মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ জনাব আমিনুল
ইসলামের সমাবেশে তথা ইসলামী ছাত্রশিবিরের বড়লেখার সমাবেশে
চান্দগ্রাম
মাদ্রাসার সকল ছাত্র অংশ গ্রহণ করার প্রেক্ষিতে গতকাল অষ্টম
শ্রেণীতে ক্লাশ
না হওয়ায় সকল ছাত্রকে ছুটির পর জালাল সিদ্দিকী সাহেব তলব
করেছেন-মাদ্রাসা
ছুটির পর সকল ছাত্র যেন মাদ্রাসা অফিসে হাজির হোন।
পূর্বেই বলেছি
আজ আমি মাদ্রাসায় যাইনি। ঐ দিন মাদ্রাসা ছুটির সময় আমি অলৌকিক ভাবে মাদ্রাসায়
হাজির হলাম। তখন মাদ্রাসার অফিস ছিল মসজিদের পুকুর পাড়ে বর্তমান মসজিদের
উত্তর পাশে। আমি পুকুর পাড় থেকে মাদ্রাসার দিকে যাচ্ছি। তখনই দরজা দিয়ে
মাদ্রাসা অফিসে দন্ডয়মান সকল ছাত্রদের দেখতে পেলাম। আমার মন চাত করে উঠলো।
এরাতো সবাই, যারা গতকাল শিবিরের সমাবেশে গিয়েছিলো। আমি কোন ধরণের অনুমতি
না নিলে সরাসরি গিয়ে হাজির হলাম মাদ্রাসা অফিসে। ঢুকেই মুহতারাম জালাল
সিদ্দিকী সাহেবকে সালাম দিলাম। দেখলাম সকল ছাত্র দাড়িয়ে আছে,
কারো মুখে
কোন কথা নাই। তিনি প্রশ্ন করছেন, তোমরা কাল কেন মাদ্রাসায় আসলানা। কেন তোমরা
শিবিরের মিটিং এ গেলা। ইত্যাদি ইত্যাদি এবং ইত্যাদি।
জনাব
জালাল সিদ্দিকী সাহেবকে অবাক করে দিয়ে আমি আলোচনায় অংশ নিলাম। বললাম,
হুজুর! আপনি
উনাদেরকে অহেতুক প্রশ্ন করছেন। আপনি এ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল
নন। আপনাকে এই
মাদ্রাসায় আনা হয়েছে আমাদেরকে পড়ানোর জন্য। আপনি এসব
উল্টাপাল্টা
প্রশ্ন করছেন কেন?
জনাব জালাল সিদ্দিকী
সাহেব অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেন। তাকে তার স্বাভাবিক
কথাবর্তা
বিঘ্নিত হলো। আর আমিও চাচ্ছিলাম তিনি যাতে রাগান্মিত হোন। আমার ঔষধে
কাজ দিল। তিনি বিষম রাগান্মিত হয়ে বললেন,
“আমরা চাইনা আমরা
ছাত্রদের পড়াই, আর তারা বড় হয়ে আমাদেরকে কাফির ফতোয়া
দিক।”
আমি
বললাম, আপনি
যদি কুফুরী করেন, তাহলে আপনার ছাত্রদের তো সৎ সাহস থাকা
উচিত যে,
আপনাকেও কাফের
ফতোয়া দিতে আপনার মুখের দিকে থাকাবেনা। আমি দোয়া
করি আপনি সব সময়
হেদায়াতের উপর থাকেন।
এর
পর জালাল সিদ্দিকী সাহেব উল্টা পাল্টা অনেক ধরণের কথা বললেন। আমি তাকে শুধু
বললাম, দেখেনঃ
ক্লাশ শেষ হয়েছে। আপনি আপনি ছাত্রদেরকে অনুমোদনহীন ভাবে
আটকিয়ে রেখেছেন।
আপনি মনে রাখা দরকার এমাদ্রাসার আপনি প্রিন্সিপাল নন। আর
প্রিন্সিপালেরও
সাহস নাই ছাত্রদের এই ভাবে আটকিয়ে রেখে প্রশ্ন করার।
পড়ালেখার যদি
কিছু থাকে, তাহলে কালকে ক্লাশে গিয়ে প্রশ্ন করবেন। আপনি নিশ্চয়ই
রাজনীতি করার জন্য চান্দগ্রামে আসেননি, আর চান্দগ্রামের মানুষও আপনাকে
রাজনীতি করার জন্য চান্দগ্রামে আনেনি। যদি পড়ালেখা ছাড়া অন্য কোন বিষয়
আপনার এজেন্ডা থাকে, তাহলে গ্রামবাসীদের কাছে তা পরিস্কার করবেন। একথা বলেই
আমি সব ছাত্রদের নির্দেশ দিলাম, তোমরা চলে যাও। আর উনাকে বললাম,
যত ধরণের
প্রশ্ন আছে আপনি আমাকে করতে পারেন।
আমরা
চলে যাওয়ার ইংগিতে সকল ছাত্র হুড়হুড় করে মাদ্রাসা অফিস ত্যাগ করলো। মুহতারাম
জালাল সিদ্দিকী সাহেবও রাগে দূঃখে অগ্নি শর্মা হয়ে মাদ্রাসা ত্যাগ করলেন।
এর পর যতদিন অবধি মাদ্রাসায় আলেম ক্লাশ চলেছে, উনাকে মাদ্রাসার
সীমানায় দেখিনি।
ক’দিন পরের ঘটনা। বাড়ীতে গিয়ে দেখি আব্বা
অগ্নিশর্মা হয়ে আছেন। আমি নাকি উস্তাদের সামনে বেয়াদবী করেছি। জালাল
সিদ্দিকী যে কারণে চান্দগ্রামে আসছেন না। আমি আমার আব্বাকে বললামঃ আপনি আপনার
ছেলেকে কখনো কোন দিন বেয়াদবী শিখাননি। তবে আপনি আপনার ছেলেকে যত বড়
সমস্যাই থাকুক, উচিত কথা বলতে নসিহত করেছেন। আপনি আপনার ছেলেকে লিল্লা খাইতে
নিষেধ করেছেন-কারণ লিল্লা খাইলে নাকি উচিত কথা বলা যায়না। আমি আপনার ছেলে
হিসাবে দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, আজ
অবধি আমি কোন
লিল্লা খাইনি। বিধায় আমি উচিত কথা বলেছি। আর সেই উচিত কথা যদি হয় বেয়াদবী, তাহলে আমি সেই বেয়াদবী করেছি।
আব্বা সেই উচিত
কথাটা কি তার সন্ধানে বেরিয়ে গেলেন। আর কখনো উনি উচিত কথার
ব্যাপারে আমাকে
কোন প্রশ্ন করেননি। সময়ের ব্যবধানে সেই উচিত কথার সন্ধান
করতে করতে আমার
আব্বা এক সময়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করলেন। সে ইতিহাস
আমরা আরেকদিন
আলোচনা করবো।
আজোঁ কানে বাঁজে
সেই আমিনুল ইসলাম মুকুলের বক্তৃতার ঝংকার, বাঁজে পানজেরীর
কুম মুসলিমান
সুর। সাথে মনে জাগে জালাল সিদ্দিকীর সেই বিরুধীতা। আর আমাদের
সামনে চলার গান।
বাঁধার প্রাচীল সব ভাংগবোই, মুক্তির সূর্যটা আনবোই।
0 Comments