হাদীসে রাসূলে আশুরাঃ সংকলনে- মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

﴿جَعَلَ ٱللَّهُ ٱلۡكَعۡبَةَ ٱلۡبَيۡتَ ٱلۡحَرَامَ قِيَٰمٗا لِّلنَّاسِ وَٱلشَّهۡرَ ٱلۡحَرَامَ وَٱلۡهَدۡيَ وَٱلۡقَلَٰٓئِدَۚ ذَٰلِكَ لِتَعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَأَنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٌ﴾

আল্লাহ পবিত্র কাবা ঘরকে মানুষের জন্য (সমাজ জীবন) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিণত করেছেন আর হারাম মাস, কুরবানীর পুশু গলায় মালা পরা পশুগুলোকেও ( কাজে সহায়ক বানিয়ে দিয়েছেন) যাতে তোমরা জানতে পারে যে, আল্লাহ আকাশ পৃথিবীর সমস্ত অবস্থা জানেন এবং তিনি সব জিনিসের জ্ঞান রাখেন (আল মায়িদাহঃ ৯৭)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ.

আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, রমযান মাসের পর সর্বোত্তম সাওম হল মুহাররাম মাসের সাওম এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাত্রের সালাত। (ইবনে মাযাহ)

عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، أَنَّهُ سَمِعَ ابْنَ عَبَّاسٍ، وَسُئِلَ، عَنْ صِيَامِ، عَاشُورَاءَ قَالَ مَا عَلِمْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صَامَ يَوْمًا يَتَحَرَّى فَضْلَهُ عَلَى الأَيَّامِ إِلاَّ هَذَا الْيَوْمَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ وَيَوْمَ عَاشُورَاءَ ‏.‏

উবায়দুল্লাহ রাহি. থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আব্বাস রা. কে যখন আশূরার সাওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তখন তিনি তাকে বলতে শুনেছেন নবী সা. রমযান মাসের ও আশূরার সাওম ব্যতীত অন্য কোন দিনের সাওমকে অন্য দিনের সাওমের উপর গুরত্ব দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। (নাসায়ী)

عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ كَانُوا يَصُومُونَ عَاشُورَاءَ قَبْلَ أَنْ يُفْرَضَ رَمَضَانُ، وَكَانَ يَوْمًا تُسْتَرُ فِيهِ الْكَعْبَةُ، فَلَمَّا فَرَضَ اللَّهُ رَمَضَانَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏مَنْ شَاءَ أَنْ يَصُومَهُ فَلْيَصُمْهُ، وَمَنْ شَاءَ أَنْ يَتْرُكَهُ فَلْيَتْرُكْهُ.‏

আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমযানের সাওম ফরয হওয়ার পূর্বে মুসলমানগণ আশূরার রোযা পালন করতেন। সে দিনই কাবাঘর গিলাফে আবৃত করা হতো। তারপর আল্লাহ যখন রমযানের সাওম ফরয করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ আশূরার সাওম যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা সে ছেড়ে দিবে। (বুখারী)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما قَالَ صَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَاشُورَاءَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ‏.‏ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تُرِكَ‏.‏ وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ لاَ يَصُومُهُ، إِلاَّ أَنْ يُوَافِقَ صَوْمَهُ‏.‏

ইবনু উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. আশুরার দিন সিয়াম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও করেছেন। পরে যখন রমযানের সিয়াম ফরজ হল তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। আবদুল্লাহ রাহি. এ সিয়াম পালন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারণ সিয়াম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন। (বুখারী)

عَنْ عُمَرَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ عَاشُورَاءَ إِنْ شَاءَ صَامَ‏‏.‏

আবদুল্লাহ ইবনু ’উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেনঃ আশূরা আশুরার দিনে কেউ চাইলে সাওম রোযা পালন করতে পারে।  (বুখারী)

عَنِ الرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذٍ، قَالَتْ أَرْسَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم غَدَاةَ عَاشُورَاءَ إِلَى قُرَى الأَنْصَارِ مَنْ أَصْبَحَ مُفْطِرًا فَلْيُتِمَّ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ، وَمَنْ أَصْبَحَ صَائِمًا فَلْيَصُمْ‏‏.‏ قَالَتْ فَكُنَّا نَصُومُهُ بَعْدُ، وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا، وَنَجْعَلُ لَهُمُ اللُّعْبَةَ مِنَ الْعِهْنِ، فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلَى الطَّعَامِ أَعْطَيْنَاهُ ذَاكَ، حَتَّى يَكُونَ عِنْدَ الإِفْطَارِ‏.‏

রুবায়্যি’ বিনত মু’আউয়্যিয রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আশুরার সকালে রাসূলুল্লাহ সা. আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেনঃ যে ব্যাক্তি সাওম রোযা পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সাওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সাওম পূর্ণ করে। তিনি (রুবায়্যি) রা. বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন রোযা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের রোযা রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরী করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ইফতার পর্যন্ত ভুলিয়ে রাখতাম। (বুখারী)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما قَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ، فَرَأَى الْيَهُودَ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ مَا هَذَا‏‏.‏ قَالُوا هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ، هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ، فَصَامَهُ مُوسَى‏.‏ قَالَ فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ‏‏.‏ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ‏.‏

ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীগণ আশুরার দিনে সাওম রোযা পালন করে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে সাওম পালন কর কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল হতে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মূসা আ. সাওম পালন করেন। রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী, এরপর তিনি এ দিনে সাওম পালন করেন এবং সাওম পালনের নির্দেশ দেন। (বুখারী)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم لَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ وَجَدَهُمْ يَصُومُونَ يَوْمًا، يَعْنِي عَاشُورَاءَ، فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، وَهْوَ يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى، وَأَغْرَقَ آلَ فِرْعَوْنَ، فَصَامَ مُوسَى شُكْرًا لِلَّهِ‏.‏ فَقَالَ أَنَا أَوْلَى بِمُوسَى مِنْهُمْ‏‏.‏ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ‏.‏

ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. যখন (হিজরত করে) মদিনায় আগমন করেন, তখন তিনি মদিনাবাসীকে এমনভাবে পেলেন যে, তারা একদিন সাওম রোযা পালন করে অর্থাৎ সে দিনটি হল আশুরার দিন। (জিজ্ঞাসা করার পর) তারা বলল, এটি একটি মহান দিবস। এ এমন দিন যে দিনে আল্লাহ মূসা আ.-কে নাজাত দিয়েছেন এবং ফিরাউনের সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর মূসা আ. শুকরিয়া হিসাবে এদিন সাওম পালন করেছেন। তখন নবী সা. বললেন, তাদের তুলনায় আমি হলাম মূসা আ. এর অধিক ঘনিষ্ঠ। কাজেই তিনি নিজেও এদিন সাওম পালন করেছেন এবং (সবাইকে) এদিন সাওম পালনের আদেশ দিয়েছেন।

عَنْ أَبِي مُوسَى رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَعُدُّهُ الْيَهُودُ عِيدًا، قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏فَصُومُوهُ أَنْتُمْ‏‏.‏

আবূ মূসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আশুরার দিনকে ইয়াহুদীগণ ঈদ মনে করত। নবী সা. বললেনঃ তোমরাও এ দিনে সাওম রোযা পালন কর। (বুখারী)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما قَالَ مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ، إِلاَّ هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَهَذَا الشَّهْرَ‏.‏ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ‏.‏

ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে আশূরার দিনের সাওমের উপরে অন্য দিনের সাওমকে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখি নাই এবং এ মাস অর্থাৎ রমযান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখি নাই)।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَئِنْ بَقِيتُ إِلَى قَابِلٍ لأَصُومَنَّ التَّاسِعَ.‏

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তবে মুহাররমের নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। (মুসলিম)

عَنْ أَبي غَطَفَانَ، يَقُولُ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ، يَقُولُ حِينَ صَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَنَا بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ صُمْنَا يَوْمَ التَّاسِعِ، فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم .‏

আবূ গিতফান রাহি. বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. কে এরূপ বলতে শুনেছি যে, নবী সা. যখন আশুরার দিন রোযা রাখেন, তখন আমাদেরকেও ঐ দিন রোযা রাখার নির্দেশ দেন। সাহবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলল্লাহ্! এ তো এমন দিন, যাকে ইয়াহুদী ও নাসারাগণ সম্মান করে থাকে। রাসূলূল্লাহ্ সা. বলেন, যখন আগামী বছর এ সময় আসবে, তখন আমরা ৯ই মুহাররমসহ রোযা রাখব। কিন্তু পরবর্তী বছর আগমনের পূর্বেই রাসূলুল্লাহ্ সা. ইন্তিকাল করেন। (আবু দাউদ)

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ .‏ 

আবূ কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত। নবী সা. বলেন, আশূরা দিবসের সিয়াম সম্পর্কে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, এর মাধ্যমে, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের (গুনাহর) কাফফারা করে দিবেন। (মুসলিম)

Post a Comment

0 Comments