সময়টা ২০০৫ কিংবা ২০০৬; আমি এক সময় প্রবাসীদের
প্রিয় কাফেলার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলাম। সেই সময়ে সহকারী সেক্রেটারী
হিসাবে কেউ ছিলেন না। মুহতারাম বুরহান উদ্দিন ভাই তখন জেনারেল সেক্রেটারী। তিনি হঠাৎ
করে ছুটিতে দেশে যাওয়াতে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করছিলাম। অনেক দায়িত্ব
সমূহের মধ্যে একটি দায়িত্ব ছিল যারা সদস্য মানে এসেছেন বলে শাখা সভাপতিরা মনে করেন,
তাদের সাথে কন্টাক্ট করা। সদস্যমানে উন্নীত করার জন্য অনেক বই নোট, সম্ভাব্য প্রশ্নাবলীর
নোট আমার করা আছে। কিন্তু এই ধরণের কন্টাক্ট আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। সেই সময়ে শাখা
সমূহ সদস্য প্রার্থী ফরম দিতে পারতো না। কেন্দ্রীয় জেনারেল সেক্রেটারী কন্টাক্ট করে
সদস্যপ্রার্থী ফরম দিতেন।
সেই সময়ে শাখার সংখ্যা ছিল মাত্র ৫/৬টি।
সকল শাখা থেকে নির্ধারিত দিনে ব্যক্তিগত রিপোর্ট বই সহ ভাইয়েরা উপস্থিত। মাগরিবের পর
থেকে কন্টাক্ট শুরু হলো। মাঝখানে চা ও এশার নামাযের বিরতি দিয়ে কন্টাক্ট চলছিল। সাথে
আসা দায়িত্বশীল ভাইয়েরা পার্শবর্তী রুমে কন্টাক্টে দীর্ঘ সময় নেয়ার জন্য রীতিমতো বিরক্ত
হচ্ছিলেন। স্থান সংকূলান না হওয়াতে তাদেরকে কন্টাক্টের রুমে জায়গা দেয়া যায়নি। সদস্যপ্রার্থী
সংখ্যা ছিলেন মাত্র ১৬জন।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে ‘কনসিডারের’ মাধ্যমে
কর্মী এবং সহযোগী সদস্য করার পক্ষে হলেও ‘কনসিডারের’ মাধ্যমে সদস্য করার সম্পূর্ণ বিরোধী।
আমি সদস্য সংখ্যা খুব বেশী হওয়া বা যে কোন উপায়ে সদস্য বৃদ্ধির বার্ষিক টার্গেট পুরা
করতে হবে-এমন চিন্তা ভাবনার বিরোধী। সদস্য করতে ‘কনসিডার’ বিষয়টা আমার অভিধানে নাই
বলে আমার জীবনে শাখার দায়িত্ব পালন কালে কখনো সদস্য বৃদ্ধির বার্ষিক টার্গেট পুরা করতে
পারিনি।
লম্বা সময়ের কন্টাক্টে উপস্থিত ভাইয়েরা
ভাল পারফর্মেন্স দেখালেন। সময় হলো সর্বশেষ প্রশ্নের। বললাম, এই প্রশ্নের সন্তোষজনক
উত্তর যারা দেবেন, তাদেরকে আজ সদস্য প্রার্থী ফরম দেয়া হবে। আর যারা সঠিক উত্তর দেবেন
না। তারা ফিরে যাবেন এবং ১ মাস চিন্তা করে বের করবেন যে, কেন তার উত্তরটি সঠিক হয়নি।
ভাইদের প্রতি প্রশ্ন ছিলঃ
আমাদের এই কাফেলা। কাফেলার সামগ্রিক বিষয়ে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য এখানে রয়েছে একটি নির্বাচিত মজলিসে শুরা। কিন্তু এই কাফেলাটি
জামায়াতে ইসলামীর একটি শাখা এবং জামায়াতে ইসলামীর সাথে সকল ধরণের সম্পর্ক রেখে জামায়াতে
ইসলামীর দিক নির্দেশনায় পরিচালিত হয়। আমরা যে দেশে বসবাস করি সেই দেশের সামগ্রিক অবস্থা
বিবেচনা করে মজলিসে শুরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো যে, “এখন থেকে এই কাফেলা
আর জামায়াতে ইসলামীর সাথে কোন সম্পর্ক রাখবে না। সকল ধরণের সিদ্ধান্ত নিজেদের মজলিসে
শুরায় গ্রহণ করা হবে।” আপনি এই সিদ্ধান্ত জানার পর আপনি কি এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত
থাকবেন এবং আনুগত্য করবেন? হ্যাঁ, অথবা না এর মাধ্যমে জবাব দিন।
উপস্থিত ভাইদের বললেনঃ ১৪জন ‘হ্যাঁ’!
একমত হবো এবং আনুগত্য করবো। কিন্তু ২জন জানালেনঃ ‘না’! একমত হবো না এবং আনুগত্যও করবো
না।
কেন একমত হবেন না এবং আনুগত্য করবেন না?
এমন প্রশ্ন করাতে একজন বললেনঃ দেখুন! আমি দেশে থাকতে জামায়াতে ইসলামী করতাম। এখানে
দেখলাম এই কাফেলা জামায়াতে ইসলামীর আনুগত্য করে এবং জামায়াতে ইসলামীর দিক নির্দেশনায়
চলে। তাই আমি এই কাফেলায় শামীল হয়েছি। যদি এই ধরণের কাফেলা আমি না পেতাম, তাহলে আমি
এই প্রবাসে জামায়াতে ইসলামীর আদলে একটি কাফেলার কাজ শুরু করতাম। তাই যে কাফেলা জামায়াতে
ইসলামীর সাথে সম্পর্ক রাখেনা, জামায়াতে ইসলামীর আনুগত্য করেন না, আমি সেই কাফেলাতে
নাই।
আরেকজন বললেনঃ এই কাফেলার নেয়া সিদ্ধান্তটিকে
আমি শরীয়া বিরোধী বলবো না। কিন্তু আমি তো জামায়াতে ইসলামী করি। বিধায় আমি জামায়াতে
ইসলামীর সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করে কনফার্ম হয়ে যাবো যে, এই কাফেলার নেয়া সিদ্ধান্তে
জামায়াতের সম্মতি আছে কি না। যদি জানি যে, জামায়াতে সম্মতি আছে, তাহলে আমি আনুগত্য
করবো। কিন্তু যদি এই সিদ্ধান্তে জামায়াতে ইসলামীর সম্মতি না থাকে, তাহলে আনুগত্য করাতো
দূরের কথা-আমি এই কাফেলাতেই থাকবো না।
0 Comments