প্রসংগঃ জামায়াতে ইসলামী - ঐক্য ইসলামী দলের সাথে, নাকি বিএনপির সাথে, না আওয়ামীলীগের সাথে


মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ 
জামায়াতে ইসলামী কার সাথে ঐক্য করবে? এই প্রশ্নটি বারবার চলে আসে। ইসলামী দল গুলোর ব্যাপারে ঐক্য করার ব্যাপারে কোথাও কোন বিতর্ক নাই। বরং সর্বমহলে এটি একটি প্রত্যাশাও বটে। কিন্তু ইসলামী দল ছাড়া ঐক্য হবে কাদের সাথে? বিএনপি, না আওয়ামীলীগ?

ইসলামী দল গুলোর সাথে ঐক্যঃ ইসলামী দল গুলোর সাথে ঐক্যের ব্যাপারে জনপ্রত্যাশা যেমন রয়েছে ব্যাপক, জামায়াতে ইসলামীর জনশক্তির মাঝে উচ্চাশাও আকাশচূম্বি। তেমনি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব পর্যায়েও রয়েছে এই ঐক্যের দিল খোলা প্রত্যাশা।

কিন্তু কাজটা সহজ নয়। কারণ যাদের সাথে ঐক্য হবে, তারা নানান রকমের চিন্তাভাবনায় বিভক্ত। যেমনঃ কাওমী-যার মাঝে রয়েছে দুইটি ধারা-হেফাজত ও চরমোনাই। সুন্নী-যাদের মাঝে রয়েছে আরো ২টি ধারা-ফুলতলী ও শর্ষিনা এবং মাজারপন্থী-মাইজভান্ডারী ও আটরশি। রাজনৈতিক দল হিসাবে খেলাফত, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট ইত্যাদি থাকলেও তারা উপরোক্ত দুইটি ধারায়ই বিভক্ত।

জামায়াতের সাথে রাজনৈতিক ঐক্যের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বা আকীদাগত বিষয়ই যেখানে প্রাধান্য পায় সর্বক্ষেত্রে। কিন্তু কেবলমাত্র রাজনৈতিক ঐক্যকে বিবেচনায় নিয়ে-ধর্মীয় ঐক্যকে প্রাধান্য না দিয়ে যদি ঐক্য করার উদ্যোগ নেয়া হয়, তাহলে তা হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ঐক্য।

এ ক্ষেত্রে দুইটি বিষয়কে বিবেচনায় নিতে হবে। একঃ রাজনৈতিক দিক দিয়ে অন্যান্য ইসলামী সংগঠনকে প্রাধান্য দিতে হবে জামায়াতে ইসলামীকে। দুইঃ ধর্মীয় মাসলামাসায়েলের দিক দিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে প্রাধান্য দিতে হবে অন্যান্য ইসলামী দলকে। আর ঐক্যের ক্ষেত্রে বিএনপি আওয়ামীলীগের সাথে জামায়াতের যে ধরণের ঐক্য হয়েছিল, সেই ধরণের ঐক্যকেই বিবেচনায় নিতে হবে। দল আর আকীদা যার যার থাকবে, ঐক্য হবে কেবলমাত্র ও শুধু মাত্র নির্বাচনী ঐক্য।

বিএনপির সাথে ঐক্যঃ বিএনপি বাংলাদেশের একটি বড় দল। ইসলামের স্বার্থে বিএনপির তৎপরতা জিরো পর্যায়ে হলেও বাংলাদেশে মানুষ আওয়ামীলীগকে ইসলাম বিরোধী আর বিএনপিকে ইসলামপন্থী দলই ভাবে। সেই হিসাবকে বিবেচনায় নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির ঐক্য যত সহজ, আওয়ামীলীগের সাথে ঐক্য ততসহজ নয়।

বিএনপি দল হিসাবে যতটুকু বড়, তুলনামূলক ভাবে তাদের কলিজাটা ততটুকু ছোট, তুলনামূলক ভাবে তাদের সাংগঠনিক শক্তি ততটুকু ছোট। বিএনপির কর্মীদের মাঝে যতটুকু সাহস, উদ্দীপনা রয়েছে, তুলনামূলক ভাবে তাদের নেতাদের ভীরুতা, সিদ্ধান্তহীনতা, লোভ লালসা এবং চাটুকারিতা তারচেয়ে বেশী রয়েছে। বিএনপি বাংলাদেশের একমাত্র সৌভাগ্যবান দল, যাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ বারবার আওয়ামীলীগ বা স্বৈরাচারের বিকল্প হিসাবে গ্রহণ করেছে। বিএনপি বাংলাদেশের একমাত্র সৌভাগ্যবান দল, যারা বছরের পর বছরে রাজপথে না এসে কেবল অফিস কেন্দ্রীক তৎপরতা চালিয়েও মিডিয়ার একতরফা সাপোর্ট পেয়েছে।

সেই বিএনপির সাথে জামায়াতের ঐক্যের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীতে রয়েছে নানান মত। জামায়াতে ইসলামীর তৃণমূল প্রত্যক্ষ করেছে যে, বিএনপি কেন্দ্রীয় ভাবে সিদ্ধান্ত যাই নিয়ে থাকুক, তাদের তৃণমূলে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়না। এমনকি নিজের পছন্দনীয় প্রার্থী না হওয়ার কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে ভোট দেয় এবং নিজের দলের প্রার্থীকে হারিয়ে দেয়ার জন্য তলে তলে ষড়যন্ত্র করে। সেই বিএনপির সাথে জামায়াতের ঐক্য হলেও তারা জানপ্রাণ দিয়ে জামায়াতের পক্ষে কাজ করবে না। বরং নিজেদের আখের গোছানোর কাজেই ব্যস্ত থাকবে।

তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির যে জনসমর্থন রয়েছে, তা ঘরে উঠানোর জন্য কমিটমেন্টধারী বিএনপির জনশক্তি ময়দানে অনুপস্থিত। দীর্ঘদিন বিএনপির ময়দানে অনুপস্থিতি, রাজনীতিতে তাদের সীমাহীন দেউলিয়াত্ব, শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতি, বড় ধরণের পলিটিক্যাল নেতৃত্বের ইনতিকাল ও বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত হওয়া ইত্যাদি কারণে বিএনপি আর আগের মতো নাই। মিডিয়ার কারণে বিএনপিকে যে ‘বাঘ’ মনে করা হয়, তা আসলে একটি ‘কাগুজে বাঘ’ মাত্র। ১৫ বছর আগের যে বিএনপি ছিল, তা বাস্তবে নেই। ফলে বাংলাদেশের মানুষ বিকল্প হিসাবে অন্য কাউকে পছন্দ করবে কিনা, তাও বলা মুশকিল। আওয়ামীলীগ বিরোধী শিবিরের ভোটগুলো এখন একতরফা না হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আমাদের ধারণা।

এমতাবস্তায় বিএনপির সাথে জামায়াতে ইসলামীর ঐক্য জাতীয় পর্যায়ে না হয়ে আসন ভিত্তিক হতে পারে। এক বা একাধিক আসনে বিএনপিকে সমর্থন প্রদানের বিনিময়ে নির্দিষ্ট আসনে জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন দিতে হবে। এক্ষেত্রে ইসলামী ঐক্যের একটি নূন্যতম বুঝাপড়া থাকতে হবে। এতে করে আগামীর সরকার একটি কোয়ালিশন সরকারের দিকে গড়াতে পারে।

আওয়ামীলীগের সাথে ঐক্যঃ দল হিসাবে আওয়ামীলীগ অত্যন্ত শক্তিশালী। দীর্ঘ ১৫ বছরে যারা আওয়ামীলীগের হালুয়া রুটি খেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়েছেন, তারা তাদের স্বাস্থ্য রক্ষার তাগিদে নিজের গরজে আওয়ামীলীগকে সমর্থন করবেন, সাহায্য করবেন। বিধায়, আওয়ামীলীগকে “ফুঁ দিয়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে ফেলা যাবে” এমন ধারণা করার কোন সুযোগ নাই। কিন্তু আদর্শের জন্য নয়, বরং কেবলমাত্র নিজস্ব স্বার্থের জন্য যারা আওয়ামীলীগকে এতোদিন সমর্থন দিয়ে এসেছে, তারা সর্বশেষ সময়ে কোন অবস্থানে যায় তা বলা মুশকিল। এদের সংখ্যাটা ছোট হলেও এদের হাতটা অনেক অনেক লম্বা। বিধায় তাদের অবস্থান আওয়ামীলীগের জন্য বড় ধরণের একটা ফ্যাক্টর। তারা যদি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেন, তাহলে তা আওয়ামীলীগের জন্য বড় ধরণের বিপর্যয়ের কারণ হবে।

জামায়াতে ইসলামীর অভিজ্ঞতা রয়েছে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলের সাথে ঐক্যের রাজনীতি করার। সে অনুযায়ী দলীয় কমিটমেন্টের আলোকে বিএনপির চেয়ে আওয়ামীলীগকে বেশী বিশ্বাস করা যায়। আওয়ামীলীগের “বেঈমানীর সাথেও একটা ঈমানদারী” রয়েছে। তারা যদি কারো সাথে ঐক্য করে, তাহলে তা শতভাগ বাস্তবায়নে তাদের তৃণমূল সর্বশক্তি নিয়োগ করবে-যা বিএনপির বেলায় চিন্তা করা কঠিন।

এমতাবস্থায় আওয়ামীলীগের সাথে অঞ্চলভিত্তিক বা আসনভিত্তিক যদি কোন রাজনৈতিক লেনদেন বা ঐক্য হয়, তাহলে তা বিএনপির সাথে আসন ভিত্তিক ঐক্যের চেয়ে ফায়াদানন্দ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

কিন্তু জামায়াতের সাথে আওয়ামীলীগের ঐক্যের পথে অন্তরায় দুইটি জিনিস। একঃ আদর্শিক সমস্যা। দুইঃ হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। জামায়াত ও আওয়ামলীগ আদর্শিক দিক দিয়ে পরস্পরে দূ’টি বিপরীত মেরুতে অবস্থানরত। অপর দিকে আওয়ামলীগের হাত রঞ্জিত জামায়াতের শহীদ নেতাদের রক্তে। যা জামায়াতের কর্মীদের হৃদয়ের রক্ষণক্ষরণ। কিন্তু রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে তো কোন কথা নেই। তাই সময় বলে দেবে কি হবে বা হচ্ছে।

আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে জামায়াতের কি ক্ষতিঃ আওয়ালীগ ক্ষমতায় আসলে জামায়াতে ইসলামীর বড় ধরণের কোন ক্ষতি আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু দেশের জন্য, জাতির জন্য বড় ধরণের ক্ষতি রয়েছে। আওয়ামীলীগ দেশের উন্নয়ন করেনি এমন থিওরী আমি বিশ্বাস করিনা। কিন্তু ক্ষতিও করেছে।

দাড়িপাল্লায় মাপা হলে আওয়ামীলীগের উন্নয়ন এবং বিএনপির উন্নয়ন, কিংবা আওয়ামীলীগ কর্তৃক দেশের ক্ষতি করা এবং বিএনপি কর্তৃক দেশের ক্ষতি করার খতিয়ানটা এমন যে, আওয়ামীলীগ দেশের বাজেট নিয়েছে ১০০ টাকার। তার মাঝে তারা তাদের পকেটে গিয়েছে ৫০ টাকা, দেশের কাজে লাগিয়েছে ৫০ টাকা। কিন্তু পকেটে নেয়া ৫০ টাকা থেকে শীর্ষরা নিয়েছে মাত্র ১০টাকা, বাকী ৪০ টাকাই তৃণমূলের সবাই ভাগ পেয়েছে। অপর দিকে বিএনপির সময়ে বাজেটই হয়েছে ৭০ টাকার। তার মাঝে তারা তাদের পকেটে নিয়েছে ৪০ টাকা, আর দেশের কাজে লাগিয়েছে ৩০ টাকা। কিন্তু পকেটে নেয়া ৪০ টাকার ৩০ টাকাই শীর্ষরা নিয়ে গেছে। তৃণমূল পেয়েছে মাত্র ১০ টাকা।

আওয়ামলীগ আবার ক্ষমতায় আসলে জামায়াতের কি ক্ষতি করবে? আসলে জামায়াতের ক্ষতি করার মতো কোন কিছু জামায়াতের কাছে আর অবশিষ্ট নাই। বিধায় ক্ষতি করার প্রশ্নই অবান্তর। আওয়ামীলীগ জামায়াতের যা ক্ষতি করার তা ইতিমধ্যে করে নিয়েছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীদের গ্রেফতার নির্যাতন করেছে। স্বপ্নে গড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছে। ব্যক্তিগত ও গ্রুপ ভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। বড় ধরণের একটি মেধাভিত্তিক নেতৃত্ব দেশের বাহিরে চলে গেছে। এখন আর ক্ষতি করার মতো অবশিষ্ট কিছু নেই।

আওয়ামীগ শত চেষ্টা করেও যে ক্ষতি জামায়াতের করতে পারেনি, তাহলো জামায়াতকে জনবিচ্ছিন্ন করতে পারেনি, জামায়াতের জনশক্তিকে ভীত করতে পারেনি, জামায়াতের জনশক্তি কমাতে পারেনি। বরং শত বাঁধা অতিক্রম করে জনশক্তি সামনে আসার কারণে তারা পরিক্ষিত ও পাকাপোক্ত নেতৃত্ব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জামায়াতের শত শত অফিস বন্ধ করে দেয়ার কারণে এখন এখানে সেখানে সর্বত্র জামায়াতের ভ্রাম্যমান অফিস গড়ে উঠেছে। মসজিদ ভিত্তিক ও অফিস কেন্দ্রীক তৎপরতা থেকে বেরিয়ে জামায়াত এখন বাসা বাড়ী কেন্দ্রীক প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্রাকডাউন জামায়াতের জনশক্তিকে ব্যক্তিগত ভাবে অনেক বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু চলতে চলতে জামায়াত সময়ে সাথে তাল মিলেয়ে নিয়ে ঘুরে দাড়িয়েছে। আগে দলভিত্তিক জামায়াত আর্থিক ভাবে শক্তিশালী হলেও এখনকার জামায়াতের জনশক্তি আর্থিক ভাবে ব্যক্তিগতভাবে শক্তিশালী। জামায়াতের বিরুদ্ধে সীমাহীন হামলা ও মামলার কারণে জামায়াতের উদীয়মান নেতৃত্বের বড় একটি অংশ বাধ্য হয়ে বিদেশে ফাঁড়ি জমায়। তার বড় একটি অংশ এখন সে সব দেশের নাগরিকও হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের আর্থিক সহযোগিতা জামায়াতের জন্য অবারিত হয়েছে আগের চেয়ে আরো বেশী করে। আগে যেখানে তারা ব্যক্তিগতভাবে সংগঠনকে ১০০ টাকা প্রদান করতো, এখন সেখানে ১০০ ডলার প্রদান করছে। ফলে জামায়াতের সাংগঠনিক ফান্ড আগের চেয়ে আরো বেশী শক্তিশালী হয়েছে। বিভিন্ন দূর্যোগে জামায়াতের সেবা কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ থেকে তা অনুমান করা যায়। জামায়াতে ইসলামী তাদের সাংগঠনিক তহবিলের সিংহভাগ অর্থ যেখানে রাজনৈতি মিছিল সমাবেশে ব্যয় করতো, সেখানে গত ১০ বছরে এই খাতে একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি। সেই পুরো অর্থ সমাজসেবা খাতে খরচ করে জামায়াত গড়ে তুলেছে একটি বড় ধরণের সামাজিক ভিত্তি। বিদায় জামায়াতের ক্ষতি করার মতো কিছু আর অবশিষ্ট নাই।

কিন্তু আওয়ামীলীগ যে ক্ষতিটা করেছে এবং করবে, তা অনেক অনেক বড়। আর সেই ধরণের ক্ষতি বিএনপি কখনো করবে না। কারণ বিএনপির স্থির কোন আদর্শ নাই, এই ধরণের ক্ষতি করার সাহস ও যোগ্যতার কোনটাই বিএনপির নাই। সেই ক্ষতি হলো দেশের সংস্কৃতি। আওয়ামীলীগ গত ১৫ বছর দেশের সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি কিংবা ইসলামী সংস্কৃতি-কোনটাই আর অবশিষ্ট নেই। বাংলাদেশ এখন পুরোটাই হিন্দুয়ানী সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ। আওয়ামীলীগ যদি কন্টিনিউ করে, তাহলে সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এতে করে বাংলাদেশের মানুষ আদম শুমারীর গননা অনুযায়ী মুসলমান থাকবে, নিজেদেরকে মুসলমান হিসাবে দাবী করবে, মুসলমান হিসাবে নামায কালাম সব করবে। কিন্তু তারা ইসলামী সংস্কতিকে মান্দাতার আমলে সংস্কৃতি, অচল সংস্কৃতি, ব্যাকডেটেড সংস্কৃতি মনে করবে। আধুনিকতার নামে আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে তারা তাদের চলনে বলনে অনুসরণ করবে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি। যা জাতির জন্য বড়ই বিপদজনক বিষয়। কামাল আতাতূর্ক তুরস্কে সেখানকার মুসলমানদের সংস্কৃতিকে পুরোপুরি বিলিন করে দেয়ার কারণে ২০ বছর একাধারে দেশ শাসন করেও এরদোয়ান এখনো সেই হারানো সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারননি। দূর্দন্ড প্রতাপের সাথে সংস্কার কার্য পরিচালনার পরও প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ তাকে এখনো সমর্থন করছেনা। তার কারণ পশ্চিমা সংস্কৃতির লোভ তাদেরকে অন্ধ করে দিয়েছে। বিধায়, সারা পৃথিবীর মুসলমান এরদোয়ানকে ভালবাসলেও ভালবাসছেনা তার দেশের সেইসব মানুষ, যারা কামাল আতাতূর্কের আমদানী করা সংস্কৃতিতে বুদ হয়ে আছে।

শেষকথাঃ জামায়াত বর্তমানে বাংলাদেশের একটি কঠিন বাস্তবতা। জামায়াতের শিকড় বাংলাদেশের অত্যন্ত গভীরে। এখন জামায়াতে ইসলামীকে যদি নিষিদ্ধ করা হয়, ‘জামায়াত’ নাম নেয়া বা ‘জামায়াতে ইসলামী’ শব্দ লিখা যদি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে যায়, জামায়াতে ইসলামী সাহিত্য ভান্ডার তথা মাওলানা মওদূদী, গোলাম আযম, নিজামীদের বই এবং সাহিত্য যদি নাও থাকে, তারপরও জামায়াতকে বাংলাদেশ থেকে এখন আর নিশ্চিহ্ন করা যাবেনা। বরং জামায়াতকে যদি নিষিদ্ধ করাও হয়, তারপর জামায়াত তুষের আগুণের মতো ভিতরে ভিতরে জ্বলতেই থাকবে এবং সময়ের সুযোগে তা বিশাল অগ্নিকান্ড হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে।

এমতাবস্থায়, জামায়াতে ইসলামীকে আগামীর নির্বাচনে ঐক্য করার জন্য সবচেয়ে বেশী প্রধান্য দিতে হবে ইসলামী দল গুলোর সাথে। ইসলামী দলগুলো মিলে ৩শ আসনেই মানুষের সামনে ‘ইসলামী প্রার্থী’ উপহার দিতে হবে। বিএনপি ও আওয়ামলীগের সাথে আসন কেন্দ্রীক ঐক্য হতে পারে প্রয়োজনের তাগিদে। যদি ইসলামী ঐক্য গড়ে উঠে, তাহলে এই নির্বাচনে ইসলামী দল গুলো ভাল একটা ফলাফল নিয়ে আসবে এমনটা মনে করার কোন কারণ নাই। কিন্তু আগামীর ইসলামী বাংলাদেশ গড়তে এই ঐক্য ‘একটি ফলবান গাছের বীজ বপন’ বলে বিবেচিত হবে।

তুরস্কের ইসলামী খেলাফতের কাজ শুরু হয়েছিল সুলাইমান গাজীর মাধ্যমে। বিশ্বব্যাপী একটি ইসলামী সাম্রাজ্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন তার ছেলে আর্তূগোল গাজী। তিনি সেই অনুযায়ী নেতৃত্ব গড়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় উসমানী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেন তার ছেলে উসমান গাজী। আর উসমান গাজীর ছেলে উরহান গাজী উসমানী খেলাফতের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে যে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই উসমানী খেলাফতের স্থায়িত্ব ছিল শত বছর। অতএব, আজই বিজয় নিয়ে আসতে হবে এমন ধারণা পরিহার করে ইসলামী দলগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় অভ্যস্ত হতে হবে।

১৩ই জুন ২০২৩

আমার লিখা অন্যান্য আর্টিক্যাল পড়তে  এখানে ক্লিক করুন

 


Post a Comment

0 Comments