গীবত সম্পর্কে আল
কুরআনের বক্তব্যঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ﴾
হে ঈমানদারগন, বেশী বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো। কারণ কোন কোন অনুমান গোনাহ। দোষ অন্বেষণ করো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু। (সূরা আল হুজুরাতঃ ১২)
﴿وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ
وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا﴾
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে
অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইয়ো না। নিশ্চয়
কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৩৬)
﴿ مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ﴾
মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার
জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। (সূরা
ক্বাফঃ ১৮)
গীবত কি?
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
قَالَ أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ ذِكْرُكَ
أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ. قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ
قَالَ إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ
فَقَدْ بَهَتَّهُ .
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ তোমরা কি জান, গীবত কী জিনিস? তাঁরা বললেন, আল্লাহ
ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি
বললেন, তোমার ভাই এর সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন
করা হল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাই এর মধ্যে থেকে
থাকে তবে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, তুমি
তার সম্পর্কে যা বলছ তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তা হলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে। (মুসলিম)
ঈমানদাররা গীবত
করবে নাঃ
عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ
الإِيمَانُ قَلْبَهُ لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تَتَّبِعُوا
عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللَّهُ
عَوْرَتَهُ وَمَنْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ.
আবূ বারযা আসলামী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ হে জনগণ! তোমরা যারা
মুখে মুখে ঈমান এনেছ, কিন্তু অন্তরে এখনও ঈমান প্রবেশ করেনি,
তোমরা মুসলিমদের গীবত করো না এবং তাদের সম্মানও নষ্ট করো না। কেননা, যারা মুসলিমদের সম্মান নষ্ট করতে চায়,
আল্লাহ্ তাদের সম্মান নষ্ট করেন। আর আল্লাহ যাকে অসম্মানিত করতে চান, তাকে তিনি তার
ঘরেই অপদস্থ করেন। (আবু দাউদ)
গীবতকারীর শাস্তিঃ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما ـ قَالَ مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم عَلَى قَبْرَيْنِ فَقَالَ إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ، وَمَا
يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا هَذَا فَكَانَ لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ،
وَأَمَّا هَذَا فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ. ثُمَّ دَعَا بِعَسِيبٍ رَطْبٍ،
فَشَقَّهُ بِاثْنَيْنِ، فَغَرَسَ عَلَى هَذَا وَاحِدًا وَعَلَى هَذَا وَاحِدًا
ثُمَّ قَالَ لَعَلَّهُ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا، مَا لَمْ يَيْبَسَا.
ইবনে আব্বাস রা.
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন রাসুলুল্লাহ সা. দুটি কবরের পাশে দিয়ে
যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই এ দু’জন কবরবাসীকে আযাব দেওয়া
হচ্ছে। তবে বড় কোন গুনাহের কারণে কবরে তাদের আযাব দেয়া হচ্ছে না। এই
কবরবাসী পেশাব করার সময় সতর ঢাকতোনা। আর ঐ কবরবাসী গীবত করে
বেড়াত। এরপর তিনি খেজুরের একটি কাঁচা ডাল আনিয়ে সেটি দু’টুকরো করে
এক টুকরো এ কবরটির উপর এবং এক টুকরো ঐ কবরটির উপর গেড়ে দিলেন। তারপর
বললেনঃ এ ডালের টুকরো দুটি না শুকানো পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদের আযাব
কমিয়ে দিবেন। (বুখারী)
وَعَنْ أَنسٍ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ
صلى الله عليه وسلم لَمَّا عُرِجَ بي مَرَرْتُ بِقَومٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ
يَخْمِشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هَؤُلاَءِ يَا
جِبرِيلُ؟ قَالَ هَؤُلاَءِ الَّذِينَ يَأكُلُوْنَ لُحُومَ النَّاسِ، وَيَقَعُونَ
فِي أَعْرَاضِهِمْ.
আনাস রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যখন
আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে সময় এমন ধরনের কিছু মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম
করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে
তারা নিজেদের মুখমণ্ডল খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি, প্রশ্ন
করলাম, ওরা কারা? হে জিবরীল! তিনি বললেন, ওরা সেই
লোক, যারা মানুষের মাংস ভক্ষণ করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত। (আবূ
দাউদ)
عَنِ الْمُسْتَوْرِدِ أَنَّهُ حَدَّثَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ أَكَلَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ أَكْلَةً فَإِنَّ اللَّهَ
يُطْعِمُهُ مِثْلَهَا مِنْ جَهَنَّمَ، وَمَنْ كُسِيَ ثَوْبًا بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ
فَإِنَّ اللَّهَ يَكْسُوهُ مِثْلَهُ مِنْ جَهَنَّمَ، وَمَنْ قَامَ بِرَجُلٍ
مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ، فَإِنَّ اللَّهَ يَقُومُ بِهِ مَقَامَ سُمْعَةٍ
وَرِيَاءٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
আল-মুসতাওরিদ রা.
নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের গীবত করে এক
লোকমা ভক্ষন করবে আল্লাহ তাকে এজন্য জাহান্নাম থেকে সমপরিমাণ ভক্ষন করাবেন। আর যে
ব্যক্তি অপর মুসলিমের দোষত্রুটি বর্ণনার পোশাক পরবে আল্লাহ তাকে অনুরূপ
জাহান্নামের পোশাক পরাবেন। আর যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির (কুৎসা) রটিয়ে খ্যাতি ও
প্রদর্শনীর স্তরে পৌঁছবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে ঐ খ্যাতি ও প্রদর্শনীর
জায়গাতেই স্থান দিবেন। (আবু দাউদ)
وَعَن أبي سعيدٍ وجابرٍ قَالَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا، قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ
وَكَيْفَ الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا؟ قَالَ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَزْنِي
فَيَتُوبُ فَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ فَيَتُوبُ فَيَغْفِرُ
اللَّهُ لَهُ وَإِنَّ صَاحِبَ الْغِيبَةِ لَا يُغْفَرُ لَهُ حَتَّى يغفِرَها لَهُ
صَاحبه.
আবূ সা’ঈদ আল খুদরী
ও জাবির রা. হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ
সা. বলেছেনঃ গীবত ব্যভিচারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ হে
আল্লাহর রসূল! গীবত ব্যভিচার হতে ভয়ঙ্কর কিভাবে হতে পারে? তিনি বলেছেনঃ মানুষ ব্যভিচার করে, অতঃপর
তওবা করে এবং আল্লাহ তা’আলা অনুগ্রহ করে তওবা কবুল করেন। অপর এক বর্ণনায় আছে যে, অতঃপর
ব্যভিচারী তওবা করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করেন; কিন্তু গীবতকারীকে
আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ না যার নিন্দা করা হলো সে ক্ষমা করে। (মিশকাত)
গীবত করা ইহুদীদের
অভ্যাসঃ
عَنْ أَنَسٍ رضى الله عنه قَالَ بَلَغَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ
سَلاَمٍ مَقْدَمُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ، فَأَتَاهُ،
فَقَالَ إِنِّي سَائِلُكَ عَنْ ثَلاَثٍ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلاَّ نَبِيٌّ،
(قَالَ مَا) أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ وَمَا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ
أَهْلُ الْجَنَّةِ وَمِنْ أَىِّ شَىْءٍ يَنْزِعُ الْوَلَدُ إِلَى أَبِيهِ وَمِنْ
أَىِّ شَىْءٍ يَنْزِعُ إِلَى أَخْوَالِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم خَبَّرَنِي بِهِنَّ آنِفًا جِبْرِيلُ . قَالَ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ ذَاكَ
عَدُوُّ الْيَهُودِ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم أَمَّا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ فَنَارٌ تَحْشُرُ النَّاسَ مِنَ
الْمَشْرِقِ إِلَى الْمَغْرِبِ. وَأَمَّا أَوَّلُ طَعَامٍ يَأْكُلُهُ أَهْلُ
الْجَنَّةِ فَزِيَادَةُ كَبِدِ حُوتٍ. وَأَمَّا الشَّبَهُ فِي الْوَلَدِ فَإِنَّ
الرَّجُلَ إِذَا غَشِيَ الْمَرْأَةَ فَسَبَقَهَا مَاؤُهُ كَانَ الشَّبَهُ لَهُ،
وَإِذَا سَبَقَ مَاؤُهَا كَانَ الشَّبَهُ لَهَا. قَالَ أَشْهَدُ أَنَّكَ
رَسُولُ اللَّهِ. ثُمَّ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الْيَهُودَ قَوْمٌ
بُهُتٌ، إِنْ عَلِمُوا بِإِسْلاَمِي قَبْلَ أَنْ تَسْأَلَهُمْ بَهَتُونِي
عِنْدَكَ، فَجَاءَتِ الْيَهُودُ وَدَخَلَ عَبْدُ اللَّهِ الْبَيْتَ، فَقَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَىُّ رَجُلٍ فِيكُمْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ
سَلاَمٍ. قَالُوا أَعْلَمُنَا وَابْنُ أَعْلَمِنَا وَأَخْبَرُنَا وَابْنُ
أَخْيَرِنَا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ
أَسْلَمَ عَبْدُ اللَّهِ. قَالُوا أَعَاذَهُ اللَّهُ مِنْ ذَلِكَ. فَخَرَجَ
عَبْدُ اللَّهِ إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ،
وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ. فَقَالُوا شَرُّنَا وَابْنُ
شَرِّنَا. وَوَقَعُوا فِيهِ.
আনাস রা. থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালামের কাছে রাসূলুল্লাহ সা.এর
মদিনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি
আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার উত্তর নবী সা. ছাড়া আর কেও অবগত নয়। তিনি
জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর
সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি
কারণে সন্তান তার পিতার সাদৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে তার মামাদের
সাদৃশ্য হয়? তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, এইমাত্র
জিব্রাঈল আ. আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবি বলেন, তখন
আবদুল্লাহ রা. বললেন, সে তো ফিরিশতাগণের মধ্যে ইয়াহুদীদের শত্রু।
রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, কিয়ামতের
প্রথম নিদর্শন হল আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত
করবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হল মাছের কলিজার
অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর
সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য প্রথমে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সাদৃশ্যতা
লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি-নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল।
এরপর তিনি বললেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদিরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার
সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে
তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রটনা করবে। তারপর ইয়াহুদিরা এলো এবং আবদুল্লাহ রা. ঘরে প্রবেশ
করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সা. তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের
মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি
আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম
ব্যক্তির পুত্র।
তখন রাসূলুল্লাহ সা.
বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করে, এতে
তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তার তাঁকে রক্ষা
করুক। এমন সময় আবদুল্লাহ রা. তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং
বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ
ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ
সা. আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলতে লাগল, সে আমাদের
মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির সন্তান এবং তারা তাঁর গীবত ও কুৎসা
রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল। (বুখারী)
বিশ্বাসীদের মায়েরা
গীবত করে নাঃ
عَنْ مَسْرُوقٍ، قَالَ دَخَلْنَا عَلَى عَائِشَةَ رضى الله عنها وَعِنْدَهَا حَسَّانُ
بْنُ ثَابِتٍ يُنْشِدُهَا شِعْرًا، يُشَبِّبُ بِأَبْيَاتٍ لَهُ وَقَالَ
حَصَانٌ رَزَانٌ مَا
تُزَنُّ بِرِيبَةٍ وَتُصْبِحُ غَرْثَى مِنْ لُحُومِ الْغَوَافِلِ فَقَالَتْ لَهُ
عَائِشَةُ لَكِنَّكَ لَسْتَ كَذَلِكَ. قَالَ مَسْرُوقٌ فَقُلْتُ لَهَا لِمَ
تَأْذَنِينَ لَهُ أَنْ يَدْخُلَ عَلَيْكِ. وَقَدْ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى ﴿وَالَّذِي
تَوَلَّى كِبْرَهُ مِنْهُمْ لَهُ عَذَابٌ عَظِيمٌ﴾. فَقَالَتْ وَأَىُّ عَذَابٍ
أَشَدُّ مِنَ الْعَمَى. قَالَتْ لَهُ إِنَّهُ كَانَ يُنَافِحُ ـ أَوْ يُهَاجِي عَنْ
رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.
মাসরূক রাহি. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা রা. এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন
তাঁর কাছে হাসসান ইবনে সাবিত রা. তাঁর নিজের রচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছিলেন। তিনি
আয়িশা রা. এর প্রশংসা করে বলেছেন, তিনি সতী, ব্যক্তিত্বসম্পন্না ও জ্ঞানবতী, তাঁর
প্রতি কোনো সন্দেহই আরোপ করা যায় না। তিনি অভুক্ত থাকেন, তবুও
অনুপস্থিত লোকের মাংস খান না বা গীবত করেন না। এ কথা শুনে আয়িশা রা. বললেন, কিন্তু
আপনি তো এরূপ নন। মাসরুক রাহি. বলেছেন যে, আমি আয়িশা
রা. কে বললাম যে, আপনি কেন তাকে আপনার কাছে আসতে অনুমতি দেন? অথচ
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে, তার
জন্য আছে কঠিন শাস্তি। আয়িশা রা. বললেন, অন্ধত্ব
থেকে কঠিন শাস্তি আর কি হতে পারে? তিনি তাকে আরো বলেন যে, হাসসান
ইবনে সাবিত রা. রাসূলুল্লাহ সা. এর পক্ষ হয়ে কাফেরদের সাথে মুকাবিলা করতেন অথবা
কাফেরদের বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক কবিতা রচনা করতেন। (বুখারী)
গীবতের বদ-অভ্যাস যাদের বেশীঃ
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ شَهِدْتُ الصَّلاَةَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم فِي يَوْمِ عِيدٍ فَبَدَأَ بِالصَّلاَةِ قَبْلَ الْخُطْبَةِ
بِغَيْرِ أَذَانٍ وَلاَ إِقَامَةٍ فَلَمَّا قَضَى الصَّلاَةَ قَامَ مُتَوَكِّئًا
عَلَى بِلاَلٍ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَوَعَظَ النَّاسَ
وَذَكَّرَهُمْ وَحَثَّهُمْ عَلَى طَاعَتِهِ ثُمَّ مَالَ وَمَضَى إِلَى النِّسَاءِ
وَمَعَهُ بِلاَلٌ فَأَمَرَهُنَّ بِتَقْوَى اللَّهِ وَوَعَظَهُنَّ وَذَكَّرَهُنَّ
وَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ حَثَّهُنَّ عَلَى طَاعَتِهِ ثُمَّ
قَالَ تَصَدَّقْنَ فَإِنَّ أَكْثَرَكُنَّ حَطَبُ جَهَنَّمَ. فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنْ
سَفِلَةِ النِّسَاءِ سَفْعَاءُ الْخَدَّيْنِ بِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ
تُكْثِرْنَ الشَّكَاةَ وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ. فَجَعَلْنَ يَنْزِعْنَ
قَلاَئِدَهُنَّ وَأَقْرُطَهُنَّ وَخَوَاتِيمَهُنَّ يَقْذِفْنَهُ فِي ثَوْبِ
بِلاَلٍ يَتَصَدَّقْنَ بِهِ.
জাবির রাز থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ঈদের দিন আমি রাসুলুল্লাহ সা. এর সাথে সালাতে
উপস্থিত ছিলাম। তিনি আযান ইকামাত ব্যতীতই খুৎবা দেওয়ার পূর্বে সালাত শুরু করে দিলেন। যখন সালাত শেষ করলেন, বিলাল রা. এর উপর ভর করে দাঁড়িয়ে গেলেন, আল্লাহর প্রশংসা এবং গুণ বর্ণনা করলেন, লোকদের ওয়াজ করলেন, তাদের নসীহত করলেন এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি
উদ্বুদ্ধ করলেন। অতঃপর চেহারা ফিরিয়ে নিলেন এবং নারীদের দিকে গেলেন।
তার সাথে বিলাল রা.ও ছিলেন। তিনি তাদেরকে আদেশ দিলেন আল্লাহকে ভয় করতে, ওয়াজ করলেন, নসীহাত করলেন, আল্লাহর প্রশংসা এবং গুণ বর্ণনা করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি উদ্বুদ্ধ
করলেন এবং বললেন, তোমরা দান-খয়রাত করবে, যেহেতু তোমাদের অধিকাংশই জাহান্নামের ইন্ধন। তখন নিম্ন শ্রেণীর একজন মহিলা বলে উঠল যার গন্ডদ্বয়ে হালকা কাল দাগ ছিল, কেন ইয়া রাসুলাল্লাহ? তিনি বললেন, তোমরা অত্যধিক গীবত কর এবং স্বামীর নাফরমানী কর। তখন তারা নিজেদের হার, কানের বালী এবং আংটি টেনে টেনে খূলে ফেলতে শুরু করল, যা বিলালে রা. এর কাপড়ে ছুড়ে মারতে শুরু করল সদকা স্বরূপ। (নাসায়ী)
নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের
গীবত করাঃ
سَمِعَ عُرْوَةَ بْنَ الزُّبَيْرِ، أَنَّ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها
ـ أَخْبَرَتْهُ قَالَتِ، اسْتَأْذَنَ رَجُلٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم فَقَالَ ائْذَنُوا لَهُ بِئْسَ، أَخُو الْعَشِيرَةِ أَوِ ابْنُ
الْعَشِيرَةِ. فَلَمَّا دَخَلَ أَلاَنَ لَهُ الْكَلاَمَ قُلْتُ يَا رَسُولَ
اللَّهِ قُلْتَ الَّذِي قُلْتَ، ثُمَّ أَلَنْتَ لَهُ الْكَلاَمَ قَالَ أَىْ عَائِشَةُ، إِنَّ
شَرَّ النَّاسِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ ـ أَوْ وَدَعَهُ النَّاسُ ـ اتِّقَاءَ
فُحْشِهِ.
উরওয়াহ ইবনুল
জাবায়ির হযরত আয়িশা রা. থেকে শুনে বর্ণনা করেন। হযরত আয়েশা রা. থেকে
বর্ণিত যে, একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সা. এর নিকট আসার অনুমতি
চাইলে তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দাও। সে বংশের নিকৃষ্ট ভাই অথবা বললেনঃ সে গোত্রের
নিকৃষ্ট সন্তান। লোকটি ভিতরে আসলে তিনি তার সাথে নম্রভাবে কথাবার্তা বললেন। তখন
আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি এ ব্যাক্তি সম্পর্কে যা বলার তা বলেছেন। পরে
আপনি আবার তার সাথে নম্রতার সাথে কথাবার্তা বললেন। তখন তিনি বললেনঃ হে
আয়িশা! নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তি সে-ই যার অশালীনতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য
মানুষ তার সংশ্রব ত্যাগ করে। (বুখারী)
বিয়ের প্রস্তাবে গীবত
করাঃ
وَعَنْ فَاطِمَةَ بِنتِ قَيسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ
أَتَيتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، فَقُلْتُ إِنَّ أَبَا الجَهْمِ
وَمُعَاوِيَةَ خَطَبَانِي؟ فَقَالَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمَّا
مُعَاوِيَةُ، فَصُعْلُوكٌ لاَ مَالَ لَهُ، وَأَمَّا أَبُو الجَهْمِ، فَلاَ يَضَعُ
العَصَا عَنْ عَاتِقِهِ.
ফাতেমাহ বিন্তে
ক্বাইস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আবুল জাহাম ও মুয়াবিয়াহ আমাকে বিবাহের
প্রস্তাব দিয়েছেন। (এ অবস্থায় আমি কি
করব?) রাসূল সা. বললেন, মুআবিয়াহ তো গরীব মানুষ, তার
নিকট মালধনই নেই। আর আবুল জাহম, সে তো নিজ কাঁধ হতে লাঠিই নামাই না।
(বুখারী ও মুসলিম)
স্বামীর দোষ দায়িত্বশীলের
নজরে দিতে গীবত করাঃ
وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ قَالَتْ هِنْدُ
امْرَأةُ أَبي سُفْيَانَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَبَا سُفْيَانَ
رَجُلٌ شَحِيحٌ وَلَيْسَ يُعْطِينِي مَا يَكْفِينِي وَوَلَدِي إِلاَّ مَا أَخَذْتُ
مِنْهُ، وَهُوَ لاَ يَعْلَمُ؟ قَالَ خُذِيْ مَا يَكْفِيكِ
وَوَلَدَكِ بِالمَعْرُوفِ.
আয়েশা রা. হতে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ সুফয়ানের স্ত্রী হিন্দ নবী সা. কে বললেন যে, আবূ
সুফয়ান একজন কৃপণ লোক। আমি তার সম্পদ থেকে (তার অজান্তে) যা কিছু নিই তা
ছাড়া সে আমার ও আমার সন্তানকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খরচ দেয় না। রাসূলুল্লাহ সা.
বললেন, তোমার ও তোমার সন্তানের প্রয়োজন মোতাবেক খরচ নিতে পার। (বুখারী ও মুসলিম)
গীবতের কাফফারাঃ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ مِنْ كَفَّارَةِ
الْغِيبَةِ أَنْ تَسْتَغْفِرَ لِمَنِ اغْتَبْتَهُ تَقُولُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ
لَنَا وَلَهُ.
আনাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ গীবতের
কাফফারা হলো, গীবতকারী যার গীবত করেছে, তার
জন্য মাগফিরাত প্রার্থনা করবে এবং এভাবে বলবে, হে
আল্লাহ! আমাকে এবং তাকে ক্ষমা করো। (বায়হাকী)
গীবত না করার উপকারিতাঃ
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ جَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَانَ ضَامِنًا عَلَى اللَّهِ
وَمَنْ عَادَ مَرِيضًا كَانَ ضَامِنًا عَلَى اللَّهِ وَمَنْ غَدَا إِلَى مَسْجِدٍ
أَوْ رَاحَ كَانَ ضَامِنًا عَلَى اللَّهِ وَمَنْ دَخَلَ عَلَى إِمَامٍ يُعَزِّرُهُ
كَانَ ضَامِنًا عَلَى اللَّهِ وَمَنْ جَلَسَ فِي بَيْتِهِ لَمْ يَغْتَبْ
إِنْسَانًا كَانَ ضَامِنًا عَلَى الله.
মু’আয বিন জাবাল রা.
থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেন, তিনি
আল্লাহর জিম্মায় থাকেন। যে ব্যক্তি রোগীকে দেখতে যান, তিনি
আল্লাহর জিম্মায় থাকেন। যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধায় মাসজিদে গমন করেন, তিনি
আল্লাহর জিম্মায় থাকেন। যে ব্যক্তি সহযোগিতা করার জন্য মুসলিম শাসকের কাছে
গমন করেন, তিনি আল্লাহর জিম্মায় থাকেন। যে ব্যক্তি নিজ
বাড়িতে বসে থাকেন এবং কোন মানুষের গীবত করেন না, তিনি আল্লাহর জিম্মায় থাকেন। (সহীহ
ইবনু হিব্বান)
আমার অন্যান্য বিষয়ে লিখা গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
0 Comments