নামায রোযার হাকীকত বই খানা আজো মনে দাগ কাটে – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম


সত্য ও সুন্দরের পথে অবিরাম পথ চলা-১০

মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ ১৯৮৬ সালের ঘটনা। স্থানঃ গাংকুল মাদ্রাসা মসজিদ। বিষয়ঃ বক্তৃতা প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগী হাতে গোনা ৫/৭জন। আমি একজন অন্যতম প্রতিযোগী। ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। তদানিন্তন উপজেলা সেক্রেটারী আবু শাহাদাত মুহাম্মদ গৌছ উদ্দিন সিদ্দিকী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং অন্যতম বিচারকও বটে।

আমি তখন শিবিরের একজন উদীয়মান কর্মী বটে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম। সেই সময়ের ৫/৭জন প্রতিযোগীর বিশাল সমাবেশকে আমার কাছে এখনকার ৫/৭ শ প্রতিযোগীর অনুষ্ঠানের মতো গুরুত্ববহ মনে হয়েছিল।

প্রতিযোগীতায় হাটু কাঁপাতে কাঁপাতে আমি আমার মনে গহীনে লুকানো প্রায় সব কথা বলার পর যখন বক্তব্য শেষ করলাম, তখন মনে হলোঃ আমি যা বলতে চেয়ে ছিলাম তার মাত্র ১০ শতাংশ বলতে পেরেছি।
বক্তৃতা শেষ হলো। বিচারকরা নম্বর দিলেন। নম্বর যোগ হলো।জনাব গৌছ উদ্দিন ফলাফল ঘোষনা করবেন এবং পুরস্কার দেবেন। এই পুরস্কার ঘোষনাকে কেন্দ্র করে তিনি মুটামুটি মাঝারী ধরনের লম্বা একটি বক্তব্য দিয়ে দিলেন। আমরা মনযোগ দিয়ে বক্তব্য শুনলাম। এর পর আসলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। বিজয়ীর নাম ঘোষনা করা হলো। আমি প্রথম স্থান অধিকার করলাম। আমাকে পুরস্কার প্রদান করা হলো।

এখনকার সময়ে পুরস্কার মানে মনোরম রেপিং পেপারে সাজানো অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক একটি প্যাকেট। কিন্তু তখনকার দিনে তা ছিল নাপুরস্কার হিসাবে পেলাম প্যাকেট বিহীন একটি বই। বইটির নামঃ নামায রোযার হাকিকত। প্যাকেট ছিল কি না, তা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, আমি প্রথম পুরস্কার পেয়েছি।
এর পর বইটা নিয়ে বাসায় এলাম। পুরো বইটা একবার পড়ে নিলাম। বইটির প্রথম অধ্যায় তথা ইবাদত অধ্যায় আমাকে আলোড়িত করলো। আমি এ অধ্যায়টি আবার পড়লাম। আমার কাছে মনে হলো, আমার জানা ইবাদত আর মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী রহ. এর বলা ইবাদতের মাঝে বিস্তর ফরক। কেন জানি মনে হলো, মাওলানা ঘুমন্ত একটা মানুষকে জাগিয়ে দিলেন। আমি ইবাদতকে নতুন করে ভাবতে শিখলাম। ইবাদত সম্পর্কিত নতুন একটি দৃষ্টি ভংগী আমার মাঝে সৃষ্টি হলো। আমি সেই অনুযায়ী ইবাদতে অভ্যস্ত হওয়া শুরু করলাম।

কিছু দিনের মাঝে এই ইবাদত অধ্যায় আমার মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করলো। আমার মাঝে কি যেন অব্যক্ত বেদনা। আমি যেন কি বলতে চাই। পরে আবিস্কার করলাম, আমি যা শিখেছি মাওলানা মওদূদীর নামায রোযার হাকীকত বই পড়ে। সেই বইয়ের বিষয়বস্তু আমি যেন কাউকে বলতে চাই। বলতে না পারার কারণে বারবার আমার কাছে মনে হচ্ছে বলা দরকার।

আমার চেয়ে জুনিয়র কোন একজনের সাথে এক সময় কথা বলার সুযোগ পেলাম। প্রথম সুযোগেই নিজের অজান্তে আমি নামায রোযার হাকিকতে ইবাদত অধ্যায়ের সামারীটা বলে ফেললাম। বলার পর নিজেকে অনেক হালকা হালকা মনে হলো।

আমার জীবনে ইবাদত সম্পর্কে অনেক পড়া হয়েছে, বলা হয়েছে। ইবাদত সম্পর্কে দীর্ঘ ৬মাস কোন এক মসজিদে সাপ্তাহিক ক্লাশে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ হয়েছে। ০৬মাসের চর্বিত চর্বন নিয়ে আবার কথার সুযোগ হয়েছে। দিনে দিনে আমার নোট সমৃদ্ধ হয়েছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন দাওয়াতী প্রোগ্রাম এমন কি শিক্ষা বৈঠকেও আলোচনার সুযোগ হয়েছে। আর এই সব আলোচনার নোট তৈরী করতে গিয়ে বিস্তর পড়া লেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু মাওলানার বলা ইবাদত সম্পর্কিত কথামালার মতো এতো সহজ বক্তব্য আর পাইনি।

এরই মাঝে ৩যুগ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু নামায রোযার হাকীকতের ইবাদত অধ্যায়টি আমার মানসপটে ভেসে উঠে অমলীন অবয়বে।

Post a Comment

0 Comments