মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত কিংবা সাধারণ জনগনের কেউ কি
মাত্র ১মাস আগে চিন্তা করেছিলেন যে, আওয়ামীলীগ ক্ষমতাচ্যুত হবে? ড. ইউনুস কি চিন্তা
করেছিলেন, তিনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন। সহজ উত্তর হলোঃ না।
আওয়ামীলীগঃ আওয়ামীলীগ ক্ষমতার
নেশায় এতোই মত্ত ছিল যে, তাদেরকে কেউ ক্ষমতাচ্যুত করবে, এমন কল্পনাও তারা করেনি।
বিএনপিঃ বিএনপি তখন
আগাগোড়া একটি দেউলিয়া সংগঠনে পরিণত হয়েছিল, এখনো আছে। কান্ডারী বিহীন নৌকাতে দলের অভ্যন্তরে
চলছিল স্বৈরাচারী চর্চা। ফলে দলের ভিতর ঐক্য ছিল না, না ছিল আন্তরিকতা ও পারস্পরিক
বোঝাপড়া। আওয়ামীলীগের অধীনে বারবার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে স্বৈরাচারকে বৈধতা দিয়ে
মানুষের কাছে দলটি ছিল রীতিমতো হাসির খোরাক। রাজপথে পিঠ বাঁচানোর রাজনীতিতে অভ্যস্ত
হয়ে পড়ায় তাদের দিয়ে স্বৈরাচার উৎখাত হবে, তা মানুষ যেমন চিন্তা করেনি, তেমনি বিএনপিও
চিন্তা করেনি। যার জন্য আন্তর্জাতিক প্রভূদের কাছে ধরনা দেয়া এবং মিডিয়াকেন্দ্রীক প্রেসব্রিফিং
এর মাঝে দলের তৎপরতা ছিল সীমাবদ্ধ-যা এখনো আছে।
জামায়াতে ইসলামীঃ জামায়াতে ইসলামীর
নিজেদের মধ্যে ছিল হীনমন্যতা। শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির পর জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্ব অন্য
যে কোন সময়ের চেয়ে ডায়নামিক। সে অনুযায়ী দল গোছানোর কাজটাও ছিল পুরোপুরি। যে কোন সময়
মাত্র একটি নির্দেশে বন্দুকের সামনে বুক পেতে দেয়ার মতো ছিল অসংখ্য নেতা কর্মী। কিন্তু
অংকের হিসাবে জামায়াতে ইসলামী মনে করতো যে, আন্দোলনের পর ফলাফল যা হবে, তা ভোগ করবে
বিএনপি। তাহলে যারা ফলাফল ভোগ করবে, তারাই ত্যাগ করবে, লড়াই করবে, আন্দোলন করবে। আমরা
কেন অন্যকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য রিস্ক নিতে যাবো। এই ধরণের চিন্তাভাবনা থেকে জামায়াত
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার মরণপন আন্দোলনের চিন্তা করতো না। তাই যখন যতটুকু স্পেস
পাওয়া যেতো, ততটুকু তৎপরতার মাঝেই জামায়াতের তৎপরতা ছিল সীমাবদ্ধ।
ড. ইউনুসঃ নবেল বিজয়ী ড. ইউনুস। বেচারাকে
পদ্মা নদীতে মাত্র ২বার চুবানোর হুমকী আর নানান ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়ে রীতিমতো দেশ ছাড়া
করে রাখা হয়েছিল। আর ড. ইউনুসের দেশ নিয়ে এতো ভাবনার মতো মন মানসিকতাও ছিল না। বেচারা
ব্যবসায়ী মানুষ। বিধায় যে দিকে লাভ, সেদিকেই তার যাত্রা। শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া
ক্ষমতায় থাকাকালীন যেমন আয়নাঘর, হাওয়া ভবন আর কোটি কোটি টাকা লুটপাটের খবর পাওয়া যায়নি-পাওয়া
গিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুৎ হওয়ার পর। তেমনি ভাবে ড. ইউনুস সাহেবের ব্যবসার ব্যাপ্তির ব্যাপারে
এখনই কিছু বলা মুশকিল। তবে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যদি তেমনি পূণরাবৃত্তি না ঘটে,
তাহলে তা হবে মিরাকল।
এখন প্রশ্ন হলোঃ ৬মাস বা ১ বছর
কিংবা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর নির্বাচন হবে-একথা নিশ্চিত। কিন্তু সেই নির্বাচনে কে
আসবে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে?
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে
এটা দৃঢ়তার সাথে বলা যায় আওয়ামীলীগ আসবে না। আওয়ামীলীগের আয়নাঘর, হাজার মানুষের রক্তে
রঙা হাত আর কোটি কোটি টাকার দূর্নীতি, অর্থ পাচার এবং ব্যাংক লুটের চিত্রটি মানুষের
সামনে জীবন্ত। তাই আওয়ামীলীগকে গ্রহণ করার মতো প্রেক্ষাপট তৈরী হওয়া কঠিন।
তাহলে কি বিএনপি আসবে? বিএনপি হাওয়া ভবন,
বিদ্যুতের খাম্বা, তারেক রহমান সেল ইত্যাদি যদি মানুষ ভূলেও যায়, তাহলে বিএনপিতে দেশকে
নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতা কি অবশিষ্ট আছে? দেশের মানুষ যদি হাওয়া ভবনের কথা ভূলে যায়,
তারেক জিয়ার সেই সময়ের অপকর্ম যদি ভূলে যায়, তাহলে হয়তো বিএনপিই আসবে। তখন কি হবে?
সেই পুরাতন বোতলে নতুন মদ আসবে-জুস আসবে না। পরিণামে নতুন সাইনবোর্ডে মানুষ পুরাতন
শাসন ব্যবস্থা তথা দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ, আত্মীয়করণ, ব্যাংক দখল ইত্যাদি
দেখতে পাবে।
আমার এই আলোচনায় কি জামায়াতে ইসলামীর
দিকে কোন ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে? যদি ইংগিত পাওয়াও যায়, তাহলে জামায়াতে ইসলামীর কি সেই
ধরণের প্রস্তুতি আছে? জামায়াতে ইসলামী অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল অবস্থানে আছে-একথা
তার শত্রুরাও শিকার করতে বাধ্য হবেন। আওয়ামীলীগ অনেক সীমাহীন নির্যাতন করেও জামায়াতকে
০০.০০১% ও কমানে পারেনি-এটা নির্দিধায় বলা যায়। বিএনপি সরকারের সময় জামায়াতের দুইজন
মন্ত্রী দূর্নীতিহীন অবস্থায় মন্ত্রনালয় পরিচালনার সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন। তবুও জামায়াত
দেশ পরিচালনার জন্য পুরো প্রস্তুত হয়ে পড়েছে এমনটা মানুষ মনে করে না। কেন মনে করে না,
তার উত্তর আমার জানা নেই এবং আমি মনে করি আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বিকল্প হিসাবে মানুষ
জামায়াতকে গ্রহণ করবে না।
এমতাবস্তায় করণীয় কি?
বাংলাদেশের একটি পরিবর্তন প্রয়োজন। এই
মুহুর্তে যারা দেশ চালাচ্ছেন, তারা কোন দলের? তাদের তো কোন দল নাই। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের
একটি রাজনৈতিক বিশ্বাস তো রয়েছে। বিএনপি আর আওয়ামীলীগ বাংলাদেশের মানুষের নিকট পরিক্ষিত
ফেইল করা দুইটি রাজনৈতিক দল। জাতীয়পার্টি দলটি এখন বাংলাদেশের মানুষের গনণার বাহিরে।
বিকল্প হিসাবে প্রয়োজন তৃতীয় একটি শক্তি। সেই তৃতীয় শক্তিটি কে হবে?
আমার বিবেচনায় সেই তৃতীয় শক্তিটি হওয়া
দরকার আওয়ামীলীগ বিএনপি বিহীন একটি বিকল্প শক্তি। যে শক্তির লক্ষ্য ধর্মনিরপেক্ষতা,
জাতীয়তাবাদ বা ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না। বরং সেই শক্তির লক্ষ্য হবে দেশপ্রেম সৃষ্টি,
আত্মপরিচয় উদ্ধার, সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করণ, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা, দূর্নীতির
নির্মূল, পরিবারতন্ত্রের চিরবিদায়, জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন।
আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি ছাড়া সকল ইসলামী
দল এবং সাধারণ দল সমূহ নিয়ে একটি মোর্চা প্রয়োজন, যেখানে বড় দল গুলো নেতৃত্ব দেবে,
ছোট দল গুলো আনুগত্য করবে। বড় দল গুলো মন্ত্রী এমপি হবে, ছোট দল গুলো থেকে প্রশাসনের
গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব দেবে। বড় দল গুলো সরকারে যাবে, ছোট দল গুলো ময়দানে প্রেসার
গ্রুপ হিসাবে কাজ করবে। পরিবর্তনের শ্লোগান দিয়ে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি বিহীন একটি বাংলাদেশ
এখন সময়ের প্রত্যাশা।
0 Comments