (আয়াতঃ ১০)

 এই আয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলোঃ

. কোন মুসলমানের মনে অন্য মুসলমানের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা থাকবে না

. মুসলমানরা তাদের পূর্ববর্তী মুসলমানদের লানত বা অভিশাপ দেবেনা

. মুসলমানরা তাদের পূর্ববর্তী মুসলমানদের সাথে সম্পর্কহীন কথা বলবেনা

. মুসলমানরা তাদের পূর্ববর্তী মুসলমানদের মাগফিরাত কামনা করবে

. মুসলমান আরেক মুসলমানের কল্যাণকামী হবে ঈমানের সম্পরক্ ভ্রাতৃত্বের কারণে

. মুসলমান অন্য মুসলমানের অকল্যাণ, হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণার অধিকারী হবে-যখন তার কাছে ঈমানের মূল্য ও মর্যাদা কমে যাবে

. ঈমানের দাবী হলো, এক মুসলমানের অন্য মুসলমানের কোন ঘৃণা ও হিংসা-বিদ্বেষ থাকবেনা

 আনাস বিন মালিক রা. বর্ণিত হাদীস, যা ইমাম নাসায়ী সংকলন করেছেন যেখান হযরত আমর ইবনুল আস রা. এবং আব্দুল্লাহ নামক একজন আনসার সাহাবীর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে যাতে দেখানো হয়েছে যে,

রাসূল সা. আনসার সাহাবীর জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার ব্যাপারে তিনদিন একাধারে বললেন আর আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস খোঁজ নিয়ে দেখলেন, তিনি অতিরিক্ত কোন আমল করেন এমন কিছু নাই তবে তার বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, তার ভাষায়ঃ আমি আমার মনের মধ্যে কোন মুসলমানের জন্যে বিদ্বেষ পোষণ করিনা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা তাকে যে কল্যাণ দান করেছেন সে জন্যে তাকে হিংসাও করিনা

 উপরোক্ত সম্পূর্ণ হাদীসটি এইভাবেঃ

عن أنس بن مالك قال: كنَّا جلوسًا مع الرَّسول ﷺ فقال:يطلع عليكم الآن رجل من أهل الجنَّة، فطلع رجل من الأنصار، تَنْطِفُ لحيته من وضوئه، قد تَعَلَّق نَعْلَيه في يده الشِّمال، فلمَّا كان الغد، قال النَّبي ﷺ م مثل ذلك، فطلع ذلك الرَّجل مثل المرَّة الأولى، فلمَّا كان اليوم الثَّالث، قال النَّبي ﷺ مثل مقالته أيضًا، فطلع ذلك الرَّجل على مثل حاله الأولى، فلمَّا قام النَّبي ﷺ تبعه عبد الله بن عمرو بن العاص، فقال: إنِّي لَاحَيْت أبي فأقسمت ألَّا أدخل عليه ثلاثًا، فإن رأيت أن تُـؤْوِيَني إليك حتَّى تمضي، فَعلتَ. فقال: نعم. قال أنس: وكان عبد الله يحدِّث أنَّه بات معه تلك الليالي الثَّلاث، فلم يره يقوم من اللَّيل شيئًا، غير أنَّه إذا تعارَّ وتقلَّب على فراشه، ذَكَر الله عزَّ وجلَّ وكبَّر حتَّى يقوم لصلاة الفجر، قال عبد الله: غير أنِّي لم أسمعه يقول إلَّا خيرًا. فلمَّا مضت الثَّلاث ليال، وكدت أن أحتقر عمله، قلت: يا عبد الله، إنِّي لم يكن بيني وبين أبي غضب ولا هَجْرٌ، ولكن سمعت رسول الله ﷺ يقول ثلاث مِرَار: يطلع عليكم الآن رجل من أهل الجنَّة، فطلعت أنت الثَّلاث مِرَار، فأردت أن آوي إليك لأنظر ما عملك، فأقتدي به، فلم أرك تعمل كثير عملٍ، فما الذي بلغ بك ما قال رسول الله ﷺ ؟ فقال: ما هو إلا ما رأيت، غير أنِّي لا أجد في نفسي لأحد من المسلمين غِشًّا، ولا أحسد أحدًا على خير أعطاه الله إياه. فقال عبد الله: هذه التي بلغت بك، وهي التي لا نطيق.

হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসূল সা. এর সাথে বসা ছিলাম  রাসূল সা. বললেনঃ এখন তোমাদের মাঝে এমন এক ব্যক্তির আগমন ঘটবে, যে জান্নাতের অধিবাসী অতঃপর আনসারদের মধ্য থেকে একব্যক্তি উপস্থিত হলেন, তার দাড়ি থেকে সদ্য অযু করা পানির ফোটা ঝরে পড়ছিল তার বাম হাতে জুতা জোড়া রয়েছে  পরদিনও নবী সা. একই কথা বললেন এবং একই ব্যক্তি আগমন করলেন যেভাবে তিনি প্রথমবার এসেছিলেন তৃতীয় দিনের নবী সা. একই ধরণের উক্তি করলেন এবং একই ব্যক্তি প্রথম দিনের মতো উপস্থিত হলেন নবী সা. আলোচনা শেষে উঠে দাড়ালেন  আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. ব্যক্তিকে অনুসরণ করলেন তিনি ব্যক্তিকে বললেনঃ আমি আমার পিতার সাথে ঝগড়া করে শপথ করেছি, তিনদিন তার ঘরে যাবো না যদি এই তিনদিন আমাকে আপনার ঘরে থাকার সুযোগ দিনে, তাবে আমি সেখানে থাকতাম তিনি বললেনঃ হ্যাঁ থাকতে পারো

হযরত আনাস রা. বলেন, আব্দুল্লাহ বলতেন, তিনি তার সাথে সেখানে তিনরাত অতিবাহিত করলেন তিনি তাকে রাতে উঠে কোন নামায পড়তেও দেখলেন না  তবে তিনি যখন বিছানার পার্শ্ব বদল করতেন, তখন আল্লাহর যিকির করতেন এবং তাকবির বলতেন এমতাবস্তায় ফজরের নামাযের জন্য উঠলেন

আব্দুল্লাহ বলেনঃ আমি তার মুখ থেকে ভাল শব্দ ছাড়া কোন শব্দ শুনিনি  এই অবস্থায় তিন রাত চলে গেল  আমি তার আমলকে স্বাভাবিক এবং মামুলি আমল মনে করলাম তখন তাকে বললামঃ হে আল্লাহর বান্দা! আমি আমার আব্বার মধ্যে রাগের বা বাহিরে অবস্থান করার অঙ্গিকারের কোন ঘটনা ঘটেনি  কিন্তু আমি রাসূল সা. কে আপনার সম্পর্কে তিনবার একথা বলতে শুনেছি যে, এখই তোমাদের নিকট একজন জান্নাতি মানুষের আগমন ঘটবে উক্ত তিনবারই আপনি আগমন করেছেন তাই আমি ইচ্ছা করেছিলাম আপনি কি আমল করেন তা দেখতে আপনার নিকট থাকবো যাতে আমিও তা করতে পারি আপনাকে তো বেশী কোন আমল করতে দেখিনি তাহলে কোন জিনিস আপনাকে এই মর্যাদায় উপনীত করেছে, যা রাসূল সা. বলেছেন?

তিনি বললেন, আমি আপনি যা দেখেছেন এতোটুকুই তবে আমি আমার অন্তরে কোন মুসলমানের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি না এবং আল্লাহ কাউকে কোন নিয়ামত দান করলে সেজন্য তার প্রতি হিংসা রাখিনা

হযরত আব্দুল্লাহ রা. বলেনঃ এই গুণই আপনাকে এতো বড় মর্যাদায় উপনীত করেছে আর এটাই আমরা করতে পারিনি

 কোন ব্যক্তির ভূল দেখলে তা বলা ঈমানের দাবী তবে কোন জিনিস প্রমাণের ভিত্তিতে ভূল বলা, ভদ্রভাষার মাধ্যমে ভূল প্রকাশ করা আর শত্রুতা, হিংসা, বিদ্বেষ, নিন্দাবাদ, কুৎসা রটনা, গালমন্দ করা এক কথা নয়

o  উপরোক্ত কাজ বর্তমান জীবিতদের সাথে করা অন্যায়, আর মৃতদের সাথে করা আরো বড় অন্যায় আর যারা রাসূল সা. এর বন্ধুত্ব, সাহচার্য লাভ করেছেন এবং তার জন্য নিজেদের জীবন বিপন্ন করেছেন, ইসলামের আলো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছেন, যার কারণে আমরা ঈমানদার হওয়ার সুযোগ পেয়েছি-তাদের ব্যাপারে এমন কথা বলা কত বড় ধরণের অন্যায়

o  সাহাবায়ে কিরামদের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ সংক্রান্ত ব্যাপারে মতপোষণ এবং যুক্তির সীমার মাঝে থেকে মত প্রকাশ দোষনীয় নয় কিন্তু একপক্ষকে সমর্থন করে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে শত্রুতা, হিংসা, বিদ্বেষ, কথা বলা লেখার মাধ্যমে গালাগালি বা নিন্দাবাদ কোন অবস্থায় আল্লাহ ভীরু মানুষের কাজ হতে পারে না

o  সাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা কুরআনের শিক্ষার বিরুধী

o  যারা সাহাবায়ে কিরামকে মন্দ বলে, সে শুধু ফাসেকই নয়, তার ঈমান সংশয়পূর্ণ

o  তিরমিযি শরীফের হাদীসঃ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ "اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي اللَّهَ اللَّهَ فِي أَصْحَابِي لاَ تَتَّخِذُوهُمْ غَرَضًا بَعْدِي فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ وَمَنْ آذَى اللَّهَ فَيُوشِكُ أَنْ يَأْخُذَهُ‏"‏.‏

আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ হুঁশিয়ার! আমার সাহাবীদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাদেরকে (গালি ও বিদ্রুপের) লক্ষ্যবস্তু বানিও না। যেহেতু যে ব্যক্তি তাদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করল, সে আমার প্রতি ভালোবাসার খাতিরেই তাদেরকে ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি তাদের প্রতি শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করল, সে আমার প্রতি শত্রুতা ও হিংসাবশেই তাদের প্রতি শক্ৰতা ও হিংসা পোষণ করল। যে ব্যক্তি তাদেরকে কষ্ট দিল, সে আমাকেই কষ্ট দিল। যে আমাকে কষ্ট দিল, সে আল্লাহ তা’আলাকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহ তা’আলাকে কষ্ট দিল, শীঘ্রই আল্লাহ তা’আলা তাকে পাকড়াও করবেন।

১০. সাহাবীর মর্যাদায় মুআবিয়া রা.

 সাহাবীর সংজ্ঞা নিয়ে সালফে সালেহীনদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে

 সকল সংজ্ঞা অনুযায়ী হযরত মুয়াবিয়া রা. সাহাবীর মর্যাদা লাভ করেছিলেন

 হযরত মুয়াবিয়া রা. এর কোন ব্যক্তিগত কাজ ভেবে দেয়া যেতে পারে কিন্তু দ্বীনের খেদমত অবদান অনস্বীকার্য

 হযরত মুয়াবিয়া রা. এর মাগফিরাত পুরস্কার নিশ্চিত

১১. সাহাবায়ে কিরামের জন্যে মাগফিরাতের সুসংবাদঃ

 সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে সূরা আল ফাতহ এর ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ

﴿وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا﴾

তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ করেছে, তাদের জন্যে আল্লাহ মাগফিরাত আর মহা পুরস্কারের ওয়াদা করেছেন

 এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মাওলানা মওদূদী তাফহীমুল কুরআনের সূরা আল ফাতহ এর ৫৭ নম্বর টীকায় বলেছেনঃ

-          কিছু মানুষ আয়াতে উল্লেখিত مِنْهُم এর অর্থ গ্রহণ করেছেনঃ তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ তারাই আবার পুরো আয়াতের তজমা করেছেন এই ভাবেঃ তাদের মধ্য থেকে যে সব লোক ঈমান এনেছে, আর যারা নেক আমল করেছে-আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমা ও বড় শুভ প্রতিফলের ওয়াদা করেছেন

-          যারা এই ধরণের তরজমা করেছেন, তারা এই তরজমার মাধ্যমে সাহাবায়ে কিরামদের দোষারোপ করার সুযোগ বের করেছেন

-          উনারা অত্যন্ত বেয়াদবীর সাথে দাবী করেছেনঃ এই আয়াত অনুযায়ী সাহাবায়ে কিরামের মাঝে বহু লোক মুমিন ও নেক আমলকারী ছিলেন না

-          মাওলানা বক্তব্য হলোঃ এই ধরণের অর্থ গ্রহণ করা এই সূরার আয়াত ৪,,১৮ এবং ২৬ এর বিপরীত তাছাড়া এই আয়াতের প্রথমাংশে সাথেও এই অর্থের মিল নাই

-          এই আয়াতের প্রথমাংশে বলা হয়েছেঃ

﴿مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا ۖ سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ﴾

মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল৷ আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং নিজেরা পরস্পর দয়া পরবশ৷ তোমরা যখনই দেখবে তখন তাদেরকে চেহারায় সিজদার চিহ্ন বর্তমান যা দিয়ে তাদেরকে আলাদা চিনে নেয়া যায়৷ 

-          অপরদিকে ৪ ও ৫ নম্বর আয়াতে যারা হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসূল সা. এর সংগি ছিলেন, সেই সব সম্মাণিত সাহাবীদের দিলে শান্তি স্বস্তি নাযিল এবং তাদের ঈমান বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে তাদের সকলের জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে

﴿هُوَ الَّذِي أَنزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَّعَ إِيمَانِهِمْ ۗ وَلِلَّهِ جُنُودُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا﴾﴿لِّيُدْخِلَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَيُكَفِّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عِندَ اللَّهِ فَوْزًا عَظِيمًا﴾

তিনিই তো সে সত্তা যিনি মু’মিনদের মনে প্রশান্তি নাযিল করেছেন যাতে তারা নিজেদের ঈমান আরো বাড়িয়ে নেয়৷ আসমান ও যমীনের সমস্ত বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন৷ তিনি মহাজ্ঞানী ও কৌশলী৷

(এ কাজ তিনি এ জন্য করেছেন) যাতে ঈমানদার নারী ও পুরুষদেরকে চিরদিন অবস্থানের জন্য এমন জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেন যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে এবং তাদের মন্দ কর্মসমূহ দূর করবেন৷ এটা আল্লাহর কাছে বড় সফলতা৷ 

-          সূরার ১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ যারা গাছের নিচে রাসূল সা. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করছেন, তাদের সকলের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট

﴿لَّقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا﴾

আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নিচে তোমরা কাছে বাইয়াত করছিলো৷ তিনি তাদের মনের অবস্থা জানতেন৷ তাই তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করেছেন, পুরস্কার স্বরূপ তাদেরকে আশু বিজয় দান করেছেন৷ 

-          সূরার ২৬ নম্বর আয়াতে রাসূলের সংগী সাথীদের ব্যাপারেমুমিনীনশব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের প্রতি শান্তি, স্বস্তি ও প্রশান্তি নাযিলের সংবাদ দেয়া হয়েছে সাথে বলা হয়েছেঃ তারা তাকওয়ার বানী যথাযথভাবে পালন করার অধিকতর হকদার

﴿إَأَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَلْزَمَهُمْ كَلِمَةَ التَّقْوَىٰ وَكَانُوا أَحَقَّ بِهَا وَأَهْلَهَا﴾

তখন আল্লাহ তাঁর রসূল ও ঈমানদারদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে তাকওয়ার নীতির ওপর সুদৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠিত রাখলেন৷ তারাই এ জন্য বেশী উপযুক্ত ও হকদার ছিল৷  

-          উপরোক্ত আয়াত গুলোতে কোথাও বলা হয়নি যে, তাদের মধ্যে যারা মুমিন তাদের জন্য এই সুসংবাদ

-          উপরোক্ত আয়াত গুলোতে রাসূল সা. এর সকল সাহাবীদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে

-          বিধায়, পুরো আলোচনা সকলকে নিয়ে করার পর হঠাৎ করেতাদের মদ্যে কিছু লোক মুমিন ও নেককার ছিলেন আর কিছু লোক নয়এমন কথা বলার কোন অবকাশ নেই

-          বিধায় আয়াতে مِنْهُم  শব্দ দ্বারা কিছু লোক অর্থ করা সঠিক নয়

-          مِنْ হরফটি ব্যাখ্যামূলক কুরআনে এর আরো উদাহরণ আছে যেমন সূরা হজ্জ এর ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ ﴿فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ﴾ মুর্তিগুলোর পংকিলনতা পরিহার করে চলো এখানে مِنْ দ্বারা কিছু মূর্তি বুঝানো হয়নি

১২. হকে পথে সাহাবায়ে কিরামের উৎসাহ উদ্দীপনা এবং ত্যাগ ও কুরবানিঃ

 এই বিষয়ে মাওলানা মওদূদী রাহি. আলোচনা করেছেন তাফহীমুল কুরআনে সূরা আত তাওবার ভূমিকায় যেখানে তাবুকের অভিযানের সময় সাহাবায়ে কিরামের আর্থিক কুরবানীর বিষয়টি হাইলাইট করা হয়েছে

 তাবুকের অভিযানের মূহুর্তে সাহাবায়ে কিরাম যে চেতনা লালন করতেন, তাহলোঃ

এই অভিযান ২২ বছরের ত্যাগ তিতীক্ষার পর চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণের অভিযান  ইসলামের দাওয়াতের দরজা দুনিয়াব্যাপী উম্মুক্ত হবে অথবা এই আরব ভূখন্ডে প্রসারিত এই দাওয়াত আবার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলতেব

 এই যুদ্ধে সাহাবায়ে কিরামদের আর্থিক কুরবানী ছিল উল্লেখযোগ্য যেমনঃ

-          হযরত উসমান রা. যুদ্ধের খরচের এক তৃতীয়াংশ বহণ করেন

-          হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা.আট হাজার দিনার যুদ্ধের ফান্ডে জমা দেন

-          হযরত উমর রা. তার সম্পদের অর্ধেক দান করেন

-          হযরত আবু বকর রা. তার পুরো সম্পত্তি দান করেন

-          দরিদ্র সাহাবীরা দিন মুজরী করে যা সংগ্রহ করতে পারতেন, তা দান করে ফেলেছিলেন

-          মহিলারা তাদের অলংকার খুলে দিলেন

 এই যুদ্ধে সাহাবায়ে কিরাম স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নিলে প্রাণ উৎসর্গ করার প্রত্যাশায়

-          যারা যুদ্ধের সরজ্ঞাম জুগাড় করতে পারলেন না,  তারা কান্নাকাটি করতে লাগলেন

১৩. সাহাবায়ে কিরামের অসাধারণ ঈমানী নিষ্ঠার প্রমাণঃ

 সূরা আল ফাতহ এর ১৮ নম্বর আয়াতে সাহাবায়ে কিরাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

﴿لَّقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا﴾

আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হেয়ে গেছেন, যখন তারা গাছের নিচে তোমার নিকট বাইয়াত করছি তাদের মনের অবস্থা তাঁর জানা ছিল তাই তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন আর পুরস্কার হিসেবে তিনি তাদের নিকটবর্তী বিজয় দান করলেন

 এই বাইয়াত হলোঃ

বাইয়াতে রিদওয়ান হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় সাহাবায়ে কিরামদের থেকে যে বাইয়াত গ্রহণ করা হয়

 এখানে সাহাবায়ে কিরামদের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে, যারা কঠিন মূহুর্তে জীবনে ঝুকি নিতে কুন্ঠিত হোননি

 এই সময়টা সাধারণ সময় ছিলনা

মুসলমানদের প্রত্যেকের হাতে মাত্র একখানা তরবারী, সংখ্যায় মাত্র ১৪শ জন শরীরে কেবল ইহরামের কাপড়  নিজস্ব হেড কোয়ার্টার থেকে আড়াইশ মাইল দূরে এবং শত্রু পক্ষের আস্তানার মাত্র ১৩ মাইলে মধ্যে তাদের অবস্থান

 এই অবস্থায় যদি সাহাবায়ে কিরামের আল্লাহ আর তার রাসুলের প্রতি ভালবাসা না থাকতো, তাহলে এই বিপদে তারা রাসুলের সংগ ত্যাগ করতেন

 এই ধরণের কঠিন মুহুর্তে পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হওয়াতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে নিজের সন্তুষ্টির সার্টিফিকেট প্রদান করেন

 যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট, তাদের ব্যাপারে রূড় গালাগাল ব্যবহার আল্লাহর সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার শামীল

১৪. তাঁরা ছিলেন ইসলামি শাসনের বাস্তব নমুনাঃ

 মাওলানা মরহুম তার খেলাফত রাজতন্ত্র বইয়েরখেলাফতে রাশেদা তার বৈশিষ্টআধ্যায়ের সুচনায় উল্লেখ করেনঃ

 সাহাবায়ে কিরামের সকলেই জানতেন যে ইসলাম বিধি বিধান অনুযায়ী কোন ধরণের শাসন ব্যবস্থা হওয়া উচিত কারণ রাসূল সা. প্রত্যক্ষ ভাবে সেই প্রশিক্ষণ শিক্ষা প্রদান করেছিলেন

 রাসূল সা. তার পরবর্তীতে নেতৃত্বে কে বসবে, তার সিদ্ধান্ত দেননি কারণ সাহাবায়ে কিরামরা জানতেন যে ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থা, যা শুরা ভিত্তিক খেলাফত দাবী করে

 বিধায়, রাসূল সা. এর পর বংশীয়, বল, পদলোভ, পদের জন্য তদবীর এই ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি

 সে সময়ের জনগন সাহাবায়ে কিরাম তাদের স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে একে এক চারজন খলিফা নির্বাচিত করেন যাদেরকে সত্যাশ্রয়ী খিলাফত বা খিলাফতে রাশেদা আখ্যা দেয়া হয়

 সাহাবায়ে কিরামের এই সিদ্ধান্ত একথা প্রমাণ করে যে, এটা খিলাফতের সঠিক পন্থা

১৫. আনসার সাহাবীদের মহৎ গুণাবলীঃ

 আনসার সাহাবীদের মহৎ গুণাবলী আলোচনায় সহী আল বুখারীর একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইবনে জারির বর্ণনা করেছেনঃ

মুহাজিরগন মক্কা অন্যান্য স্থান থেকে হিজরত করে তাঁদের শহরে আসলে তাঁরা রাসূল সা. এর কাছে প্রস্তাব দিলেন, আমাদের বাগবাগিচা খেজুর বাগান দিয়ে দিচ্ছি আপনি ওগুলো আমাদের এবঙ এসব মুহাজির ভাইদের মধ্যে বন্টন করে দিন রাসুল সা. বললেনঃ এসব লোক তো বাগানের কাজ জানেনা তারা এমন এলাকা থেকে এসেছে যেখানে বাগান নেই এমন কি হতে পারেনা, এসব বাগ-বাগিচা খেজুর বাগানে তোমরাই কাজ করো এবং উৎপন্ন দ্রব্যের অংশ এদের দাও তারা বললোঃ আমরা মেনে নিলাম

 আনসারদের এই ধরণের আন্তারিকতা ত্যাগ দেখে মুহাজিররা বলে উঠলেনঃ

রকম আত্মত্যাগী মানুষ তো আর কখনো দেখিনি এটা নিজের কাজ করবে অথচ আমাদের এর অংশ দেবে আমাদের তো মনে হচ্ছে সমস্ত সওয়াব তারাই নিয়েছে

রাসূল সা. বললেনঃ তা নয়, যতোক্ষণ তোমরা তাদের প্রশংসা করতে থাকবে এবং তাদের কল্যাণের জন্যে দোয়া করবে ততোক্ষণ তোমরাও সওয়অব পেতে থাকবে (মুসনাদে আহমদ)

 বনু নাযির এলাকা মুসলমানরা জয় করার পর রাসূল সা. এর প্রস্তাবঃ

إن أحببتم قسمت بينكم وبين المهاجرين مما أفاء الله تعالى علي بن بني النضير

ليس لإخوانكم من المهاجرين أموال، فإن شئتم قسمتم هذه وأموالكم بينكم وبينهم جميعا، وإن شئتم أمسكتم أموالكم وقسمت هذه فيهم خاصة

. তোমাদের (তথা আনসারদের) বিষয় সম্পদ ইহুদীদের পরিত্যক্ত ফল-ফলাদি খেজুর বাগান সব একত্রিত করে সব সম্পদ আনসার মুহাজিরদের মাঝে বন্টন করে দেয়া

. আনসাররা তাদের সম্পদ ভোগ করবে, আর ইহুদীদের যে সম্পদ পাওয়া গেছে, তা মুহাজিরদের মাঝে বন্টন করা হবে

আনসররা তখন দুই প্রস্তাবের দ্বিতীয়টি গ্রহণ করে বললোঃ

يا رسول الله ﷺ بل تقسمه بين المهاجرين ، ويكونون في دورنا كما كانوا

بل اقسم هذه فيهم واقسم لهم من أموالنا ما شئت

আপনি এই সম্পত্তি তাদের মধ্যে বিলে করে দিন প্রয়োজন হলে আমাদের সম্পত্তি হতে যতো ইচ্ছা নিয়ে নিতে পারেন

 আল্লাহর রাসূল সা. তখন তাদের জন্য দোয়া করেছিলেন এই বলেঃ

اللهم ارحم الأنصار ، وأبناء الأنصار

 রাসূল সা. পরে পুরো সম্পত্তি মুহাজিরদের মাঝে বন্টন করে দিলেন  কেবল আনসারদের মাত্র দুইজন ব্যক্তি, যারা অত্যন্ত অভাবী ছিলেন, তাদেরকে কিছু সম্পদ দিলেন তারা হলেনঃ সাহাল বিন হুসাইফ এবং আবা দাজানাহ রা.

 আনসারদের এই আত্মত্যাগে হযরত আবু বকর রা. চিৎকার করে বললেনঃ

جزاكم الله يا معشر الأنصار خيرا

হে আনসারগন! আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন

  প্রেক্ষিতে সূরা হাশরের নম্বর আয়াত নাযিল হয়ঃ

﴿وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِن قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِّمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾

(আবার তা সেই সব লোকের জন্যও) যারা এসব মুহাজিরদের আগমনের পূর্বেই ঈমান এনে দারুল হিজরাতে বসবাস করছিলো৷ তারা ভালবাসে সেই সব লোকদের যারা হিজরাত করে তাদের কাছে এসেছে৷ যা কিছুই তাদের দেয়া হোক না কেন এরা নিজেদের মনে তার কোন প্রয়োজন পর্যন্ত অনুভব করে না এবং যত অভাবগ্রস্তই হোক না কেন নিজেদের চেয়ে অন্যদের অগ্রাধিকার দান করে৷ মূলত যেসব লোককে তারে মনের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা করা হয়েছে তারাই সফলকাম৷

 বাহরাইনের এলাকা ইসলামী রাষ্টের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর বিজিত জমি আনসারদের মধ্যে বন্টন করে দিতে চাইলে আনসাররা রা. কে বলেনঃ যতোক্ষণ আমাদের সমপরিমাণ অংশ আমাদের ভাই মুহাজিরদের দেয়া হবে না, ততোক্ষণ আমরা এই সম্পদের কোন ভাগ গ্রহণ করবো না

১৬. রাসূল ও সাহাবায়ে কিরামের সঠিক মর্যাদাঃ

 মানব সমাজে নবী সা. এর স্থান মর্যাদাঃ

-    সাধারণ কথা মানুষের জীবনে ঘটলে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু একই ঘটনা নবীর জীবনে ঘটলে তা আইনের মর্যাদা লাভ করে

o  এই কারণে নবী রাসূলেদের জীবনকে আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠোর পর্যবেক্ষণ তত্ত্বাধানের মধ্যে রাখা হয়েছে-যাতে ছোট কোন কাজও আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে না হয়

o  নবীর জীবনে কোন ছোট্ট কাজ ঘটে গেলে, তা সাথে সাথে সংশোধন করে দেয়া হয়েছে যাতে উসওয়ায়ে হাসানা বিশুদ্ধভাবে মানুষের কাছে পৌছে

o  যার কারণে রাসূলকে আদর্শ হিসাবে রাসূলকে আমরা পূর্ণ আস্তার সাথে গ্রহণ করতে পারি

-    রাসূলের সম্মাণ ও মর্যাদা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংগ

-    কিন্তু আল্লাহ ঈমানদারদেরকে তাদের সম্মাণিত ব্যক্তিবর্গকে সম্মাণ প্রদর্শনের সঠিক সীমারেখার সাথে পরিচয় করে দিতে চান  এজন্যঃ

. রাসূল স্ত্রীদের খুশীর জন্য আল্লাহর হালালকৃত জিনিসকে হারাম করে নেয়াতে আল্লাহ  কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন

. রাসূলের স্ত্রী-যারা ঈমানদারদের মা-যাদেরকে সম্মাণ করতে মুসলমানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের ভূলত্রুটির জন্যও সতর্ক করা হয়েছে

. এই সতর্কতা সাবধানতা চুপিসারে করা হয়নি, বরং এমন গ্রন্থে লিবিপদ্ধ করা হয়েছে-যা সারা দুনিয়ার মানুষ চিরদিন পড়বে

. এর মাধ্যমে নবীগণ কেবল নবীই, আল্লাহ নন যে, তাদের কোন ভূলত্রুটি হতে পারে না

. নবীর মর্যাদাটা নির্ধারিত হয়না এজন্য যে, তিনি কোন ভূল-ত্রুটি করেন না বরং নবীর মর্যাদা এই কারণে যে, তিনি আল্লাহর ইচ্ছার পূর্ণাঙ্গরূপ

. এর মাধ্যমে আমাদের আদর্শ সম্পর্কে এই আস্তা সৃষ্টি হয় যে, এই আদর্শ আল্লাহর ইচ্ছার বাস্তব প্রতিনিধিত্ব করছে

. রাসূলের সাহাবী স্ত্রী গন মানুষে ছিলেন, ফেরেশতা বা মানুষের উর্ধ্বে কিছু ছিলেন না বিধায়, ভূলত্রুটি হওয়া সম্ভব ছিল কিন্তু তাদের মর্যাদা নিরূপিত হয়েছে যে, তারা আল্লাহর রাসূলের শিক্ষা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মানবতার সর্বোত্তম নমুনা হয়েছেন বা আল্লাহ তাদেরকে বানিয়েছেন

-    সাহাবায়ে কিরামের ভূলত্রুটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার যা মানবিক দূর্বলতার কারণে হয়েছে এবং রাসূল সা. তা সংশোধন করেছেন  কিন্তু তারপরও আল্লাহ তাদেরকে বলেছেনঃ রাদিয়াল্লাহ আনহুম ওয়া রাদু আনহ-আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট

-    সাবায়ে কিরামের ত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিতে হাদীসে বিভিন্ন জায়গায় বর্ণিত হয়েছে কুরআনে তাদের ভূলত্রুটি পর্যালোচনা এসেছে যেমনঃ

ওহুদ যুদ্ধের পর্যালোচনায় বলা হয়েছেঃ

﴿وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللَّهُ وَعْدَهُ إِذْ تَحُسُّونَهُم بِإِذْنِهِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِي الْأَمْرِ وَعَصَيْتُم مِّن بَعْدِ مَا أَرَاكُم مَّا تُحِبُّونَ ۚ مِنكُم مَّن يُرِيدُ الدُّنْيَا وَمِنكُم مَّن يُرِيدُ الْآخِرَةَ ۚ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ لِيَبْتَلِيَكُمْ ۖ وَلَقَدْ عَفَا عَنكُمْ ۗ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ﴾

আল্লাহ তোমাদের কাছে ( সাহায্য ও সমর্থনদানের ) যে ওয়াদা করেছিলেন, তা পূর্ণ করেছেন৷ শুরুতে তাঁর হুকুমে তোমরাই তাদেরকে হত্যা করেছিলে৷ কিন্তু যখন তোমরা দুর্বলতা দেখালে এবং নিজেদের কাজে পারস্পারিক মতবিরোধে লিপ্ত হলে আর যখনই আল্লাহ তোমাদের সেই জিনিস দেখালেন যার ভালোবাসায় তোমরা বাঁধা ছিলে ( অর্থাৎ গনীমাতের মাল), তোমরা নিজেদের নেতার হুকুম অমান্য করে বসলে, কারণ তোমাদের কিছু লোক ছিল দুনিয়ার প্রত্যাশী আর কিছু লোকের কাম্য ছিল আখেরাত, তখনই আল্লাহ কাফরদের মোকাবিলায় তোমাদেরকে পিছিয়ে দিলেন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য৷ তবে যথার্থই আল্লাহ এরপরও তোমাদের মাফ করে দিয়েছেন ৷ কারণ মুমিনদের প্রতি আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহের দৃষ্টি রাখেন(সূরা আলে ইমরানঃ ১৫২)

হযরত আয়েশা রা. এর বিরুদ্ধে অপবাদের উল্লেখ করে বলা হয়েছেঃ

﴿لَّوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَٰذَا إِفْكٌ مُّبِينٌ﴾﴿لَّوْلَا جَاءُوا عَلَيْهِ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ ۚ فَإِذْ لَمْ يَأْتُوا بِالشُّهَدَاءِ فَأُولَٰئِكَ عِندَ اللَّهِ هُمُ الْكَاذِبُونَ﴾﴿وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ لَمَسَّكُمْ فِي مَا أَفَضْتُمْ فِيهِ عَذَابٌ عَظِيمٌ﴾﴿إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُم مَّا لَيْسَ لَكُم بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِندَ اللَّهِ عَظِيمٌ﴾﴿وَلَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُم مَّا يَكُونُ لَنَا أَن نَّتَكَلَّمَ بِهَٰذَا سُبْحَانَكَ هَٰذَا بُهْتَانٌ عَظِيمٌ﴾﴿يَعِظُكُمُ اللَّهُ أَن تَعُودُوا لِمِثْلِهِ أَبَدًا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾

যখন তোমরা এটা শুনেছিলে তখনই কেন মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীরা নিজেদের সম্পর্কে সুধারণা করেনি  এবং কেন বলে দাওনি এটা সুস্পষ্ট মিথ্যা দোষারোপ? তারা (নিজেদের অপবাদের প্রমাণ স্বরূপ) চারজন সাক্ষী আনেনি কেন? এখন যখন তারা সাক্ষী আনেনি তখন আল্লাহর কাছে তারাই মিথ্যুক৷ যদি তোমাদের প্রতি দুনিয়ায় ও আখেরাতে আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না হতো তাহলে যেসব কথায় তোমরা লিপ্ত হয়ে গিয়েছিলে সেগুলোর কারণে তোমাদের ওপরে মহাশাস্তি নেমে আসতো৷ (একটু ভেবে দেখো তো¸ সে সময় তোমরা কেমন মারাত্মক ভুল করেছিলে) যখন তোমরা এক মুখ থেকে আর এক মুখে এ মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিলে এবং তোমরা নিজেদের মুখে এমন সব কথা বলে যাচ্ছিলে যা সম্পর্কে তোমাদের কিছুই জানা ছিল না ৷ তোমরা একে একটা মামুলি কথা মনে করেছিলে অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল্ গুরুতর বিষয়৷ একথা শোনার সাথে সাথেই তোমরা বলে দিলে না কেন, ‘‘এমন কথা মুখ দিয়ে বের করা আমাদের শোভা পায় না, সুব্‌হানাল্লাহ! এ তো একটি জঘন্য অপবাদ৷’’ আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দেন, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো (সূরা আন নূরঃ ১২-১৭)

রাসূল সা. এর পবিত্র স্ত্রীদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছেঃ

﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ إِن كُنتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا فَتَعَالَيْنَ أُمَتِّعْكُنَّ وَأُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا﴾﴿وَإِن كُنتُنَّ تُرِدْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالدَّارَ الْآخِرَةَ فَإِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْمُحْسِنَاتِ مِنكُنَّ أَجْرًا عَظِيمًا﴾

(হে নবী)! তোমার স্ত্রীদেরকে বলো, যদি তোমরা দুনিয়া এবং তার ভূষণ চাও, তাহলে এসো আমি তোমাদের কিছু দিয়ে ভালোভাবে বিদায় করে দিই৷  আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূল ও আখেরাতের প্রত্যাশী হও, তাহলে জেনে রাখো তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল তাদের জন্য আল্লাহ মহা প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। (সূরা আল আহযাবঃ ২৮-২৯)

সকল সাহাবীদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছেঃ

﴿وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا ۚ قُلْ مَا عِندَ اللَّهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ ۚ وَاللَّهُ خَيْرُ الرَّازِقِينَ﴾

আর যে সময় তারা ব্যবসায় ও খেল তামাশার উপকরণ দেখলো তখন তারা তোমাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে সেদিকে দৌড়ে গেল৷ তাদের বলো, আল্লাহর কাছে যা আছে তা খেল-তামাশা ও ব্যবসায়ের চেয়ে উত্তম৷ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা(সূরা আল জুমুয়াঃ ১১)

বদরী সাহাবী হযরত হাতেব ইবনে আবী বালতায়া রাসূল সা. এর মক্কা অভিযানের খবর কুরাইশদের কাছে পাচার করেন যার সম্পর্কে সমালোচনা ও তিরস্কার বলা হয়েছেঃ

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُم مِّنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ ۙ أَن تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِن كُنتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي ۚ تُسِرُّونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنتُمْ ۚ وَمَن يَفْعَلْهُ مِنكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ﴾

হে ঈমানদারগণ, যদি তোমরা আমার পথে জিহাদ করার জন্য এবং আমার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে (জন্মভুমি ছেড়ে ঘর থেকে) বেরিয়ে থাক তাহলে আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না৷ তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা কর, অথচ যে সত্য তোমাদের কাছে এসেছে তারা তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে৷ তাদের আচরণ হলো, তারা রসূলকে এবং তোমাদেরকে শুধু এই অপরাধে জন্মভূমি থেকে বহিষ্কার করে যে, তোমরা তোমাদের রব আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছো৷ তোমরা গোপনে তাদের কাছে বন্ধুত্বমূলক পত্র পাঠাও৷ অথচ তোমরা গোপনে যা কর এবং প্রকাশ্যে যা করো তা সবই আমি ভাল করে জানি৷ তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই এরূপ করে নিশ্চিন্তভাবেই সে সত্যপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে  (সূরা আল মুমতাহানাঃ ০১)

-    সম্মাণ প্রদর্শনের এই শিক্ষা হলো মধ্যমপন্থা।  মুসলমানরা মানুষকে পূজা করে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে না-যেমন ইতিমধ্যে হয়েছে ইহুদী ও খৃষ্টানেরা।

-    আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের বড় বড় পন্ডিতরা রাসূল সা. এর স্ত্রীগন ও অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিদের আলোচনায় তাদের দূর্বলতা, বিচ্যুতি, ভূল-ত্রুটির ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

-    মনে রাখতে হবে সেই সব মহা পন্ডিতগন বর্তমানের ব্যক্তিদের তুলনায় সম্মাণ প্রদর্শনের বেশী দাবীদার এবং তারা বেশী মর্যাদা দিতেন ও তার সীমারেখা জানতেন।

খুলাফায়ে রাশেদীন রা.

০১একই মশালের কিরণঃ

§ রাসূল সাএর সর্বোত্তম মানুষ হলেনযথাক্রমে হযরত আবু বকর রাতারপর হযরত উমর রাতারপর হযরত উসমান বিন আফফান রাএবং তারপর হযরত আলী রা.

§ তাঁরা সবাই সত্যের সাথে সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন

§ আক্বীদাতুত তাহাবীয়া নামক কিতাবে বলা হয়েছেযা বইয়ের আরবী সংস্করণে উল্লেখিত ১৩৪টি আক্বীদার মধ্যে ১২৩ নম্বরে এবং বাংলা অনুবাদে ১০৩টি মধ্যে ৯২ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

ونثبت الخلافة بعد رسول الله ﷺ أولا لأبي بكر الصديق رضي الله عنه تفضيلا له وتقديما على جميع الأمة، ثم لعمر بن الخطاب رضي الله عنه، ثم لعثمان رضي الله عنه، ثم لعلي بن أبي طالب رضي الله عنه، وهم الخلفاء الراشدون والأئمة المهتدون.

রাসূলুল্লাহ সাএর পর আমরা আবু বকর রা.কে গোটা উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণ করে সবার আগে তাকে খিলাফতের অধিকারী বলে প্রমাণ করি অতপর উমর বিন খাত্তাব রা.কে তারপর উসমান রা.কে অতপর হযরত আলী ইবনে আবি তালিব রা.কে আর এরা হলেন খুলাফায়ে রাশেদীন এবং আইম্মায়ে মাহদীয়ীন (সুপথগামী খলিফা  হেদায়াত প্রাপ্ত নেতা)”

০২মানবজাতির ইতিহাসে অনুপমঃ

§ রাসূল সাপ্রশিক্ষণ দান করছিলেন যাদেরকেতারা সৌভাগ্যবান এবং মানব ইতিহাসের সেরা

§ হযরত উমরা রাসেই সব সৌভাগ্যবান পবিত্র মানুষদের একজন

০৩উসমান রাএর মর্যাদাঃ

§ কুরআনে সূরা আল ফাতহের ১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ

﴿إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ ﴾

হে নবী যারা তোমার হাতে বাইয়াত করছিলো প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছেই বাইয়াত করছিলো৷

§ উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মাওলানা মওদূদী রাহিহুদায়বিয়ার সন্ধির আগের ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেনঃ

মক্কায় হযরত উসমান রাএর শাহাদাতে খবর শুনে সাহাবায়ে কিরাম উসমান হত্যার বদলা নেয়ার জন্য রাসূল সাএর হাতে হাত রেখে বাইয়াত গ্রহণ করেন  রাসূল সানিজের এক হাতের উপর হযরত উসমান রাএর পক্ষে আরেক খানা হাত রেখে হযরত উসমান রা.কে এই বাইয়াতে শরীক করেন এই কাজে নিজের হাত ব্যবহার করে রাসূল সাহযরত উসমানকে বিরাট মর্যাদার অধিকারী বানিয়ে দেন

§ হযরত উসমান রা এর উপর রাসূল সাএর  আস্তা  নির্ভরশীলতা ছিল বলেই রাসূল এমন করলেন

০৪খলীফায়ে রাশেদ উসমান রাঃ

§ হযরত উসমানকে যখন অবরোধ করা হয়,

-       তখন যায়েদ বিন সাবিত রাতাকে বলেনঃ আপনার সমর্থনে আনসাররা লড়তে প্রস্তুত তিনি জবাবে বলেনঃ أما القتال فلا নালড়াই করা যাবে না

-       তিনি হযরত আবু হুরায়রা রা আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা.কে বলেনআমি যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নই

-       তার পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য সাতশত ব্যক্তি তার মহলে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু তিনি তাদেরকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখেন

§ হযরত উসমানের একটিই যুক্তি ছিলঃ

নিজের কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য রাসূলের শহরে মুসলমানরা পরস্পরে সংঘর্ষে লিপ্ত হোকএটা তিনি চাননি অথচ তিনি সকল প্রদেশ থেকে সৈন্য তলব করে অবরোধকারীদের উচিত শিক্ষা দিতে পারতেন

§ হযরত উসমানের ভূমিকা ছিল একজন খলিফা  একজন বাদশার ভূমিকার মধ্যে পার্থক্য থাকে যেমন

-    বাদশা হলে নিজের গদি রক্ষার জন্য  যে কোন পন্থা অবলম্বন করতেন

-    তিনি খলিফায়ে রাশেদ ছিলেন বলেকঠিন মুহুর্তেও একথা স্মরণ রেখেছেন যেকতটুকু অগ্রসর হওয়া যায়আর কোথায় গিয়ে থামতে হবে খলিফার কাছে মুসলমানদের মর্যাদা  ইজ্জত দুনিয়ার সবকিছুথেকে অধিক হওয়া উচিত

০৫আইনের অনুগত শাসকঃ

§ শরীয়াত বা আইন সবকিছুর উর্ধ্বে-এই বুনিয়াদের উপর ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়

o   ইসলামী রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক সকলে আইনের অধীন-আইনের উর্ধ্বে কেউ নেই

o   ইসলামী রাষ্ট্রে কার সাথে কি আচরণ হবেতার একটা আইন আছে-এই আইন  রীতি লংঘন করা যায় না তা হতে পারে শত্রুমিত্রযুদ্ধে লিপ্ত কাফিরচুক্তিবদ্ধ কাফিরমুসলিম প্রজাঅমুসলিম প্রজারাষ্ট্রের অনুগত মুসলিম বা যুদ্ধে লিপ্ত বিদ্রোহী

§ খুলাফায়ে রাশেদার সময়ে এই নীতি কঠোর ভাবে অনুসণ করা হয়েছে  এমনকি হযরত উসমান রা হযরত আলী রাচরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেও সীমা লংঘন করেননি

০৬খুলাফায়ে রাশেদীনের দৃষ্টিতে ইসলামি রাষ্ট্রের স্বরূপঃ

§ রাষ্ট্ররাষ্ট্র প্রধানের মর্যাদা  কর্তব্যরাষ্ট্র প্রধানের জন্য নীতিমালা ইত্যাদি সম্পর্কে কথা বলেছেন খুলাফায়ে রাশেদীনরা তাদের অভিষেক ভাষণে যেমনঃ

§ হযরত আবু বকর রা.

1.       আমি আপনাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি নই

2.      আমি নিজে ইচ্ছে করে  পদ গ্রহণ করিনি এই পদের আকাংখীও ছিলাম না এজন্য কোন দোয়াও করিনি

3.      আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি মুসলমানদের মতবিরোধ  আরবদের ধর্মত্যাগের ফেতনা সৃষ্টির আশংকা থেকে

4.      এই পদে শান্তি নেইআছে বোঝা যা বহন করার ক্ষশতা আমার নাই

5.       দায়িত্ব পালনে আল্লাহর সাহায্যই একমাত্র উপায়

6.      আপনারা যে কোন সময় রাসূল সাএর সাহাবীদের মধ্য থেকে যে কাউকে এই পদের জন্য বাছাই করতে পারেন  আমার কাছে নেয়া বাইয়াত এক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধক হবে না

7.      রাসূল সাএর মানদন্ডে আমার কাছ থেকে প্রত্যাশা করলে সে ক্ষমতা আমার নেই রাসূল ওহী দ্বারা পরিচালিত হতেন এবং শয়তান থেকে নিরাপদ ছিলেন

8.      আমি সঠিক কাজ করলে আমাকে সহযোগিতা করবেনঅন্যায় করলে সোজা করে দেবেন

9.      সততা-আমানতমিথ্যা-খিয়ানত

10.   দূর্বল ব্যক্তিও আমার কাছে সবল যদি না আমি তার অধিকার আদায় করি  একই ভাবে সবল ব্যক্তিও আমার কাছে দূর্বলযদি না তার থেকে আমি অধিকার আদায় করি

11.   কোন জাতি আল্লাহর পথে লড়াই ছেড়ে দিয়েছে অথচ তাদের উপর অপমান চাপিয়ে দেয়া হয়নি-এমন কখনো হয়নি

12.   কোন জাতি বেহায়াপনার বিস্তার করেছেআর আল্লাহ সাধারণ বিপদে ফেলেননি-এমন কখনো হয়নি

13.   আমি যতক্ষণ আল্লাহ  রাসূলের আনুগত্য করবোততক্ষণ আমার আনুগত্য করো

14.   আমি আল্লাহ  রাসূলের আনুগত্য পরিহার করলে আমার আনুগত্যর করার দাবী করার কোন অধিকার নাই

15.   আমি কেবল অনুসরণকারীনতুন পথে উদ্ভাবক নই

§ হযরত উমর রা.

o  দায়িত্ব গ্রহণের পরঃ

1.    আল্লাহর অবাধ্য হয়ে আনুগত্য করতে হবে এমন আনুগত্যের দাবী কেউ করতে পারে না।

2.   আমার উপর জনগনের অধিকার হলো, আমি খেরাজ বা ফাই থেকে বেআইনিভাবে কোন কিছু গ্রহণ করবো না। কোন অর্থ অন্যায়ভাবে ব্যয় করবো না।

o  মিশরবাসীর উদ্দেশ্যেঃ

1.    তোমাদের পিটাবার জন্য, তোমাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়ার জন্য আমি গভর্ণর নিযুক্ত করিনি।

2.   গভর্ণর নিযুক্ত করা হয়েছে দ্বীন ও নবীর তরিকা শিক্ষা দেয়ার জন্য।

3.   কেউ এই নির্দেশের বিরোধী ব্যবহার করলে সরাসরি আমার কাছে অভিযোগ দিন। আমি সেই গভর্ণরের কাছ তেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবো।

o  গভর্ণর ডেকে এনে প্রকাশ্য সমাবেশেঃ

-      এদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে নির্দেধায় বলো।

-      একজনের অভিযোগ আমর ইবুনল আসএর বিরুদ্ধেঃ অন্যায় ভাবে একশ দোররা মেরেছেন।

-      উমরের জবাবঃ উঠো এবং তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নাও।

§ হযরত উসমান রা.

1.      আমি অনুসরণকারী মাত্র নতুন পথে উদ্ভাবক নই।

2.     আল্লাহর কিতাব আর রাসূলের সুন্নাহ মেনে চলার পর তিনটি অঙ্গিার করছিঃ

ক. আমার খেলাফতের পূর্বে তোমরা পারস্পরিক সম্মতিক্রমে যে নতি নির্ধারণ করেছো, আমি তা মেনে চলবো।

খ. যেসব ব্যাপারে পূর্বে কোন নীতি নির্ধারণ হয়নি, তা পরামর্শক্রমে নির্ধারণ করবো।

গ. তোমাদের উপর কোন হস্তক্ষেপ করবো না, যতক্ষণ না আইনের দৃষ্টিতে অপরিহার্য হয়ে না পড়ে।

§ হযরত আলী রা.

o  মিশরবাসীর প্রতি প্রেরিত ফরমানে বলা হয় যেমিশরবাসরি অধিকার হলোঃ

-      তাদেরকে শাসক আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক আমল করবে

-      আল্লাহর নির্ধারিত অধিকার অনুযায়ী তোমাদের কাজ কারবার পরিচালনা করবে

-      রাসূলের সুন্নাহ কার্যকরী কারবে

-      শাসিতদের অগোচরে শাসিতদের জন্য কল্যাণ কামনা করবে

-      নিযুক্ত গভর্ণর কায়েস বিন সাআদ রাজনসমাবেশে এই ফরমান পাঠ করে বলেনঃ আমি তোমাদের সাথে এভাবে আচরণ না করলে তোমাদের উপর আমার কোন বাইয়াত নাই-অর্থাৎ তোমরা আমার আনুগত্য করার জন্য দায়বদ্ধ নও

o  জনৈক গভর্ণকে চিঠিঃ

-      শাসক ও জনগনের মধ্যে দীর্ঘ প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করো না  কারণঃ

এটা সৃষ্টির সংকীর্ণতা এবং জ্ঞানের স্বল্পতা

যার কারণে সত্যিকার অবস্থা জানা যায় না

ক্ষুদ্র বিষয় বড় হয়ে দাড়ায়বড় বিষয় ক্ষুদ্র হয়ে যায়

জনগনের ভাল বিষয় মন্দ হিসাবে দেখা দেয়আর মন্দ বিষয় ভাল ও সত্য মিথ্যার মিশ্রনে দেখা যায়

o  হযরত আলীর ব্যক্তিগত আমলঃ

-    দোররা নিয়ে কুফার বাজারে বেরুতেনঅন্যায় থেকে বিরত রাখা ও ন্যায়ের নির্দশ দিতেন ব্যবসার অবস্থা দেখতেন-প্রতারণা হচ্ছে কি না

-    তার চলাফেরায় কোন বাদশাহী পোষাক থাকতো নাকোন পাহারাদার থাকতো না বলে অপরিচিতরা তাকে চিনতে পারতো না

খিলাফতে রাশেদা

০১কেবল খিলাফতে রাশেদাই নয় খিলাফতে মুরশিদাও বটেঃ

§ রাশেদা মানে-সঠিক পথে পরিচালিত আর মুরশিদা মানে সঠিক পথের পরিচালক

§ খেলাফতে রাশেদা হলো নবুয়াতের পূর্ণ প্রতিনিধিত্বশীল একটা ব্যবস্থা-শুধু রাজনৈতিক সরকার ব্যবস্থা নয়

§ খিলাফতে রাশেদার কাজ শুধু ছিলনাঃ

-   রাষ্ট্রের শাসন শৃংখলা বজায় রাখা

-   রাষ্ট্রের শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা

-   রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষা করা

§ খিলাফতে রাশেদার কাজ ছিলঃ

-   মুসলমানদের সামাজিক জীবনের শিক্ষকতাতত্ত্বাবধান এবং সঠিক পথ প্রদর্শণ

-   ইসলামী রাষ্টের আল্লাহর দ্বীনের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাকে প্রকৃত রূপ ও প্রাণসত্তাসহ পরিচালনা

-   পৃথিবীতে মুসলমানদের সামগ্রিক শক্তি নিশ্চিত করণ

-   আল্লাহর কালেমাকে বিজয়ী করা

§ খেলাফতে রাশেদার উপরোক্ত কাজের কারণে খেলাফতে মুরশিদা বলাই যুক্ত যুক্ত

যা খিলাফত আলা মিনহাজিন নাবুয়াত বা নবীর পদাংক অনুসারী খিলাফত কথার মাধ্যমে ফুটে উঠে

§ ইসলামের সামান্য জ্ঞান যারা রাখেনতাদের জানা থাকার কথা যেইসলামী যে ধরণের রাষ্ট্র ব্যবস্থা চায়তা কেবল রাজনৈতিক শাসন কর্তৃত্ব নয়

০২খিলাফতে রাশেদার কার্যপ্রাণালী ইসলামি শাসনতান্ত্রিক আইনের একটি উৎসঃ

§ ইসলামী শাসনতান্ত্রিক আইনের তৃতীয় উৎস হলোঃ খিলাফতে রাশেদার কর্মনীতি  কার্যপ্রণালী

§ খিলাফায়ে রাশেদীনের ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি পাওয়া যায়ঃ হাদীসইতিহাস  সীরাতের কিতাব সমূহে

§ হাদীসইতিহাস  সীরাতের কিতাবে প্রাপ্ত এসব জিনিস আমাদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ বা নমূনা

§ সাবাহাবায়ে কিরাম কোন বিষয়ে ঐক্যমতে পৌছার অর্থ হলোঃ এটি আইনের বিশ্বস্ত বিশ্লেষণ  নির্ভরযোগ্য কর্মপন্থা

§ সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন রাসূল সাএর ছাত্র  প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বিধায় তাদের সকলের ঐক্যমতে কোন দ্বীনি বিষয়ে ভূল করা বা সঠিক বুঝ জ্ঞান থেকে দূরে অবস্থান করা সম্ভব নয়

§ দ্বীন  হিদায়াতের যে ব্যাখ্যা সাহাবায়ে কিরাম প্রদান করেছেনতাকে ইসলামের পরিভাষায় বলে ইজমা

§ সাহাবায়ে কিরামের ইজমা এবং খুলাফায়ে রাশেদার শাসনতান্ত্রিক ফায়সালা পরবর্তীদের জন্য হুজ্জত বা প্রমাণিত আইন

§ বিধায়সাহাবায়ে কিরামের ইজমা  খুলাফায়ে রাশেদার সিদ্ধান্ত সমূহ আমাদেরকে মেনে চলতে হবে হুবহু

§ সাহাবায়ে কিরাম যে সব বিষয়ে মতবিরোধ করছেনতার অর্থ হলোঃ এই বিষয়ে দুই বা তার চেয়ে বেশী বিশ্লেষণের অবকাশ রয়েছে  আর এই ধরণের মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে দলিলের ভিত্তিকে যে কোন একটি মতকে অগ্রাধিকার দেয়ার সুযোগ রয়েছে

০৩খুলাফায়ে রাশেদীন কিভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন?

§ সাহাবায়ে কিরামের সুন্নাতঃ সে সব ফায়সালা যা সাহাবায়ে কিরামের পরামর্শের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে  যা রাসূল সাএর সুন্নাতের বিপরীত হতে পারে না

§ খুলাফায়ে রাশেদার অনুসরণীয় পদ্ধতি ছিলঃ যখন তাদের সামনে কোন বিষয় উপস্থিত হতোতখন তারা আল্লাহর কিতাব  রাসূলের নির্দেশিকার মধ্যে এই বিষয়ে কি সমাধান আছে তা জানতেন কিতাব  সুন্নাহতে কোন সমাধান পাওয়া না গেলে তারা অধিকাংশ সাহাবাদের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন

০৪একটি স্বাধীন জাতি গঠনে খুলায়ে রাশেদীনের আদর্শঃ

§ খিলাফত সম্পর্কে সাহাবায়ে কিরাম  খুলাফায়ে রাশেদার সর্বসম্মত ধারণা ছিলঃ এটা একটা নির্বাচনী পদ খলিফা তার পদে অধিষ্ঠিত হবেন মুলমানদের পরামর্শে স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে

§ সাহাবায়ে কিরামের মত ছিলঃ

বংশীয় সূত্রেবল প্রয়োগ ক্ষমতা দখল খিলাফত নয়বাদশাহী

§ রাসূল সানিজের স্থলাভিষিক্ত কে হবেনসে ফায়সালা দিয়ে যান নি

কিন্তু তিনি তার ছাত্রদের যে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেনতাতে তারা বুঝতেন যেপরবর্তী শাসক নির্বাচনের পদ্ধতি হবেঃ শুরা ভিত্তিক খিলাফত ফলে সেখানে কোন বংশানুক্রমিক বাদশাহী বা বল প্রয়োগে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া বা খেলাফত লাভের জন্য চেষ্টা তদবির বা এই ধরণের কোন প্রচেষ্টা হয়নি

§ রাসূল সাএর পর চারজন খলিফা নিযুক্ত হয়েছেন জনগনের মর্জি অনুসারে

ফলে মুসলিম মিল্লাত তাদের সময়কে খেলাফতে রাশেদা বা সত্যাশ্রয়ী খেলাফত বলে গ্রহণ করছে

§ রাসূল সাএর পর খলিফা নিযুক্তির প্রক্রিয়াঃ

হযরত আবু বকর রা.

হযরত উমরের প্রস্তাব অনুযায়ী হযরত আবু বকর খলিফা নির্বাচিত হোন এবং সকলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেন

হযরত উমর রা.

হযরত আবু বকর রাজীবিতাবস্থায় হযরত উমর রাসম্পর্কে ওসিয়ত লিখিয়ে যান  মসজিদে নবীতে জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেনঃ

أترضون بمن أستخلف عليكم فإني والله ما الوت من جهد الرأي، ولا وليت ذا قرابة، وإني قد استخلفت عمر بن الخطاب فاسمعوا له وأطيعوا فقالوا : و سمعنا وأطعنا

আমি যাকে স্থলাভিষিক্ত করছি তোমরা কি তার উপর সন্তুষ্টআল্লাহর শপথসিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে বুদ্ধি-বিবেক প্রয়োগে আমি বিন্দুমাত্রও ত্রুটি করিনি আমার কোন আত্মীয়-স্বজনকে নয়বরং উমর ইবনুল খাত্তাবকে আমার স্থলাভিষিক্ত করেছি  সুতরাং তোমরা তাঁর নির্দেশ শুনবে এবং আনুগত্য করবে

হযরত আবু বকরের বক্তব্য শুনার পর সমবেত জনতা একসাথে বলেছিলঃ আমরা তাঁর নির্দেশ শুনবো এবং মানবো

হযরত উমর রাএর খেলাফতের শেষ বছর হজ্জের সময় এক ব্যক্তি বললোঃ

لو قد مات عمر لقد بايعت فلانًا، فوالله ما كانت بيعة أبي بكر إلا فلتة فتمّت!

হযরত উমরা মারা গেলে আমি অমুক ব্যক্তি হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবো কারণ আবু বকরের বাইয়াত হঠাৎ হয়েছি  শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হয়েছেন

একথা জানতে পেরে হযরত উমর বললেনঃ

হযরত আবু বকর রাএর নাম প্রস্তাব আমি করি সেই পরিস্থিতিতে আমরা যদি খিলাফতের মিমাংসা না করে উঠতামতাহলে লোকদের মধ্যে ভূল সিদ্ধান্ত নেয়ার আশংকা ছিল

হযরত আবু বকর রাএর সময় নেয়া পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য নজির নয় আবু বকর আবু বকর উন্নত মানের  জানপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন সে মানের সে কেউ ছিল না

من بايع رجلا عن غير مشورة من المسلمين فلا يبايع هو ولا الذي بايعه، تغرة أن يقتلا

মুসলমানদের পরামর্শ ব্যতিরেকে যদি কেউ কারো হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেতাহলে বাইয়াত হবে না বরং বাইয়াত দাতা  গ্রহণকারী উভয়েই নিজেকে মৃত্যুর হাতে সপোর্দ করবে

হযরত উসমান রা.

হযরত উমর রাপরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য একটি কমিটি গঠন করেনযারা ছিলেন কওমের সবচেয়ে প্রভাবশালী  জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব

এর পর তিনি বলেনঃ

من دعا إلى أمارة نفسه بغير مشورة من المسلمين فاقتلوه

মুসলমানদের পরামর্শ ব্যতিত যে ব্যক্তি জোর করে আমীল হওয়ার চেষ্টা করবেতাকে হত্যা করো

খেলাফত যাতে বংশানুক্রমিক পদাধিকারে পরিণত না হয়সেজন্য তিনি খেলাফতের যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও নিজের ছেলেন নাম বাদ দেন

হযরত উমরের কমিটি পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফকে দায়িত্ব প্রদান করে তিনি জন সাধারণের সাথে আলোচনা করে মতামত যাচাই করেন  তারপর হযরত উসমান রাএর নাম প্রস্তাব করেন জনসমাবেশে তার বাইয়াত হয়

হযরত আলী রা.

হযরত উসমানের শাহাদাতের পর হযরত আলীকে কিছু মানুষ খলিফা করতে চাইলে হযরত আলী বলেনঃ

ليس ذلك إليكم إنما هو لاهل الشورى وأهل بدر فمن رضي به أهل الشورى وأهل بدر فهو الخليفة

এমন এখতিয়ার তোমাদের নাই এটাতো সূরার সদস্য  বদরী সাহাবীদের কাজ  তারা যাকে খলিফা করতে চায়তারাই খলিফা হবে

إن بيعتي لا تكون خفياً ولا تكون إلا عن رضأ المسملين

গোপনে আমার বাইয়াত অনুষ্ঠিত হতে পারেনাতা হতে হবে মুসলমানদের মর্জি অনুযায়ী

হযরত আলী পরবর্তী খলিফাঃ

হযরত আলী রাএর ওফাতের সময় লোকেরা জিজ্ঞেস করলোঃ

আমরা আপনার পর আপনার পুত্র হাসান রাএর হাতে বাইয়াত করবো?

জবাবে হযরত আলী রাবলেছিলেনঃ

لا آمركم ولا أنهاكم انتم أبصر

আমি তোমাদের নির্দেশও দিচ্ছিনানিষেধও করছি না তোমরা নিজেরাই  ব্যাপারে ভালোভাবে বিবেচনা করতে পারো

আপনি কেন আপনার উত্তরসূরী মনোনয়ন করছেন নাজবাবে হযরত আলী বলেছিলেনঃ

أتركهم كما تركهم رسول الله ﷺ

আমি মুসলমানদেরকে সে অবস্থায় ছেড়ে যেতে চাইযে অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছিলেন রাসূল সা.

§ খেলাফত  রাজতন্ত্র সম্পর্কে সাহাবায়ে কিরামদের ধারণা প্রকাশ পায় হযরত আবু মুসা আশআরী রাবক্তব্য থেকেঃ

إن الامارة ما أتمر فيها، وإن الملك ما غلب عليه بالسيف.

এমারত (খেলাফতহচ্ছে তাইযা প্রতিষ্ঠা করতে পরামর্শ নেয়া হয়েছেআর তরবারির জোরে যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেতা হচ্ছে বাদশাহী বা রাজতন্ত্র

০৫খিলাফতে রাশেদার শুরা ভিত্তিক সরকারঃ

§ খুলাফায়ে রাশেদার চার খলিফা আইন প্রণয়ন  সরকার পরিচালনায় জাতির বলিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ করতেন না

§ খুলাফায়ে রাশেদার নীতি ছিলযখন কোন বিষয় তাদের সামনে আসতোতখন তারা দেখতেন আল্লাহর কিতাবে এব্যাপারে কি নির্দেশনাতারপর দেখতেন রাসূলের সুন্নাহ  এই দুই উৎসে না পেলে তারা শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের বৈঠক করে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতেন

§ পারামর্শের ব্যাপারে খুলাফায়ে রাশেদার দৃষ্টিভংগী ছিল স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করার অধিকার

০৬আইনের অধীনতাঃ

§ খুলাফায়ে রাশেদীন নিজেদেরকে আইনের উর্ধে রাখতেন না তাদের দৃষ্টিভংগী ছিল খলিফা এবং একজন সাধারণ নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান

§ খুলাফায়ে রাশেদার সময় বিচারক নিয়োগ করতেন খলিফা  কিন্তু নিযুক্ত হওয়ার পর বিচারক ছিলেন স্বাধীন এমন কি তিনি খলিফারও বিচার করতে পারতেন এবং তার বিরুদ্ধে রায় দিতে পারতেন

§ বিচারক যায়েদ বিন সাবিতের ব্যাপারে হযরত উমর রাএর উক্তিঃ যতক্ষণ যাদের কাছে একজন সাধারণ মুসলমান  উমর সমান না হয়ততক্ষণ যায়েদ বিচারক হতে পারে না

উল্লেখ্য যেহযরত যায়েদ বিচারকাজে হযরত উমর রাএক পক্ষে ছিলেন কিন্তু তিন তার কসম গ্রহণ করেননি

§ হযরত আলী রা জনৈক খৃষ্টানের মধ্যে আলোচিত  বর্ম সংক্রান্ত মামলায় হযরত আলী উপযুক্ত সাক্ষ্য পেশ করতে না পারায় কাযী হযরত আলীর বিরুদ্দে রায় প্রদান করেন

§ কাযী শোরাইহ এর আদলতে হযরত আলী একবার বাদী-বিবাদী হিসাবে উপস্থিত হলে কাযী দাড়িয়ে তাকে সম্মাণ জানান  হযরত আলী রাতখন বলেনঃ এটা তোমার প্রথম বে-ইনসাফী

০৭স্রষ্টা ও সৃষ্টির অধিকারের সংরক্ষকঃ

§ বাইতুলমালকে খুলাফায়ে রাশেদীন মনে করতেন স্রষ্টা  সৃষ্টির আমানত

বিধায় বাইতুলমালে বেআইনি ভাবে কিছু গ্রহণ বা তা থেকে বেআইনি ভাবে কিছু খরচ করার সুযোগ ছিল না ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বাইতুলমালের কিছু ব্যবহার করা তারা হারাম মনে করতেন

§ বাদশাহীতে রাষ্ট্রীয় অর্থ ভান্ডারকে ব্যক্তিগত কোষাগারে পরিণত করে আর খেলাফত রাষ্ট্রীয় অর্থ ভান্ডারকে স্রষ্টা  সৃষ্টির আমানত মনে করে

§ হযরত আবু বকর রা.

-       খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পরদিন কাপড়ের থান কাঁধে নিয়ে বিক্রি করার জন্য রেরিয়েছেন কারণ ইতিপূর্বে তার পেশা এটাই ছিল  হযরত উমর রাএর সাথে দেখা তিনি বললেনঃ ছেলে মেয়েদের খাওয়াবো কি করেঅতপর হযরত উমর আবু বকর রা.কে নিয়ে বায়তুল মালের দায়িত্বশীল আবু উবায়দার কাছে গেলেন এবং আলাপ আলাচনা করে একজন সাধারণ মুহাজিরের আয়ের সমান ভাতা নির্ধারণ করে দিলেন যার পরিমাণ ছিল বার্ষিক চার হাজার দিরহামের মতো

-       হযরত আবু বকর রাওফাতের সময় ওসিয়ত করে যানঃ

خذوا من مالي ثمانية آلاف درهم وردوها في بيت المال

আমার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে আট হাজার দিরহাম বাইতুলমালে ফিরত দেবেন

§ হযরত উমরা রা.

-       একদিন হযরত সালমান ফারসী রা.কে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি বাদশাহ না খলিফাতিন বললেনঃ

إنْ أنْتَ جَبَيْتَ مِن أرْضِ المُسْلِمِينَ دِرْهَمًا أوْ أقَلَّ أوْ أكْثَرَ، ثُمَّ وضَعْتَهُ في غَيْرِ حَقِّهِ، فَأنْتَ مَلِكٌ غَيْرُ خَلِيفَةٍ.

মুসলমানদের ভূমি থেকে আপনি যদি এক দেরহামও অন্যায়ভাবে উসুল এবং অন্যায় ভাবে ব্যয় করেনতাহলে আপনি খলিফা ননবাদশাহ

-       অন্য এক প্রসংগে একদিন তার মজলিসে বলেনঃ

واللَّهِ ما أدْرِي أخَلِيفَةٌ أنا أمْ مَلِكٌ؟ قالَ قائِلٌ: يا أمِيرَ المُؤْمِنِينَ إنَّ بَيْنَهُما فَرْقًا. قالَ: ما هُوَ؟ قالَ: الخَلِيفَةُ لا يَأْخُذُ إلّا حَقًّا، ولا يَضَعُهُ إلّا في حَقٍّ وأنْتَ بِحَمْدِ اللَّهِ كَذَلِكَ، والمَلِكُ يَعْسِفُ النّاسَ، فَيَأْخُذُ مِن هَذا ويُعْطِي هَذا فَسَكَتَ عُمَرُ.

আল্লাহর কসমআমি এখনও বুঝে উঠতে পারছিনা যেআমি বাদশানা খফিলা আমি যদি বাদশা হয়ে থাকিতবে তো এক সাংঘাতিক কথা জনৈক ব্যক্তি বললেনঃ আমীরুল মুমিনীনএই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে উমর রাজিজ্ঞেস করলেনঃ কি পার্থক্যতিনি বললেনঃ খফিলা অন্যায় ভাবে কিছু গ্রহণ করেন নাঅন্যায় কিছু ব্যয়ও করেন না আলহামদুলিল্লাহ আপনি অনুরূপ আর বাদশা তো মানুষের উপর যুলুম করেঅন্যায়ভাবে একজনের কাছ থেকে উসুল করেআর অন্যায় ভাবেই অপরজনকে দান করে

-       বায়তুল মালে খলিফার অধিকার সম্পর্কে হযরত উমর বলেনঃ

لا يحل لي في مال الله سوى كسوتين للصيف وكسوة للشتاء ومعاش رجل من أوسط قريش يأخذه لعيانه وأنا بعد ذلك رجل من عامة المسلمين.

গ্রীষ্মকালে এক জোড়া কাপড়শীতকালে এক জোড়া কাপড়কুরাইশের একজন মধ্যবিত্ত ব্যক্তি সমপরিমাণ অর্থ আপন পরিবার-পরিজনের জন্যে  ছাড়া আল্লাহর সম্পদের মধ্যে আর কিছুই আমার জন্যে হালাল নয় আমি তো মুসলমানদের একজন সাধারণ ব্যক্তি বৈ কিছুই নই

-       এক ভাষণে তিনি বলেনঃ

أن هذا المال لا يصح فيه سوى خلال ثلاث، أن يؤخد بالحق ويعطي بالحق ويمنع من الباطل وانما انا ومالكم كوني اليتيم ان استعففتت وان افتقرت اكلت بالمعروف

 সম্পদের ব্যাপারে তিনটি বিষয় ব্যতিত অন্য কিছুকেই আমি ন্যায় মনে করিনা ন্যায় ভাবে গ্রহণ করা হবেন্যায় মোতাবেক প্রদান করা হবে এবং বাতিল থেকে তাকে মুক্ত করা হবে এতিমের সম্পদে তার অভিভাবকের যে সম্পর্কতোমাদের  সম্পদের সাথে আমার সম্পর্কও ঠিক অনুরূপ আমি অভাবী না হলে তা থেকে কিছুই গ্রহণ করবো নাঅভাবী হলে মারূফ পন্থায় গ্রহণ করবো

§ হযরত আলী রা.

-       হযরত আবু বকর  হযরত উমর রাবেতন মান যা ছিলহযরত আলী রাতার বেতনও তেমনই রাখলেন

-       হযরত আলী রাকাপড় পরতেন হাঁটু আর পায়ের গোড়ালীর মাঝ অবধি একধরণের তহবন্দ যা ছিল তালিযুক্ত শীত নিবারণের উপযুক্ত কাপড় না থাকায় শীতে কাপতেন

-       মৃত্যুর সময় হযত আলীর পরিত্যাক্ত সম্পত্তি ছিলঃ ৭শ দিরহাম যা জমিয়ে ছিলেন গোলাম খরিদ করার জন্য

-       পরিচিত হিসাবে কেউ যাতে তার থেকে মূল্য কম না নেয়সেজন্য কোন পরিচিত জনদের কাছ থেকে কিছু কিনতেন না

-       মুয়াবিয়া রাএর মোকাবেলায় শক্তি অর্জন করতে বায়তুলমালের অর্থ খরচের পরামর্শ দেয়া হলে তিনি বলেনঃ তোমরা কি চাও আমি অন্যায় ভাবে সফল হই?

-       নিজ ভাই আকীল রাবায়তুলমাল থেকে অর্থ দাবী করলে তিনি দিতে অস্বীকার করে বলেনঃ তুমি কি চাও তোমার ভাইও মুসলমানদের টাকা তোমাকে দিয়ে জাহান্নামে যাক?

০৮ইসলামী গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের আদর্শ নমুনাঃ

§ খিলাফতের রাশেদার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট ছিলঃ সমালোচনা  মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা

o  খলিফা সব সময় থাকতেন জনগনের নাগালে

o  জনগন শুরার অধিবেশনে বসতো এবং আলোচনায় অংশ নিতো

o  সে সময় সরকারী  বিরোধী কোন দল ছিল নাসবাই নিজ নিজ ঈমান  বিবেক অনুযায়ী মত প্রকাশ করতেন স্বাধীন ভাবে

o  সকল বিষয় মজলিসে সূরার সামনে পেশ করা হতো হুবহু  কোন কিছু গোপন বা কাটছাঁট না করে

o  সিদ্ধান্ত হতো দলীলে ভিত্তিতে-দাপটপ্রভাবস্বার্থ বা দলাদলির ভিত্তিতে নয়

o  খলিফা জাতির সামনে কেবল মজলিসে শুরার সামনে আসতেন না আসতেন দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেজুমুয়াতেদুই ঈদে এবং হজ্জ সম্মেলনে

o  খলিফা বসবাস করতেন জনগনের মাঝে কোন দারওয়ানদেহরক্ষী ছাড়া ফলে যে কেউ যে কোন সময় তার সাথে দেখা করতে পারাকথা বলাসমালোচনা করাকৈফিয়ত তলব করা সবই সুযোগ ছিল অবারিত খলিফারা এসব করতে জনগনকে সুযোগ দিতেউৎসাহিত করতেন

§ হযরত আবু বকর রাঃ

তার অভিষেক ভাষণে বলেন-আমি সোজা পথে চললে আপনারা আমার সাহায্য করবেনআর বাঁকা পথে চললে সোজা করে দেবেন

§ হযরত উমর রা.

-    জুমুয়ার খুতবাতে বিয়েতে চারশত দিরহামের বেশী মোহরানা প্রদানের অনুমতি না দেয়ার কথা বললে এক মহিলা প্রতিবাদ করেন  বলেনঃ আপনার নির্দেশ দেয়ার কোন অধিকার নাই  কুরআন যেখানে সম্পদের স্তুপ মোহরানা হিসাবে দেয়ার অনুমতি দিচ্ছে  সেটা সীমিত করার আপনি কেহযরত উমর রাসাথে সাথে তার মত প্রত্যাহার করেন

-    একদিন মজলিসে উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞেস করলেনঃ কোন ব্যাপারে যদি আমি শৈথিল্য দেখাই তাহরে তোমরা কি করবেবিশর বিন সাআদ রাবললেনঃ এমনটি করলে আমরা আপনাকে তীরের মতো সোজা করে দেবো হযরত ‍উমর রাবললেনঃ তবেই তোমরা কাজের মানুষ

§ হযরত উসমান রা.

যিনি সর্বাধিক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন  তবুও কারো মুখ বন্ধ করতে জোর খাটাননি সব সময় অভিযোগ  সমালোচনার জবাব দিয়েছেন জনসমক্ষে

§ হযরত আলী রা.

-    খারেজীদের নিকৃষ্ট কটুক্তি সমূহ বরদাশত করেছেন শান্ত মনে

-    পাঁচজন খারেজীকে গ্রেফতার করা হলো যারা তাকে গালি দিচ্ছিল এবং তাকে হত্যার শপথ নিচ্ছিল তিনি তাদেরকে মুক্ত করে দেন

-    হযরত আলী খারেজীদের সম্পর্কে বলেনঃ তোমরা ইচ্ছা করলে তাদের গাল মন্দের জবাব দিতে পারো কিন্তু কোন বিদ্রোহী ভূমিকা না নেয়া পর্যন্ত কেবল মৌখিক বিরোধীতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়

§ পরবর্তী যুগের ফকীহমুহাদ্দিস  সাধারণ মুসলমান খুলাফায়ে রাশেদার সেই আলোর মিনারের দিকে নজর রেখেছেনযা উপরে বর্ণিত হলো  ইসলামের ধর্মীয়নৈতিকরাজনৈতিক  সামাজিক ব্যবস্থায় পরবর্তী যুগের মুসলমানরা খেলাফতে রাশেদার যুগকে আদর্শ মনে করে আসছেন

০৯ইসলামি নীতির মূর্ত প্রতীকঃ

§ হযরত আলী রাএর সিফফীন যুদ্ধের কর্মপন্থা স্পষ্ট করে খলিফা  বাদশার পার্থক্যঃ

পলায়নকারীর পেছনে ধাওয়া করবে না বলে নির্দেশ প্রদান

বিজয়ের শেষে উভয় পক্ষের শহীদদের জানাযা আদায়  সমমর্যাদায় দাফন সম্পন্ন

বিরোধীদের পক্ষ হতে প্রাপ্ত মালকে গনিমত হিসাবে গ্রহণে অস্বীকৃতি গনিমতের মাল জড়ো করে ঘোষনা করেনঃ যে তার মাল চিনতে পারবেসে তা নিয়ে যেতে পারবে

বসরার পুরুষদের হত্যা  মেয়েদের দাসী বানানোর খবর রটলে ঘোষনা করেনঃ

وما على ان أفعل ذلك مه المسلمين امثالهم با مه الكافرين

আমার মতো লোক থেকে  ধরণের আশংকা করা উচিত নয় আচরণ তো কাফেরদের সাথে করার মতো মুসলমানদের সাথে এহেন আচরণ করা যায়না

বসরায় প্রবেশের পর সেনাবাহিনীর প্রতি নির্দেশঃ সাবধানকারো সম্ভ্রম নষ্ট করবেনা

পরাজিত পক্ষের নেতা হযরত আয়েশা রা.কে সম্মাণের সাথে মদীনায় প্রেরণ

হযরত জুবায়ের রাএর হত্যাকারী পুরস্কার লাভের আশায় আসলে তাকে জাহান্নামের সংবাদ প্রদান করে বলেনঃ

سيف طالها جلئ الكرب عن وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم

কতবার এই তরবারী রাসূল সা.কে হেফাজত করেছে

হযরত তালহা রাএর পুত্র সাক্ষাত করতে আসলে তাদের আদর করা  সম্পদ ফিরিয়ে দিয়ে বলেনঃ

إني لأرجو أن يجعلني الله وأباك من الذين قال الله ﴿وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ﴾

তোমার পিতা  আমার মধ্যে সংঘটিত ঘটনাকে আল্লাহ কুরআনে বর্ণনা করেছেনঃ আমি তাদের অন্তরের কলুষ-কালিমা বিদূরীত করবোআর তারা ভাইয়ের মতো একে অন্যের সম্মুখে উচ্চাসনে উপবিষ্ট হবে। (সূরা আল হিজরঃ ৪৭)

সাহাবায়ে কিরামের ইখলাস ও আনুগত্য

§ সূরা আত তাওবাঃ ১১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা এরশাদ করেনঃ

﴿وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّىٰ إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَن لَّا مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ﴾

আর সে তিনজনকে তিনি মাফ করে দিয়েছেনযাদের বিষয়টি মুলতবী রাখা হয়েছিল যখন তাদের জন্যে যমীন তার বিশাল প্রশস্ততা সত্ত্বেও সংকীর্ণ হয়ে গেলো এবং তাদের জীবন তাদের জন্যে বোঝা হয়ে পড়লো আর তারা বুঝে নিলো যে আল্লাহর (পাকড়াওথেকে বাঁচার জন্যে স্বয়ং আল্লাহর রহমতের আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেইতখন আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে তাদের প্রতি দৃষ্টি দিলেন যেনো তারা তাঁর দিকে ফিরে আসে তিনি অবশ্যি বড় ক্ষমাদানকারী দয়াময়

§ যাদের সম্পর্কে এই আয়াতে বলা হয়েছেতারা ছিলেন আল্লাহর রাসূলের সাহাবী সাচ্চা মুমিন তারা হলেনঃ

কা ইবনে মালিক রা

হিলাল ইবনে উমাইয়া রা.

মুরারা ইবনে রুবাই রা.

§ তারা ছিলেনঃ

-       সাচ্চা মুমিন

-       তাদের নিষ্ঠা  আন্তরিকতা ইতিপূর্বে প্রমাণিত

-       তাদের ত্যাগ  কুরবানীর ইতিহাস রয়েছে

-       দুইজন বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন দুইজনঃ হিলাল ইবনে উমাইয়া  মুরারা ইবনে রুবাই

-       প্রথম জন বদর ছাড়া সকল যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন

§ তাদের অপরাধ-তারা তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি

§ তাবুক থেকে ফিরে রাসূল সাফরমানঃ

-       কোন মুসলমান যেন তাদের সাথে সালাম কালাম না করে

-       ৪০ দিন পর স্ত্রীদেরকে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার নির্দেশ দেয়া হলো

-       ৫০তম দিবসে তাদের ক্ষমা করার হুকুম নাযিল হয়

§ কা ইবনে মালিক এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন তার বৃদ্ধ বয়সে তিনি যুদ্ধে অংশ গ্রহণের কারণ হিসাবে মুনাফিকদের মতো বানিয়ে বানিয়ে উজর পেশ করেননি তিনি বলেনঃ

আমি যদি কোন মনগড়া কথা বলিতাহলে আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেনকিন্তু আল্লাহ আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে যাবেন আর আমি যদি সত্য কথা বলি তাহলে আপনি অসন্তুষ্ট হলেও আমার বিশ্বাস আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন প্রকৃত ব্যাপার হলোআমার কাছে পেশ করার মতো কোন ওযর নাই আমি যুদ্ধে যেতে সম্পূর্ণ সক্ষম ছিলাম

§ কা ইবনে মালিকের বর্ণনা অনুযায়ী ৩জনের প্রতি একই নির্দেশ দেয়া হলো আর তাহলোঃ

-       যাআল্লাহর ফয়সালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো

-       তিন জনের সাথেই কেউ কথা বলবেনা

-       দুইজনই ঘরে বসে থাকতেন আর কা মাঝে মাঝে বের হতেন নামাযের জামায়াতে শামীল হতেন বাজারে ঘুরাঘুরি করতেন

-       এই সময়ে সাহাবায়ে কিরামদের কেউ তাদের সাথে কথা বলেনি

-       চুপিসারে রাসূল সাতার দিকে তাকাতেন

-       সিরিয়া থেকে প্রলোভন দেখিয়ে চিঠি দেয়া হলো তিনি চিঠি পড়ে জ্বালিয়ে ফেলেন

-       ৪০ দিন পর স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার নির্দেশ প্রদান করা হলো

-       ৫০তম দিবসে তাওবা কবুলে ঘোষনাতে সাহাবায়ে কিরামরা দলে দলে এসে মুবারকবাদ জানালেন

-       তাওবার অংশ হিসাবে কা খয়বরের কিছু অংশ রেখে পুরো সম্পত্তি আল্লাহর পথে বিলিয়ে দেন

§ সাহাবায়ে কিরামের তাওবা কবুলের এই ঘটনা থেকে শিক্ষনীয়ঃ

একঃ ইসলাম  কুফুরের দ্বন্দ্ব বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ  নাজুক এই দ্বন্দে ইসলামকে বিজয়ী করার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ না করলে সারাজীবনের আমল বিপদের সম্মুখীন ব্যক্তির পূর্ব ইতিহাস যতিই ভাল হোক না কেন?

দুইঃ দায়িত্বে অবহেলা কোন সাধারণ বিষয় নয়  কেবলমাত্র অবহেলা কবিরা গুনাহ করিয়ে ফেলতে পারে নিয়ত পরিশুদ্ধ থাকলেও তা থেকে রেহাই নাই

তিনঃ রাসূল সাএর নেতৃত্বাধীন সমাজের অবস্থা উপস্থাপনঃ

-       মুনাফিকরা গাদ্দার জেনেও তাদের বাহ্যিক ওজর গ্রহণ  ক্ষমা করে দেয়া

-       মুমিনরা মনগড়া বানিয়ে কথা না বলা এবং নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়া

-       মুমিনরা ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তবুও তাদের প্রতি ক্রোধান্বিত হওয়া  কারণ মুমিনরা মুনাফিকদের মতো আচরণ কেন করবে?

-       মুমিনরা হলো যমীনের সারবস্তু সার হবার যোগ্যতা হারালে সার কোথায় পাওয়া যাবে

-       দায়িত্বশীল শাস্তি দিচ্ছেনআর গভীর আনুগত্য  বিনয়ের সাথে সেই শাস্তি সবাই মেনে নিচ্ছেন

-       অনুগতরা শাস্তি প্রয়োগে সহাযোগিতা করছে

-       দায়িত্বশীলের শাস্তি প্রদানের কোন ঘৃণা নেইবিদ্বেষ নেই আছে সীমাহীন মহব্বত আর ভাল বাসা যেন পরিশুদ্ধ করে বুকে তুলে নিতে পুত্রের প্রতি পিতার হাতছানি

-       যার প্রতি শাস্তিতার মনেও কোন ক্ষোভবিদ্রোহ নেই বরং ক্ষমা পাওয়ার প্রত্যাশায় বৃষ্টি বিহীন চাষীর মতো আকাশের পানে তাকিয়ে বৃষ্টির অপেক্ষা

-       পুরো সংগঠন দায়িত্বশীলের বয়কট অর্ডার তালিম করার জন্য ব্যস্ত একান্ত নির্জনেও কেউ কথা বলছেনা-এমনকি স্ত্রীও

-       এজনের শাস্তি হচ্ছে কিন্তু বাকীরে শকুনের মতো তার প্রতি গোশত খাওয়ায় ব্যস্ত ননবরং মর্মাহত এবং বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান

-       যাদের প্রতি শাস্তি প্রদান করা হলোতারা তাদের আচরণে প্রমাণ দিলেনঃ আল্লাহর গুলামী  আনুগত্য তাদের মন থেকে সকল ধরণের মূর্তি  দেবতার আনুগত্য চিরদিনের জন্য খতম তরে দিয়েছে

-       তাদের আচরণে আল্লাহ খুশী হয়ে বললেনঃ

আমি তাদের দিকে ফিরলাম যেনো তারা আমার দিকে ফিরে আসে

সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন ‘রুহামাউ বাইনাহুম

§ জনৈক বক্তাকে প্রশ্নঃ সাহাবায়ে কিরাম “رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ -তারা পরস্পর পূর্ণ দয়াশীল সিফফীন  জামালের যুদ্ধে সাহাবায়ে কিরামের ভূমিকার আলোকে কথাটির তাৎপর্য কি?

§ মাওলানার জবাবঃ মাওলানা মরহুম প্রশ্নের জবাবের শুরুতে উল্লেখ করেন যে,  أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ আয়াতের ব্যাপারে প্রশ্নকারীর সংশয়ের ভিত্তি অনুমান  কল্পনা নির্ভর। আর এই ভিত্তি দুইটি।

§ প্রথম সংশয়  তার জবাবঃ

প্রথম কথাঃ

-      কোন ব্যক্তি সমষ্টি নিয়ে যখন প্রশংসা করা হয়তখন একথা আবশ্যক মনে করা হয় যেসেই ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি জিন্দেগীতে কখনো কোন আংশিক ত্রুটি বিচ্যুতিতে যুক্ত হবেন না

-      চিরন্তন কথা হলোঃ যখন কারো প্রশংসা করা হয়তখন উপস্থিত ঘটনার প্রেক্ষিতে করা হয়  পরে কখনো তার বিরীত কিছু হলে তার সামষ্টিক বৈশিষ্ট বাতিল হয়না

-      সাহাবায়ে কিরামরা পৃথবীর সবচেয়ে মুত্তাকী  নেককার মানুষের সমষ্টি যা তাদের জীবন চরিত্রের সামগ্রিক বিচারে নিরূপিত হয়েছে

-      এর মানে এই নয় যেমানুষ হিসাবে কখনোই তাদের জীবনে মানবিক দূর্বলতা বা ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা যেতো না

-      সাহাবায়ে কিরামের জীবনেও ব্যভিচারচুরিমিথ্যা দোষারোপ ইত্যাদি অপরাধের শাস্তি হয়েছে সাজাপ্রাপ্ত  সব মানুষরাই সাহাবীর মর্যাদায় ছিলেন

-      সাহাবী তিনি যিনি ঈমানের সাথে রাসূল সাএর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এসব শাস্তি গ্রহণের ফলে তার না ঈমান চলে গিয়েছিলনা সাহাবীর মর্যাদা চলে গিয়েছিল

-      এই সব অপরাধ সামগ্রিক ছিল নাছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা

-      সংস্কারসংশোধনতাকওয়া ইত্যাদি সাহাবায়ে কিরাম এমন স্তরে পৌছেছিলেনযে স্তরে পৃথিবীর আর কোন মানব সমাজ পৌছতে পারেনি

-      বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা সামগ্রিক গুণ বৈশিষ্টের ক্ষতি করতে পারে না

-      বিধায়উপরোক্ত ভিত্তিগুলো অনুমান  কল্পনা নির্ভর এবং প্রকৃত সত্যের বিপরীত-অবাস্তব

দ্বিতীয় কথাঃ

-      رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ বৈশিষ্টটি সাহাবায়ে কিরামের সামগ্রিক চরিত্র  বিজয়ী স্বভাবের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে

-      মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসাদয়াঅনুগ্রহসহমর্মিতাকল্যাণ কামনা এবং পরস্পরের অধিকারের প্রতি সম্মাণ এই সব বিষয় সাহাবায়ে কিরামের সমাজ এতো উচ্চস্তরে পৌছেছিল যেকখনো কোন মানব সমাজে এতো উচু স্থরের মানবিক অবস্থা পাওয়া যায়নি

-      সাহাবায়ে কিরামের এসব গুণ এতোটা পূর্ণতা লাভ করেছিল যেঅন্য কোন মানব সমাজে তা কল্পনাই করা যেতো না

-      এতো উঁচু অবস্থানে পৌছার পরও তারা মানুষই ছিলেন এবং মানুষ থাকার কারণে তাদের মাঝে মতপার্থক্যঝগড়া বিবাদ ছিল  কারণ তারা মানুষ ছিলেন  মুহাম্মদ সাএর সাহাবী হওয়ার জন্য আল্লাহ আকাশ থেকে কোন বিশেষ মানব গোষ্ঠী নাযিল করেননি

-      সাহাবায়ে কিরাম যেহেতু আকাশ হতে বিশেষ সৃষ্টি হিসাবে নাযিল হোননিসেহেতুত তাদের পারস্পরিক উঠাবসালেনদেনসামাজিক সম্পর্ক ছিল আর যার কারণে তাদের মাঝে মতপার্থক্য  হওয়া বা তা চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতো এবং তা স্বাভাবিকই ছিল

-      কিন্তু এই মতবিরোধ  বিবাদ ইত্যাদির মাঝেও তারা رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ সোনালী বৈশিষ্ট এর অধিকারী ছিলেন

§ দ্বিতীয় সংশয়  তার জবাবঃ

-      অনুমান হলোঃ সাহাবায়ে কিরামদের মধ্যে মত পার্থক্য হবে না সাহাবায়ে কিরামদের মাঝে মতপার্থক্য হওয়া মানে তাদের তাদের রুহমাউ বাইনাহুম এর মর্যাদা আছেতা বাতিল হয়ে যাওয়া

-      ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছেঃ এই মতপার্থক্যের মাঝেও তারা যখন যুদ্ধে জড়িত হয়েছেন পরস্পরের বিরুদ্ধেসেখানেও তারা রুহামাউ বাইনাহুম এর অনুপম বৈশিষ্ট রক্ষা করেছেন

-      সাহাবায়ে কিরামরা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তাদের নিয়ত আর আন্তরিকতার কারণে কিন্তু সর্বাবস্তায় তারা পরস্পরের প্রতি সম্মাণ দেখিয়েছেন সাহাবায়ে কিরাম কেউ ব্যক্তিগত শত্রুতা  ব্যক্তি স্বার্থের জন্য লড়াই করেননি

-      সাহাবায়ে কিরামরা যখন যুদ্ধ করতেনতখন তাদের প্রতিপক্ষ তাদের অবস্থান যে ভূল সে কথাটা বুঝতে পারতেছেনা বলে আফসোস করতেন

-      সাহাবায়ে কিরামরা একপক্ষ আরেক পক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যুদ্ধ করেননি যুদ্ধ করেছেন প্রতিপক্ষকে হকের পথে আনতে তারাঃ

o   কারো ঈমান বেঠিক মনে করতেন না

o   ইসলাম তাদের যে অধিকার দিয়েছে তা অস্বীকার করতেন না

o   তাদের মর্যাদা  ইসলামের জন্য তাদের অতীতের খেদমতকে অস্বীকার করতেন না

o   পরস্পরকে হীন বা লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করতেন না

-      সাহাবায়ে কিরামরা যুদ্ধ করেছেন যুদ্ধের হক আদায় করে কিন্তু

o   যুদ্ধে প্রতিপক্ষের আহত নিহতের প্রতি ছিল প্রাণভরা মহবব্ত

o   যুদ্ধ বন্দীদের সাথে মামলা দায়েরশাস্তিপ্রদানলাঞ্ছিত করা তো বহু দূরের কথা তাদেরকে বন্দী করে রাখাও হয়নি

-      যুদ্ধক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরামদের আচরণ কেমন রহমদীল ছিলতার বিবরণ পাওয়া যায় জঙ্গে জামালে ঘটে যাওয়া ৭টি উদাহরণ থেকেঃ

উদাহরণঃ 

হযরত আলী রা হযরত যুবাইর রাপরস্পর প্রতিপক্ষ হযরত আলী প্রতিপক্ষ যুবাইরকে কাছে ডাকালেন তিনিও নির্দ্বিধায় কাছে চলে আসলে দুই সৈন্য বাহিনীর মাঝখানে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন 

 সম্পর্কে হযরত আলীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ

জানো তিনি কেতিনি রাসূলের ফুফু সাফিয়া রাএর পুত্র  আমি রাসূল সাএর একটি কথা তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিতিনি বলেছেনঃ কতোইনা ভালো হতো আরো পূর্ব যদি আমার একথা স্মরণ হতো তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ করতে আসতাম না

হযরত আলীর পক্ষের লোকেরা বললোঃ

আলহামদুলিল্লাহআমীরুল মুমিনীনতিনি তো রাসূলুল্লাহর হাওয়ারী তিনি তো রাসূলুল্লাহর শাহসওয়ার তার জন্যেই আমরা বেশী ভয় পাচ্ছিলাম

যুবাইর রানিজ বাহিনীর কাছে ফিরে গিয়ে বলেনঃ

শিরক এবং ইসলামের মধ্যে সংঘটিত কোন লাড়াইয়ে যখনই আমি অংশ গ্রহণ করেছিতাতে আমি বিচক্ষণতার সাথে যুদ্ধ করেছি কিন্তু  যুদ্ধে না আমার মন সাড়া দেয়আর না বিচক্ষণতা

এই কথা বলে হযরত যুবায়ের নিজ ফৌজ ছেড়ে চলে যান

উদাহরণঃ 

হযরত আলী রাএবং তালহা রাএর ঘটনা পরস্পর বিরোধী দুইজনের সাক্ষাৎ হয় উভয় বাহিনীর মাঝখানে তারা পরস্পর পরস্পরকে সর্বশেষ সময় পর্যন্ত নিজ নিজ মত মানাতে চেষ্টা করনে

উদাহরণঃ 

হযরত আলী রানিজ বাহিনীকে সম্বোধন করে ঘোষণা করেনঃ 

لا يقتلن مدبر، ولا يجهز على جريح، ولكم ما في عسكرهم وعلى نسائهم العدة، وما كان لهم من مال في أهليهم فهو ميراث على فرائض الله.

.  সাবধানকাউকে শাস্তি দিয়ে হত্যা করবেনা

আহতদের গায়ে হাত উঠাবে না

প্রতিপক্ষের ফেলে যাওয়া মাল গ্রহণ করতে পারো কিন্তু শহীদদের নিজেদের ঘরে রেখে যাওয়া মাল উত্তরাধিকারীদের হক তাদের স্ত্রীদের ইদ্দত পালন করতে হবে

একজন প্রশ্ন করলোঃ

كيف تحل لنا أموالهم، ولا تحل لنا نساؤهم ولا أبناؤهم؟

যেহেতু তাদের মালামাল আমাদের জন্য বৈধতাহলে তাদের স্ত্রীরাও বৈধ হবে না কেন?

উত্তরে হযরত আলী রাবলেনঃ

أيكم يأخذ أمكم عائشة في سهمه؟

তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কিযে তার মাতা আয়িশা রা.কে গ্রহণ করতে প্রস্তুত

সবাই একসাথে বলে উঠলোঃ আস্তাফগফিুল্লাহ

উদাহরণঃ 

তালহা পুত্র মুহাম্মদ এর লাশ দেখতে পেয়ে বললেনঃ

رحمك الله يا محمد، لقد كنت في العبادة مجتهدا آناء الليل قواما، وفي الحرور صواما

হে মুহাম্মদআল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন তুমি ছিলে বড় ইবাদত গুযার নিশি রাত জেগে নামায আদায়কারী কঠিন গরমের সময় রোযাদার

উদাহরণঃ 

হযরত জুবায়ের এর হত্যাকারী পুরস্কারের আশায় হযরত আলীর নিকট হাজির হলে তিনি তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ প্রদান করলেন

উদাহরণঃ 

প্রতিপক্ষ হযরত আয়েশা রাএর তাবুর কাছে পৌছে হযরত আলী রাপৌছে বললেনঃ

হে তাবুবাসিনীআল্লাহ আপনাকে ঘরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন অথচ আপনি যুদ্ধ করার জন্যে বেরিয়ে এসেছেন

অতপর অত্যন্ত সম্মানের সাথে তিনি তাঁকে মদীনায় পাঠিয়ে দেনে আর হযরত আয়েশা দিল খুলে হযরত আলীর জন্য দোয়া করেনঃ

جزاك الله ابن أبي طالب الجنة

আল্লাহ আবু তালিবের পুত্রকে জান্নাত দ্বারা পুরস্কৃত করুন

উদাহরণঃ 

জামালের যুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী সাহাব তালহা রাএর পুত্র মুসা রাযখন আলী রাএর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেনতখন তিনি বলেনঃ

إني لأرجو أن أكون أنا وأبوك ممن قال الله فيهم ﴿وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ﴾

আমি আশা করি তোমার পিতা সেই সব লোকদের মধ্যে হবেনযাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেনঃ আমরা তাদের অন্তরের কালিমা বিদুরিত করে দেবো আর তারা জান্নাতে মুখোমুখি আসন সমূহে ভাই ভাই হিসেবে উপবেশন করবে” (সূরা হিজরঃ ৪৭)

একজন প্রশ্ন করলোঃ কে এসেছিল তার জবাবে তিনি বললেনঃ সে আমার ভাতিজা

লোকটি বললোঃ সে যদি আপনার ভাতিজাই হয়ে থাকেতাহলে আমরা তো বদবখত হয়ে যাই

হযরত আলী রালোকটির উপর অসন্তুষ্ট হয়ে বললেনঃ

ويحك، إن الله قد اطلع على أهل بدر، فقال: اعْمَلُوا ما شِئْتُمْ؛ فقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ

তোমার ধ্বংস হোক আল্লাহ বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের বলে দিয়েছেনঃ “আমি তোমাদের মাফ করে দিয়েছি তোমরা যেরূপ ইচ্ছা আমল করো

§ উপরোক্ত উদাহরণ সমূহ প্রমাণ করেঃ

-      সাহাবায়ে কিরাম পরস্পরের বিরুদ্ধে যখন তলোওয়ার উত্তোলন করেছিলেনতখনও তারা ছিলেন পরস্পরে রুহমাউ বাইনাহুম

-      সাহাবায়ে কিরাম কঠিন যুদ্ধকালীন সময়েও পরস্পরে প্রতি সম্মাণমর্যাদামুহাব্বাতঅধিকার অক্ষুন্ন রেখেছেন

-      পরবর্তী যুগে যদি কেউ কারো প্রতি দরদী হয়ে অন্যজনকে গালি দেনতাহলে তা সাহাবায়ে কিরামদের অসম্মাণ করা হয়

-      মনে রাখতে হবেঃ সাহাবায়ে কিরাম পরস্পর লড়াই করতেন না শত্রুতার বশবর্তী হয়ে  আবার লড়াই করেও তারা পরস্পরের শত্রু হতোন না

অন্যান্য আরো বইয়ের নোট পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।



Post a Comment

0 Comments