দারসুল কুরআনঃ ইসলামী সংগঠন - মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম



তেলাওয়াত ও অনুবাদঃ

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ﴾

১০২. হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহকে ভয় করো, ঠিক যতটুকু ভয় তাকে করা উচিত (আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ) আত্মসমর্পণকারী না হয়ে তোমরা কখনো মৃত্যু বরণ করো না

﴿وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾

১০৩. তোমরা সবাই মিলে আল্লাহ্ তায়ালার রশিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ করো, যখন তোমরা একে অপরের দুশমন ছিলে,আল্লাহ্ তায়ালা (তাঁর দ্বীনের বন্ধন দিয়ে) তোমাদের একের জন্য অপরের মনে ভালবাসার সঞ্চার করে দিলেন অতপর (যুগ যগান্তরের শত্রুতা ভূলে) তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে একে অপরের ‘ভাই’ হয়ে গেলে, অথচ তোমরা ছিলে (হানাহানির) আগুনে ভরা এ (গভীর) খাদের প্রান্তসীমায় (দাঁড়ানো) সেই থেকে আল্লাহ্ তায়ালা (তার রহমাত দিয়ে) তোমাদের উদ্ধার করালেন  আল্লাহ্ তায়ালা এভাবেই তাঁর নিদর্শন সমূহ তোমাদের কাছে স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন, যাতে করে তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারো

﴿وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾

১০৪. তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল থাকবে, যারা (মানুষকে সত্য ও ) ন্যায়ের আদেশ দেবে এবং (অসত্য ও) অন্যায় কাজ থেকে (তাদের)  বিরত রাখবে (যারা এই দলে শামিল হবে) সত্যিকার অর্থে তারাই সাফল্যমন্ডিত হবে

সূরা আলে ইমরান সম্পর্কে কিছু কথা

F  ইহা কুরআনের তৃতীয় সূরা

F  সূরার মোট আয়াত সংখ্যাঃ ২০০

F  সূরার মোট রুকু সংখ্যাাঃ ২০

F  ইহা একটি মাদানী সূরা

F  আলোচ্য আয়াতঃ ১০২-১০৪

F  ইহা কুরআনের দীর্ঘ সূরা সমূহের একটি

নামকরণঃ

§  সূরার  ৩৩নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ

﴿إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ آدَمَ وَنُوحًا وَآلَ إِبْرَاهِيمَ وَآلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِينَ﴾

আল্লাহ্ আদম, নূহ, ইব্রাহীমের বংশধর ও ইমরানের বংশধরদেরকে সারা দুনিয়াবাসীর ওপর প্রাধান্য দিয়ে নিজের রিসালাতের জন্য বাছাই করে নিয়েছিলেন

§  এ আয়াতের آل عمران শব্দ থেকে সূরার নামকরণ করা হয়েছেঃ سورة آل عمران

শানে নুযুলঃ

§  বদর যুদ্ধের নিকটবর্তী সময়ে মদীনার প্রসিদ্ধ গোত্র আউস ও খাজরাজের মাঝে নিজ গোত্রের বড়ত্ব প্রকাশের প্রচেষ্টায় অনুষ্টিত বিতর্কের সুত্রপাত ও তা থেকে বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হবার পরিস্তিতির ঘটনার প্রেক্ষিতে

ব্যাখ্যাঃ

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ﴾

§  তাকওয়াঃ

-      তাকওয়া মানে সহজ কথায়ঃ আল্লাহর ভয় প্রকৃত পক্ষে তাকওয়া মানে বাঁচা, রক্ষা করা যেমন আমরা দোয়া করিঃ

﴿رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾

“হে রব আমাদের দুনিয়ার কল্যান দাও, কল্যান দাও আখেরাতের আর আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে বাচাঁও আমাদের রক্ষা কর” (সূরা আল বাকারাহঃ ২০১)

-      আল্লাহর ভয়ে আল্লাহর নাফরমানী মূলক কাজ থেকে বেচেঁ থাকা হল তাকওয়া

-      সকল কাজে এবং সকল তৎপরতায় একথা চিন্থা করা যে, এ ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ কি? ঐদি এতে আল্লাহর নির্দেশ পজেটিভ হয় তাহলে করা আর যদি নেগেটিভ হয়, তাহলে তা না করাই তাকওয়া

§  তাকওয়া ব্যাপারে কুরআনঃ

﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا﴾

হে মানুষ, তোমারা তোমাদের মালিককে ভয় করো, যিনি তোমাদের একটি (মাত্র) মানুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতপর তিনি তা থেকে (তার) জুড়ি পয়দা করেছেন,(এরপর) তিনি তাদের (এই আদি জুড়ি) থেকে বহু সংখ্যক নর-নারী (দুনিয়ার চারিদিকে) ছড়িয়ে দিয়েছেন, (হে মানুষ) তোমরা ভয় করো আল্লাহ তায়ালাকে, যার (পবিত্র) নামে তোমরা একে অপরের কাছে অধিকার (ও পাওনা) দাবী করো এবং (সম্মান করো) গর্ভ (ধারীনী মা)কে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর তীক্ষ দৃষ্টি রেখে চলেছেন” (সূরা আন নিসাঃ ১)

﴿يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَلْتَنظُرْ نَفْسٌۭ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍۢ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا تَعْمَلُونَ﴾

 হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, (তোমাদের) প্রত্যেকেরই উচিত (ভাল করে) তাকিয়ে দেখা যে, আগামী কাল (আল্লাহর সানে পেশ করার) জন্য সে কি (আমলনামা সোখানে) পেশ করতে যাচ্ছে তোমরা আল্লাহকে ভয় করতে থাকোম অবশ্যই তোমরা যা কিছু করছো, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্ণাঙ্গ খবর রাখেন” (সূরা আল হাশরঃ ১৮)

﴿يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَقُولُوا۟ قَوْلًۭا سَدِيدًۭا﴾﴿يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَـٰلَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا﴾ 

হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এং (সর্বদা) সত্য কথা বলো তাহলে তিনি তোমাদের জীবনের কর্মকান্ডকে শুধরে দিবেন এবং তোমাদের গুনাহ খাতা মাফ করে দিবেন যে কোনো ব্যক্তিই আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য লাভ করবে” (সূরা আল আহযাবঃ ৭০-৭১)                         

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾

“হে ঈমানদারগন তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূববর্তীদের উপর আশা করা যায় এর মাধ্যমে তোমরা মুত্তাকী হতে পারবে। (সূরা আল বাকারাহঃ ১৮৩)

﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾

“হে ঈমানদারগন তোমরা গোলামী  করো তোমাদের রবের, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন আর সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পূর্ববর্তীদেরও আশা করা যায় এর মাধ্যমে তোমরা মুত্তাকী হতে পারবে।” (সূরা আল বাকারাহঃ ২১)

§  তাকওয়ার প্রতি এত তাগিদ কেনঃ

খলিফার দায়িত্ব পালন করাতে এধরনের লোক দরকার যার আল্লাহর ভয়ের কারণে ঘুষ খাবেনা, দূর্নীতি করবেনা, স্বজনপ্রীতি করবেনা, আত্মীয় করণ করবেনা, সন্ত্রাস করবেনা, গরীবের হক মেরে খাবেনা, অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেনা

﴿وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ﴾

§  মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করনাঃ

-          মুত্তাকী না হলে প্রকৃত মুসলমান হওয়া যাবেনা

-          মুসলমান মানে আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পনকারী

§  মুসলমান সম্পর্কে কুরআনঃ

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ﴾

হে মুমিনগন তোমরা পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে দাখিল হও আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করনা নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন” (সূরা আল বাকারাহঃ ২০৮)

§  মুসলমানের পরিচয়ঃ

﴿وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ ۚ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ ۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ۚ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ﴾

“তোমরা জিহাদ কর (সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও) আল্লাহর জন্য, যতটুকু প্রচেষ্টা করা আল্লাহর হক তিনি তোমাদেরকে বাছাই করেছেন তোমাদের জন্য দ্বীনের ব্যাপারে কোন সংকীর্ণতা রাখেননি তোমাদের দল হল তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের দল (তোমরা হলে তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের দলের) আর এ দলের নাম রেখেছেন মুসলিম।” (সূরা আল হাজ্জঃ ৭৮)

-          ইব্রাহীম আ. কে আল্লাহ পরীক্ষা করেছেন সকল পরীক্ষায় ইব্রাহীম আ. পাশ করেছেন যেমনঃ

১. অগ্নিকূন্ডে নিক্ষেপ

২. সন্তান না দেয়া

৩. সন্তান ও স্ত্রীকে নির্বাসন দেয়া

৪. সন্তানকে নিজ হাতে জবাই করা

-          মুসলমান যে দাবী করবে, সে ইব্রাহীম আ. এর সন্তান হতে হবে

-          মুসলমান দাবী করলে পিতার যোগ্য সন্তান হতে হবে

-          ইব্রাহীম আ. এর মত পরীক্ষার সম্মূখীন হতে হবে এবং পাশ করতে হবে

﴿وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًۭا مِّمَّن دَعَآ إِلَى ٱللَّهِ وَعَمِلَ صَـٰلِحًۭا وَقَالَ إِنَّنِى مِنَ ٱلْمُسْلِمِينَ﴾

তার কথার চেয়ে ভাল কথা (উত্তম কথা) আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয় (ওয়াজ করে) আর সৎ কাজ করে (আমলে সালেহ করে, ওয়াজের সাথে সাথে যে ওয়াজ করে তা নিজে আমল করে) আর ঘোষনা করে আমি মুসলমান (আমি সেই গর্বিত জাতির সদস্য, যাদের নাম হল মুসলমান” (সূরা হা মীম আস সেজদাঃ ৩৩)

-          আল্লাহর অর্ডার এর কাছে নিজের যাবতীয় স্বাধীনতা বিসর্জন দেবে

§  মুসলমান না হয়ে মৃত্যু বরণ করনা-অর্থ কিঃ

1.        মৃত্যু নোটিশ দিয়ে আসেনা টেলিফোন বিল, কারেন্ট বিল, পানি বিল, গ্যাস বিল ইত্যাদির নির্দিষ্ট টাইম থাকে

2.        এই মাহফিল থেকে বের হওয়ার কোন গ্যারান্টি নাই

3.       বিধায় এমন একটি পরিবেশ চাই, যা সব সময় মুসলমানের মৃত্যু হতে সহযোগিতা করে

4.       মসজিদের সাইন বোর্ড-ধুমপান নিষেধ, জুতা নিয়ে প্রবেশ নিষেধ বনাম মোবাইল বন্ধ করুন

5.       কুরআন সুন্নাহ পরিষদের অফিসের পরিবেশ

§  যে অবস্থায়ই মৃত্যু হোক-মৃত্যু হবে মুসলমানের মৃত্যু তার পথ ২টিঃ

একঃ জামায়াতী জিন্দেগীঃ

﴿وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾

 তোমরা সবাই মিলে আল্লাহ্ তায়ালার রশিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ করো, যখন তোমরা একে অপরের দুশমন ছিলে, আল্লাহ্ তায়ালা (তাঁর দ্বীনের বন্ধন দিয়ে) তোমাদের একের জন্য অপরের মনে ভালবাসার সঞ্চার করে দিলেন অতপর (যুগ যগান্তরের শত্র“তা ভূলে) তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে একে অপরের ‘ভাই’ হয়ে গেলে, অথচ তোমরা ছিলে (হানাহানির) আগুনে ভরা এ (গভীর) খাদের প্রান্তসীমায় (দাঁড়ানো) সেই থেকে আল্লাহ্ তায়ালা (তার রহমাত দিয়ে) তোমাদের উদ্ধার করালেন আল্লাহ্ তায়ালা এভাবেই তাঁর নিদর্শন সমূহ তোমাদের কাছে স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন, যাতে করে তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারো।”

দুইঃ সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধঃ

﴿وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾

“তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল থাকবে, যারা (মানুষকে সত্য ও ) ন্যায়ের আদেশ দেবে এবং (অসত্য ও ) অন্যায় কাজ থেকে (তাদের)  বিরত রাখবে (যারা এই দলে শামিল হবে) সত্যিকার অর্থে তারাই সাফল্যমন্ডিত হবে

﴿وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا﴾

§  جميعا এর পরে আবার تفرقوا  সংঘবদ্ধ হও বললে চলতো, কিন্তু তাকিদের জন্য تفرقوا  বলা হয়ে হল

§  মুত্তাকী না হলে মুসলমান হওয়া যায়নাঃ

-      মুত্তাকী হতে হলে জামায়াতবদ্ধ হতে হবে

-      জামায়াতে শামীল হয়ে জামায়াতের পরিবেশে নিজেকে সপোর্দ করে দিতে হবে, যাতে আপনার যখনই মৃত্যু হোক না কেন, এমন পরিবেশে আপনি সর্বদা আপনি থাকবেন, যে আপনার মৃত্যু হবে মুসলমানের মৃত্যু

§  জামায়াত মানেঃ সংগঠন, সংঘবদ্ধ করণ, Organization.

§  সংগঠন ব্যাপারে মানুষের দেহ একটা উদাহরণঃ

-      মানব দেহের এক-একটি পার্টকে বলেঃ Organ

-      হাদীসে মুসলিম জনগোষ্টীকে বলা হয়েছে “একটি দেহের ন্যায়”

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِي تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى‏.‏

মুমিনদের পারস্পারিক ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতি মানব দেহ সদৃস তার কোন অংশে রোগাক্রান্ত হলে সমগ্র দেহ নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে দূর্বল হয়ে পড়ে” (বুখারী)

§  সংগঠন কিঃ

-      কিছু সংখ্যক মানুষ নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একদেহ এক প্রাণরূপে কাজ করার সামষ্টিক কাঠামেরাই সংগঠন

-      ইকামাতে দ্বীনের কাজ আনজাম দেয় যে সংগঠন, তা ‘ইসলামী সংগঠন

§  সংগঠন কেন করতে হবেঃ

নিম্নোক্ত ১৫টি কারণে আমাদেরকে সংগঠন করতে হবে সংগঠনে সংঘবদ্ধ থাকতে আমরা বাধ্যঃ

১. সংগঠন আল্লাহর নির্দেশঃ

﴿وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا﴾

“তোমরা সবাই মিলে আল্লাহ্ তায়ালার রশিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১০৩)

২. আল্লাহর মাহবুব বান্দা হতেঃ

﴿إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلَّذِينَ يُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِهِۦ صَفًّۭا كَأَنَّهُم بُنْيَـٰنٌۭ مَّرْصُوصٌۭ﴾

আল্লাহ তো ভালবাসেন তাদেরকে, যারা তার পথে লড়াই করে সংঘবদ্ধ হয়ে এমন ভাবে যে, তারা সীসাঢালা প্রাচীর” (সূরা আস সাফঃ ০৪)

৩. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার জন্যঃ

﴿وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾

“তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল থাকবে, যারা (মানুষকে সত্য ও ) ন্যায়ের আদেশ দেবে এবং (অসত্য ও ) অন্যায় কাজ থেকে (তাদের)  বিরত রাখবে (যারা এই দলে শামিল হবে) সত্যিকার অর্থে তারাই সাফল্যমন্ডিত হবে (সূরা আলে ইমরানঃ ১০৪)

৪. আনুগত্যের ফরজ আদায় করার জন্যঃ

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ﴾

“হে তোমরা যারা যারা ঈমান এনেছে! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসুলের এবং তোমাদের মাঝে যারা দায়িত্বশীল (সূরা আন নিসাঃ ৫৯)

৫. নবী সা. এর অন্যতম কর্মসূচী ছিল জামায়াতঃ

-      নবীর কর্মসূচী ছিল ৪টি

১. দাওয়াত ইলাল্লাহ

২. তানযীম

৩. ইসলানি নাস

৪. ইসলাহী হুকুমাত

৬. সংগঠন রাসূল সা. এর অন্যতম নির্দেশঃ

عَنِ الْحَارِثِ الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم أَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ بِالْجَمَاعَةِ وَبِالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَالْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ فِي سَبِيلِ اللهِ فَإِنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنْ الْجَمَاعَةِ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ إِلَى أَنْ يَرْجِعَ وَمَنْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَهُوَ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى؟ قَالَ وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ فَادْعُوا الْمُسْلِمِينَ بِمَا سَمَّاهُمْ الْمُسْلِمِينَ الْمُؤْمِنِينَ عِبَادَ اللهِ عَزَّ وَجَلّ

“হারিস আল আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, “আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করছি; যা আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন সংগঠনের সাথে থাকবে, দায়িত্বশীলের কথা শুনবে, দায়িত্বশীলের আনুগত্য করবে, হিজরত করবে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে যেহেতু যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জামায়াত তথা সংগঠন থেকে দূরে সরে যায়, সে যেন নিজের গলা থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলে-যতক্ষণ না সে প্রত্যাবর্তন করে আর যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের দাওয়াত প্রদান করে, সে জাহান্নামীদের দলভূক্ত লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল সা. যদি সে রোযা রাখে এবং নামায পড়ে? তিনি বললেনঃ যদিও সে রোযা রাখে ও নামায পড়ে অতএব, হে আল্লাহর বান্দারা, তেমারা মুসলমানদের আহবান করো, যাদেরকে নাম দেয়া হয়েছে মুসলিম ও মুমিন” (আহমাদ)

৭. সংগঠন ছাড়া ইসলামই নেইঃ

عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: تَطَاوَلَ النَّاسُ فِي الْبِنَاءِ فِي زَمَنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَقَالَ عُمَرُ: يَا مَعْشَرَ الْعُرَيْبِ، الْأَرْضَ الْأَرْضَ، إِنَّهُ لَا إِسْلَامَ إِلَّا بِجَمَاعَةٍ، وَلَا جَمَاعَةَ إِلَّا بِإِمَارَةٍ، وَلَا إِمَارَةَ إِلَّا بِطَاعَةٍ، فَمَنْ سَوَّدَهُ قَوْمُهُ عَلَى الْفِقْهِ، كَانَ حَيَاةً لَهُ وَلَهُمْ، وَمَنْ سَوَّدَهُ قَوْمُهُ عَلَى غَيْرِ فِقْهٍ، كَانَ هَلَاكًا لَهُ وَلَهُمْ

“তামীম আদ দারী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার রা. এর জামানায় লোকেরা সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করছিল তখন উমার রা. বলেন, হে আরব জাতি! যমীনে, যমীনে (বসবাস কর, উচ্চ দালান নির্মাণ করোনা) কেননা, নিশ্চয়ই জামায়াত (সংগঠন) ছাড়া ইসলাম নেই, আর ইমারত (নেতৃত্ব) ছাড়া সংগঠন নেই, আর আনুগত্য ছাড়া ইমারত (নেতৃত্ব) নেই ফলে প্রজ্ঞা বা গভীর জ্ঞানের ভিত্তিতে জাতি যে ব্যক্তিকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচন করবে, সে হবে তার নিজের জন্য ও তার জাতির জন্য জীবন সমতুল্য আর, প্রজ্ঞা বা গভীর জ্ঞান ব্যতীত অন্য কিছুর ভিত্তিতে জাতি যে ব্যক্তিকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচন করবে, সে তার নিজের ও জাতির জন্য ধ্বংসের কারণ হবে (ইবুন আব্দুল বার)

৮. জাহেলিয়াতের মৃত্যু হতে বাঁচতেঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم أَنَّهُ قَالَ مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً وَمَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبَةٍ أَوْ يَدْعُو إِلَى عَصَبَةٍ أَوْ يَنْصُرُ عَصَبَةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ وَمَنْ خَرَجَ عَلَى أُمَّتِي يَضْرِبُ بَرَّهَا وَفَاجِرَهَا وَلاَ يَتَحَاشَ مِنْ مُؤْمِنِهَا وَلاَ يَفِي لِذِي عَهْدٍ عَهْدَهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ‏.‏

“আবূ হুরায়রা রা. এর সুত্রে নবী সা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করলআর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে জাতীয়তাবাদের জন্য রাগান্বিত হয় অথবা জাতীয়তাবাদের দিকে আহবান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন ব্যাপার থাকেনা) আর তাতে নিহত হয়, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে সে ব্যক্তি আমার উম্মাতের ভাল মন্দ সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করেছে মুমিনকেও রেহাই দেয়না এবং যার সাথে সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় তার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করে না, সে আমার (কেউ) নয় আমিও তার (কেউ) নই” (মুসলিম)

৯. আল্লাহর হেফাজতে নিজেকে সমর্পনের জন্যঃ

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم قَالَ ‏إِنَّ اللَّهَ لاَ يَجْمَعُ أُمَّتِي أَوْ قَالَ أُمَّةَ مُحَمَّدٍ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم عَلَى ضَلاَلَةٍ وَيَدُ اللَّهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ وَمَنْ شَذَّ شَذَّ إِلَى النَّارِ.

ইবন উমার রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আমার উম্মাতকে (অথাব বলেছেনঃ মুহাম্মদ সা. এর উম্মতকে) কখনো গুমরাহীর উপর একত্রিত করবেন না আর আল্লাহর হাত হল জামাআতের উপর যে ব্যক্তি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে” (তিরমিযি)

১০. সংগঠন সকল নবীর সুন্নাতঃ

﴿شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحًۭا وَٱلَّذِىٓ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِۦٓ إِبْرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓ ۖ أَنْ أَقِيمُوا۟ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا۟ فِيهِ﴾

তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের সেই নিয়ম কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছেন যার নির্দেশ তিনি নুহ আ. কে দিয়েছিলেন আর যা এখন তোমার প্রতি যে হেদায়াত ওহীর মাধ্যমে প্রদান করেছি, আর সেই হেদায়াত যা আমি ইব্রাহীম আ., মুসা আ. ও ঈসা আ. এর প্রতি প্রদান করেছিলাম (সব নির্দেশের সারকথা ছিল) যে, তোমরা দ্বীন কায়েম কর, এ ব্যাপারে পরস্পার দলাদলীতে লিপ্ত হয়োনা (সূরা আশ শুরাঃ ১৩)

১১. বাইয়াত গ্রহণের জন্যঃ

عَنْ نَافِعٍ، قَالَ جَاءَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُطِيعٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حِينَ كَانَ مِنْ أَمْرِ الْحَرَّةِ مَا كَانَ زَمَنَ يَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ فَقَالَ اطْرَحُوا لأَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ وِسَادَةً فَقَالَ إِنِّي لَمْ آتِكَ لأَجْلِسَ أَتَيْتُكَ لأُحَدِّثَكَ حَدِيثًا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ  صلَّى اللهُ عليه وسلَّم يَقُولُهُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم يَقُولُ مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ حُجَّةَ لَهُ وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً ‏.‏

“নাফি’ রাহি. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমার রা. আবদুল্লাহ ইবনু মুতী রা. এর নিকট এলেন তখন হাররা (হৃদয় বিদারক) এর ঘটনা ঘটেছে এবং যুগটা ছিল ইয়াযীদ ইবনু মু’আবিয়ার যুগ তখন তিনি (ইবনু মুতী’) বললেন, আবূ আবদুর রহমানের জন্য বিছানা পেতে দাও তখন তিনি (ইবনে উমর) বললেন, আমি তোমার কাছে বসতে আসিনি, এসেছি রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট যে হাদীস শুনেছি তা তোমাকে শুনাতে আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি (আমীরের) আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে তার কোন দলীল থাকবে না আর যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো আর তার ঘাড়ে আনুগত্যের কোন চুক্তি নেই, তার মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু হবে” (মুসলিম)

১২. জান্নাতের পরম সুখ ভোগ করতেঃ

عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم أَكْرِمُوا أَصْحَابِي فَإِنَّهُمْ خِيَارُكُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ يَظْهَرُ الْكَذِبُ حَتَّى إِنَّ الرَّجُلَ لَيَحْلِفُ وَلَا يُسْتَحْلَفُ وَيَشْهَدُ وَلَا يُسْتَشْهَدُ أَلَا مَنْ سَرَّهُ بُحْبُوحَةُ الْجَنَّةِ فَلْيَلْزَمِ الْجَمَاعَةَ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ ثَالِثُهُمْ وَمَنْ سَرَّتْهُ حَسَنَتُهُ وَسَاءَتْهُ سيئته فَهُوَ مُؤمن.

“উমার রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ আমার সাহাবীদেরকে সম্মান কর কেননা তারা তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম লোক অতঃপর তৎপরবর্তী লোকেদেরকে, অতঃপর তৎপরবর্তী লোকেদেরকে, এরপর প্রকাশ্যে মিথ্যা চলতে থাকবে এমনকি কোন লোক কসম করবে, অথচ তার নিকট হতে কসম চাওয়া হবে না সে সাক্ষ্য দিবে, অথচ তার কাছ হতে সাক্ষ্য চাওয়া হবে না সাবধান! যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যস্থলের আকাঙ্ক্ষী, সে যেন জামায়াতকে ধরে রাখে কেননা শয়তান একক লোকের সাথে থাকে আর সে দুজনের জামায়াত হতে বেশি দূরে থাকে তোমাদের কেউ যেন কোন বেগানা নারীর সাথে নির্জনে অবস্থান না করে কেননা শয়তান তৃতীয় লোক হিসেবে তাদের সাথে উপস্থিত থাকে আর যার ভালো কাজে মনের মধ্যে আনন্দ জাগে এবং বদকাজ তাকে চিন্তিত করে ফেলে সে-ই প্রকৃত ঈমানদার” (মিশকাত)

১৩. শয়তানের আক্রমন থেকে বাঁচতেঃ

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم إِنَّ الشَّيْطَانَ ذِئْبُ الْإِنْسَانِ كَذِئْبِ الْغَنَمِ يَأْخُذُ الشَّاذَّةَ وَالْقَاصِيَةَ وَالنَّاحِيَةَ وَإِيَاكُمْ وَالشِّعَابَ وَعَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَالْعَامَّةِ.

মেষ পালের (শত্রু) বাঘের ন্যায় মানুষের বাঘ হল শয়তান বাঘ সেই মেষটিকেই ধরে নিয়ে যায়, যে একাকী বিচরণ করে কিংবা পাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা হয়ে যায় সাবধান, তোমরা দল ছেড়ে দূর্গম গিরি পথে যাবেনা এবং তোমরা অবশ্যই দলবদ্ধ ভাবে সাধারণের সাথে থাকবে” (আহমাদ)

১৪. দোজখ হতে বাঁচতেঃ

﴿وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا﴾

“তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ করো, যখন তোমরা একে অপরের দুশমন ছিলে,আল্লাহ্ তায়ালা (তাঁর দ্বীনের বন্ধন দিয়ে) তোমাদের একের জন্য অপরের মনে ভালবাসার সঞ্চার করে দিলেন অতপর (যুগ যগান্তরের শত্রুতা ভূলে) তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে একে অপরের ‘ভাই’ হয়ে গেলে, অথচ তোমরা ছিলে (হানাহানির) আগুনে ভরা এ (গভীর) খাদের প্রান্তসীমায় (দাঁড়ানো) সেই থেকে আল্লাহ্ তায়ালা (তার রহমাত দিয়ে) তোমাদের উদ্ধার করালেন।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১০৩)

১৫. সাহাবায়ে কিরামদের কর্মসূচীঃ

-      সাহাবায়ে কিরামরা বুঝতেন

o  সংগঠন ছাড়া ইসলাম নেই-  لَا إِسْلَامَ إِلَّا بِجَمَاعَةٍ

o  আর সংগঠন হয়না নেতৃত্ব ছাড়া- وَلَا جَمَاعَةَ إِلَّا بِإِمَارَةٍ

o  আর সেই ইসলামের উপর আমল করতে গিয়ে সংগঠন রক্ষার জন্য রাসূলের ইন্তিকালের পর তার দাফনের কাজ রেখে প্রথমে নেতা নির্বাচন করে আবু বকরের (রা.) এর হতে হাতে হাত রেখে  আনুগত্যের বাইয়াত নিয়ে পরে নবীর লাশ দাফন করেছেন কারণ নেতা না হলে সংগঠন হয় না , আর সংগঠন না থাকলে ইসলামই নাই

শিক্ষাঃ

আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য আমাদের সংগঠনের অধীনে সবসময় থাকতে হবে




Post a Comment

0 Comments