উমরাহ বিষয়ক হাদীস সমূহ থেকে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ أَنَّ
رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْعُمْرَةُ إِلَى
الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ
جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ
আবু হুরাইরাহ রা. হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেনঃ এক উমরাহর পর আর এক উমরাহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো হাজ্জে মাবরূরের প্রতিদান। (বুখারী)
عَنْ ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا يُخْبِرُنَا يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ لِامْرَأَةٍ مِنْ الأَنْصَارِ سَمَّاهَا ابْنُ عَبَّاسٍ فَنَسِيتُ
اسْمَهَا مَا مَنَعَكِ أَنْ تَحُجِّينَ مَعَنَا قَالَتْ كَانَ لَنَا نَاضِحٌ
فَرَكِبَهُ أَبُو فُلاَنٍ وَابْنُهُ لِزَوْجِهَا وَابْنِهَا وَتَرَكَ نَاضِحًا
نَنْضَحُ عَلَيْهِ قَالَ فَإِذَا كَانَ رَمَضَانُ اعْتَمِرِي فِيهِ فَإِنَّ
عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ حَجَّةٌ أَوْ نَحْوًا مِمَّا قَالَ
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. এক আনসারী মহিলাকে বললেনঃ আমাদের
সঙ্গে হাজ্জ করতে তোমার বাধা কিসের? ইবনে আব্বাস রা. মহিলার
নাম বলেছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি। মহিলা বলল, আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল। কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ মহিলার
স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আর
আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নবী সা. বললেনঃ আচ্ছা, রমাযান এলে তখন উমরাহ করে নিও। কেননা, রামাদ্বানের একটি উমরাহ একটি হাজ্জের সমতুল্য। অথবা এরূপ কোন কথা তিনি বলেছিলেন। (মুসলিম)
عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا أَنَّ
النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ عُمْرَةٌ في رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً
أَوْ حَجَّةً مَعِي.
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেন, “মাহে রামাদ্বানের উমরাহ একটি হজ্জের সমতুল্য অথবা আমার সঙ্গে
হজ্জ করার সমতুল্য।”
(বুখারী ও মুসলিম)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ
اللهُ عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ
أَتَى هَذَا الْبَيْتَ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْهُ أُمُّهُ.
আবু হুরায়রাহ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এ (কাবা) ঘরে (হাজ্জের উদ্দেশে) আসে,
অতঃপর অশ্লীল আচরণও করে না এবং দুষ্কর্মও করে না সে এমন (নিষ্পাপ)
ভাবে প্রত্যাবর্তন করে যে তার মা তাকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) প্রসব করেছেন। (মুসলিম)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ الْحَاجُّ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللَّهِ إِنْ دَعَوْهُ
أجابَهمْ وإِنِ استَغفروهُ غَفرَ لهمْ
আবু হুরায়রাহ রা. হতে বর্ণিত। তিনি নবী সা. হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ হজ্জ ও উমরাহকারী হলো আল্লাহর দা’ওয়াতী কাফেলা বা মেহমানী দল। অতএব তারা যদি আল্লাহর কাছে দু’আ করেন, তিনি তা কবূল করেন। আর যদি
তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ)
أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ
مَثْرُودٍ قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ عَنْ مَخْرَمَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ
سَمِعْتُ سُهَيْلَ بْنَ أَبِي صَالِحٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبِي يَقُولُ سَمِعْتُ
أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفْدُ اللَّهِ ثَلَاثَةٌ الْغَازِي وَالْحَاجُّ
وَالْمُعْتَمِرُ
ঈসা ইবন ইব্রাহীম ইবন মাছরুদ রাহি. ... আবু হুরায়রাহ
রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেছেনঃ তিন
ব্যক্তি আল্লাহর প্রতিনিধি; গাযী, হাজী ও উমরাহ আদায়কারী।
(নাসায়ী)
উমরার সওয়াব যে আমলেঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ
جَاءَ الْفُقَرَاءُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا
ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ مِنَ الأَمْوَالِ بِالدَّرَجَاتِ الْعُلاَ وَالنَّعِيمِ
الْمُقِيمِ، يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي، وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ، وَلَهُمْ
فَضْلٌ مِنْ أَمْوَالٍ يَحُجُّونَ بِهَا، وَيَعْتَمِرُونَ، وَيُجَاهِدُونَ،
وَيَتَصَدَّقُونَ قَالَ أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ بِأَمْرٍ إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ أَدْرَكْتُمْ
مَنْ سَبَقَكُمْ وَلَمْ يُدْرِكْكُمْ أَحَدٌ بَعْدَكُمْ، وَكُنْتُمْ خَيْرَ مَنْ
أَنْتُمْ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِ، إِلاَّ مَنْ عَمِلَ مِثْلَهُ تُسَبِّحُونَ
وَتَحْمَدُونَ، وَتُكَبِّرُونَ خَلْفَ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ.
فَاخْتَلَفْنَا بَيْنَنَا فَقَالَ بَعْضُنَا نُسَبِّحُ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ،
وَنَحْمَدُ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ، وَنُكَبِّرُ أَرْبَعًا وَثَلاَثِينَ.
فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ تَقُولُ سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ،
وَاللَّهُ أَكْبَرُ، حَتَّى يَكُونَ مِنْهُنَّ كُلِّهِنَّ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ
আবু হুরায়রা রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, দরিদ্রলোক
নবী সা. এর কাছে এসে বললেন, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা
তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেন, তারা আমাদের মত সালাত আদায় করছেন আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের
দ্বারা হজ্ব, উমরা, জিহাদ ও
সাদাকা করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ শুনে
তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব,
যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চাইতে
অগ্রগামী হয়ে গিয়েছে, তাদের সমপর্যায়ে পৌছাতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র।
তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশ বার করে
তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ
করবে। (এ বিষয়টি নিয়ে) আমাদের মধ্যে মতানৈক্য
সৃষ্টি হল। কেউ বলল, আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ পড়ব, তেত্রিশ
বার তাহমীদ আর চৌত্রিশ বার তাকবীর পড়ব। এরপর
আমি তাঁর কাছে ফিরে গেলাম। তিনি
বললেন, سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَاللَّهُ
أَكْبَرُ বলবে, যাতে সবগুলোই তেত্রিশ বার করে
হয়ে যায়।
عَنْ ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا يُخْبِرُنَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاِمْرَأَةٍ مِنَ الأَنْصَارِ إِذَا كَانَ رَمَضَانُ
فَاعْتَمِرِي فِيهِ فَإِنَّ عُمْرَةً فِيهِ تَعْدِلُ حَجَّةً.
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সা.
একজন আনসারী মহিলাকে বলেছিলেন, যখন রামাদ্বান এসে যাবে তখন
তুমি একটি উমরাহ আদায় করবে। কেননা রামাদ্বানের একটি উমরাহ একটি হজ্জের সমপরিমাণ।
(নাসায়ী)
عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ
اللهُ عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَقْبَلُ اللَّهُ لِصَاحِبِ بِدْعَةٍ صَوْمًا
وَلاَ صَلاَةً وَلاَ صَدَقَةً وَلاَ حَجًّا وَلاَ عُمْرَةً وَلاَ جِهَادًا وَلاَ
صَرْفًا وَلاَ عَدْلاً يَخْرُجُ مِنَ الإِسْلاَمِ كَمَا تَخْرُجُ الشَّعَرَةُ مِنَ
الْعَجِينِ.
হুযাইফাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.
বলেছেনঃ আল্লাহ বিদআতী ব্যক্তির সাওম , সালাত, যাকাত বা দান-খয়রাত, হাজ্জ, উমরাহ, জিহাদ, ফিদয়া, ন্যায়বিচার ইত্যাদি কিছুই কবূল করবেন না। সে ইসলাম থেকে এমনভাবে খারিজ হয়ে যায় যেভাবে আটা থেকে চুল টেনে বের করা হয়। (ইবনে মাজাহ)
عَنْ سَهْلُ بْنُ حُنَيْفٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ أَتَى مَسْجِدَ قُبَاءٍ فَصَلَّى
فِيهِ صَلاَةً كَانَ لَهُ كَأَجْرِ عُمْرَةٍ.
সাহল ইবনে হুনাইফ রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেনঃ যে ব্যক্তি নিজের ঘরে পবিত্রতা
অর্জন করলো, অতঃপর কুবা মসজিদে এসে এক ওয়াক্ত সালাত
পড়লো, তার জন্য একটি উমরাহর সমান
সাওয়াব রয়েছে। (ইবনে মাজাহ)
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ رَضِيَ
اللهُ عَنهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ
خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلاَةٍ مَكْتُوبَةٍ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ
الْحَاجِّ الْمُحْرِمِ وَمَنْ خَرَجَ إِلَى تَسْبِيحِ الضُّحَى لاَ يُنْصِبُهُ
إِلاَّ إِيَّاهُ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْمُعْتَمِرِ وَصَلاَةٌ عَلَى أَثَرِ
صَلاَةٍ لاَ لَغْوَ بَيْنَهُمَا كِتَابٌ فِي عِلِّيِّينَ.
আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্
সা. বলেনঃ যে ব্যক্তি ওজু করে ফরয নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যায়, সে ইহরামধারী হাজ্জীর অনুরূপ ছওয়াব প্রাপ্ত হবে। অপর পক্ষে যে ব্যক্তি কেবলমাত্র চাশতের নামায আদায়ের জন্য
মসজিদে যায় সে উমরাহকারীর ন্যায় ছওয়াব প্রাপ্ত হবে। যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত নামায আদায়ের পর হতে পরের ওয়াক্ত
নামায আদায় করাকালীন সময়ের মধ্যে কোনরূপ বেহুদা কাজ ও কথাবার্তায় লিপ্ত না হয়, তার আমলনামা সপ্তাকাশে লিপিবদ্ধ হবে, অর্থাৎ সে
উচ্চমর্যাদার অধিকারী হবে। (আবু
দাউদ)
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسلم مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلَاةٍ مَكْتُوبَة
فَأَجره كَأَجر الْحَاج الْمُحْرِمِ وَمَنْ خَرَجَ إِلَى تَسْبِيحِ الضُّحَى لَا
يُنْصِبُهُ إِلَّا إِيَّاهُ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْمُعْتَمِرِ وَصَلَاةٌ عَلَى
إِثْرِ صَلَاةٍ لَا لَغْوَ بَيْنَهُمَا كِتَابٌ فِي عليين.
আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.
বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘর হতে ওযু করে ফরয সালাত আদায়
করার জন্য বের হয়েছে তার সাওয়াব একজন ইহরাম বাঁধা হাজির সাওয়াবের সমান। আর যে ব্যক্তি সালাতুয্ যুহার জন্য বের হয়েছে আর এই সালাত ব্যতীত
অন্য কোন জিনিস তাকে এদিকে ধাবিত করে না সে সাওয়াব পাবে একজন উমরাহকারীর সমান। এক সালাতের পর অপর সালাত আদায় করা, যার মাঝখানে কোন বেহুদা কথা বলেনি তা “ইল্লিয়্যিন’’-এ লেখা হয়ে থাকে। (আবু দাউদ)
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ هَلْ عَلَى
النِّسَاءِ مِنْ جِهَادٍ؟ قَالَ نَعَمْ عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ لَا قِتَالَ فِيهِ
الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ
একদা আয়েশা রা. আল্লাহর রাসূল সা. কে
জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মহিলাদের জন্য কি জিহাদ
আছে?’ উত্তরে তিনি বললেন, “হ্যাঁ,
সেই জিহাদ আছে, যাতে কোন খুনাখুনি নেই;
হজ্জ ও উমরাহ।” (ইবনে মাযাহ)
উমরা হজ্জে আসগর বা ছোট হজ্জঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ بَعَثَنِي أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُ فِيمَنْ يُؤَذِّنُ يَوْمَ النَّحْرِ بِمِنًى لاَ
يَحُجُّ بَعْدَ الْعَامِ مُشْرِكٌ، وَلاَ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ عُرْيَانٌ.
وَيَوْمُ الْحَجِّ الأَكْبَرِ يَوْمُ النَّحْرِ، وَإِنَّمَا قِيلَ الأَكْبَرُ مِنْ
أَجْلِ قَوْلِ النَّاسِ الْحَجُّ الأَصْغَرُ. فَنَبَذَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ
اللهُ عَنهُ إِلَى النَّاسِ فِي ذَلِكَ الْعَامِ، فَلَمْ
يَحُجَّ عَامَ حَجَّةِ الْوَدَاعِ الَّذِي حَجَّ فِيهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُشْرِكٌ.
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রা. আমাকে সে সকল লোকের সঙ্গে
পাঠান যারা মিনায় কুরবানীর দিন এ ঘোষণা দিবেনঃ এ বছরের পর কোন মুশরিক হাজ্জ করতে পারবে না আর বায়তুল্লাহ শরীফে কোন উলঙ্গ ব্যক্তি
তাওয়াফ করতে পারবে না আর কুরবানীর দিনই হল হাজ্জে আকবরের দিন। একে আকবর এ জন্য বলা হয় যে, লোকেরা
(উমরাহকে) হাজ্জে আসগার (ছোট হাজ্জ) বলেন। আবু বকর রা. সে বছর মুশরিকদের চুক্তি রহিত করে দেন। কাজেই হুজ্জাতুল বিদার বছর যখন রাসূলুল্লাহ সা. হাজ্জ করেন, তখন কোন মুশরিক হাজ্জ
করেনি। (বুখারী)
রাসূল সা. এর উমরাহঃ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ اعْتَمَرَ أَرْبَعًا إِحْدَاهُنَّ فِي رَجَبٍ.
ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সা. চারবার উমরা করেছেন। এর
মধ্যে একবার করেছেন রজবে। (তিরমিযী)
উমরাহ যাত্রীদের কাছে দোয়ার আবেদনঃ
عَنْ عَمَرَ بْنِ الْخَطَّابَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ اِسْتَأْذَنْتُ
النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْ العُمْرَةِ، فَأَذِنَ لِيْ،
وَقَالَ لَا تَنْسَنَا يَا أَخَيَّ مِنْ دُعَائِكَ فَقَالَ كَلِمَةً مَا يسُرُّنِيْ أَنَّ لِيْ
بِهَا الـدُّنْيَا.
উমার ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, আমি উমরাহ করার জন্য
রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিয়ে বললেন, “প্রিয় ভাই আমার, তোমার দুআর সময় আমাদেরকে যেন ভুলো না।” (উমার বলেন) এমন বাক্য তিনি উচ্চারণ করলেন, যার
বিনিময়ে গোটা পৃথিবীটা আমার হয়ে গেলেও তা আমার কাছে আনন্দদায়ক (বিবেচিত) নয়। (আবু দাউদ ও তিরমিযি)
উমরার সফরে সালাতঃ
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ صَلَّى بِالْمَدِيْنَةِ الظُّهْرَ أَرْبَعًا وَالْعَصْرَ بِذِي
الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ وَسَمِعْتُهُمْ يَصْرُخُوْنَ بِهِمَا جَمِيْعًا
আনাস রা. হতে বর্ণিত যে, নবী সা. মদিনাতে যুহরের সালাত চার রাকআত আদায় করেন এবং যুল-হুলায়ফাতে
পৌঁছে দু’রাকআত আসর সালাত আদায় করেন। আমি
তাদের হজ্জ ও উমরাহ উভয়টির তালবিয়া জোরে পাঠ করতে শুনেছি। (বুখারী)
মিক্বাতঃ
حَدَّثَنِي زَيْدُ بْنُ جُبَيْرٍ، أَنَّهُ أَتَى
عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا فِي
مَنْزِلِهِ وَلَهُ فُسْطَاطٌ وَسُرَادِقٌ، فَسَأَلْتُهُ مِنْ أَيْنَ يَجُوزُ أَنْ
أَعْتَمِرَ قَالَ فَرَضَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لأَهْلِ
نَجْدٍ قَرْنًا، وَلأَهْلِ الْمَدِينَةِ ذَا الْحُلَيْفَةِ، وَلأَهْلِ الشَّأْمِ
الْجُحْفَةَ.
যায়দ ইবনে জুবাইর রাহি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি আবদুল্লাহ
ইবনে উমর রা. এর কাছে তাঁর অবস্থান স্থলে যান, তখন তাঁর জন্য তাঁবু ও চাদওয়া
টানানো হয়েছিল। (যায়দ রা. বলেন) আমি
তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম,
কোন স্থান থেকে উমরার ইহরাম বাঁধা জায়িয হবে? তিনি
বললেন, রাসূলুল্লাহ সা. নাজদবাসীদের জন্য কারণ, মদিনাবাসীদের জন্য যুল-হুলাইফা ও
সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা (ইহরামের মীকাত) নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (বুখারী)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا قَالَ إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ وَقَّتَ لأَهْلِ الْمَدِينَةِ ذَا الْحُلَيْفَةِ، وَلأَهْلِ الشَّأْمِ
الْجُحْفَةَ، وَلأَهْلِ نَجْدٍ قَرْنَ الْمَنَازِلِ، وَلأَهْلِ الْيَمَنِ
يَلَمْلَمَ، هُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِنَّ، مِمَّنْ
أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ، وَمَنْ كَانَ دُونَ ذَلِكَ فَمِنْ حَيْثُ
أَنْشَأَ، حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ.
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. ইহরাম বাঁধার স্থান নির্ধারণ করে
দিয়েছেন, মদিনাবাসীদের জন্য যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা, নজদবাসীদের জন্য
কারনুল-মানাযিল, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম। হাজ্জ ও উমরা নিয়্যাতকারী
সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসী
সকলের জন্য উক্ত স্থানগুলো মীকাতরূপে গণ্য এবং যারা এ সব মীকাতের ভিতরে (অর্থাৎ
মক্কার নিকটবর্তী) স্থানের অধিবাসী, তারা যেখান হতে হাজ্জের
নিয়্যাত করে বের হবে (সেখান হতে ইহরাম বাঁধবে)। এমন কি মক্কাবাসী মক্কা থেকেই (হাজ্জের) ইহরাম বাঁধবে। (বুখারী)
ঋতুবর্তী মহিলার জন্য মীক্বাতঃ
عَنْ عُرْوَةَ، أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ
عَنهَا قَالَتْ أَهْلَلْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ، فَكُنْتُ مِمَّنْ تَمَتَّعَ، وَلَمْ يَسُقِ الْهَدْىَ،
فَزَعَمَتْ أَنَّهَا حَاضَتْ، وَلَمْ تَطْهُرْ حَتَّى دَخَلَتْ لَيْلَةُ عَرَفَةَ
فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَذِهِ لَيْلَةُ عَرَفَةَ، وَإِنَّمَا كُنْتُ
تَمَتَّعْتُ بِعُمْرَةٍ. فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ انْقُضِي رَأْسَكِ، وَامْتَشِطِي، وَأَمْسِكِي عَنْ عُمْرَتِكِ.
فَفَعَلْتُ، فَلَمَّا قَضَيْتُ الْحَجَّ أَمَرَ عَبْدَ الرَّحْمَنِ لَيْلَةَ
الْحَصْبَةِ فَأَعْمَرَنِي مِنَ التَّنْعِيمِ مَكَانَ عُمْرَتِي الَّتِي
نَسَكْتُ.
আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সঙ্গে বিদায় হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলাম। আমিও তাদেরই একজন ছিলাম যারা তামাত্তু’র (একই সফরে হাজ্জ ও উমরা করা)
নিয়্যত করেছিল এবং কুরবানীর পশু নেয়নি। তিনি
বলেনঃ তাঁর হায়ায শুরু হয় আর আরফা-এর রাত পর্যন্ত তিনি পাক হননি। আয়িশা রা. বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আজ তো আরাফার
রাত, আর আমি হাজ্জের সঙ্গে উমরারও নিয়্যত করেছি। রাসূলুল্লাহ সা. তাকে
বললেনঃ মাথার বেণী খুলে ফেল, চুল আঁচড়াও আর উমরা থেকে
বিরত থাক। আমি তা-ই করলাম। হাজ্জ সমাধা করার
পর রাসূলুল্লাহ সা. আবদুর রহমান রা.-কে ‘হাসবায়’ অবস্থানের রাতে (আমাকে উমরা করানোর)
নির্দেশ দিলেন। তিনি তানঈ’ম থেকে আমাকে উমরা করালেন, যেখান
থেকে আমি উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম।
(বুখারী)
ইহরামঃ
حديث عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ
عَنهُمَا أَنَّ رَجُلاً قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ مَا يَلْبَسُ الْمُحْرِمُ مِنَ
الثِّيَابِ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَلْبَسُ
الْقُمُصَ وَلاَ الْعَمَائِمَ وَلاَ السَّرَاوِيلاَتِ وَلاَ الْبَرَانِسَ وَلاَ
الْخِفَافَ، إِلاَّ أَحَدٌ لاَ يَجِدُ نَعْلَيْنِ فَلْيَلْبَسْ خُفَّيْنِ،
وَلْيَقْطَعْهُمَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ، وَلاَ تَلْبَسُوا مِنَ الثِّيَابِ
شَيْئًا مَسَّهُ الزَّعْفَرَانُ أَوْ وَرْسٌ
আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! মুহরিম লোক কী কী পোশাক
পরবে? আল্লাহর রাসূল সা. বললেনঃ তোমরা (ইহরাম অবস্থায়) জামা,
পাগড়ী, পায়জামা, টুপি
ও মোজা পরবে না। তবে যে ব্যক্তির জুতা
নেই, সে কেবল মোজা পরতে পারবে, কিন্তু উভয়
মোজা টাখনুর নীচ থেকে কেটে ফেলবে। আর
জাফরান ও ওয়ারস রং যাতে লেগেছে, এমন কাপড় পরবে না।(বুখারী)
উমরার নিয়াতঃ
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ
اللهُ عَنهُ قَالَ صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ
الظُّهْرَ أَرْبَعًا، وَالْعَصْرَ بِذِي الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ،
وَسَمِعْتُهُمْ يَصْرُخُونَ بِهِمَا جَمِيعًا.
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. যুহরের সালাত মদিনায় চার রাক’আত
আদায় করলেন এবং আসরের সালাত যুল-হুলাইফায় দু’রাকআত আদায় করেন। আমি শুনতে পেলাম তাঁরা সকলে উচ্চস্বরে হাজ্জ ও উমরার তালবিয়া পাঠ করছেন। (বুখারী)
ابْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا يَقُولُ إِنَّهُ سَمِعَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ
عَنهُ يَقُولُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِوَادِي
الْعَقِيقِ يَقُولُ أَتَانِي اللَّيْلَةَ آتٍ مِنْ رَبِّي فَقَالَ صَلِّ فِي هَذَا
الْوَادِي الْمُبَارَكِ وَقُلْ عُمْرَةً فِي حَجَّةٍ.
উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আকীক উপত্যকায় অবস্থানকালে আমি নবী সা.
কে বলতে শুনেছিঃ আজ রাতে আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একজন আগন্তুক আমার নিকট এসে
বললেন, আপনি এই বরকতময় উপত্যকায় সালাত আদায় করুন এবং বলুন
(আমার এ ইহরাম) হাজ্জের সাথে উমরাও। (বুখারী)
عَنْ مَرْوَانَ بْنِ الْحَكَمِ قَالَ شَهِدْتُ
عُثْمَانَ وَعَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا وَعُثْمَانُ يَنْهَى عَنْ
الْمُتْعَةِ وَأَنْ يُجْمَعَ بَيْنَهُمَا فَلَمَّا رَأَى عَلِيٌّ أَهَلَّ بِهِمَا
لَبَّيْكَ بِعُمْرَةٍ وَحَجَّةٍ قَالَ مَا كُنْتُ لأَدَعَ سُنَّةَ النَّبِيِّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَوْلِ أَحَدٍ
মারওয়ান ইবনে
হাকাম রাহি. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উসমান ও আলী রা.কে (উসফান নামক স্থানে) দেখেছি, উসমান রা. তামাত্তু, হাজ্জ ও উমরাহ একত্রে আদায় করতে নিষেধ
করতেন। আলী রা. এ অবস্থা দেখে হাজ্জ ও উমরাহর ইহরাম একত্রে বেঁধে তালবিয়া পাঠ করেনঃ لَبَّيْكَ
بِعُمْرَةٍ وَحَجَّةٍ (হে আল্লাহ!
আমি উমরাহ ও হাজ্জ-এর ইহরাম বেঁধে হাযির হলাম) এবং বললেন, কারো কথায় আমি নবী সা. এর সুন্নাত বর্জন
করতে পারব না। (বুখারী)
তালবিয়া পাঠঃ
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُ قَالَ صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ الظُّهْرَ بِالْمَدِينَةِ أَرْبَعًا وَالْعَصْرَ بِذِي الْحُلَيْفَةِ رَكْعَتَيْنِ
وَعَنْ أَيُّوبَ عَنْ رَجُلٍ عَنْ أَنَسٍ ثُمَّ بَاتَ حَتَّى أَصْبَحَ فَصَلَّى الصُّبْحَ
ثُمَّ رَكِبَ رَاحِلَتَهُ حَتَّى إِذَا اسْتَوَتْ بِهِ الْبَيْدَاءَ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ
وَحَجَّةٍ
আনাস ইবনে মালিক রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সা. মদিনাতে
যুহর চার রাকআত এবং যুল-হুলাইফাতে আসর দু’রাকআত আদায় করেন। আইয়ূব রাহি. এক
ব্যক্তির মাধ্যমে আনাস ইবনে মালিক রা. হতে বর্ণনা করেন, এরপর তিনি সেখানে রাত যাপন করেন। ভোর হলে তিনি ফজরের সালাত আদায় করার পর সওয়ারীতে আরোহণ করেন। সওয়ারী বায়দায় পৌঁছে সোজা হয়ে দাঁড়ালে আল্লাহর রাসূল সা.
হাজ্জ ও উমরাহ উভয়ের জন্য তালবিয়া পাঠ করেন। (বুখারী)
وَعَن ابنِ عبَّاسٍ رَضِيَ
اللهُ عَنهُمَا قَالَ يُلَبِّي المقيمُ أَوِ المعتَمِرُ حَتَّى يستلمَ الْحَجَرَ
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুক্বীম
(মক্কাবাসী) অথবা উমরাহকারী (মক্কার বাইরে থেকে আগন্তুক) হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ না
করা পর্যন্ত তালবিয়াহ (লাব্বায়কা) পাঠ করতে থাকবে। (আবু দাঊদ)
وَعَنْ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ رَضِيَ اللهُ
عَنهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا فَرَغَ مِنْ تَلْبِيَتِهِ فِي حَجٍّ أَوْ عُمْرَةٍ سَأَلَ
اللَّهَ رِضْوَانَهُ وَالْجَنَّةَ، وَاسْتَعَاذَ بِرَحْمَتِهِ مِنَ النَّارِ
খুযাইমাহ বিন সাবিত রা. থেকে বর্ণিত। নবী সা. যখন হাজ্জ বা উমরাহর
তালবিয়া (লাব্বাইকা ঘোষণা) পাঠ করতেন তখন আল্লাহ তাআলার কাছে তিনি তাঁর সন্তুষ্টি
ও জান্নাত কামনা করতেন এবং আল্লাহ তাআলার দয়ার ওয়াসীলা হতে জাহান্নাম থেকে আশ্রয়
চাইতেন।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا أَنَّ تَلْبِيَةَ رَسُولِ
اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لَا شَرِيكَ لَكَ
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা. সূত্রে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ সা.এর তালবিয়া ছিলোঃ “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল হামদা
ওয়ান-নি’মাতা লাকা ওয়াল-মুলক, লা শারীকা লাক,।’’ (আবু দাউদ)
ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধঃ
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ، قَالَ
سَأَلْنَا ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ عَنْ
رَجُلٍ، طَافَ بِالْبَيْتِ الْعُمْرَةَ، وَلَمْ يَطُفْ بَيْنَ الصَّفَا
وَالْمَرْوَةِ، أَيَأْتِي امْرَأَتَهُ فَقَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَطَافَ بِالْبَيْتِ سَبْعًا، وَصَلَّى خَلْفَ الْمَقَامِ
رَكْعَتَيْنِ، وَطَافَ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ، وَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي
رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ. وَسَأَلْنَا جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ
فَقَالَ لاَ يَقْرَبَنَّهَا حَتَّى يَطُوفَ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ.
আমর ইবনে দ্বীনার রাহি. বলেনঃ আমরা ইবনে উমর রা.
কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম-যে ব্যক্তি উমরার জন্য বায়তুল্লাহর
তাওয়াফ করেছেন কিন্তু সাফা-মারওয়া সাঈ করেনি, সে কি তাঁর স্ত্রীর সাথে সঙ্গত
হতে পারবে? তিনি জবাব দিলেন,
নবী সা. এসে সাতবার বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন, মাকামে ইব্রাহীমের
কাছে দুরাকআত সালাত আদায় করেছেন আর সাফা-মারওয়া সাঈ করেছেন। তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আমরা জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি
বলেছেনঃ সাফা-মারওয়ায় সাঈ করার আগ পর্যন্ত স্ত্রীর কাছে যাবে না। (বুখারী)
قَالَ أَبُو عَاصِمٍ أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ،
أَخْبَرَنِي عَطَاءٌ، أَنَّ صَفْوَانَ بْنَ يَعْلَى، أَخْبَرَهُ أَنَّ يَعْلَى قَالَ
لِعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ أَرِنِي النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ حِينَ يُوحَى إِلَيْهِ قَالَ فَبَيْنَمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْجِعْرَانَةِ، وَمَعَهُ نَفَرٌ مِنْ أَصْحَابِهِ، جَاءَهُ رَجُلٌ
فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِي رَجُلٍ أَحْرَمَ بِعُمْرَةٍ، وَهْوَ
مُتَضَمِّخٌ بِطِيبٍ فَسَكَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاعَةً
فَجَاءَهُ الْوَحْىُ، فَأَشَارَ عُمَرُ ـ رضى الله عنه ـ إِلَى يَعْلَى، فَجَاءَ يَعْلَى،
وَعَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَوْبٌ قَدْ أُظِلَّ بِهِ
فَأَدْخَلَ رَأْسَهُ، فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْمَرُّ
الْوَجْهِ، وَهُوَ يَغِطُّ ثُمَّ سُرِّيَ عَنْهُ فَقَالَ أَيْنَ الَّذِي سَأَلَ عَنِ
الْعُمْرَةِ فَأُتِيَ بِرَجُلٍ فَقَالَ اغْسِلِ الطِّيبَ الَّذِي بِكَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ،
وَانْزِعْ عَنْكَ الْجُبَّةَ، وَاصْنَعْ فِي عُمْرَتِكَ كَمَا تَصْنَعُ فِي حَجَّتِكَ.
قُلْتُ لِعَطَاءٍ أَرَادَ الإِنْقَاءَ حِينَ أَمَرَهُ أَنْ يَغْسِلَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ
قَالَ نَعَمْ.
সাফওয়ান ইবনে ইয়ালা রা. থেকে বর্ণিত যে, ইয়ালা রা. উমর রা. কে বললেন, নবী সা. এর উপর ওহী
অবতরণ মুহূর্তটি আমাকে দেখাবেন। তিনি
বলেন, নবী সা. “জি’রানা” নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন, তাঁর সঙ্গে কিছু সংখ্যক সাহাবী ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! কোন ব্যক্তি সুগন্ধিযুক্ত পোশাক পরে উমরার ইহরাম বাঁধলে তার সম্পর্কে
আপনার অভিমত কি? নবী সা. কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। এরপর তাঁর নিকট ওহী আসল। উমর রা. ইয়ালা রা. কে ইঙ্গিত করায় তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন।
তখন একখণ্ড কাপড় দিয়ে নবী সা. উপর ছায়া করা
হয়েছিল, ইয়ালা রা. মাথা প্রবেশ করিয়ে দেখতে পেলেন,
নবী সা. এর মুখমণ্ডল লাল বর্ণ, তিনি সজোরে
শ্বাস গ্রহণ করছেন। এরপর
সে অবস্থা দূর হল। তিনি বললেনঃ উমরা সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? প্রশ্নকারীকে উপস্থিত
করা হলে তিনি বললেনঃ তোমার শরীরের সুগন্ধি তিনবার ধুয়ে ফেল ও জুব্বাটি খুলে ফেল
এবং হাজ্জে যা করে থাক উমরাতেও তাই কর। (রাবী ইবনে জুরাইজ বলেন) আমি আতা রাহি. কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনবার ধোয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি কি উত্তমরূপে পরিষ্কার করা বুঝিয়েছেন?
তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাই। (বুখারী)
عَنْ نُبَيْهِ بْنِ وَهْبٍ، أَنَّفَقَالَ أَبَانٌ
سَمِعْتُ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ يَقُولُ
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَنْكِحُ
الْمُحْرِمُ وَلاَ يُنْكَحُ وَلاَ يَخْطُبُ.
নুবায়হ ইবনে ওয়াহব রাহি. থেকে বর্ণিত যে, উমার ইবনে উবায়দুল্লাহ রাহি. শায়বাহ ইবনে জুবায়রের কন্যার সাথে নিজ
পুত্র তলহার বিবাহ দেয়ার মনস্থ করেন। অতএব তিনি উসমান রা. এর পুত্র আবানের কাছে লোক পাঠালেন। তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। আর
তিনি এ সময় আমীরুল হাজ্জ ছিলেন। আবান
বলেন, আমি উসমান ইবনে আফফান রা. কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ (হাজ্জ বা উমরাহ পালনের উদ্দেশে) ইহরামধারী ব্যক্তি নিজেও বিবাহ করবে না, অন্যকেও বিবাহ করাবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও দিবে না। (মুসলিম)
عَن الصعب بن جثامة رَضِيَ اللهُ عَنهُ أَنه أهْدى رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِمَارًا وَحْشِيًّا وَهُوَ بِالْأَبْوَاءِ أَوْ بِوَدَّانَ
فَرَدَّ عَلَيْهِ فَلَمَّا رأى مَا فِي وَجْهَهُ قَالَ إِنَّا
لَمْ نَرُدَّهُ عَلَيْكَ إِلَّا أنَّا حُرُمٌ
সা’ব ইবনে জাসামাহ্ রা. হতে বর্ণিত। তিনি আবওয়া বা ওয়াদ্দান নামক স্থানে রাসুলুল্লাহ সা. কে
একটি বন্যগাধা (শিকার করে এনে) হাদিয়া দিলেন। কিন্তু তিনি সা. গাধাটি ফেরত দিলেন। এতে
তার মুখমণ্ডল বিমর্ষভাব লক্ষ্য করে তিনি সা. বললেন, আমরা
মুহরিম হওয়ার কারণে তা তোমাকে ফেরত দিলাম। (বুখারী, মুসলিম)
عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ قَالَ
أَخْبَرَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي قَتَادَةَ أَنَّ أَبَاهُ أَخْبَرَهُ
أَنَّهُ غَزَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ
الْحُدَيْبِيَةِ قَالَ فَأَهَلُّوا بِعُمْرَةٍ غَيْرِي فَاصْطَدْتُ حِمَارَ وَحْشٍ
فَأَطْعَمْتُ أَصْحَابِي مِنْهُ وَهُمْ مُحْرِمُونَ ثُمَّ أَتَيْتُ رَسُولَ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَنْبَأْتُهُ أَنَّ عِنْدَنَا مِنْ
لَحْمِهِ فَاضِلَةً فَقَالَ كُلُوهُ وَهُمْ مُحْرِمُونَ
ইয়াহইয়া ইবন আবু কাসীর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবন
আবু কাতাদা রাহি. আমার নিকট বৰ্ণনা করেছেন যে, তাঁর পিতা তার
নিকট বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সা. এর সঙ্গে হুদায়বিয়ার
যুদ্ধে ছিলেন। তিনি বললেনঃ আমি ব্যতীত
সকলেই উমরাহর ইহরাম করেছিলেন। আমি একটি জংলী গাধা শিকার করলাম এবং তা থেকে আমার সাথীদেরকে খাওয়ালাম, অথচ তাঁরা ছিলেন মুহরিম। তারপর
রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট এসে তাঁকে এ সংবাদ দিলাম যে, এর উদ্ধৃত্ত মাংস আমাদের নিকট রয়েছে। তিনি বললেনঃ তোমরা তা খাও। অথচ
তারা সকলেই মুহরিম ছিলেন। (নাসায়ী)
তাওয়াফঃ
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ
اللَّهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ تَمَتَّعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ
وَأَهْدَى فَسَاقَ مَعَهُ الْهَدْىَ مِنْ ذِي الْحُلَيْفَةِ وَبَدَأَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَهَلَّ بِالْعُمْرَةِ ثُمَّ أَهَلَّ
بِالْحَجِّ وَتَمَتَّعَ النَّاسُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَكَانَ مِنَ النَّاسِ مَنْ أَهْدَى
فَسَاقَ الْهَدْىَ وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ يُهْدِ فَلَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَّةَ قَالَ لِلنَّاسِ مَنْ كَانَ مِنْكُمْ أَهْدَى
فَإِنَّهُ لاَ يَحِلُّ مِنْ شَىْءٍ حَرُمَ مِنْهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَجَّهُ وَمَنْ
لَمْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَهْدَى فَلْيَطُفْ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ
وَلْيُقَصِّرْ وَلْيَحْلِلْ ثُمَّ لْيُهِلَّ بِالْحَجِّ وَلْيُهْدِ فَمَنْ لَمْ
يَجِدْ هَدْيًا فَلْيَصُمْ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةً إِذَا
رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ. وَطَافَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ حِينَ قَدِمَ مَكَّةَ فَاسْتَلَمَ الرُّكْنَ أَوَّلَ شَىْءٍ ثُمَّ خَبَّ
ثَلاَثَةَ أَطْوَافٍ مِنَ السَّبْعِ وَمَشَى أَرْبَعَةَ أَطْوَافٍ ثُمَّ رَكَعَ -
حِينَ قَضَى طَوَافَهُ بِالْبَيْتِ عِنْدَ الْمَقَامِ - رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ
سَلَّمَ فَانْصَرَفَ فَأَتَى الصَّفَا فَطَافَ بِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ سَبْعَةَ
أَطْوَافٍ ثُمَّ لَمْ يَحْلِلْ مِنْ شَىْءٍ حَرُمَ مِنْهُ حَتَّى قَضَى حَجَّهُ
وَنَحَرَ هَدْيَهُ يَوْمَ النَّحْرِ وَأَفَاضَ فَطَافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ حَلَّ
مِنْ كُلِّ شَىْءٍ حَرُمَ مِنْهُ وَفَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَهْدَى وَسَاقَ الْهَدْىَ مِنَ النَّاسِ .
সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ
ইবনে উমার রা. বলেন, বিদায় হাজ্জে রাসূলুল্লাহ সা. তামাত্তু করেছেন, প্রথমে উমরাহ ও পরে হাজ্জ
করেছেন এবং পশু কুরবানী করেছেন। তিনি
যুল হুলায়ফাহ থেকে সাথে করে কুরবানীর পশু নিয়েছিলেন। এখান থেকে রাসূলুল্লাহ সা. প্রথমে উমরার, অতঃপর হাজ্জের
তালবিয়াহ পাঠ শুরু করেন।
লোকেরাও রাসূলুল্লাহ সা. এর অনুসরণে হাজ্জের সাথে উমরাহ যুক্ত করে তামাত্তু করেছে। কতক
লোকেরা কুরবানীর পশু সাথে নিয়েছিল, আর কতকের
কুরবানীর পশু ছিল না। রাসূলুল্লাহ সা. মক্কাতে উপনীত হয়ে লোকদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু আছে, হাজ্জ
শেষ না করা পর্যন্ত তাদের জন্য (সাময়িকভাবে) নিষিদ্ধ কোন জিনিস হালাল হবে না। আর তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু নেই, তারা যেন
বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করে মাথার চুল খাটো করার পর
ইহরাম খুলে ফেলে।
অতঃপর তারা পুনরায় হাজ্জের জন্য ইহরাম
বাঁধবে এবং কুরবানী করবে। কোন ব্যক্তি কুরবানীর
পশু না পেলে হাজ্জ চলাকালীন সময়ে তিনদিন এবং বাড়িতে ফেরার পর সাতদিন সওম পালন
করবে। রাসূলুল্লাহ সা. মক্কায়
পৌছে প্রথমে রুকনে (হাজারে আসওয়াদ) স্পর্শ করলেন, অতঃপর
বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করলেন-তিন চক্কর সামান্য দ্রুতগতিতে এবং চার চক্কর
ধীরগতিতে।
বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ সমাপ্ত করে তিনি
মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করলেন। অতঃপর
তিনি সাফা পাহাড়ে এলেন এবং সাফা-মারওয়াহ পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাতবার সাঈ করলেন। এরপর তিনি কোন জিনিস হালাল করেননি, যা হারাম
হয়েছিল (ইহরামের কারণে অর্থাৎ তিনি ইহরামমুক্ত হননি) যে পর্যন্ত না হাজ্জ সমাপন
করেন এবং কুরবানীর দিন নিজের পশু কুরবানী না করেন এবং কাবা ঘর-এর তাওয়াফ করেছেন। অতঃপর যে সব জিনিস হারাম ছিল, তা তার জন্য হালাল হয়ে গেল (অর্থাৎ তিনি ইহরাম খুললেন) আর যেসব লোক সাথে
করে কুরবানীর পশু এনেছিল, তারাও রাসূলুল্লাহ সা. এর অনুরূপ
করেছিল। (মুসলিম)
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى رَضِيَ
اللهُ عَنهُ قَالَ اعْتَمَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَطَافَ بِالْبَيْتِ وَصَلَّى خَلْفَ الْمَقَامِ رَكْعَتَيْنِ
وَمَعَهُ مَنْ يَسْتُرُهُ مِنْ النَّاسِ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ أَدَخَلَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْكَعْبَةَ قَالَ لاَ
আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সা.
উমরাহ করতে গিয়ে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করলেন ও মাকামে ইব্রাহীমের
পিছনে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন এবং তাঁর সাথে এ সকল সাহাবী ছিলেন যারা তাঁকে
লোকদের হতে আড়াল করে ছিলেন।
আল্লাহর রাসূল সা. কাবার ভিতরে প্রবেশ করেছিলেন কি-না, এক ব্যক্তি আবু আওফা রা. এর নিকট তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, না। (বুখারী)
عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يَبِيتُ
بِذِي طُوًى بَيْنَ الثَّنِيَّتَيْنِ ثُمَّ يَدْخُلُ مِنْ الثَّنِيَّةِ الَّتِي
بِأَعْلَى مَكَّةَ وَكَانَ إِذَا قَدِمَ مَكَّةَ حَاجًّا أَوْ مُعْتَمِرًا لَمْ
يُنِخْ نَاقَتَهُ إِلاَّ عِنْدَ بَابِ الْمَسْجِدِ ثُمَّ يَدْخُلُ فَيَأْتِي
الرُّكْنَ الأَسْوَدَ فَيَبْدَأُ بِهِ ثُمَّ يَطُوفُ سَبْعًا ثَلاَثًا سَعْيًا
وَأَرْبَعًا مَشْيًا ثُمَّ يَنْصَرِفُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ يَنْطَلِقُ
قَبْلَ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى مَنْزِلِهِ فَيَطُوفُ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ
وَكَانَ إِذَا صَدَرَ عَنْ الْحَجِّ أَوْ الْعُمْرَةِ أَنَاخَ بِالْبَطْحَاءِ
الَّتِي بِذِي الْحُلَيْفَةِ الَّتِي كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ يُنِيخُ بِهَا
নাফি রাহি. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে উমার রা. দু’পাহাড়ের মধ্যস্থিত
যু-তুয়া নামক স্থানে রাত যাপন করতেন। এরপর
মক্কার উঁচু গিরিপথের দিক হতে প্রবেশ করতেন। হাজ্জ
বা উমরাহ আদায়ের জন্য মক্কা আসলে তিনি মসজিদে
হারামের দরজার সামনে ব্যতীত কোথাও উট বসাতেন না। অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করে হাজারে আসওয়াদের কাছে আসতেন এবং সেখান হতে তাওয়াফ
আরম্ভ করতেন এবং সাত চক্কর তাওয়াফ করতেন। তিনবার
দ্রুতবেগে আর চারবার স্বাভাবিক গতিতে। এরপর
ফিরে এসে দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং নিজের মানযিলে ফিরে যাওয়ার আগে
সাফা-মারওয়ার মধ্যে সায়ী করতেন। আর যখন
হাজ্জ বা উমরাহ হতে ফিরতেন তখন যুল-হুলাইফা উপত্যকার
বাতহা নামক স্থানে অবতরণ করতেন, যেখানে নবী সা. অবতরণ
করেছিলেন। (বুখারী)
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ طَافَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم بِالْبَيْتِ عَلَى بَعِيرٍ كُلَّمَا أَتَى الرُّكْنَ أَشَارَ
إِلَيْهِ بِشَيْءٍ كَانَ عِنْدَهُ وَكَبَّرَ
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সা. উটের পিঠে আরোহণ করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন, যখনই তিন হাজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন তখনই কোন কিছুর দ্বারা তার দিকে
ইঙ্গিত করতেন এবং তাকবীর বলতেন। (বুখারী)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ قَالَ
لَمْ أَرَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَمْسَحُ مِنَ الْبَيْتِ
إِلاَّ الرُّكْنَيْنِ الْيَمَانِيَيْنِ .
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল ইয়ামানী
রুকন দু’টিই স্পর্শ করতে দেখেছি।(মুসলিম)
রমলঃ
عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا طَافَ فِي
الْحَجِّ أَوْ الْعُمْرَةِ أَوَّلَ مَا يَقْدَمُ سَعَى ثَلاَثَةَ أَطْوَافٍ
وَمَشَى أَرْبَعَةً ثُمَّ سَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ يَطُوفُ بَيْنَ الصَّفَا
وَالْمَرْوَةِ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সা. মক্কায় উপনীত হয়ে হাজ্জ বা উমরাহ উভয় অবস্থায় সর্বপ্রথম যে তাওয়াফ করতেন, তার প্রথম
তিন চক্করে রামল করতেন এবং পরবর্তী চার চক্করে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চলতেন। তাওয়াফ শেষে দু’রাকআত সালাত আদায় করে সাফা ও মারওয়ায় সাঈ
করতেন। (বুখারী)
মাকামে ইব্রাহীমের নিকট সালাত আদায়ঃ
عَنْ عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ قَالَ سَأَلْنَا
ابْنَ عُمَرَ عَنْ رَجُلٍ طَافَ بِالْبَيْتِ الْعُمْرَةَ وَلَمْ يَطُفْ بَيْنَ
الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ أَيَأْتِي امْرَأَتَهُ فَقَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ فَطَافَ بِالْبَيْتِ
سَبْعًا وَصَلَّى خَلْفَ الْمَقَامِ رَكْعَتَيْنِ وَطَافَ بَيْنَ الصَّفَا
وَالْمَرْوَةِ صلى الله عليه وسلموَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ
حَسَنَةٌ
আমর ইবনে দ্বীনার রাহি. বলেনঃ আমরা ইবনে উমার রা. কে এক ব্যক্তি
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম-যে ব্যক্তি উমরাহর ন্যায় বাইতুল্লাহর ত্বওয়াফ করেছে কিন্তু
সাফা-মারওয়ায় সাঈ করেনি, সে কি তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করতে পারবে?
তিনি জবাব দিলেন, নবী সা. এসে সাতবার
বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন, মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দু’রাকআত
সালাত আদায় করেছেন আর সাফা-মারওয়ায় সাঈ করেছেন। তোমাদের জন্যে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (বুখারী)
সায়ীঃ
عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ قَالَ سَأَلْنَا
ابْنَ عُمَرَ عَنْ رَجُلٍ طَافَ بِالْبَيْتِ فِي عُمْرَةٍ وَلَمْ يَطُفْ بَيْنَ
الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ أَيَأْتِي امْرَأَتَهُ فَقَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَطَافَ بِالْبَيْتِ سَبْعًا وَصَلَّى خَلْفَ
الْمَقَامِ رَكْعَتَيْنِ فَطَافَ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ سَبْعًا (لَقَدْ
كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ(
আমর ইবনে দ্বীনার রাহি. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ইবনে উমার রা.এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম,
কোন ব্যক্তি উমরাহ করতে গিয়ে শুধু
বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করে, আর সাফা ও মারওয়া সাঈ না করে,
তার পক্ষে কি স্ত্রী সহবাস বৈধ হবে? তখন তিনি
বললেন, নবী সা. উপনীত হয়ে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ সাত চক্করে
সমাধা করে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন, এরপরে সাত চক্করে সাফা ও মারওয়া সায়ী করলেন। (এতটুকু বলে ইবনে উমার রা. সূরা আল আহযাবের ২১ নম্বর আয়াত
তেলাওয়াত করলেন) ‘‘তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’’। (বুখারী)
عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ،
أَنَّهُ قَالَ قُلْتُ لِعَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ وَأَنَا يَوْمَئِذٍ حَدِيثُ السِّنِّ أَرَأَيْتِ قَوْلَ اللَّهِ
تَبَارَكَ وَتَعَالَى (إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ
فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ
بِهِمَا) فَمَا أُرَى عَلَى أَحَدٍ شَيْئًا أَنْ لاَ يَطَّوَّفَ بِهِمَا.
فَقَالَتْ عَائِشَةُ كَلاَّ لَوْ كَانَتْ كَمَا تَقُولُ كَانَتْ فَلاَ جُنَاحَ
عَلَيْهِ أَنْ لاَ يَطَّوَّفَ بِهِمَا، إِنَّمَا أُنْزِلَتْ هَذِهِ الآيَةُ فِي
الأَنْصَارِ، كَانُوا يُهِلُّونَ لِمَنَاةَ، وَكَانَتْ مَنَاةُ حَذْوَ قُدَيْدٍ،
وَكَانُوا يَتَحَرَّجُونَ أَنْ يَطُوفُوا بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ، فَلَمَّا
جَاءَ الإِسْلاَمُ سَأَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ
ذَلِكَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ (إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ
اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ
يَطَّوَّفَ بِهِمَا)
উরওয়া রাহি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সা. এর সহধর্মিনী আয়িশা রা. কে
জিজ্ঞাসা করলাম আর সে সময় আমি অল্প বয়স্ক ছিলাম। মহান আল্লাহর বাণীঃ (إِنَّ
الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ
اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا “সাফা এবং মারওয়া
পর্বতদ্বয় আল্লাহ তাআলার নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে বায়তুল্লাহর হাজ্জ বা উমরা
ইচ্ছা করে তার জন্য উভয় পর্বতের মধ্যে সায়ী করাতে কোন দোষ নেই।”) এ আয়াত সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? আমি মনে করি উক্ত দুই পর্বত সায়ী না করণের কোন ব্যক্তির উপর গুনাহ বর্তাবে
না। তখন আয়িশা রা. বললেন, কখনই এরূপ নয়। তুমি
যা বলছ যদি তাই হতো তা হলে বলা হতো এভাবে فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ لاَ يَطَّوَّفَ بِهِمَا “উভয়
পর্বত তাওয়াফ না করলে কোন গুনাহ বর্তাবে না।” বস্তুত এই আয়াত নাযিল হয়েছে আনসারদের শানে। তারা ‘মানাত’ এর পূজা করত। আর ‘মানাত’
ছিল কুদায়েদের পথে অবস্থিত।
আনসারগণ সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সায়ী করা মন্দ জানতো। ইসলামের আগমনের পর তারা এ সম্পর্কে রাসূল সা. কে জিজ্ঞাসা করল। তখন আল্লাহ উক্ত আয়াত নাযিল করেন। (বুখারী)
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا
قَالَ إِنَّمَا سَعَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَيْتِ
وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ لِيُرِيَ الْمُشْرِكِيْنَ قُوَّتَهُ.
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সা.
বাইতুল্লাহ এবং সাফা ও মারওয়া-এর মধ্যখানে এ জন্যই সায়ী করেছিলেন, যেন মুশরিকদেরকে তাঁর শৌর্য-বীর্য দেখাতে পারেন। (বুখারী)
মাথা মুন্ডনঃ
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَّةَ أَمَرَ أَصْحَابَهُ أَنْ يَطُوفُوا بِالْبَيْتِ
وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ ثُمَّ يَحِلُّوا وَيَحْلِقُوا أَوْ يُقَصِّرُوا
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সা. মক্কায়
এসে সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন, তারা যেন বাইতুল্লাহ এবং সাফা
ও মারওয়ার তাওয়াফ করে। এরপর
মাথার চুল মুড়িয়ে বা চুল ছেঁটে হালাল হয়ে যায়। (বুখারী)
عَنْ مُعَاوِيَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ أَنَّهُ قَصَّرَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِشْقَصٍ فِي عُمْرَةٍ عَلَى الْمَرْوَةِ
মুআবিয়া রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী সা. এর উমরায় তাঁর চুল তীরের ফলা দিয়ে কেটেছেন মারওয়া পাহাড়ের
উপরে। (নাসায়ী)
এক হাদীসে পুরো উমরাহঃ
عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ،
قَالَ دَخَلْنَا عَلَى جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ فَسَأَلَ عَنِ الْقَوْمِ،
حَتَّى انْتَهَى إِلَىَّ فَقُلْتُ أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ.
فَأَهْوَى بِيَدِهِ إِلَى رَأْسِي فَنَزَعَ زِرِّي الأَعْلَى ثُمَّ نَزَعَ زِرِّي
الأَسْفَلَ ثُمَّ وَضَعَ كَفَّهُ بَيْنَ ثَدْيَىَّ وَأَنَا يَوْمَئِذٍ غُلاَمٌ
شَابٌّ فَقَالَ مَرْحَبًا بِكَ يَا ابْنَ أَخِي سَلْ عَمَّا شِئْتَ .
فَسَأَلْتُهُ وَهُوَ أَعْمَى وَحَضَرَ وَقْتُ الصَّلاَةِ فَقَامَ فِي نِسَاجَةٍ
مُلْتَحِفًا بِهَا كُلَّمَا وَضَعَهَا عَلَى مَنْكِبِهِ رَجَعَ طَرَفَاهَا
إِلَيْهِ مِنْ صِغَرِهَا وَرِدَاؤُهُ إِلَى جَنْبِهِ عَلَى الْمِشْجَبِ فَصَلَّى
بِنَا فَقُلْتُ أَخْبِرْنِي عَنْ حَجَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ . فَقَالَ بِيَدِهِ فَعَقَدَ تِسْعًا فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَثَ تِسْعَ سِنِينَ لَمْ يَحُجَّ ثُمَّ أَذَّنَ فِي
النَّاسِ فِي الْعَاشِرَةِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ حَاجٌّ فَقَدِمَ الْمَدِينَةَ بَشَرٌ كَثِيرٌ كُلُّهُمْ يَلْتَمِسُ أَنْ
يَأْتَمَّ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَعْمَلَ مِثْلَ
عَمَلِهِ فَخَرَجْنَا مَعَهُ حَتَّى أَتَيْنَا ذَا الْحُلَيْفَةِ فَوَلَدَتْ
أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ مُحَمَّدَ بْنَ أَبِي بَكْرٍ فَأَرْسَلَتْ إِلَى
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ أَصْنَعُ قَالَ
اغْتَسِلِي وَاسْتَثْفِرِي بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِي. فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتَّى
إِذَا اسْتَوَتْ بِهِ نَاقَتُهُ عَلَى الْبَيْدَاءِ نَظَرْتُ إِلَى مَدِّ بَصَرِي
بَيْنَ يَدَيْهِ مِنْ رَاكِبٍ وَمَاشٍ وَعَنْ يَمِينِهِ مِثْلَ ذَلِكَ وَعَنْ يَسَارِهِ
مِثْلَ ذَلِكَ وَمِنْ خَلْفِهِ مِثْلَ ذَلِكَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ أَظْهُرِنَا وَعَلَيْهِ يَنْزِلُ الْقُرْآنُ وَهُوَ
يَعْرِفُ تَأْوِيلَهُ وَمَا عَمِلَ بِهِ مِنْ شَىْءٍ عَمِلْنَا بِهِ فَأَهَلَّ
بِالتَّوْحِيدِ لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ
لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ.
وَأَهَلَّ النَّاسُ بِهَذَا الَّذِي يُهِلُّونَ بِهِ فَلَمْ يَرُدَّ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ شَيْئًا مِنْهُ وَلَزِمَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَلْبِيَتَهُ قَالَ جَابِرٌ رَضِيَ
اللهُ عَنهُ لَسْنَا نَنْوِي إِلاَّ الْحَجَّ لَسْنَا
نَعْرِفُ الْعُمْرَةَ حَتَّى إِذَا أَتَيْنَا الْبَيْتَ مَعَهُ اسْتَلَمَ
الرُّكْنَ فَرَمَلَ ثَلاَثًا وَمَشَى أَرْبَعًا ثُمَّ نَفَذَ إِلَى مَقَامِ
إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَقَرَأَ ( وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ
إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى) فَجَعَلَ الْمَقَامَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْبَيْتِ
فَكَانَ أَبِي يَقُولُ وَلاَ أَعْلَمُهُ ذَكَرَهُ إِلاَّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقْرَأُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ ( قُلْ هُوَ
اللَّهُ أَحَدٌ) وَ ( قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ) ثُمَّ رَجَعَ إِلَى
الرُّكْنِ فَاسْتَلَمَهُ ثُمَّ خَرَجَ مِنَ الْبَابِ إِلَى الصَّفَا فَلَمَّا
دَنَا مِنَ الصَّفَا قَرَأَ ( إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ
اللَّهِ) أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللَّهُ بِهِ. فَبَدَأَ بِالصَّفَا فَرَقِيَ
عَلَيْهِ حَتَّى رَأَى الْبَيْتَ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَوَحَّدَ اللَّهَ
وَكَبَّرَهُ وَقَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ
الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كَلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ
اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ
وَحْدَهُ. ثُمَّ دَعَا بَيْنَ ذَلِكَ قَالَ مِثْلَ هَذَا ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ
نَزَلَ إِلَى الْمَرْوَةِ حَتَّى إِذَا انْصَبَّتْ قَدَمَاهُ فِي بَطْنِ الْوَادِي
سَعَى حَتَّى إِذَا صَعِدَتَا مَشَى حَتَّى أَتَى الْمَرْوَةَ فَفَعَلَ عَلَى
الْمَرْوَةِ كَمَا فَعَلَ عَلَى الصَّفَا حَتَّى إِذَا كَانَ آخِرُ طَوَافِهِ
عَلَى الْمَرْوَةِ فَقَالَ لَوْ أَنِّي
اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِي مَا اسْتَدْبَرْتُ لَمْ أَسُقِ الْهَدْىَ
وَجَعَلْتُهَا عُمْرَةً فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ لَيْسَ مَعَهُ هَدْىٌ فَلْيَحِلَّ
وَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَةً. فَقَامَ سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ فَقَالَ
يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلِعَامِنَا هَذَا أَمْ لأَبَدٍ فَشَبَّكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَصَابِعَهُ وَاحِدَةً فِي الأُخْرَى وَقَالَ
دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِي الْحَجِّ مَرَّتَيْنِ لاَ بَلْ لأَبَدٍ أَبَدٍ.
وَقَدِمَ عَلِيٌّ مِنَ الْيَمَنِ بِبُدْنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ فَوَجَدَ فَاطِمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا مِمَّنْ حَلَّ وَلَبِسَتْ
ثِيَابًا صَبِيغًا وَاكْتَحَلَتْ فَأَنْكَرَ ذَلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَتْ إِنَّ
أَبِي أَمَرَنِي بِهَذَا . قَالَ فَكَانَ عَلِيٌّ يَقُولُ بِالْعِرَاقِ
فَذَهَبْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحَرِّشًا
عَلَى فَاطِمَةَ لِلَّذِي صَنَعَتْ مُسْتَفْتِيًا لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا ذَكَرَتْ عَنْهُ فَأَخْبَرْتُهُ أَنِّي
أَنْكَرْتُ ذَلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَ صَدَقَتْ صَدَقَتْ مَاذَا قُلْتَ حِينَ
فَرَضْتَ الْحَجَّ . قَالَ قُلْتُ اللَّهُمَّ إِنِّي أُهِلُّ بِمَا أَهَلَّ بِهِ
رَسُولُكَ . قَالَ فَإِنَّ مَعِيَ الْهَدْىَ فَلاَ تَحِلُّ. قَالَ فَكَانَ
جَمَاعَةُ الْهَدْىِ الَّذِي قَدِمَ بِهِ عَلِيٌّ مِنَ الْيَمَنِ وَالَّذِي أَتَى
بِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِائَةً قَالَ فَحَلَّ
النَّاسُ كُلُّهُمْ وَقَصَّرُوا إِلاَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ وَمَنْ كَانَ مَعَهُ هَدْىٌ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ التَّرْوِيَةِ
تَوَجَّهُوا إِلَى مِنًى فَأَهَلُّوا بِالْحَجِّ وَرَكِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَصَلَّى بِهَا الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْمَغْرِبَ
وَالْعِشَاءَ وَالْفَجْرَ ثُمَّ مَكَثَ قَلِيلاً حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ
وَأَمَرَ بِقُبَّةٍ مِنْ شَعَرٍ تُضْرَبُ لَهُ بِنَمِرَةَ فَسَارَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلاَ تَشُكُّ قُرَيْشٌ إِلاَّ أَنَّهُ وَاقِفٌ
عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ كَمَا كَانَتْ قُرَيْشٌ تَصْنَعُ فِي
الْجَاهِلِيَّةِ فَأَجَازَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى
أَتَى عَرَفَةَ فَوَجَدَ الْقُبَّةَ قَدْ ضُرِبَتْ لَهُ بِنَمِرَةَ فَنَزَلَ بِهَا
حَتَّى إِذَا زَاغَتِ الشَّمْسُ أَمَرَ بِالْقَصْوَاءِ فَرُحِلَتْ لَهُ فَأَتَى
بَطْنَ الْوَادِي فَخَطَبَ النَّاسَ وَقَالَ إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ
حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي
بَلَدِكُمْ هَذَا أَلاَ كُلُّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ
قَدَمَىَّ مَوْضُوعٌ وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ وَإِنَّ أَوَّلَ دَمٍ
أَضَعُ مِنْ دِمَائِنَا دَمُ ابْنِ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ كَانَ مُسْتَرْضِعًا
فِي بَنِي سَعْدٍ فَقَتَلَتْهُ هُذَيْلٌ وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ
وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ
فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ
أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ
اللَّهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لاَ يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا
تَكْرَهُونَهُ . فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ
مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
وَقَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ
كِتَابَ اللَّهِ . وَأَنْتُمْ تُسْأَلُونَ عَنِّي فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُونَ.
قَالُوا نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ . فَقَالَ
بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى
النَّاسِ اللَّهُمَّ اشْهَدِ اللَّهُمَّ اشْهَدْ. ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ
أَذَّنَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعَصْرَ
وَلَمْ يُصَلِّ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ثُمَّ رَكِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَتَى الْمَوْقِفَ فَجَعَلَ بَطْنَ نَاقَتِهِ
الْقَصْوَاءِ إِلَى الصَّخَرَاتِ وَجَعَلَ حَبْلَ الْمُشَاةِ بَيْنَ يَدَيْهِ
وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ
وَذَهَبَتِ الصُّفْرَةُ قَلِيلاً حَتَّى غَابَ الْقُرْصُ وَأَرْدَفَ أُسَامَةَ
خَلْفَهُ وَدَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ
شَنَقَ لِلْقَصْوَاءِ الزِّمَامَ حَتَّى إِنَّ رَأْسَهَا لَيُصِيبُ مَوْرِكَ
رَحْلِهِ وَيَقُولُ بِيَدِهِ الْيُمْنَى أَيُّهَا النَّاسُ السَّكِينَةَ
السَّكِينَةَ. كُلَّمَا أَتَى حَبْلاً مِنَ الْحِبَالِ أَرْخَى لَهَا قَلِيلاً
حَتَّى تَصْعَدَ حَتَّى أَتَى الْمُزْدَلِفَةَ فَصَلَّى بِهَا الْمَغْرِبَ
وَالْعِشَاءَ بِأَذَانٍ وَاحِدٍ وَإِقَامَتَيْنِ وَلَمْ يُسَبِّحْ بَيْنَهُمَا
شَيْئًا ثُمَّ اضْطَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى
طَلَعَ الْفَجْرُ وَصَلَّى الْفَجْرَ حِينَ تَبَيَّنَ لَهُ الصُّبْحُ - بِأَذَانٍ
وَإِقَامَةٍ ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتَّى أَتَى الْمَشْعَرَ الْحَرَامَ
فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَدَعَاهُ وَكَبَّرَهُ وَهَلَّلَهُ وَوَحَّدَهُ فَلَمْ
يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى أَسْفَرَ جِدًّا فَدَفَعَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ
وَأَرْدَفَ الْفَضْلَ بْنَ عَبَّاسٍ وَكَانَ رَجُلاً حَسَنَ الشَّعْرِ أَبْيَضَ وَسِيمًا
فَلَمَّا دَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّتْ بِهِ
ظُعُنٌ يَجْرِينَ فَطَفِقَ الْفَضْلُ يَنْظُرُ إِلَيْهِنَّ فَوَضَعَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ عَلَى وَجْهِ الْفَضْلِ
فَحَوَّلَ الْفَضْلُ وَجْهَهُ إِلَى الشِّقِّ الآخَرِ يَنْظُرُ فَحَوَّلَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ مِنَ الشِّقِّ الآخَرِ عَلَى
وَجْهِ الْفَضْلِ يَصْرِفُ وَجْهَهُ مِنَ الشِّقِّ الآخَرِ يَنْظُرُ حَتَّى أَتَى
بَطْنَ مُحَسِّرٍ فَحَرَّكَ قَلِيلاً ثُمَّ سَلَكَ الطَّرِيقَ الْوُسْطَى الَّتِي
تَخْرُجُ عَلَى الْجَمْرَةِ الْكُبْرَى حَتَّى أَتَى الْجَمْرَةَ الَّتِي عِنْدَ
الشَّجَرَةِ فَرَمَاهَا بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ مَعَ كُلِّ حَصَاةٍ مِنْهَا
مِثْلِ حَصَى الْخَذْفِ رَمَى مِنْ بَطْنِ الْوَادِي ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَى
الْمَنْحَرِ فَنَحَرَ ثَلاَثًا وَسِتِّينَ بِيَدِهِ ثُمَّ أَعْطَى عَلِيًّا
فَنَحَرَ مَا غَبَرَ وَأَشْرَكَهُ فِي هَدْيِهِ ثُمَّ أَمَرَ مِنْ كُلِّ بَدَنَةٍ
بِبَضْعَةٍ فَجُعِلَتْ فِي قِدْرٍ فَطُبِخَتْ فَأَكَلاَ مِنْ لَحْمِهَا وَشَرِبَا
مِنْ مَرَقِهَا ثُمَّ رَكِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَفَاضَ
إِلَى الْبَيْتِ فَصَلَّى بِمَكَّةَ الظُّهْرَ فَأَتَى بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ
يَسْقُونَ عَلَى زَمْزَمَ فَقَالَ انْزِعُوا بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَوْلاَ
أَنْ يَغْلِبَكُمُ النَّاسُ عَلَى سِقَايَتِكُمْ لَنَزَعْتُ مَعَكُمْ.
فَنَاوَلُوهُ دَلْوًا فَشَرِبَ مِنْهُ .
জাফর ইবনে মুহাম্মাদ রাহি. থেকে তার পিতার
সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. এর কাছে গেলাম। তিনি সকলের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। অবশেষে
আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি
বললাম, আমি মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হুসায়ন। অতএব তিনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আমার মাথার উপর রাখলেন। তিনি আমার জামার উপর দিকের বোতাম খুললেন। তারপর নিচের
বোতাম খুললেন। অতঃপর তার হাত আমার বুকের মাঝে রাখলেন। আমি তখন যুবক ছিলাম। তিনি
বললেন, হে ভ্রাতুষ্পপুত্ৰ! তোমাকে স্বাগত জানাই, তুমি যা জানতে চাও, জিজ্ঞেস কর। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তখন তিনি
দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ইতিমধ্যে সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেল। তিনি
নিজেকে একটি চাঁদর আবৃত করে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি
যখনই চাঁদরের প্রান্ত নিজ কাঁধের উপর রাখতেন-তা (আকারে) ছোট হবার কারণে নীচে পড়ে
যেত। তার আরেকটি বড় চাঁদর তার পাশেই আলনায় রাখা
ছিল। তিনি আমাদের নিয়ে সালাতের ইমামত করলেন।
অতঃপর আমি বললাম, আপনি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সা. এর হাজ্জ সম্পর্কে অবহিত করুন। জাবির রা. স্বহস্তে নয় সংখ্যার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ
সা. নয় বছর (মদীনায়) অবস্থান করেন এবং এ সময়ের মধ্যে হাজ্জ করেননি। অতঃপর ১০ম বর্ষে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেয়া হল যে, রাসূলুল্লাহ সা. এ বছর হাজ্জে যাবেন। সুতরাং মদীনায় বহু লোকের আগমন হল। তাদের
প্রত্যেকে রাসূলুল্লাহ সা. এর অনুসরণ করতে এবং তার অনুরূপ আমল করতে আগ্রহী ছিল। আমরা তার সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা যখন যুল হুলায়ফাহ নামক স্থানে পৌছলাম-আসমা বিনতে উমায়স রা. মুহাম্মাদ ইবনে
আবু বকরকে প্রসব করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সা. এর
নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন-এখন আমি কী করব? তিনি বললেন,
তুমি গোসল কর, একখণ্ড কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে
নাও এবং ইহরামের পোশাক পরিধান কর।
রাসূলুল্লাহ সা. মসজিদে (দু’রাকাআত) সালাত
আদায় করলেন। অতঃপর ‘কাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীতে আরোহণ করলেন। অতঃপর বায়দা নামক স্থানে তার উষ্ট্রী যখন তাকে নিয়ে সোজা
হয়ে দাঁড়াল-আমি সামনের দিকে যতদূর দৃষ্টি যায়, তাকিয়ে
দেখলাম লোকে লোকারণ্য-কতক সওয়ারীতে, কতক পদব্রজে অগ্রসর
হচ্ছে। ডানদিকে, বাঁদিকে এবং
পিছনেও একই দৃশ্য। রাসূলুল্লাহ
সা. আমাদের মাঝখানে ছিলেন এবং তার উপর কুরআন নাযিল হচ্ছিল। একমাত্র তিনিই এর আসল তাৎপর্য জানেন এবং তিনি যা করতেন, আমরাও তাই করতাম। তিনি
আল্লাহর তাওহীদ সম্বলিত এ তালবিয়াহ পাঠ করলেনঃ
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ
لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ
“আমি তোমার দরবারে হাযির আছি, হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে হাযির, আমি তোমার দরবারে
হাযির, তোমার কোন শারীক নেই, আমি তোমার
দরবারে উপস্থিত। নিশ্চিত সমস্ত প্রশংসা, নিআমাত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব তোমার, তোমার কোন
শারীক নেই।”
লোকেরাও উপরোক্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করল-যা
(আজকাল) পাঠ করা হয়। রাসূলুল্লাহ
সা. এর থেকে বেশি কিছু বলেননি। আর রাসূলুল্লাহ
সা. উপরোক্ত তালবিয়াহ পাঠ করতে থাকলেন। জাবির রা.
বলেন, আমরা হাজ্জ ছাড়া অন্য কিছুর নিয়ম করিনি, আমরা উমরার কথা জানতাম না। অবশেষে
আমরা যখন তার সঙ্গে বায়তুল্লাহয় পৌছলাম-তিনি রুকন (হাজারে আসওয়াদ) স্পর্শ করলেন, অতঃপর সাতবার কাবা ঘর তুওয়াফ করলেন-তিনবার দ্রুতগতিতে এবং চারবার
স্বাভাবিক গতিতে। এরপর তিনি মাকামে
ইবরাহীমে পৌছে এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى “তোমরা ইব্রাহীমের
দাঁড়াবার স্থানকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর।” (আল বাকারাহঃ ১২৫)
তিনি মাকামে ইব্রাহীমকে তার ও বায়তুল্লাহর
মাঝখানে রেখে (দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন)। (জাফার বলেন) আমার পিতা (মুহাম্মদ) বলতেন, আমি যতদূর জানি,
তিনি (জাবির) রাসূলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি দু’রাকাআত সালাতে সূরা কুল হুআল্লাহু আহাদ ও কুল ইয়া
আইয়্যুহাল কাফিরূন পাঠ করেন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সা. হাজারে আসওয়াদের কাছে
প্রত্যাবর্তন করলেন এবং তাতে চুমু খেলেন। অতঃপর
তিনি দরজা দিয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে বের হলেন এবং সাফার নিকটবর্তী হয়ে তিলাওয়াত
করলেনঃ إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ
مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ “নিশ্চয়ই সাফা-মারওয়াহ পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।” (আল
বাকারাহঃ ১৫৮)
এবং আরো বললেনঃ আল্লাহ তাআলা যে পাহাড়ের
উল্লেখ করে আরম্ভ করেছেন, আমিও তা দিয়ে আরম্ভ করব। রাসূলুল্লাহ সা. সাফা পাহাড় থেকে শুরু করলেন, অতঃপর এতটা উপরে আরোহণ করলেন যে, বায়তুল্লাহ দেখতে
পেলেন। তিনি ক্বিলামুখী হলেন, আল্লাহর একত্ব ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করলেন এবং বললেনঃ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ
لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كَلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ
اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ
“আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক, তার কোন শারীক নেই। তার জন্য রাজত্ব এবং তার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর শক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি
এক, তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন।”
তিনি এ দুআ পড়লেন এবং তিনি অনুরূপ তিনবার
বলেছেন। অতঃপর তিনি নেমে মারওয়াহ পাহাড়ের দিকে
অগ্রসর হলেন-যাবৎ না তার পা মুবারক উপত্যকার সমতল ভূমিতে গিয়ে ঠেকল। তিনি দ্রুত চললেন যতক্ষণ যাবৎ না উপত্যকা অতিক্রম করলেন। মারওয়াহ পাহাড়ে উঠার সময় হেঁটে উঠলেন, অতঃপর এখানেও তাই করলেন যা তিনি সাফা পাহাড়ে করেছিলেন। সর্বশেষ তওয়াফে যখন তিনি মারওয়াহ পাহাড়ে পৌছলেন, তখন (লোকদের সম্বোধন করে) বললেনঃ যদি আমি আগেই ব্যাপারটি বুঝতে পারতাম,
তাহলে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না এবং (হাজ্জের) ইহরামকে
উমরায় পরিবর্তন করতাম। অতএব
তোমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে যেন ইহরাম
খুলে ফেলে এবং একে উমরায় পরিণত করে। এ সময়
সুরাকাহ ইবনে মালিক ইবনে জুশুম রা. দাঁড়িয়ে বললেন, হে
আল্লাহর রাসূল! এ ব্যবস্থা কি আমাদের এ বছরের জন্য, না
সৰ্বকালের জন্য? রাসূলুল্লাহ সা. নিজ হাতের আঙ্গুলগুলো
পরস্পরের ফাঁকে ঢুকালেন এবং দু’বার বললেন, উমরাহ হাজ্জের মধ্যে প্রবেশ করেছে। আরও
বললেন, না বরং সর্বকালের জন্য, সর্বকালের জন্য।
এ সময় আলী রা. ইয়ামান থেকে নবী সা. এর জন্য
কুরবানীর পশু নিয়ে এলেন এবং যারা ইহরাম খুলে ফেলেছে, ফাতিমাহ রা. কে তাদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলেন। তিনি রঙ্গীন কাপড় পরিহিতা ছিলেন এবং চোখে সুরমা
দিয়েছিলেন। আলী রা. তা অপছন্দ করলেন। ফাতিমাহ রা. বললেন, আমার পিতা আমাকে
এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাবী বলেন, আলী রা.
ইরাকে থাকতেন, অতএব ফাতিমাহ রা. যা করেছেন তার প্রতি
অসন্তুষ্ট হয়ে আমি তাকে জানালাম যে, আমি তার এ কাজ অপছন্দ
করেছি। তিনি যা উল্লেখ করেছেন, সে বিষয়ে জানার জন্য আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে গেলাম। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, ফাতিমাহ সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। তুমি হাজ্জের ইহরাম বাঁধার সময় কী বলেছিলে? আলী রা. বললেন, আমি বলেছি, হে
আল্লাহ! আমি ইহরাম বাঁধলাম, যেরূপ ইহরাম বেঁধেছেন আপনার রাসূল। রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ তোমার সঙ্গে হাদী
(কুরবানীর পশু) আছে, অতএব তুমি ইহরাম খুলবে না।
জাবির রা. বলেন, আলী রা. ইয়ামান থেকে যে পশুপাল নিয়ে এসেছেন এবং নবী সা. নিজের সঙ্গে করে
যে সব পশু নিয়ে এসেছিলেন, সর্বসাকুল্যে এর সংখ্যা দাঁড়ালো
একশত। অতএব নবী সা. এবং যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু
ছিল, তারা ব্যতীত আর সকলেই ইহরাম খুলে ফেললেন এবং চুল কাটলেন। অতঃপর যখন তালবিয়ার দিন (৮ যিলহাজ্জ) আসলো, লোকেরা পুনরায় ইহরাম বাঁধলো এবং মিনার দিকে রওনা হল। আর রাসূলুল্লাহ সা. সওয়ার হয়ে গেলেন এবং সেখানে যুহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজরের
সালাত আদায় করলেন। অতঃপর
তিনি সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন এবং নামিরাহ নামক
স্থানে গিয়ে তার জন্য একটি তাবু খাটানোর নির্দেশ দিলেন এবং নিজেও রওনা হয়ে গেলেন।
কুরাইশগণ নিঃসন্দেহ ছিল যে, নবী সা. মাশআরুল হারামের কাছে অবস্থান করবেন, যেমন জাহিলী যুগে কুরাইশগণ
করত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা. সামনে অগ্রসর হলেন, তারপরে আরাফায় পৌছলেন এবং দেখতে পেলেন নামিরায় তার জন্য তাবু খাটানো
হয়েছে। তিনি এখানে অবতরণ করলেন। অতঃপর যখন সূর্য ঢলে পড়ল, তখন তিনি
তার কাসওয়া (নামক উষ্ট্রী)-কে প্রস্তুত করার নির্দেশ দিলেন। তার পিঠে হাওদা লাগানো হল। তখন তিনি বাতুনে ওয়াদীতে এলেন এবং লোকদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, “তোমাদের রক্ত ও
তোমাদের সম্পদ তোমাদের জন্য হারাম যেমন তা হারাম তোমাদের এ দিনে, তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের এ শহরে।” “সাবধান জাহিলী যুগের সকল ব্যাপার (অপসংস্কৃতি) আমার উভয় পায়ের নীচে। জাহিলী যুগের রক্তের দাবিও বাতিল হল। আমি সর্বপ্রথম যে রক্তপণ বাতিল করছি, তা হল আমাদের
বংশের রবীআহ ইবনে হারিসের পুত্রের রক্তপণ। সে শিশু অবস্থায় বানু সাদ এ দুগ্ধপোষ্য ছিল, তখন
হুযায়ল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে।” “জাহিলী যুগের সুদও বাতিল হল। আমি প্রথম যে সুদ বাতিল করছি তা হল আমাদের বংশের আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের
সুদ। তার সমস্ত সুদ বাতিল হল।”
“তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয়
কর। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানাত হিসেবে গ্রহণ
করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপরে তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে আশ্রয় না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ
কর। যদি তারা এরূপ করে, তবে হালকাভাবে প্রহার কর। আর
তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছদের হক রয়েছে।”
“আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে
যাচ্ছি-যা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।”
“আমার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হলে, তখন তোমরা কী বলবে?” তারা বলল, “আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি (আল্লাহর বাণী)
পৌছিয়েছেন, আপনার হক আদায় করেছেন এবং সদুপদেশ দিয়েছেন।” অতঃপর তিনি তর্জনী আকাশের দিকে তুলে লোকদের ইশারা করে
বললেন, “ইয়া আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকঅ” তিনবার
এরূপ বললেন।
অতঃপর (মুয়াযযিন) আযান দিলেন ও ইকামাত দিলেন
এবং রাসূলুল্লাহ সা. যুহরের সালাত আদায় করলেন। এরপর ইকামাত দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সা. আসরের সালাত আদায় করলেন। তিনি এ দু’সালাতের মাঝখানে অন্য কোন সালাত আদায় করেননি।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সা. সওয়ার হয়ে মাওকিফ বা
অবস্থানস্থলে এলেন, তার কাসওয়া উটের পেট পাথরের স্তুপের দিকে
করে দিলেন এবং লোকদের একত্র হবার জায়গা সামনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনি এভাবে উকুফ করলেন। হলদে আভা কিছু দূরীভূত হল, এমনকি
সূর্য গোলক সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেল। তিনি উসামাহ রা. কে তার বাহনের পিছন দিকে বসালেন এবং কাসওয়ার নাকের দড়ি
সজোরে টান দিলেন-ফলে তার মাথা মাওরিক (সওয়ারী ক্লান্তি অবসাদের জন্য যাতে পা
রাখে) স্পর্শ করল। তিনি ডান হাতের ইশারায় বললেন, হে জনমণ্ডলী! ধীরে সুস্থে, ধীরে সুস্থে অগ্রসর হও। যখনই তিনি বালুর স্তুপের নিকট পৌছতেন, কাসওয়ার নাকের রশি কিছুটা ঢিল দিতেন যাতে সে উপরদিকে উঠতে পারে।
এভাবে তিনি মুযদালিফায় পৌছলেন এবং এখানে একই
আযানে ও দু’ইকামাতে মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করলেন। এ সালাতের মাঝখানে অন্য কোন নফল সালাত আদায় করেননি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সা. শুয়ে পড়লেন। যাবৎ
না ফজরের ওয়াক্ত হল। অতঃপর ভোর হয়ে গেলে
তিনি আযান ও ইকামাত সহ ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর কাসওয়ার পিঠে আরোহণ করে “মাশ’আরুল হারাম” নামক স্থানে আসলেন। এখানে তিনি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নিকট দু’আ করলেন, তার মহত্ব বর্ণনা করলেন, কালিমাহ তাওহীদ পড়লেন এবং
তার একত্ব ঘোষণা করলেন। দিনের
আলো যথেষ্ট উজ্জ্বল না হওয়া পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে এরূপ করতে থাকলেন।
সূর্যোদয়ের পূর্বে তিনি আবার রওনা করছিলেন
এবং ফাযল ইবনে আব্বাস রা. সওয়ারীতে তার পিছনে বসলেন। তিনি ছিলেন যুবক এবং তার মাথার চুল ছিল অত্যন্ত সুন্দর। রাসূলুল্লাহ সা. যখন অগ্রসর হলেন-পাশাপাশি একদল মহিলাও
যাচ্ছিল। ফাযল রা. তাদের দিকে তাকাতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সা. নিজের হাত ফাযলের চেহারার
উপর রাখলেন এবং তিনি তার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন এবং ফাযল রা. অপরদিক দেখতে
লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সা. পুনরায়
অন্যদিক হতে ফাযল রা. এর মুখমণ্ডলে হাত রাখলেন। তিনি আবার অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলেন। তিনি ‘বাতুনে মুহাসসাব’ নামক স্থানে পৌছলেন এবং সওয়ারীর গতি কিছুটা দ্রুত
করলেন। তিনি মধ্যপথে অগ্রসর হলেন-যা জামরাতুল
কুবরার দিকে বেরিয়ে গেছে। তিনি
বৃক্ষের নিকটের জামরায় এলেন এবং নিচের খালি জায়গায় দাড়িয়ে এখানে সাতটি কংকর
নিক্ষেপ করলেন এবং প্রত্যেকবার ’আল্লাহু আকবার’ বললেন। অতঃপর সেখান থেকে কুরবানীর স্থানে এলেন এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি পশু যাবাহ
করলেন। তিনি কুরবানীর পশুতে আলী রা.কেও শারীক করলেন। অতঃপর তিনি প্রতিটি পশুর মাংসের কিছু অংশ নিয়ে একত্রে
রান্না করার নির্দেশ দিলেন। অতএব
তাই করা হল। তারা উভয়ে এ মাংস থেকে খেলেন এবং ঝোল পান
করলেন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সা. সওয়ার হয়ে
বায়তুল্লাহর দিকে রওনা হলেন এবং মক্কায় পৌছে যুহরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর বানু আবদুল মুত্তালিব এর লোকদের কাছে আসলেন, তারা লোকদের যামযামের পানি পান করাচ্ছিল। তিনি বললেন, হে “আবদুল মুত্ত্বালিবের বংশধরগণ! পানি তোল। আমি যদি আশংকা না করতাম যে, পানি পান
করানোর ব্যাপারে লোকেরা তোমাদের পরাভূত করে দিবে, তবে আমি
নিজেও তোমাদের সাথে পানি তুলতাম। তখন
তারা তাকে এক বালতি পানি দিল এবং তিনি তা থেকে কিছু পান করলেন। (মুসলিম)
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ شُعَيْبِ بْنِ
اللَّيْثِ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ جَدِّي، حَدَّثَنِي عُقَيْلُ بْنُ، خَالِدٍ
عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ
عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ تَمَتَّعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ
وَأَهْدَى فَسَاقَ مَعَهُ الْهَدْىَ مِنْ ذِي الْحُلَيْفَةِ وَبَدَأَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَهَلَّ بِالْعُمْرَةِ ثُمَّ أَهَلَّ
بِالْحَجِّ وَتَمَتَّعَ النَّاسُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَكَانَ مِنَ النَّاسِ مَنْ أَهْدَى
فَسَاقَ الْهَدْىَ وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ يُهْدِ فَلَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَّةَ قَالَ لِلنَّاسِ مَنْ كَانَ مِنْكُمْ أَهْدَى
فَإِنَّهُ لاَ يَحِلُّ مِنْ شَىْءٍ حَرُمَ مِنْهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَجَّهُ وَمَنْ
لَمْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَهْدَى فَلْيَطُفْ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ
وَلْيُقَصِّرْ وَلْيَحْلِلْ ثُمَّ لْيُهِلَّ بِالْحَجِّ وَلْيُهْدِ فَمَنْ لَمْ
يَجِدْ هَدْيًا فَلْيَصُمْ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةً إِذَا
رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ. وَطَافَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ حِينَ قَدِمَ مَكَّةَ فَاسْتَلَمَ الرُّكْنَ أَوَّلَ شَىْءٍ ثُمَّ خَبَّ
ثَلاَثَةَ أَطْوَافٍ مِنَ السَّبْعِ وَمَشَى أَرْبَعَةَ أَطْوَافٍ ثُمَّ رَكَعَ -
حِينَ قَضَى طَوَافَهُ بِالْبَيْتِ عِنْدَ الْمَقَامِ - رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ
سَلَّمَ فَانْصَرَفَ فَأَتَى الصَّفَا فَطَافَ بِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ سَبْعَةَ
أَطْوَافٍ ثُمَّ لَمْ يَحْلِلْ مِنْ شَىْءٍ حَرُمَ مِنْهُ حَتَّى قَضَى حَجَّهُ
وَنَحَرَ هَدْيَهُ يَوْمَ النَّحْرِ وَأَفَاضَ فَطَافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ حَلَّ
مِنْ كُلِّ شَىْءٍ حَرُمَ مِنْهُ وَفَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَهْدَى وَسَاقَ الْهَدْىَ مِنَ النَّاسِ .
আবদুল মালিক ইবনে শুআয়ব ইবনে লায়স রাহি.
..... আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলেন, বিদায় হাজ্জে রাসূলুল্লাহ সা. তামাত্তু করেছেন, প্রথমে উমরাহ ও পরে হাজ্জ
করেছেন এবং পশু কুরবানী করেছেন। তিনি
যুল হুলায়ফাহ থেকে সাথে করে কুরবানীর পশু নিয়েছিলেন। এখান থেকে রাসূলুল্লাহ সা. প্রথমে উমরার, অতঃপর হাজ্জের
তালবিয়াহ্ পাঠ শুরু করেন।
লোকেরাও রাসূলুল্লাহ সা. এর অনুসরণে হাজ্জের সাথে উমরাহ যুক্ত করে তামাত্তু করেছে। কতক
লোকেরা কুরবানীর পশু সাথে নিয়েছিল, আর কতকের
কুরবানীর পশু ছিল না। রাসূলুল্লাহ সা. মক্কাতে উপনীত হয়ে লোকদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু আছে, হাজ্জ
শেষ না করা পর্যন্ত তাদের জন্য (সাময়িকভাবে) নিষিদ্ধ কোন জিনিস হালাল হবে না। আর তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু নেই-তারা যেন
বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করে মাথার চুল খাটো করার পর
ইহরাম খুলে ফেলে।
অতঃপর তারা (৮ যিলহাজ্জ) পুনরায় হাজ্জের
জন্য ইহরাম বাঁধবে এবং (নির্দিষ্ট দিনে) কুরবানী করবে। কোন ব্যক্তি কুরবানীর পশু না পেলে হাজ্জ চলাকালীন সময়ে তিনদিন এবং বাড়িতে
ফেরার পর সাতদিন সওম পালন করবে। রাসূলুল্লাহ সা. মক্কায় পৌছে প্রথমে রুকনে (হাজারে আসওয়াদ) স্পর্শ করলেন, অতঃপর বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করলেন-তিন চক্কর সামান্য দ্রুতগতিতে এবং চার
চক্কর ধীরগতিতে।
বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ সমাপ্ত করে তিনি
মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করলেন। অতঃপর
তিনি সাফা পাহাড়ে এলেন এবং সাফা-মারওয়াহ পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাতবার সাঈ করলেন। এরপর তিনি কোন জিনিস হালাল করেননি-যা হারাম হয়েছিল
(ইহরামের কারণে অর্থাৎ তিনি ইহরামমুক্ত হননি) যে পর্যন্ত না হাজ্জ সমাপন করেন এবং
কুরবানীর দিন নিজের পশু কুরবানী না করেন এবং কাবা ঘর-এর তাওয়াফ করেছেন। অতঃপর যে সব জিনিস হারাম ছিল, তা তার জন্য হালাল হয়ে গেল (অর্থাৎ তিনি ইহরাম খুললেন) আর যেসব লোক সাথে
করে কুরবানীর পশু এনেছিল, তারাও রাসূলুল্লাহ সা. এর অনুরূপ
করেছিল। (মুসলিম)
উমরাহ থেকে ফিরে দোয়াঃ
وَعَنْ عَبْدَ
اللَّهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَفَلَ مِنَ الحَجِّ أَوِ العُمْرَةِ، كُلَّمَا
أَوْفَى عَلَى ثَنِيَّةٍ أَوْ فَدْفَدٍ كَبَّرَ ثَلاثَاً، ثُمَّ قَالَ لاَ إِلٰهَ
إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ
عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ. آيِبُونَ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، سَاجِدُونَ،
لِرَبِّنَا حَامِدُونَ، صَدَقَ اللهُ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ
الأَحْزَابَ وَحْدَهُ
আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকেই বর্ণিত, তিনি
বলেন, নবী সা. যখন হজ্জ কিংবা উমরাহ সেরে ফিরে আসতেন, যখনই কোন পাহাড়ী উঁচু জায়গায় অথবা
ঢিবিতে চড়তেন তখনই তিনবার ’আল্লাহু আকবার’ বলতেন। অতঃপর তিনি বলতেন, لاَ
إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ،
وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ. آيِبُونَ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ،
سَاجِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُونَ، صَدَقَ اللهُ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ،
وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ “আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক,
তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই
সার্বভৌম অধিকার, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই জন্য, আর তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতগুযার, সিজদাকারী, আমাদের
প্রভুর প্রশংসাকারী। আল্লাহ
তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য প্রমাণিত করেছেন, তাঁর বান্দাহকে
মদদ করেছেন এবং একাই শত্রু বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
0 Comments