ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে আমার পড়াশোনা - মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে আমার পড়াশোনা

➧ (عيد) ঈদ মানেঃ

ঈদ অর্থ উৎসব বা আনন্দ, ফূর্তি করা, উপভোগ করা।

আধুনিক আরবী পরিভাষায় ঈদ বলতে ‘বার্ষিকী’ বুঝানো হয়ে থাকে। যে জিনিসটি বছরে একবার ঘুরে আসে, তাকে ঈদ বলে।

➧ কুরআনে ঈদঃ

কুরআনে হযরত ঈসা . এর একটি বক্তব্য কোড করা হয়েছে এভাবেঃ

﴿قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ﴾

“ঈসা ইবনে মারইয়াম আ. দোয়া করেছিল, হে আমাদের রব! আমাদের ওপর আকাশ থেকে একটি খাদ্য ভরা দস্তখান নাযিল করো, যা আমাদের জন্য এবং আমাদের আগের-পিছের সবার জন্য ঈদ বা আনন্দের উপলক্ষ হিসেবে গণ্য হবে এবং তোমার পক্ষ থেকে হবে একটি নিদর্শন। আমাদের জীবিকা দান করো এবং তুমি সর্বোত্তম জীবিকা দানকারী” (সূরা আল মায়িদাহঃ ১১৪)

⧭ এই আয়াত থেকে আমি জানলামঃ ঈদ মানে উৎসব বা আনন্দ

➧ হাদীসে রাসূলে ঈদ শব্দ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে?

عن أنس رضي الله عنه قال: قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم المدينة ولهم يومان يلعبون فيهما، فقال: ما هذان اليومان؟ قالوا: كنا نلعب فيهما في الجاهلية، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن الله قد أبدلكم بهما خيرا منهما: يوم الأضحى، ويوم الفطر.

আনাস ইবন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সা. মদীনায় আগমন করলেন দেখলেন, মদীনাবাসী ২টি দিনে খেলাধুলা করে (আনন্দ করে-উৎসব করে) রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ এই দুইদিন কোন দিন? (এই দুই দিনে এরা এমন করে কেন? আনন্দ উৎসব করে কেন?) তখন (মদীনাবাসী) জবাব দিলোঃ জাহিলী যুগে এই দুই দিনে আমরা আনন্দ উৎসব করতাম তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দুই দিনের পরিবর্তে আরো উত্তম দুইটি দিন  পরিবর্তন করে দিয়েছেন (একটি) ঈদুল আদ্বহা এবং (অন্যটি) ঈদুল ফিতর (আবু দাউদ)

⧭ এই হাদীস দ্বারা আমি ইসলামে ঈদ পেয়ে গেলাম ইসলামে ঈদ দুইটি একটি ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আদ্বহা

عن عبدالله بن عمر رضي الله عنهما قال: كانَ رَسولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، وأَبُو بَكْرٍ، وعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عنْهمَا، يُصَلُّونَ العِيدَيْنِ قَبْلَ الخُطْبَةِ.

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সা., আবু বকর এবং উমর রা. খুতবার আগে দুই ঈদের নামায আদায় করতেন” (সহীহ আল বুখারীঃ ৯৬৩)

⧭ এই হাদীস থেকে আমি জানতে পারলামঃ আমাদের জন্য ঈদ হচ্ছে ২টি

عن جابر بن سمرة رضي الله عنه قال: صليتُ مع النبيِّ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ العيدَينِ غير مرةٍ ولا مرتين، بغير أذانٍ ولا إقامةٍ

জাবির ইবনে ছামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে অসংখ্যবার দুই ঈদের নামায আদায় করেছি আযান ও ইক্বামাত ছাড়া (আবু দাউদঃ ১১৪৮)

⧭ এই হাদীস থেকে আমি জানলামঃ অসংখ্যবার ঈদ এসেছে কিন্তু ঈদ হচ্ছে ২টি

➧ মিলাদুন নবী অর্থ কি?

ميلاد  (মীলাদ) অর্থ হলো জন্ম ميلاد النبي  (মীলাদুন নবী) অর্থ নবী সা. এর জন্ম বার্ষিকী। তথা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. এর জন্ম বা জন্ম বার্ষিকী।

⧭ আল্লাহর নবী যে জন্ম গ্রহণ করেছেন, এ ব্যাপারে পৃথিবীতে কোন এখতেলাফ নাই নবী আকাশ থেকে নাযিল হোননি, যমীন থেকে উঠে আসেননি। বরং পৃথিবীর অন্য মানুষের মতো মাতৃগর্ভে জন্ম নিয়ে ভূমিষ্ট হয়ে শিশুকাল কৈশোরকাল, তারুণ্যের বয়স ফাঁড়ি দিয়ে যৌবনে গিয়ে ৪০ বছর বয়সে নাবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছেন।

➧ রাসূল সা. কোন দিনে জন্ম গ্রহণ করেছেন?

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما، قَالَوُلِدَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، وَاسْتُنْبِئَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، وَخَرَجَ مُهَاجِرًا مِنْ مَكَّةَ إِلَى الْمَدِينَةِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، وَقَدِمَ الْمَدِينَةَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، وَتُوُفِّيَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، وَرَفَعَ الْحَجَرَ الْأَسْوَدَ يَوْمَ الاثنين.

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সা. জন্ম গ্রহণ করেন সোমবারে, তার কাছে প্রথম ওহী আসে সোমবারে, তিনি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেছেন সোমবারে, হিজরত করে মদীনায় পৌছেছেন সোমবারে, ইনতিকাল করেছেন সোমবারে এবং হাজারে আসওয়াদ উঠিয়েছেন সোমবারে” (মুসনাদে আহমাদ)

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ أَنَّ أَعْرَابِيًّا قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا تَقُولُ فِي صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ فَقَالَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَأُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ

আবি কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক বেদুইন জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ সা.! সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে কি বলেন? তিনি বললেনঃ এই দিনে আমি আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার প্রতি ওহী নাযিল শুরু হয়েছে” (মুসলিম)

⧭ এই হাদীস থেকে আমি জানলামঃ রাসূল সা. এর জন্ম দিবস হচ্ছে সোমবার

➧ রাসূল সা. কোন তারিখে জন্ম গ্রহণ করেছেন?

⧭ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ গ্রন্থে ইমাম ইবনে কাসীর রাহি. রাসূল সা. এর জন্মের তারিখ নিয়ে ৭টি কথা লিখেছেনঃ

            ১. ১২ই রামাদ্বান

            . ১০ই রবিউল আউয়াল

            . ১৭ই রবিউল আউয়াল

            . রবিউল আউয়ালের ৮দিন বাকী থাকতে

            . ২রা রবিউল আউয়াল

            . ৮ই রবিউল আউয়াল

            . ১২ই রবিউল আউয়াল

عَنْ عَفَّانَ، عَنْ سَعِيدِ بن ميناء، عَنْ جَابِرٍ وَابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُمَا قَالَا: وُلِدَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ الثَّانِي عَشَرَ مِنْ شَهْرِ ربيع الأول وَفِيه بعث وَفِيه عرج بِهِ إِلَى السَّمَاءِ، وَفِيهِ هَاجَرَ وَفِيهِ مَاتَ.

আফ্ফান ইবনে মুসলিম বর্ণনা করেন তার উস্তাদ সায়িদ ইবনে মিনা থেকে। তিনি বর্ণনা করেন নবী সা. এর সাহাবী হযরত জাবির আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে, তারা দুজন বলেনঃ রাসূল সা. আমুল ফীল তথা হস্তি আগমনের বছর সোমবারে, রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন

⧭ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ গ্রন্থে ইমাম ইবনে কাসীর রাহি রাসূল সা. এর জন্মের তারিখ নিয়ে ৭টি কথা লিখলেও তার মধ্যে ৪টিকে দূর্বল আখ্যা দিয়ে ৩টি নিয়ে আলোচনা করেছেন তা হলোঃ ২, ৮ এবং ১২ রবিউল আউয়াল

⧭ তাবাকাতে ইবনে সা’দ আলোচনা করেছেন ৮ এবং ১২ নিয়ে

➧ রাসূল সা. কোন বছরে জন্ম গ্রহণ করেছেন?

ইমাম মাগাজী রাহি. বলেনঃ হস্তি বাহিনী যে বছর কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য আসে, সেই বছরে রাসূল সা. এর জন্ম

وُلِدَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ، وَكَانَتْ بَعْدَهُ عُكَاظٌ بِخَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً، وَبُنِيَ الْبَيْتُ عَلَى رَأْسِ خَمْسٍ وَعِشْرِينَ سَنَةً مِنَ الْفِيلِ، وَتَنَبَّأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى رَأْسِ أَرْبَعِينَ سَنَةً مِنَ الْفِيلِ

⧭ এ ব্যাপারে সকল মতের আলিমগন একমত

⧭ হস্তি বাহিনী হামলা করার ৫০ দিন পর রাসূল সা. জন্ম গ্রহণ করেন

⧭ মহররম মাসের ১৩দিন বাকী থাকতে আবরাহা হামলা করে

⧭ সেই হিসাবে রাসূলের জন্ম ৮ই রবিউল আউয়াল

⧭ উপরের আলোচনা থেকে আমি বুঝলামঃ নবী সা. জন্মের তারিখ হিসাবে ৮ই রবিউল আউয়াল বিশুদ্ধ আর ১২ রবিউল প্রসিদ্ধ।

➧ আফ্ফান বর্ণিত হাদীসের বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্নঃ

ফ্ফান রাহি. বর্ণনা করেন সায়িদ বিন মিনারাহি. থেকে ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রে আফ্ফান একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। বুখারী ও মুসলিমে তার হাদীস রয়েছে। একই ভাবে সাঈদ বিন মিনাও গ্রহণ যোগ্য বর্ণানাকারী, বুখারী মুসলিমে তারও হাদীস রয়েছে কিন্তু তাদের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়কারণ এখানে উস্তাদ হলেনঃ সায়িদ বিন মিনা’ আর ছাত্র হলেনঃ আফ্ফান রাহি.উস্তাদ সাঈদ বিন মিনা’ এর মৃত্যু হয়েছে ১১০ হিজরীতে, আর ছাত্র আফ্ফান এর জন্ম হয়েছে ১৩৪ হিজরীতে। একজনের মৃত্যু থেকে আরেকজনের জন্মের পার্থক্য ২৪ বছর বিধায় তারা ছাত্র-শিক্ষক হতে পারেন না নিশ্চয়ই সাঈদ ও আফ্ফান এর মাঝখানে আরেকজন বর্ণনাকারী রয়েছে যা হাদীসের সনদে বাদ পড়েছে এমন বাদ পড়াকে উসুলে হাদীসের ভাষায় মুনকাতে’ বলে আর মুনকাতে’ হাদীস দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়

➧ মিলাদুন্নবীর গোড়াপত্তনঃ

রাসূল সা. এর জন্মদিন বার্ষিক ভিত্তিতে পালন করা শুরু হয় ৬০৪ হিজরীতে, ইরাকের মাসুল শহরে। তদানিন্তন বাদশা আবু সাঈদ মুজাফ্ফার কাওকারীর সময়ে ও তার তত্ত্বাবধানে আবুল খাত্তাব উমর ইবনে দিহিয়া নামক ব্যক্তির মাধ্যমে। বাদশা আবু সাইদ ৬৩৩ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন এবং ইবনে দিহিয়াও ৬৩৩ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন। তার সম্পর্কে ইসলামিক স্কলারদের অভিমত হলোঃ

كثير الوقيعة في أئمَّة الجمهور وفي العلماء من السلف وكان خبيث اللسان، أحمق، شديد الكِبَر، قليل النظر في الأمور الدينية، متهافتاً في دينه

তিনি প্রায়ই পূর্বসূরী ইমাম ও পূর্বসুরি উলামায়ে কিরামদের সমালোচনায় লেগে থাকতেন। তার ভাষা ছিল খুবই খারাপ, আহম্মক, ছিল প্রচন্ড রকমের অহংকারী, দ্বীনে ব্যাপারে অদূরদর্শী, দ্বীনের আমলের ব্যাপারে ছিল গাফেল” (উল্লেখ্য যে, ইলমে হাদীসের বিশুদ্ধতা নির্ণয়ে অগ্রহণযোগ্য রাবি বা বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে হাদীস বিশারদদের এই ধরণের ভাষা ব্যবহারের প্রচলন অন্যান্য রাবিদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়)

⧭ ইসলামের প্রথম ৬০০ বছরে ঈদে মিলাদুন নবী শব্দটি কোথাও পাওয়া যাবে না ৬শ বছর পর্যন্ত কখনো মিলাদুন্নবী’ পালিত হয়নি সীরাতুন নবী’ আলোচিত হয়েছে

⧭ বর্তমান সৌদী রাজ পরিবার সৌদী আরবের ক্ষমতা গ্রহণের আগে যখন সৌদী আরব উসমানী খেলাফতের অধীনে ছিল, তখন সৌদী আরবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হতো বর্তমান রাজ পরিবার ক্ষমতা গ্রহণের পর সৌদী আরবে মিলাদুন্নবী বন্ধ হয় (. সাইফুল আযম আযহারী)

➧ নবীর জন্ম দিন কিভাবে পালন করবো?

⧭ নবী সা. যেভাবে তার জন্মদিন পালন করেছেন, আমরাও সেভাবে পালন করবো

⧭ নবী সা. জন্মদিন পালন করতেন সাপ্তাহিক ভাবে, বার্ষিক ভাবে নয়।

⧭ নবী সা. জন্মদিন পালন করতেন প্রতি সোমবার রোযা রাখার মাধ্যমে।

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ أَنَّ أَعْرَابِيًّا قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا تَقُولُ فِي صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ فَقَالَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَأُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ

আবি কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক বেদুইন জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ সা.! সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে কি বলেন? তিনি বললেনঃ এই দিনে আমি আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার প্রতি ওহী নাযিল শুরু হয়েছে” (মুসলিম)

⧭ আমরা যদি নবী সা. যেভাবে জন্মদিন পালন করেছেন, সেভাবে জন্মদিন পালন করতে চাই, তাহলে আমাদেরকেও নবীর মতো সাপ্তাহিক ভাবে পালন করতে হবে এবং প্রতি সপ্তাহের সোমবার রোযা রাখতে হবে

⧭ নবী সা. এর জন্মদিন আমরা পালন করবো সেভাবে, আল্লাহর নবী সা. কে সবচাইতে যারা বেশী ভাসতেন, সেই সাহাবায়ে কিরাম রা. গন পালন করেছেন যেভাবে।

➧ মিলাদুন্নবী ও সীরাতুন্নবীঃ

⧭ মিলাদ-স্মরণ করার বিষয়।

⧭ সীরাত-অনুসরণ করার বিষয়।

o  রাসূল সা. আমাদের জন্য আদর্শ। আদর্শ অনুসরণ করতে গেলে আদর্শের আলোচনা হতে হবে। তাই রাসূল সা.কে নিয়ে আলোচনার অনুষ্ঠান করতে হবে। এই আলোচনার অনুষ্ঠানকে বলে সীরাতুন্নবী

➧ ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে কে কি বলেনঃ

⧭ ঈদে মিলাদুন্নবী ইসলামের একটি বড় বিদায়াতরবিউল আউয়ালে মীলাদুন নবী পালন করা বিদায়াততবে দিন হিসাবে মিলাদ পালন করা যাবে সোমবারে, সাপ্তাহিক ভিত্তিতে রোযা রেখেএটাই সুন্নাত পদ্ধতি - . খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙীর

⧭ সীরাতুন্নবী এর মধ্যে মিলাদুন্নবীও রয়েছে কিন্তু মীলাদুন্নবী এর মধ্যে সীরাতুন্নবী নাই মীলাদুন্নবী হলো নবী সা. এর জীবনের একটি দিক আর সীরাতুন্নবী হলো নবী সা. এর জীবনের সকল দিক - আল্লামা লুৎফুর রহমান রাহি.

⧭ ইবাদত তখন ইবাদত হয়, যা নবী সা. বা সাহাবায়ে কিরাম করেছেন বা খাইরুল কুরুনে করা হয়েছে। যে ইবাদ খাইরুল কুরুনে ছিল না, তা ইবাদত নয় বরং বিদায়াত। ঈদে মীলাদুন্নবী নবী সা. এর যুগে, সাহাবীদের যুগে এবং তাবেয়ীদের যুগে ছিলনা। এটা ৬০০ হিজরীর পরে শুরু হয়েছে। (খাইরুল কুরুন হলো নবী সা. এর যুগ, সাহাবায়ে কিরামের যুগ এবং তাবেয়ীদের যুগ।) - মাওলানা রিজাউল কারীম আবরার।

⧭ কোন আলেমের বাড়ী বা ইমামের বাড়ীতে মিলাদ হয় না। উনি জানেন যে, এটা ইবাদত নয়, এতে সওয়াবের কিছু নাই, এতে কোন লাভ নাইমুসলমানদের ঈদে প্রথমে ত্যাগ পরে ভোগঈদুল আযহাতে লক্ষ কোটি টাকা মুসলমানদের ত্যাগ হয়এই ত্যাগে গরিবরা আনন্দিত হয় দেখে আমাদের আনন্দ হয়রমজানে পুরো মাস রোযা রেখে ঈদের সকালে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে ত্যাগ করলে গরিবরা আনন্দিত হয় দেখে আপনি আনন্দিত হোন - মুফতি আমীর হামযা

⧭ নবী সা. এর জন্ম দিবস পালন করলেই তাঁর প্রতি ভালবাসা আছেনা হলে নাইএমন ধরণের যোগ বিয়োগ করা অযৌক্তিক

⧭ বিশ্বব্যাপী ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ার পর মক্কা মদীনা ও আরব দেশ পেরিয়ে ইসলাম পৌছে গেল দূর দূরান্তে। আর সেই সব এলাকায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দাওয়াত পৌছেছে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। মুসলমান ব্যবসায়ীরা দীর্ঘপথ ফাঁড়ি দিয়ে যেখানে গিয়েছেন, সেখানে ব্যবসার সাথে সাথে দাওয়াতের কাজ করেছেন। তাদের দাওয়াতে মানুষ ইসলাম কবুল করেছে। ঐ ব্যবসায়ীরা মুবাল্লিগ ছিলেন না, বড় আলেমও ছিলেন না। ফলে তাদের ইসলাম সম্পর্কে বিস্তব জ্ঞান ছিল না। অপর দিকে ব্যবসার মালামাল শেষ হওয়ার পর তারা নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। এমতাবস্তায় নও মুসলিমরা দ্বীনের দীক্ষা ও শিক্ষা দানকারীর অনুপস্থিতে দ্বীনের মধ্যে নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী অনেক কিছু মিশ্রণ করেছেন। মিলাদুন্নবী তেমনি একটি বিষয়।

⧭ বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডে ওলি আউলিয়ার পাশাপাশি বড় অংকের মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। এর আগে তারা হিন্দু ছিল। হিন্দুদের সংস্কৃতিতে কীর্তন নামক একটি বিষয় রয়েছে। মীলাদ নামক বস্তুটি সেই কীর্তনের সাথে একটু সংগতি পাওয়া যায়।

⧭ ইসলামের সকল ইবাদত আরবী ভাষায় পালন করা হয়। কিন্তু মিলাদে বাংলা উর্দূ এবং ফার্সির মিশ্রণ লক্ষণীয়। যা থেকে ভেজালের গন্ধ আসে।

(উপরের সকল অভিমত আমার নয়। বরং মিলাদ বিষয়ে আমার পড়াশোনা থেকে সংগৃহিত)

➧ ঈদে মীলাদ সম্পর্কে আমার কিছু কথাঃ

⧭ ঈদে মীলাদ বা জন্ম বার্ষিকী, যেটাকে আমরা Happy Birth Day বলি এই সংস্কৃতিটি আমি আমার শৈশবে দেখিনি আমাদের আব্বা আম্মার আমাদের প্রতি ভালবাসা কম ছিল না কিন্তু তারা তাদের ভালবাসার প্রকাশ বার্থ ডে পালনের মাধ্যমে দেখাননি আমাদের বন্ধু বান্ধব বার্থ ডে-তে আমার জন্য উইশ করেননি তারপরও আমরা অর্ধ শতাব্দির উপরে এই পৃথিবীর বুকে বিচরণ করছি

⧭ বার্থ ডে পালনের এই সংস্কৃতিটি আমাদের পরিবারে নেই আমার সন্তানদের কারো বার্থ ডে আমরা কখনো স্মরণ করিনা তাই বলে আমরা আমাদের সন্তানদের ভালবাসি না, এমনটা ভাবনার কোন সুযোগ নাই

⧭ বার্থ ডে সংস্কৃতিটি আমাদের সমাজে মাত্র কয়েক বছর আগে শুরু হয়েছে, যখন ভারতীয় আকাশ সংস্কৃতিকে আমরা উম্মুক্ত করেছি ভারতীয় চ্যানেল দেখতে দেখতে আমরা তাদের সংস্কৃতিকে কখন যে গিলে খাওয়া শুরু করেছি, তা আমরাও টের পাইনি উল্লেখ্য যে, হিন্দু সংস্কৃতিতে বার্থ ডে পালনকে রীতি মতো ইবাদত গন্য করা হয়

⧭ পৃথিবী যখন গ্লোবাল ভিলেজে রূপান্তরিত হলো, যখন ৩৬টি স্নেপ নেয়ার বাধ্য বাধকতা থেকে ডিজিটাল ক্যামেরা এবং পরবর্তীতে হাতে হাতে মোবাইল ক্যামেরা চলে এলো এবং তার সাথে যুক্ত হলো ফেইসবুক সংস্কৃতি, তখন বার্থ ডে পালন করে, তার ছবি সোসাল মিডিয়াতে শেয়ার করার লোভে আমরা বার্থ ডে নামক বস্তুটাকে ইবাদত বানিয়ে ফেললাম

⧭ আমরা বিভিন্ন নেতা, বিভিন্ন সেলিব্রেটি ও নামকরা ব্যক্তিদের জন্মদিন পালনে পাগল পারা হয়ে যাই কিন্তু নিজের মা বাবার জন্মদিন পালনের জন্য কখনো চিন্তাই করিনা জন্মদিন পালনের অপসংস্কৃতিটি যদি আপনি পালন করতেই হয়, তাহলে নিজের মা বাবার জন্মদিন পালন দিয়ে শুরু করুন

⧭ ব্যক্তিগত ভাবে কেউ যদি বার্থ ডে পালন করতে হয়, তাহলে তার প্রতি আমার পরামর্শ হলোঃ যে বারে আপনি জন্ম গ্রহণ করেছেন, সেই বারে আপনি রোযা রাখুন


কোন ধরণের উপসংহার ছাড়াই এই লেখাটি শেষ করতে হচ্ছেকারণ লেখার বিষয়টি সীমাহীন আলোচিত ও সমালোচিত আমি কেবলমাত্র সেই সব তথ্য এখানে উপস্থাপন করলাম, যা আমার পড়াশোনা থেকে উপলব্দির মধ্যে এসেছে পত্রস্ত এই বিষয় গুলো বিবেচনায় নিলে যে কোন পাঠক একটি সুন্দর উপসংহারে পৌছতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস আবেগ নয়, বিবেককে কাজে লাগিয়ে দলীলের ভিত্তিতে আমরা আল্লাহর ইবাদত করি তাঁর রাসূলের দেখানো পথে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আমাদের সকলকে তাঁর মাকবুল আবিদ হিসাবে কবুল করুন আমীন।।

 


Post a Comment

0 Comments