সত্য ও সুন্দরের পথে অবিরাম পথ চলা-০১
মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ আভ্যন্তরিন কলহে
জর্জরিত যখন ইসলামী ছাত্রশিবির, তখন আমি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। সালটা ১৯৮২।
পড়ি মৌলভী বাজার জেলার বড়লেখাতে অজোঁপাড়া গায়ে অবস্থিত সুজাউল আলিয়া মাদ্রাসাতে।
তদানিন্তন সময়ে ছোট্ট ক্লাশে থাকা একজন কিশোরের কাছে বোধগম্য
হচ্ছিল না যে,
তখনকার
সময়ে ইসলামী ছাত্রশিবির নামক জিনিসটাকে ভাল করে বুঝতাম না। কিন্তু প্রতি
বৃহস্পতিবার হলেই আমরা টানাটানির শিকার হতাম। মাদ্রাসার একদল ছাত্র যারা
আমাদেরকে মাদ্রাসা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত তাদের প্রোগ্রামে আহবান করতেন। অপর
একদল ছাত্র আমাদেরকে মাদ্রাসা ছাত্রসংসদ অফিসে অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামে আহবান
করতেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আজিজুর রাহমান শাহবাগী মরহুম। ছিলেন
অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি।তিনি দূ’পক্ষকেই সুযোগ দিতেন মিটিং করার।
তবে প্রতিটি
মিটিং এ সভাপতিত্ব করার জন্য মাদ্রাসার ১জন করে শিক্ষককে
দিতেন-যাতে করে
কোন ধরণের সমস্যা না হয়। আমরা অবশ্য যে মিটিং এ ভাল খাবার
থাকতো,
সেই মিটিং-এ
যেতাম। উল্লেখ্য যে,
তখনকার সময় সব
মিটিংএ খাবারের ব্যবস্থা রাখা হতো।
১৯৮২
সালে এক অনাকাংখিত আভ্যন্তরিক সমস্যায় ছাত্রশিবিরের মাঝে ফাটল দেখা দেয়।
সেই সময়ে বড়লেখা থানা শিবিরের সভাপতি ছিলেন জনাব আইয়ুব আলী ভাই-যার বাড়ী
দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের তারাদরমে। সেই সময়ে বড়লেখা থানার সকল সাথী জামায়াতের
সাথে নন-কোঅপারেশন গ্রুপে চলে যান। দূর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য যে,
সেই সময়ের
সুজাউল মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্রদের একজনও শিবিরের সাথী ছিলেন না। কিন্তু
মেধাবীদের প্রায় সকলেই ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সমর্থন করতেন।
১৯৮২
সালে বড়লেখা থানা শিবিরের সকল সাথী যখন জামায়াতের সাথে নন-কোঅপারেশনে,
তখন সেই
মেধাবীরা হঠাৎ করে ঝলকে উঠেন। জনাব ফয়জুর রহমান ওরফে জিহাদী,
জনাব হাফেজ
নিজাম উদ্দিন এবং জনাব গৌছ উদ্দিন সহ মেধাবীরা নন-কোঅপারেশনে না গিয়ে
জামায়াতের সাথে কো-অপারেশনে চলে আসেন এবং হঠাৎ করে দেখা যায় তারা সীমাহীন
সক্রিয় ইসলামী ছাত্রশিবিরে।
৮ম শ্রেণীতে
পড়ুয়া ১৯৮২ সালের এক কিশোরের কাছে ছাত্র রাজনীতি বা সংগঠন
বিষয়টা ছিল
দূর্বোধ্য। তাই ভাল ছাত্রের ভীড় কোন দিকে সেইটা বিবেচনায় নিয়ে জামায়াতের
সাথে কো-অপারেশনের গ্রুপের দিকে দূর্বল হয়ে গেলাম। কিন্তু
অত্যন্ত
সতর্কতার সাথে সংগঠনে ভর্তি হওয়া থেকে দূরে থাকলাম।
এদিকে
ইসলামী ছাত্রশিবিরের আভ্যন্তরিন কোন্দল চরম আঁকার থেকে সংগঠন
বিভক্তির দিকে
চলে যায়। জন্ম হয় নতুন আরেক সংগঠনের । তারও নাম ইসলামী ছাত্র
শিবির। সাথে
প্রতিষ্ঠা করা হয় নতুন যুব সংগঠন ইসলামী যুব শিবির। শুরু হয়
নতুন শ্লোগান “একই আন্দোলনের দূ’টি স্থর,
ছাত্রশিবির-যুবশিবির”। আর
এই বিভক্তি করণে গুরু হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ইসলামী
ছাত্রশিবিরের খন্ডকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব আব্দুল কাদের বাচ্ছু। অবশ্য তিনি
পরে নাম পরিবর্তন করে হোন আহমদ আব্দল কাদের। যিনি এখন অধ্যাপক আহমদ আব্দুল
কাদের নামে পরিচিত।
আমরা
দেখতে দেখতে ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৪ সালে চলে এসেছি। ১০শ্রেণীর ইচড়ে পাঁকা ছাত্র
আমরা। ক্লাশের ফাস্ট বয় মুহাম্মদ জিয়াউর রাহমান (গল্লাসংগন-লন্ডনপ্রবাসী)। দুষ্ঠের
শিরোমণি। পড়া লেখায় যেমন অতুলনীয়, দুষ্ঠুমীতেও তেমন অন্যন্য। তার নেতৃত্বে
আমরা গ্রুপ করেছি, যার মূলমন্ত্র হলোঃ কোন সংগঠনে আমরা যোগ দেবোনা। ১৯৮৪
সাল পর্যন্ত আমরা সেই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত থাকলাম। এদিকে আমাদেরই ক্লাশের
জনাব আকমল হোসাঈন ভাই (জুড়ি-মানিকসিংহ) দেখতে দেখতে শিবিরের কির্মী হয়ে
গেলেন। বিধায় তার সাথে আমরা গড়ে তুললাম নন-কোঅপারেশন। এতোদিন যা জামায়াতের
সাথে চলেছে, তা শ্রেণী ভিত্তিক রূপ নিল আকমল ভাইয়ের সাথে। আমাদের এক
কথা, তুমি
ক্লাশের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শিবিরে যোগদান করেছো। তোমার
সাথে কোন
সহযোগিতা নাই।
এর
মধ্যে দুই দল প্রকাশ্য রূপ নিল। দুই দলই তাদের দলে ভীড়াতে দাওয়াতী কাজে তৎপর।
বিশেষ করে বৃহস্পতিবার হলে দাওয়াতী কাজের মাত্রাটা আরেকটু বেড়ে যায়। এর
মাঝে শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জনাব নজরুল ইসলাম খাদেম
(ব্রাম্মনবাড়ীয়া)
এবং শিবিরের সিলেট জেলা সভাপতি ডা. ফরিদ উদ্দিন (সিলেট
মেডিক্যাল-মাদারীপুর)
সহ অনেক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনার সুযোগ হয়ে গেছে
খাবারের লোভে
বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়ে।
১৯৮৪
সালে হঠাৎ করে সুজাউল মাদ্রাসায় শুরু হলো মাওলানা মঈনুদ্দিন বিরুধী আন্দোলন।
সেই আন্দোলনের দাবী দাওয়া আমাদেরকে যেভাবে বুঝানো হয়েছিল,
সে অনুযায়ী
আমরা ১০ম শ্রেণীর প্রায় সকল ছাত্র আন্দোলনে একমত হয়ে আন্দোলনে শরীক হই।
আর সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিল জামায়াতের সাথে কো-অপারেশন ওয়ালা ইসলামী
ছাত্রশিবির।
১৯৮৪
সালে ২১শে সেপ্টেম্বর, জুমুয়ার দিন। চলতে চলতে কখন যে,
একদিন এই শিবিরের
এতো কাছে চলে এলাম তা নিজেই খেয়াল করিনি। জনাব মাওলানা ফয়জুর
রাহমান,
জনাব হাফেজ
নিজাম উদ্দিন এবং জনাব গৌছ উদ্দিন আর মুদ্দাস্সির
হোসাঈন
(সাগরনাল) ভাইয়ের দাওয়াতে হাজির হলাম শিবিরের এক বিশেষ সভায়। সেখানে দারসে
কুরআন পেশ করলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সিলেট জেলা শাখার তদানিন্তন সভাপতি
জনাব ডা. ফরিদ উদ্দিন। প্রোগ্রাম শেষে আমাকে বাড়ীয়ে দেয়া হলো সাদা জমিনে
কালো বর্ণে আঁকা একটি ফরম। ইসলামী ছাত্রশিবিরে ভর্তি হওয়ার সমর্থক ফরম।
পুরণ করার জন্য বলা হলো। আমি তলে তলে তখন অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। সেদিন কোন
না বলার চিন্থাই মাথায় আসেনি। ফরমটি পুরণ করে তুলে দিলাম সেই সময়ের দায়িত্বশীল
হাফেজ নিজাম ভাইয়ের কাছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদান করলাম।
0 Comments