পৃথিবীতে আমেরিকার যত ঘাঁটি আছে, তার সবক’টি কি আমেরিকার মাটিতে? অবশ্য না। তাহলে বাংলাদেশ যদি সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আমেরিকার ঘাঁটি করার সুযোগ দেয়, তাহলে তা পৃথিবীর প্রথম কোন ঘটনা ঘটছে না। পৃথিবীর আরো বহু দেশ নিজেদের ভূখন্ডে আমেরিকাকে ঘাঁটি স্থাপন করতে দিয়েছে। এতে করে সেই সব দেশের সার্বভৌমত্ব চলে গেছে, বা সেই দেশ আমেরিকা হয়ে গেছে,
অথবা সেই দেশের বিশাল কোন ক্ষতি হয়েছে, তা আমার জানা নেই।
আমি যে দেশে এখন অবস্থান করছি,
সেই দেশে এসেছি ২৫ বছর আগে। সেই সময় এসে শুনেছি এখানে আমেরিকার ঘাঁটি রয়েছে। কিন্তু দেশের কোন ক্ষতি হয়েছে, তা আমি আজও শুনিনি বা পত্রপত্রিকায় কখনো দেখিনি। বরং মাত্র ক’দিন আগে এই দেশটাকে প্রতিবেশী কয়েকটি রাষ্ট্র অবরোধ করেছিল। যদি তখন এই দেশে আমেরিকার ঘাঁটি না থাকতো, তাহলে প্রতিবেশী দেশ গুলো এতো বড় রাঘব বোয়াল ছিল যে, যে কোন সময় টুকরা টুকরা করে দেশটাকে গিলে ফেলতো। কিন্তু আমেরিকার ঘাঁটি থাকার কারণে আমরা যারা এখানে বসবাস করছি, তারা প্রতিবেশী দেশ থেকে সামরিক হামলার কোন আশংকা কখনো করিনি।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, মায়ানমার (বার্মা) কিংবা পাকিস্তান-কারোই আচরণ আমাদের দেশের জন্য সুখকর নয়। এককথায় তাদেরকে ভাল প্রতিবেশী বলা যায় না। এই অবস্থায় আমাদের যদি বিকল্প একটি রক্ষা শক্তি আশে পাশে অবস্থান করে,
তাহলে আমাদের দিকে চোঁখ রাঙাতে প্রতিবেশীরা হিসাব করবে। আর সেই বিকল্পটা যদি আমেরিকা হয়, তাহলে আমার দৃষ্টিতে তো আরো ভাল।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আমেরিকার ঘাঁটি হলে ক্ষতি কার? ক্ষতি হলো ভারত এবং চীনের। এই অঞ্চলে তাদের একক আধিপত্য থাকবেনা। কিন্তু বাংলাদেশের কোন ক্ষতি আছে বলে আমি মনে করছি না।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ-যার আয়তন ৮ বর্গ কিলোমিটার (কোন কোন বর্ণনায় ১৭ কিলোমিটার)। যা আমেরিকাকে কি আমরা বিলাস (মাগনা) থাকতে দেবো?
না। বরং তার বিনিময়ে আমরা ভাড়া পাবো, রেমিটেন্স পাবো। যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় জোগান হবে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে আমাদের এখনকার বার্ষিক আয় কত? টুরিজমের মাধ্যমে আমরা কতটাকা আয় করছি আর কতটাকা ব্যয় করছি? দিন শেষে আমাদের ব্যালেন্স কত? আমেরিকাকে যদি আমরা সুযোগ দেই, তাহলে যে অর্থ সুবিধা পাবো, তা কি এর চেয়ে কম কিছু হবে?
আমার পাঠকদের কয়জন ইতিমধ্যে সেন্টমার্টিন ভিজিট করেছেন? আমি তো কখনো যাইনি এবং যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। তাহলে আমার ব্যক্তিগত কোন ইন্টারেস্ট নাই। সেন্ট মার্টিনে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৬হাজার। যাদের
প্রায় সকলের পেশা হলো মাছ শিকার। তারা স্থায়ী ভাবে বসত বাড়ি নিয়ে
স্বাচ্ছন্দে সুখের জীবন যাপন করেন এমন অবস্থা আছে কি না, তা আমার জানা নেই। যদি থাকেন, তাহলে তাদেরকে যদি আমরা চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার, টেকনাফ বা অন্য কোথাও শিফট করি,
তাহলে তাদের জীবনমান সহজ হবে,
না এখন যেভাবে আছেন তাতে তাদের জীবন মান সহজ হবে?
আমি যেই দেশে থাকি, সেই দেশের কথা আরেকবার বলি। সেই দেশটির প্রাক্তণ শাসক যিনি ছিলেন, তিনির একটা আইডিয়া ছিল এমনঃ আশ্রয় নিতে চাইলে বড় বটগাছের নিচে আশ্রয় নাও, তাহলে নিজে উপকৃত হবে। এই দেশটি আমেরিকা নামক বড় বটগাছের নিচে আশ্রয় নেয়ার কারণে তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা হয়েছে। সাথে সাথে তারা ঈর্ষনীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমি ২৫ বছর আগে যে দেশে এসে সাগর পারে মাত্র ২টি বিল্ডিং দেখেছিলাম, সেই দেশের সাগর পারে এখন সহস্র বিল্ডিং। তারা এখন বিশ্বের এক নম্বর ধনী রাষ্ট্র, তারা এখন বিভিন্ন দেশের সমস্যায় দূতিয়ালী করে, তারা আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত এবং স্বপ্নের একটি দেশ। তাহলে আমাদের সমস্যা কোথায়? আমরা ভারত, চীন, বার্মা, পাকিস্তানকে বড় বটগাছ মনে করবো, না আমেরিকাকে? বরং আমরা যদি আমেরিকাকে সেন্ট মার্টিন ব্যবহারের সুযোগ দেই,
তাহলে আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে,
আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য তারা আমাদের প্রহরী হিসাবে ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য যে, আমেরিকা কোন ছোট দেশের নাম নয়,
বাংলাদেশের মতো সমপরিমাণ আয়তনের ভূখন্ড তাদের দেশে খালি পড়ে আছে।
আরো উল্লেখ্য যে,
যারা নিজেদের বিবেককে অন্য কোন দেশের কাছে ইজারা দিয়ে রেখেছেন, যাদের ধমনীতে গোলামী আর তোষামোদী মিশ্রিত, তারা আমার উপরের বক্তব্য হজম করতে অসুবিধা হবে।
0 Comments