সোমবার নিয়ে যত কথা – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

সোমবার নিয়ে যত কথা

আল্লাহর রাসূল সা. এর তিনটি হাদীস, যা যথাক্রমে মুসনাদে আহমাদ, সহীহ মুসলিম ও তিরমিযিতে বর্ণিত হয়েছেঃ

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما، قَالَوُلِدَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، وَاسْتُنْبِئَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، وَخَرَجَ مُهَاجِرًا مِنْ مَكَّةَ إِلَى الْمَدِينَةِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، وَقَدِمَ الْمَدِينَةَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، وَتُوُفِّيَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ، وَرَفَعَ الْحَجَرَ الْأَسْوَدَ يَوْمَ الاثنين.

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সা. জন্ম গ্রহণ করেন সোমবারে, তার কাছে প্রথম ওহী আসে সোমবারে, তিনি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেছেন সোমবারে, হিজরত করে মদীনায় পৌছেছেন সোমবারে, ইনতিকাল করেছেন সোমবারে এবং হাজারে আসওয়াদ উঠিয়েছেন সোমবারে” (মুসনাদে আহমাদ)

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ رضي الله عنه أَنَّ أَعْرَابِيًّا قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا تَقُولُ فِي صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ فَقَالَ ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَأُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ

আবি কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত, জনৈক বেদুইন জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ সা.! সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে কি বলেন? তিনি বললেনঃ এই দিনে আমি আমি জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই আমার প্রতি ওহী নাযিল শুরু হয়েছে” (মুসলিম)

عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها قَالَتْ: تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الاثْنَيْنِ .

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. সোমবারের দিন ইনতিকাল করেন। (তিরমিযি)

উপরের হাদীস গুলো থেকে আমরা জানলামঃ

একঃ সোমবারে রাসূল সা. জন্মগ্রহণ করেছেন

দুইঃ সোমবারে রাসূল সা. এর কাছে প্রথম ওহী আসে

তিনঃ সোমবারে রাসূল সা. হিজরতের উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে বের হোন

চারঃ সোমবারে রাসূল সা. হিজরত করে মদীনায় পৌছেন

পাঁচঃ সোমবারে রাসূল সা. ইনতিকাল করেন

ছয়ঃ সোমবারে রাসূল সা. হাজারে আসওয়াদ উঠিয়েছিলেন

মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়ঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ.

“আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমল পেশ করা হয়। সুতরাং আমি ভালবাসি সায়িম অবস্থায় আমার আমলসমূহ পেশ করা হয়।” (মিশকাত)

এই হাদীস থেকে আমরা জানলামঃ

সাত: সোমবারে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়।

সহীহ মুসলিমে নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্ণিত হয়েছেঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا إِلاَّ رَجُلاً كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ فَيُقَالُ أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا أَنْظِرُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَصْطَلِحَا.‏

“আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়। এরপর এমন সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যারা আল্লাহর সঙ্গে শরীক স্থাপন করে না। তবে সে ব্যক্তিকে নয়, যার ভাই ও তার মধ্যে শত্রুতা বিদ্যমান। এরপর বলা হবে, এই দুজনকে আপোষ রফা করার জন্য অবকাশ দাও, এই দুজনকে আপোষ রফা করার জন্য অবকাশ দাও, এই দু’জনকে আপোষ রফার জন্য অবকাশ দাও।” (মুসলিম)

এই হাদীস থেকে আমরা জানলামঃ

আট: সোমবারে জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়

নয়: সোমবারে শিরক করেনা এমন সকল বান্দাকে ক্ষমা করা হয়

এছাড়াও আমরা নিম্নোক্ত হাদীস সমূহ থেকে যা জানতে পারিঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِي فَقَالَ: خَلَقَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ التُّرْبَةَ يَوْمَ السَّبْتِ وَخَلَقَ فِيهَا الْجِبَالَ يَوْمَ الأَحَدِ وَخَلَقَ الشَّجَرَ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَخَلَقَ الْمَكْرُوهَ يَوْمَ الثُّلاَثَاءِ وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الأَرْبِعَاءِ وَبَثَّ فِيهَا الدَّوَابَّ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَخَلَقَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ بَعْدَ الْعَصْرِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فِي آخِرِ الْخَلْقِ وَفِي آخِرِ سَاعَةٍ مِنْ سَاعَاتِ الْجُمُعَةِ فِيمَا بَيْنَ الْعَصْرِ إِلَى اللَّيْلِ‏.‏

আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তাআলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন। রোববার দিন তিনি এতে পর্বত সৃষ্টি করেন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি আপদ বিপদ সৃষ্টি করেন। বুধবার দিন তিনি নূর সৃষ্টি করেন। বৃহস্পতিবার দিন তিনি পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর তিনি আদম আ. কে সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ জুমুআর দিনের সময় সমূহের শেষ মুহূর্তে (মাখলূক) আসর থেকে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন।

এই হাদীস থেকে আমরা জানলামঃ

দশ: সোমবারে পৃথিবীর বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করা হয়েছে

عَنْ يَحْيَى الْبَهْرَانِيِّ، قَالَ ذَكَرُوا النَّبِيذَ عِنْدَ ابْنِ عَبَّاسٍ فَقَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُنْتَبَذُ لَهُ فِي سِقَاءٍ - قَالَ شُعْبَةُ مِنْ لَيْلَةِ الاِثْنَيْنِ - فَيَشْرَبُهُ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَالثَّلاَثَاءِ إِلَى الْعَصْرِ فَإِنْ فَضَلَ مِنْهُ شَىْءٌ سَقَاهُ الْخَادِمَ أَوْ صَبَّهُ ‏.‏

ইয়াহইয়া বাহরানী রাহি. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মানুষেরা ইবনু আব্বাস রা. এর কাছে ‘নবীয’ এর ব্যাপারে আলোচনা করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সা.এর জন্য মশকে নবীয প্রস্তুত করা হতো। (রাবী) শু’বাহ্‌ বলেনসোমবারে রাতে (তথা রোববার দিবাগত রাতে) তিনি তা সোমবার দিন ও মঙ্গলবার আসর পর্যন্ত পান করতেন। এরপরও কিছু বাকী থাকলে তিনি সেটা খাদিমকে পান করাতেন বা ফেলে দিতেন। (মুসলিম)

উল্লেখ্য, নবীয হলো খেজুর থেকে প্রস্তুতকৃত এক প্রকারের পানীয়

এই হাদীস থেকে আমরা জানলামঃ

এগার: সোমবার আল্লাহর রাসূল সা. নবীয পান করতেন

عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها  قَالَتْ: إِنَّ أَبَا بَكْرٍ لَمَّا حَضَرَتْهُ الْوَفَاةُ، قَالَ: أَيُّ يَوْمٍ هَذَا؟ قَالُوا: يَوْمُ الِاثْنَيْنِ. قَالَ: فَإِنْ مِتُّ مِنْ لَيْلَتِي، فَلا تَنْتَظِرُوا بِي الْغَدَ، فَإِنَّ أَحَبَّ الْأَيَّامِ وَاللَّيَالِي إِلَيَّ أَقْرَبُهَا مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

আয়িশা রা. বলেন, যখন আবু বাকর রা. এর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আজকে কি বার? সবাই বললোঃ সোমবারতিনি বললেনঃ আজকের মধ্যে যদি আমি মারা যাই তাহলে আগামী কাল পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করো না। কেননা যেদিনটি রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকটতম, সেটিই আমার প্রিয়তম দিন।

এই হাদীস থেকে আমরা জানলামঃ

বার: সোমবার ছিল রাসূল সা. প্রিয় বন্ধু ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রা. এর প্রিয়তম দিন

হাদীসের বর্ণনা থেকে আমরা সোমবার সম্পর্কে জানলামঃ

1.      সোমবারে রাসূল সা. জন্মগ্রহণ করেছেন

2.     সোমবারে রাসূল সা. এর কাছে প্রথম ওহী আসে

3.     সোমবারে রাসূল সা. হিজরতের উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে বের হোন

4.     সোমবারে রাসূল সা. হিজরত করে মদীনায় পৌছেন

5.     সোমবারে রাসূল সা. ইনতিকাল করেন

6.     সোমবারে রাসূল সা. হাজারে আসওয়াদ উঠিয়েছিলেন

7.     সোমবারে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়।

8.     সোমবারে জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়

9.     সোমবারে শিরক করেনা এমন সকল বান্দাকে ক্ষমা করা হয়

10. সোমবারে পৃথিবীর বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করা হয়েছে

11.  সোমবার আল্লাহর রাসূল সা. নবীয পান করতেন

12. সোমবার ছিল রাসূল সা. প্রিয় বন্ধু ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রা. এর প্রিয়তম দিন

তাছাড়াও সোমবার সম্পর্কে জানা যায় যে,

13. সোমবারে রাসূল সা. কুবাতে পৌছেন।

14. সোমবারে সূরা আল মায়িদাহ নাযিল হয়

15. সোমবারে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়

16. সোমবারে রোযা রাখা নফল ইবাদত

17. সোমবারে মা আমিনা রাসূল সা.কে গর্ভে ধারণ করেন।

18. সোমবারে তার নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

19. সোমবারে রাসূল সা. হযরত উমরের জন্য দোয়া করেন।

20.সোমবারে রাসূল সা. মিরাজে গমন করেন।

21. সোমবারে রাসূল সা.  গারে ছুরে প্রবেশ করেন।

22. সোমবারে রাসূল সা.  গারে ছুর থেকে বের হয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হোন।

23.সোমবারে রাসূল সা. কুবাতে প্রবেশ করেন।

24. সোমবারে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়

25.সোমবারে কিবলা পরিবর্তনের হুকুম আসে

26. সোমবারে রাসূল সা. খন্দকের উদ্দেশ্যে গমন করেন

27.সোমবারে রাসূল সা. খন্দকে অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে দোয়া শুরু করেন

28.সোমবারে রাসূল সা. ‍উমরাহ পালনের জন্য হুদায়বিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন

29. সোমবারে মক্কা বিজয় হয়

30. সোমবারে তাবুক যুদ্ধ সংঘটিত হয়

31. সোমবারে মসজিদে যিরার ধ্বংস করা হয়

32.সোমবারে বিদায় হজ্জ সংঘটিত হয়

33. সোমবারে সূরা বাকারা নাযিল হয়্

34.সোমবারে কুরআনের আয়াত اليوم أكملت لكم دينكم   নাযিল হয়

35. সোমবারে রুমের যুদ্ধের প্রস্তুতির আদেশ দেয়া হয়

36.সোমবারে হযরত আবু বকর রা. খলিফা হিসাবে বাইয়াত গ্রহণ করেন

37. সোমবারে হযরত আবু বকররে মৃত্যু রুগ শুরু হয়

38. সোমবারের বিকালে হযরত আবু বকর ইনতিকাল করেন্

39.সোমবারে কাদিসিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়

40.সোমবারে ইয়ারমুকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়

41. সোমবারে হযরত উমর রা. বাইতুল মাকদিস প্রবেশ করেন

42. সোমবারে হযরত উমর রা. শাহাদাত বরণ করেন

43.সোমবারে হযরত উসমান খলিফা হিসাবে বাইয়াত গ্রহণ করেন

44. সোমবারে হযরত উসমান শাহাদাত বরণ করেন

45.সোমবারে হযরত হাসান রা. হযরত মুয়াবিয়াকে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেন

46. সোমবারে হযরত হুসাঈন শাহাদাত বরণ করেন

Post a Comment

0 Comments