ফুলতলীর মাহফিল থেকে শিবিরের মিছিলে – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম


সত্য ও সুন্দরের পথে অবিরাম পথ চলা-০৮

মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ আমি তখন গাংকুল মাদ্রাসার ছাত্র। ১৯৮৬ সালের ঘটনা। আমি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী হওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। কিন্তু আমি মনে প্রাণে একজন ফুলতলী সমর্থক। ফুলতলী আর শিবিরের পথ যে একই পথ নয়, তা আমার এখনো ধারণা হয়নি। শিবিরের কোন মিটিং বা সমাবেশে অথবা কোন ব্যক্তিগত আলোচনায় কখনোই ফুলতলীর বিরুদ্ধে কোন কথা বলা হয়না। বরং ফুলতলী সাহেব প্রসংগ আসলে তার নাম অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করা হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৩ এর দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় শিবিরের সমাবেশের শ্রেুাতা থেকে বক্তা হয়েছি। কিন্তু কখনোই আমি কোন ইসলামী দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য শুনিনি। আমার ব্যক্তিগত জীবনে কখনো কোন ইসলামী সংগঠনের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান করিনি।

ফুলতলী সাহেবের একজন একনিষ্ট মুরিদ হিসাবে যোগদান করলাম কুলাউড়ার আলালপুরে অনুষ্ঠিত বিরাট ঐতিহাসিক ইসলামী মহা সম্মেলনে। ফুলতলী সাহেবের মুরিদানদের জন্য এই মাহফিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা মাহফিল। বিভিন্ন কারণের মাঝে ২টি কারণ উল্লেখ যোগ্য। ১. এই মাহফিলে আসরের নামাযের পর আখনি বিতরণ করা হয়-যা সেই সময়ে কোন মাহফিলে বিতরণ করা হতো না। ২. মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং ফুলতলী সাহেব এবং তিনি মাহফিলের দিন সকালে মুরিদানদের উদ্দেশ্যে স্বহস্তে খাবার বিতরণ করেন। আর আমার কাছে মাহফিলটি গুরুত্ব ছিল তৃতীয় একটি অন্যতম কারণে। আর তা হলো, মাহফিলের সওয়াব হাসিল করা যায়, সাথে রাতের বেলা লিলি সিনেমা হলের একটি শো দেখার সুযোগ পাওয়া যায়।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আমার একজন খারাপ ক্লাশমেট ছিল মুজিবুর রাহমান-সাতকরাকান্দিতে যার বাড়ী। তার সঙ্গগুনে আমি এই বদঅভ্যাসটির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম লাভ ইন সিঙ্গাপুরছবি দেখার মধ্য দিয়ে। শিবিরের দায়িত্বশীলদের অনেকেই আমার এই বদঅভ্যাসের কথা জানতেন। কিন্তু তারা যে জানতেন, তা আমাকে বুঝতে দিতেন না।

ফুলতলী সাহেবের কুলাউড়ার ওয়াজ মাহফিল শেষ করে লাতুর ট্রেন যোগে বিনা টিকেটে ভ্রমন করে দক্ষিণ ভাগ এসে পৌছলাম পরদিন সকাল বেলা। ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে দেখলাম আমার পরিচিত জন তথা শিবিরের দায়িত্বশীলরা ট্রেনে উঠছেন। তারা আমাকেও ট্রেনে উঠতে বললেন। কারণ বড়লেখায় কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে মিছিল আছে। সাথে সাথে আমি ট্রেনে করে বড়লেখা পৌছলাম। বড়লেখা পৌছার পর শিবিরের দায়িত্বশীলের প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম তুমি কি টিকেট করেছিলে?” আমি না সূচক উত্তর দেয়াতে সাথে সাথে আমাকে বড়লেখা থেকে দক্ষিণভাগের একটি টিকেট করতে বাধ্য করা হলো। টিকেট করার পর দায়িত্বশীল সেই টিকেট ছিড়ে ফেললেন। কড়া করে বলে দিলেন, আর যেন কোন দিন টিকেট ছাড়া ট্রেনে ভ্রমন না করি। বিকাল বেলা একই দায়িত্বশীল অত্যন্ত স্নেহের পরশে বুঝিয়ে দিলেন, বিনা টিকেটে ভ্রমন করার মাধ্যমে কিভাবে দেশ ও জাতির সাথে দুশমনী করা হয়, কিভাবে অন্য মানুষের হককে ভোগ করা হয়, কিভাবে বিষয়টা হারাম ইত্যাদি।

লাতুন ট্রেনে বড়লেখা পৌছার পর ঐতিহাসিক শিরিশতলা থেকে মিছিল শুরু হলো-এই মুহুর্তে দরকার, কেয়ারটেকার সরকার। মিছিলের শ্লোগানের সাথে গলা মিলাতে মিলাতে এক সময় আমি নিজেই শ্লোগান ধরলাম। আশে পাশে যারা ছিলেন, তারা সাংঘাতিক উৎসাহ দিতে থাকলেন। মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ এলাকা পর্যন্ত ঘুরে এলো। সেই মিছিলের পর বড়লেখা জননন্দিত জননেতা জনাব আব্দুল মান্নান তদানিন্তন সভাপতি জনাব হাফেজ নিজাম ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন, ছেলেটা কে? এভাবেই আমি শিবিরের মিছিলের শ্লোগানধারী হিসাবে অভিষিক্ত হলাম। এই শ্লোগানের ধারা চলতে থাকলো ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। এখনো মনে জেগে উঠে সেই সুরনারায়ে এএএএএএএএএএএএএএ তাকবীীীীর।

Post a Comment

0 Comments