তেলাওয়াত ও অনুবাদঃ
﴿الر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ
وَقُرْآنٍ مُّبِينٍ﴾
১। আলিফ-লাম-রা। এগুলো
আল্লাহর কিতাব ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াত।
﴿رُّبَمَا يَوَدُّ
الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ كَانُوا مُسْلِمِينَ﴾
২। এমন এক সময় আসা বিচিত্র নয়
যখন আজ যারা (ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করতে) অস্বীকার করছে, তারা
অনুশোচনা করে বলবে, হায়, যদি
আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিতাম!
﴿ذَرْهُمْ يَأْكُلُوا
وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ ۖ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ﴾
৩। ছেড়ে দাও এদেরকে, খানাপিনা
করুক, আমোদ ফূর্তি করুক এবং মিথ্যা প্রত্যাশা এদেরকে
ভুলিয়ে রাখুক। শিগ্গির এরা জানতে পারবে।
﴿وَمَا أَهْلَكْنَا
مِن قَرْيَةٍ إِلَّا وَلَهَا كِتَابٌ مَّعْلُومٌ﴾
৪। ইতিপূর্বে আমি যে জনবসতিই
ধ্বংস করেছি তার জন্য একটি বিশেষ কর্ম-অবকাশ লেখা হয়ে গিয়েছিল।
﴿مَّا تَسْبِقُ مِنْ
أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُونَ﴾
৫। কোনো জাতি তার নিজের
নির্ধারিত সময়ের পূর্বে যেমন ধ্বংস হতে পারে না, তেমনি
সময় এসে যাওয়ার পরে অব্যাহতিও পেতে পারে না।
﴿وَقَالُوا يَا أَيُّهَا
الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ﴾
৬। এরা বলে, “ওহে যার
প্রতি বাণী অবতীর্ণ হয়েছে, তুমি
নিশ্চয়ই উন্মাদ!
﴿لَّوْ مَا تَأْتِينَا
بِالْمَلَائِكَةِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾
৭। যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো
তাহলে আমাদের সামনে ফেরেশতাদেরকে আনছো না কেন?
﴿مَا نُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ
إِلَّا بِالْحَقِّ وَمَا كَانُوا إِذًا مُّنظَرِينَ﴾
৮। আমি ফেরেশতাদেরকে এমনিই
অবতীর্ণ করি না, তারা যখনই অবতীর্ণ হয় সত্য সহকারে
অবতীর্ণ হয়, তারপর লোকদেরকে আর অবকাশ দেয়া হয় না।
﴿إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا
الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ﴾
৯। আর এ বাণী, একে তো
আমিই অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا
مِن قَبْلِكَ فِي شِيَعِ الْأَوَّلِينَ﴾
১০। হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে
আমি অতীতের অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম।
﴿وَمَا يَأْتِيهِم
مِّن رَّسُولٍ إِلَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾
১১। তাদের কাছে কোনো রাসূল এসেছে
এবং তারা তাকে বিদ্রূপ করেনি, এমনটি কখনো হয়নি।
﴿كَذَٰلِكَ نَسْلُكُهُ
فِي قُلُوبِ الْمُجْرِمِينَ﴾
১২। এ বাণীকে অপরাধীদের অন্তরে
আমি এভাবেই (লৌহ শলাকার মতো) প্রবেশ করাই।’
﴿لَا يُؤْمِنُونَ
بِهِ ۖ وَقَدْ خَلَتْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ﴾
১৩। তারা এর প্রতি ঈমান আনে না। এ ধরনের
লোকদের এ রীতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।
﴿وَلَوْ فَتَحْنَا
عَلَيْهِم بَابًا مِّنَ السَّمَاءِ فَظَلُّوا فِيهِ يَعْرُجُونَ﴾
১৪। যদি আমি তাদের সামনে আকাশের
কোনো দরজা খুলে দিতাম এবং তারা দিন দুপুরে তাতে আরোহণও করতে থাকতো।
﴿لَقَالُوا إِنَّمَا
سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَّسْحُورُونَ﴾
১৫। তবুও তারা একথাই বলতো, আমাদের
দৃষ্টি বিভ্রম হচ্ছে বরং আমাদের ওপর যাদু করা হয়েছে।
সূরার নামকরণঃ
• সূরার ৮০ নম্বর আয়াতঃ
﴿وَلَقَدْ
كَذَّبَ أَصْحَابُ الْحِجْرِ الْمُرْسَلِينَ﴾ এই আয়াতের الْحِجْرِ (আল হিজর) শব্দকে
এই সূরার নাম হিসাবে
গ্রহণ করা হয়েছে।
আল হিজর সম্পর্কে কিছু কথাঃ
•
আল হিজর
হলো আরবের প্রচীন জাতি গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় জাতি সমুদ জাতির রাজধানী শহর। আরবের
প্রাচীন জাতির মধ্যে প্রথম হলো আদ জাতি।
•
সৌদী আরবের
মদীনা ও তাবুকের মাঝখানে
মদীনার উত্তর পশ্চিমে আলউ’লা শহর থেকে কয়েক মাইল দূরে হিজায
রেলওয়ে স্টেশন ‘মাদায়েদ আস সালেহ’। এখানেই
ছিল সামুদ জাতির কেন্দ্রীয়
শহর আল হিজর।
•
এখনো
যেখানে শহরের কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
•
সামুদ
জাতির লোকের পাহাড় কেটে বড় বড় ইমারত নির্মাণ করেছিল। যার বিস্তৃতি ছিল হাজার হাজার
একর এলাকা। যার অধিবাসী সংখ্যা ৪/৫ লাখের কম ছিল না।
•
সড়কের
পাশে জায়গাটির অবস্থান হলেও এই জায়গায় কেউ অবস্থান করেন না। তাবুক যুদ্ধে সময়
রাসূল সা. তার সাহাবীদের নিয়ে এই এলাকা অতিক্রম করেন এবং তখন তিনি সাহাবীদেরকে এই
এলাকাগুলো দেখিয়ে এর শিক্ষণীয় বিষয়গুলো নির্দেশ করেন।তিনি একটি কুয়ার দেখিয়ে বলেন,
এই কুয়া থেকে হযরত সালেহ আ. এর উটনী পানি পান করতো। তিনি মুসলমানদেরকে অন্যান্য
কুয়া থেকে পানি পান না করে এই কুয়া থেকে পানি পান করতে বলেন।
•
রাসূল সা. একটি
গিরিপথ দেখিয়ে বলেন, এই পথ দিয়ে
সালেহ আ. এর উটনী পানি
পান করতে আসতো। স্থানটি
আজ অবধি ফাজ্জুন নাকাহ
বা উটনীর পথ নামে
খ্যাত।
•
উপস্থিত সাহাবীরা
এই এলাকা ঘুরে ফিরে
দেখছিলেন। তখন রাসূল
সা.
তাদের জড়ো করে একটি
ভাষণ দিলেন এবং সামুদ
জাতির ভয়াবহ পরিণাম থেকে
শিক্ষা গ্রহণের জন্য নসিহত
করলেন এবং বললেন, এখানে আল্লাহর
আযাব নাযিল হয়েছিল। তাই
এটা ভ্রমণের জায়গা নয়-এটা
কান্নার জায়গা। স্থানটি
দ্রুত অতিক্রম করে চলে
যাও।
•
প্রখ্যাত
পর্যটক ইবনে বতুতা ৮ম হিজরীতে যখন হজ্জে যান, তখন তিনি এখানে যান এবং এ সম্পর্কে
লিখেনঃ “এখানে লাল রংয়ের পাহাড়গুলোতে সামুদ জাতির ইরামতগুলো রয়েছে। এগুলো তারা পাহাড় কেটে কেটে তার মধ্যে নির্মাণ করেছিল। এ
গৃহগুলোর কারুকাজ এখনো এমন উজ্জ্বল ও তরতাজা আছে যেন মনে হয় আজই এগুলো খোদাই করা
হয়েছে। পচাগলা মানুষের হাড় এখনো এখানকার ঘরগুলো মধ্যে পাওয়া যায়।”
•
কুরআন
নাযিলের পূর্বে এই সামুদ জাতির কাহিনী ছিল মানুষের মুখে মুখে।
•
জাহিলী
যুগের কবিতা, খুতবা এবং সাহিত্যে সামুদ জাতির
উল্লেখ ব্যাপক ভাবে করা হয়েছে।
•
আসিরিয়ার
শিলালিপি, গ্রীস, ইসকানদারীয়া ও রোমের প্রাচীন ঐতিহাসিক ও ভুগোলবিগণও সামুদ জাতির কথা উল্লেখ
করেছেন।
•
ঈসা আ. জন্মের
কিছুকাল আগ পর্যন্ত এই জাতির
কিছু মানুষ বেঁচে ছিল।
•
সামুদ জাতির
কিছু লোক রোমীয় সেনাবাহিনীতে
ভর্তি হয় এবং ‘নিবতী’দের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করে বলে রোমীয়
ঐতিহাসিকগন উল্লেখ করেন।
সূরা নাযিল হওয়ার সময়-কালঃ
•
সূরার বিষয়বস্তু
ও বর্ণনাভংগী থেকে এটা পরিস্কার বুঝা যায় যে, সূরা আল হিজর
সেই সময়ে নাযিল হয়েছে, যখন
সূরা ইব্রাহীম নাযিল হয়েছে। সূরার পটভূমি থেকে দুইটি
বিষয় পরিস্কার দেখা যাচ্ছেঃ
একঃ নবী
সা.
দাওয়াতী তৎপরতার একটা দীর্ঘ
সময় অতিবাহিত হয়েছে। যে কওমকে
তিনি দাওয়াত দিচ্ছেন তারা
বিরামহীন হঠকারিতা, বিদ্রূপ, বিরোধিতা, সংঘাত ও
জুলুম-নিপীড়নের সীমা অতিক্রম করেছে। বুঝানোর চাপটার শেষ হয়ে তাদেরকে সতর্ক করা এবং
ভয় দেখানোর মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
দুইঃ রাসূল
সা.
নিজের কাওমের কুফরী, স্থবিরতা আর বিরোধীতার
মোকাবেলা করতে করতে ক্লান্ত
হয়ে পড়েছেন। মানসিক
ভাবে তিনি হতাশাগ্রস্থ হয়ে
পড়ছেন। আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়াতায়ালা তাকে সান্তনা দেচ্ছেন
এবং সাহস যোগাচ্ছেন।
বিষয়বস্তু ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়ঃ
•
এই সূরায়
দুইটি বিষয় আলোচিত হয়েছে। যেমনঃ
১. রাসূল সা. এর দাওয়াতকে অস্বীকারকারী, বিদ্রুপকারী এবং বাঁধাপ্রদানকারীদের সতর্ক করা।
২. রাসূল সা.কে সান্তনা প্রদান ও সাহস যোগানো।
•
এছাড়াও এই সূরাতে
বুঝানো, উপদেশ প্রদান, সতর্কবানী উচ্চাপরণ, তিরস্কার
আর নিন্দাবাদের মাধ্যমে
বুঝানো ও নসিহত, তাওহীদের পক্ষে
সংক্ষিপ্ত যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপনের
পাশাপাশি আদম আ. ও ইবলিসের
কাহিনী শুনিয়ে উপদেশ প্রদানের
সিলসিলা জারি রাখা হয়েছে।
আয়াত সমূহের ব্যাখ্যাঃ
﴿الر
ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ وَقُرْآنٍ مُّبِينٍ﴾
১।
আলিফ-লাম-রা। এগুলো আল্লাহর কিতাব
ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াত।
•
الر - এটি প্রসিদ্ধ হুরুফে
মুক্বাত্তিয়াত। যার আলোচনা আমাদের সকলের জানা আছ। তবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রা. এর ব্যাখ্যায় বলেন, এর অর্থঃ “আমি আল্লাহ দেখি। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের অপর বর্ণনা
থেকে জানা যায় যে, এটি একটি শপথ বাক্য। এর মাধ্যমে আল্লাহ শপথ করছেন যে, تِلْكَ
آيَاتُ الْكِتَابِ এই
আয়াত গুলো হলো মহাগ্রন্থের, এই সূরাটি মহাগ্রন্থের আয়াতের সমষ্টি, কুরআনে মুবিন বা
সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াতের সমষ্টি। যেখানে আল্লাহ তায়ালা হালাল-হারাম ও আদেশ-নিষেধ অত্যন্ত
স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।
•
এই
আয়াতের মাধ্যমে সূরার সংক্ষিপ্ত ভূমিকা প্রদান করা হয়েছে। সাথে সাথে মূল বিষয়বস্তু
সম্পর্কে ভাষণ শুরু করা হয়েছে।
•
وَقُرْآنٍ مُّبِينٍ
–এখানে مُّبِينٍ
শব্দের অর্থ হলো সুস্পষ্ট। যা কুরআনের বিশেষণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
•
এর মানে
হলো, এখানে যে আয়াত গুলো বর্ণনা করা হচ্ছে তা এমন কুরআনের আয়াত যে কুরআন
নিজের বক্তব্যকে সুস্পষ্ট করে পরিস্কার ভাবে বলে দেয়।
•
তাফসীরে
মা’রিফুল কুরআনে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এগুলো পরিপূর্ণ গ্রন্থ ও সুস্পষ্ট
কুরআনের আয়াত। অর্থাৎ এর দুইটি গুণ রয়েছে। ১. পরিপূর্ণ গ্রন্থ হওয়া এবং ২.
সুস্পষ্ট কুরআন হওয়া।
﴿رُّبَمَا
يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ كَانُوا مُسْلِمِينَ﴾
২। এমন এক
সময় আসা বিচিত্র নয় যখন আজ যারা (ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করতে) অস্বীকার করছে, তারা
অনুশোচনা করে বলবে, হায়, যদি
আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিতাম!
•
আলোচনার শুরুতেই
কাফেরদের আফসোসের কথা উল্লেখ
করা হয়েছে।
•
কাফেররা আখেরাতে
আফসোস করবে এই বলে
যে,
হায়!
আমরা যদি দুনিয়াতে মুসলমান
হতাম। সূরা আল আনআ’মে এই কথাটার
প্রতিধ্বনি হয়েছে এইভাবেঃ
وَلَوْ تَرَىٰ إِذْ وُقِفُوا عَلَى النَّارِ فَقَالُوا يَا لَيْتَنَا
نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِآيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
“হায়! যদি এমন কোন উপায় হতো যার
ফলে আমরা আবার দুনিয়ায় প্রেরিত হতাম তখন আমাদের রবের নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা বলতাম
না এবং মুমিনদের অন্তরভূক্ত হয়ে যেতাম।” (আয়াতঃ
২৭)
•
কোন কোন
তাফসীর কারক বলছেন, প্রত্যেক কাফির
তার মৃত্যু দেখে নিজের
মুসলমান হওয়া আকাংখা করে
থাকে।
•
হযরত আনাস
বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ
إِنَّ نَاسًا مِنْ أَهْلِ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَدْخُلُونَ النَّارَ بِذُنُوبِهِمْ، فَيَقُولُ
لَهُمْ أَهْلُ اللَّاتِ وَالْعُزَّى: مَا أَغْنَى عَنْكُمْ قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَنْتُمْ
مَعَنَا فِي النَّارِ، فَيَغْضَبُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فَيُخْرِجُهُمْ مِنَ
النَّارِ، فَيُلْقِيهِمْ فِي نَهْرٍ يُسَمَّى نَهْرَ الْحَيَاةِ، فَيَبْرَؤُونَ
مِنْ حَرْقِهِمْ، كَمَا يَبْرَأُ الْقَمَرُ مِنْ كُسُوفِهِ، فَيَدْخُلُونَ
الْجَنَّةَ: فَيُسَمَّوْنَ الْجَهَنَّمِيِّينَ
“যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে, তাদের মধ্যে
কিছু লোক তাদের গোনাহের
কারণে জাহান্নামে যাবে। তখন
লাত ও উযযার অনুসারীরা
তাদেরকে বলবে, ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ বলাতে তোমাদের কি উপকার
হলো?
তোমরা তো আমাদের সাথেই
জাহান্নামে পুড়ছো? তাদের কথা
শুনে আল্লাহ তায়ালা রাগান্বিত
হবেন। তিনি তাদের
সকলকে সেখান থেকে বের
করে আনবেন এবং নাহরে
আল হায়াতে নিক্ষেপ করবেন। তখন তাদেরকে এমন ভাবে
দেখা যাবে, চন্দ্র গ্রহণ
হলে যেভাবে দেখা যায়। এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ
করানো হবে। তাদেরকে
জাহান্নাম ভোগকারী হিসাবে অভিহিত
করা হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
কিয়ামতের দিন যখন
কাফেরা ‘জাহান্নাম ভাগকারী’ মুসলিমদের মুক্তির
অবস্থা দেখবে, তখন আফসোস
করে বলবেঃ لَوْ كَانُوا
مُسْلِمِينَ - যদি তারা মুসলিম
হতো।
• হাফিজ আবুল কাসিম তিবরানী বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু মুসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল
সা. বলেছেনঃ
إذا اجتمَعَ أهلُ النارِ
في النارِ، ومعهم مَن شاءَ اللهُ مِن أهلِ القِبلةِ، قال الكفَّارُ للمسلمين أَلَمْ
تكونوا مسلمينَ؟ قالوا بلى، قالوا فما أَغْنى عنكم الإسلام، وقد صِرتُم معنا في
النار؟ قالوا كانتْ لنا ذُنوبٌ فأُخِذْنا بها، فيَسمَعُ اللهُ ما قالوا، فأمَرَ
بمَن كان في النار من أهلِ القِبلةِ فأُخرِجوا، فلمَّا رَأى ذلك من بقي من الكفار
قالوا يا ليتَنا كنَّا مسلِمينَ فنَخرُجَ كما خرَجوـ قال ثم قرَأَ رسولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم -أعوذ بالله من الشيطان الرجيم {الۤرَ تِلْكَ ءايَـٰتُ ٱلْكِتَـٰبِ
وَقُرْءَانٍ مُّبِينٍ رُّبَمَا يَوَدُّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَوْ كَانُواْ
مُسْلِمِينَ}
“জাহান্নামবসী যখন জাহান্নাতে একত্রিত
হবে এবং তাদের সাথে
আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু
আহলে কিবলাও থাকবে। তখন
কাফিররা ঐ মুসলমানদেরকে বলবেঃ “তোমরা
কি মুসলমান ছিলেন না?” তারা
উত্তরে বলবৈঃ “হ্যাঁ!” তারা তখণ
বলবেঃ “ইসলাম তো তোমাদের কোন
উপকারে আসলো না, তোমরা আমাদের
সাথেই তো জাহান্নামে রয়েছে?” তারা
একথা শুনে বলবৈঃ “আমাদের গুনাহ
ছিল বলে আমাদেরকে পাকড়াও
করা হয়েছে।” আল্লাহ তায়ালা
তাদের কথা শুনার পর হুকুম
করবেনঃ “জাহান্নামে যত আহলে কিবলা
রয়েছে তাদের সকলকৈই বের
করে আন।” এ অবস্থা
ধেকে জাহান্নামে অবস্থানরত কাফেরা
বলবেঃ “হায়!
আমরা যদি মুসলমানহতাম তবে
আমরা (জাহান্নাম থেকে বের হয়ে
যেতাম যেমন এরা বের
হয়ে গেল।)” (বর্ণানাকারী বলেন) এর পর রাসূলুল্লাহ
সা.
পাঠ করলেনঃ
﴿الر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ
وَقُرْآنٍ مُّبِينٍ﴾﴿رُّبَمَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ كَانُوا مُسْلِمِينَ﴾
•
ইবনে আব্বাস রা. এই আয়াতে ব্যাখ্যায় বলেন, দুনিয়াতে
সময়ে সময়ে কাফিরদের জন্য এমন মুহুর্ত আসবে, যখন তারা নিজেদেরকে মুসলমান থাকার কামনা
করবে।
﴿ذَرْهُمْ
يَأْكُلُوا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ ۖ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ﴾
৩। ছেড়ে দাও
এদেরকে, খানাপিনা করুক, আমোদ ফূর্তি করুক এবং মিথ্যা প্রত্যাশা এদেরকে ভুলিয়ে রাখুক। শিগ্গির
এরা জানতে পারবে।
•
এরপর আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়াতায়ালা সতর্ক করার
সাথে সাথে আগত বিপদের
ইংগিত দেয়া দিয়ে ধমকের
সূরে বললেনঃ আপনি তাদরেকে
ছেড়ে দিন, তারা খেয়ে
নিক এবং তারা মজা
করে নিক। এবং তাদেরকে ভূলিয়ে রাখুন অলীক আশা। তাদের তওবা করা, কিংবা আল্লাহর
পথে ফিরে আসা সবকিছু থেকে তারা উদসিীন হয়ে যাবে এবং এই খাবার ভোগ বিলাশ তাদেরকে হেদায়াতের
পথ থেকে ভূলিয়ে রাখবে এবং অতি তাড়াতাড়ি তা তারা জানতে পারবে।
•
এমনি ধরণের কথার প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই
কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত সমূহেঃ
قُلْ تَمَتَّعُوا فَإِنَّ
مَصِيرَكُمْ إِلَى النَّارِ
“এদেরকে বলো, ঠিক আছে, মজা ভোগ
করে নাও, শেষ পর্যন্ত তোমাদের তো ফিরে যেতে হবে দোযখের মধ্যেই।” (সূরা ইব্রাহীমঃ ৩০)
كُلُوا۟ وَتَمَتَّعُوا۟ قَلِيلًا
إِنَّكُم مُّجْرِمُونَ
“খেয়ে নাও এবং ফূর্তি কর। কিছুদিনের জন্য আসলে তো তোমরা অপরাধী।” (সূরা আল মুরসালাতঃ ৪৬)
• ইবনে আব্বাস রা. বলেনঃ এই আয়াত দ্বারা নবী মুহাম্মদ এর দিকে
ইংগিত করে বলা হচ্ছে, দাওয়াতের মাধ্যমে এদেরকে দ্বীনের আন্দোলনে শামীল করার বিষয় (ذَرْهُمْ)
বাদ দিয়ে দিন। (يَأْكُلُوا) ওরা খেতে থাকুন,
আখেরাতের চিন্তা বাদ দিয়ে (وَيَتَمَتَّعُوا)
উপভোগ করতে থাকুক, কুফুরী ও নিষিদ্ধ কাজ মত্ত থেকে জীবন উপভোগ করতে থাকুক, (وَيُلْهِهِمُ
الْأَمَلُ) আশা তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখুক, দূরাশা তাদেরকে
আল্লাহ আনুগত্য থেকে উদাসীন রাখুক, (فَسَوْفَ)
অতি সত্তর, এটি তাদের জন্য ভীতি প্রদর্শণকারী তা (يَعْلَمُونَ)
তারা জানতে পারবে। মৃত্যুর সময়ে, কবরের মধ্যে এবং কিয়ামতের দিনে তাদের জন্যে কিরূপ
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
• মাআ’রিফুল কুরআনে বলা হয়েছেঃ (يَأْكُلُوا)
পানাহার বিষয়টাকে এখানে হাইলাইট করা হয়েছে। কারণ, পানাহারকে আসল লক্ষ্য বানানো, সংসার
ও বিলাস-বসন ইত্যাদি করতে গিয়ে আখেরাতকে ভূলে যাওয়া, এমনটা কাফিরদের কাজ। কিন্তু মুমিনরাও
পানাহার করে, সংসার-কারবার সব করে। কিন্তু মৃত্যু আর পরকালকে ভূলে নয়।
• আল্লাহর রাসূল সা. চারটি বিষয়কে দূর্ভাগ্যের কারণে হিসাবে উল্লেখ
করেছেন। ১. চোঁখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত না হওয়া, ২. কঠোর প্রাণ হওয়া, ৩. দীর্ঘ আশা পোষণ
করা এবং ৪. সংসারের প্রতি আসক্ত হওয়া। (কুরতুবী)।
﴿وَمَا
أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ إِلَّا وَلَهَا كِتَابٌ مَّعْلُومٌ﴾
৪। ইতিপূর্বে
আমি যে জনবসতিই ধ্বংস করেছি তার জন্য একটি বিশেষ কর্ম-অবকাশ লেখা হয়ে গিয়েছিল।
•
এখানে আল্লাহ
কর্তৃক আযাব প্রদানের একটি
সুন্নাত বর্ণনা করা হচ্ছে। আর তা হলোঃ কুফরী
করার সাথে সাথে আল্লাহ
কোন জাতিকে পাকড়াও করেন
না।
•
তাফসীরে
মাআ’রিফুল কুরআন বলা হয়েছেঃ আল্লাহর নীতি হলো, কোন উম্মত তার নির্দিষ্ট সময়ের
পূর্বে ধ্বংস হয়নি এবং পেছনে থাকেনি। বরং নির্দিষ্ট সময়েই ধ্বংস হয়েছে। এমনি ভাবে
তাদের সময় যখন এসে যাবে, তাদেরকেও শাস্তি দেয়া হবে।
•
কাফের তথা
নির্বোধ লোকদের ধারণা হলো
যে,
তারা নবীকে মিথ্যা বলছে, নবীর
সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছে। অথচ তাদের শাস্তি দেয়া
হচ্ছে না। এর অর্থ
হলো,
এই নবী আসলে কোন
নবী নন। তাদের
এই আচরণকে নির্বোধদের আচরণ
হিসাবে উল্লেখ করে আযাব
প্রদানে আল্লাহর নিয়ম বলে
দেয়া হচ্ছে। আর তা হচ্ছেঃ
১. প্রত্যেক জাতিকে প্রথমে
শুনবার, বুঝবার ও শুধরে নেয়ার
জন্য একটি নির্ধারিত পরিমাণের
অবকাশ দেয়া হবে।
২.
যাবতীয় দুষ্কৃতি আর অনাচার
করার পরও ধৈর্যের মাধ্যমে
একটি নির্ধারিত সময় অবধি
তাকে নিজের ইচ্ছামত কাজ
করার জন্য সময় দেয়া
হবে। এই সময়টা
আল্লাহ কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত।
৩.
যতদিন এই অবকাশের সুযোগ
থাকে এবং আযাব প্রদানের
নির্ধারিত সময় না আসে, ততদিন
আল্লাহ ঢিল দিতে থাকেন।
৪.
এরপর নির্ধারিত সময়ে আল্লাহ
আযাব প্রদান করে থাকেন।
•
নির্দিষ্ট সময়
বলতে মৃত্যুকাল পর্যন্ত সময়
হতে পারে, আবার কিয়ামত
পর্যন্ত সময়ও হতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করে জাতির
জাতির গুণগত অবস্থার উপর। কোন একটি ভাল জাতি
যখন তাদের কর্মকান্ডের মাঝে
বিকৃতি সৃষ্টি করে, তখন আল্লাহ
তাদের কর্মের পরিধি কমিয়ে
দেন এবং তাদের ধ্বংস
করে ফেলেন। কিন্তু
কোন ভ্রষ্ট জাতি নিজেদের
অসৎগুণাবলীকে শুরে নিয়ে সৎগুণাবলীতে
পরিবর্তন করে তাহলে তার
কর্মের অবকাশ বাড়িয়ে দেন। আর তা কিয়ামত পর্যন্ত
দীর্ঘায়িতও হতে পারে। সূরা
রা’দের
১১ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে
ইংগিত করা হয়েছেঃ
إِنَّ
اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ
“আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার ততক্ষন পরিবর্তন
ঘটান না যতক্ষণ না সে নিজের গুণাবলীর পরিবর্তন করে।”
﴿مَّا
تَسْبِقُ مِنْ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُونَ﴾
৫। কোনো জাতি
তার নিজের নির্ধারিত সময়ের পূর্বে যেমন ধ্বংস হতে পারে না, তেমনি
সময় এসে যাওয়ার পরে অব্যাহতিও পেতে পারে না।
•
এই আয়াতটি
আগের আয়াতের ধারাবাহিকতা। এখানে
বলা হচ্ছে, আল্লাহ আযাবের
যে সময় নির্ধারণ করেছেন, তার
আগেও আযাব দেন না। আর সময় হয়ে গেলে
মুহুর্তও তিনি দেরী করেন
না।
﴿وَقَالُوا
يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ﴾
৬। এরা বলে, “ওহে যার
প্রতি বাণী অবতীর্ণ হয়েছে, তুমি
নিশ্চয়ই উন্মাদ!
•
الذِّكْرُ
- যিকির
- কুরআন “যিকির” বা বাণী
শব্দটি পারিভাষিক অর্থে আল্লাহর বাণীর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এই বাণী আগাগোড়া উপদেশমালায় পরিপূর্ণ।
- পূর্ববর্তী নবীদের উপর যে কিতাব নাযিল হয়েছিল, সে গুলোও ছিল “যিকির”, এই কুরআন মজীদও যিকির।
- “যিকির” এর প্রকৃত অর্থ হলোঃ স্মরণ করিয়ে দেয়া, সতর্ক করা এবং উপদেশ দেয়া।
• يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ- ওহে সেই লোক, যার প্রতি কুরআন নাযিল হয়েছে।
-
এই কথাটি
কাফেরদের কথা, যা নবী
সা.কে উদ্দেশ্য
করে তারা বলতো।
-
নবী সা. এর উপর
যে এই কুরআন নাযিল
হয়েছে, তা কাফেররা স্বীকার করতে
না। তাই তারা
ব্যাংগ ও উপহাস করে
এই কথা বলতো। এজন্যই
তারা নবী সা.কে পাগল
বলতো। যদি তারা
স্বীকার করতো, তাহলে তারা
নবীকে পাগল বলতো না।
-
প্রকৃত পক্ষে
কাফেরদের এই কথা বলার
অর্থ হলোঃ “ওহে, এমন
ব্যক্তি! যার দাবী হচ্ছে আমার ওপর যিকির তথা আল্লাহর বাণী অবতীর্ণ হয়েছে।”
-
নবী সা.কে উদ্দেশ্য
করে কাফেরদের এমন উক্তিটা
হচ্ছে তেমন, যেমন কথা
ফেরাউন মূসা আ. এর দাওয়াত
শুনার পর তার সভাসদকে
বলেছিলঃ
إِنَّ
رَسُولَكُمُ الَّذِي أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ لَمَجْنُونٌ
“এই যে পয়গম্বর সাহেবকে তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছে, এর মাথা
ঠিক নেই।” (সূরা আশ শুআ’রাঃ ২৭)
﴿لَّوْ
مَا تَأْتِينَا بِالْمَلَائِكَةِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ﴾
৭। যদি তুমি
সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে আমাদের সামনে ফেরেশতাদেরকে আনছো না কেন?
•
উপরের আয়াতের
ধারাবাহিকতায় বলা হচ্ছে, কাফেররা বলতোঃ
যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে আমাদের সামনে
ফেরেশতাদেরকে আনছো না কেন?
•
কুরআনের অন্যান্য আয়াতে এই
বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে এভাবেঃ
فَلَوْلَآ
أُلْقِىَ عَلَيْهِ أَسْوِرَةٌۭ مِّن ذَهَبٍ أَوْ جَآءَ مَعَهُ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ مُقْتَرِنِينَ
“তাঁর কাছে সোনার বালা কেন
পাঠানো হলো না? অথবা তাঁর আরদালী হিসেবে একদল ফেরেশতা কেন আসলো না।” (সূরা আয যুখরূফঃ
৫৩)
وَقَالَ
ٱلَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَآءَنَا لَوْلَآ أُنزِلَ عَلَيْنَا ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ
أَوْ نَرَىٰ رَبَّنَا ۗ لَقَدِ ٱسْتَكْبَرُوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ وَعَتَوْ عُتُوًّۭا
كَبِيرًۭا﴾﴿يَوْمَ يَرَوْنَ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةَ لَا بُشْرَىٰ يَوْمَئِذٍۢ لِّلْمُجْرِمِينَ
وَيَقُولُونَ حِجْرًۭا مَّحْجُورًۭا
“যারা আমার সামনে হাজির হবার আশা
করে না তারা বলে,
কেন আমাদের কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয় না? অথবা
আমরা আমাদের রবকে দেখি না কেন? বড়ই অহংকার করে তারা নিজেদের মনে মনে এবং
সীমা অতিক্রম করে গেছে তারা অবাধ্যতায়। যেদিন
তারা ফেরেশতাদের দেখবে সেটা অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদের দিন হবে না। চিৎকার করে উঠবে তারা,
হে আল্লাহ! বাচাও, বাচাও।” (সূরা আল ফুরকানঃ ২১-২২)
﴿مَا
نُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ إِلَّا بِالْحَقِّ وَمَا كَانُوا إِذًا مُّنظَرِينَ﴾
৮। আমি
ফেরেশতাদেরকে এমনিই অবতীর্ণ করি না, তারা যখনই অবতীর্ণ
হয় সত্য সহকারে অবতীর্ণ হয়, তারপর লোকদেরকে আর অবকাশ
দেয়া হয় না।
•
এখানে পূর্ববর্তী
চতূর্থ আয়াতের মতো আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়াতায়ালার একটি নিয়ম
বর্ণনা করা হচ্ছে। আর তাহলোঃ
১. ফেরেশতাদেরকে
তামাশা দেখানোর জন্য পাঠানো
হয়না। অবস্থা এমন
নয় যে, কোন জাতি
দাবী জানালো আর ফেরেশতারা
লাব্বাইক বলে হাজির হয়ে
গেল।
২. ফেরেশতারা
মানুষের সামনে সত্যকে উম্মুক্ত
করতে কিংবা গায়েবের পর্দা
সরিয়ে সবকিছু দেখিয়ে দিতে
আসেন না। ফেরেশতারা
নবী সা. যে বিষয়ের
দাওয়াত দিচ্ছেন, তার পক্ষে
সহায়তা করতে সব কিছু
জনসম্মুখে প্রকাশ করার জন্যও
আসেন না।
৩. ফেরেশতাদের
তখনই পাঠানো হয়, যখন কোন
জাতিকে দেয়া তাদের নির্ধারিত
ফুরসত শেষ হয়ে যায়
এবং তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত
ফায়সালা করে নেয়ার সংকল্প
করা হয়। ফেরেশেতারা
আযাব নিয়ে আসেন এবং
সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে আসেন। ফেরেশতারা এসে বলেন না যে, এখন
ঈমান আনলে ছেড়ে দেয়া
হবে। বরং সকল
অবকাশ সমাপ্তির পর চূড়ান্ত
ফায়সালা করার জন্য তাদের
প্রেরণ করা হয়।
• نُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ إِلَّا بِالْحَقِّ
- “সত্য সহকারে অবতীর্ণ হওয়া” মানে কি?
-
সত্য
নিয়ে অবতীর্ণ হওয়া। অর্থাৎ মিথ্যাকে মিটিয়ে দিয়ে তার জায়গায় সত্যকে কায়েম করার জন্য ফেরেশতারা
আসেন।
-
তারা
আল্লাহর ফায়সালা নিয়ে আসেন এবং তা প্রতিষ্ঠিত করেই ক্ষান্ত হন।
-
মাআ’রিফুল
কুরআনে বলা হয়েছেঃ إِلَّا بِالْحَقِّ বলতে আযাবের ফায়সালা
বুঝানে হয়েছে। আবার কোন কোন মুফাস্সির বলেছেনঃ রিসালাত।
﴿إِنَّا
نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ﴾
৯। আর এ বাণী, একে তো
আমিই অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
•
যে বাণীর
বাহককে কাফেররা পাগল বলছে, সেই
বাণীকে যিকির উল্লেখ করে
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলতেছেন
যে,
এই যিকির তিনি নাযিল
করেছেন। এটা মুহাম্মদ
নিজে তৈরী করেননি।
•
এর মানে
হচ্ছে, বাণী বাহককে গালি দিয়ে
মুলত আল্লাহকে গালি দেয়া
হচ্ছে।
•
আরো বিস্তারিত
করে বলতে গিয়ে বলা
হচ্ছে যে, এই বাণী
যিনি নাযিল করেছেন সেই
বাণী তিনি হেফাজতের দায়িত্ব
নিয়েছেন। বিধায় এই বাণীর
কোন ক্ষতি করা যাবে
না,
এই বাণীকে কোন চেষ্টা
দ্বারা বিলুপ্ত করা যাবে
না। কোন ভাবে
এই বাণীকে ধামাচাপা দিতে
চাইলেও তা পারা যাবে
না। সকল ধরণের
আপত্তি আর নিন্দাবাদের সামনে
এর মর্যাদা ও কমে
যাবে না। এই বাণীর
দাওয়াকে ঠেকাতে চাইলে তাও
পারবেনা। আবার এই বাণীকে
কোন ধরণের বিকৃতি বা এর মাঝে
কোন পরিবর্তন করতে চাইলে
তাও কোন দিন পারবে
না।
• ইবনে আব্বাস রা. বলেনঃ (إِنَّا نَحْنُ
نَزَّلْنَا الذِّكْرَ) আমিই উপদেশ অবতীর্ণ করেছি, কুরআনসহ জিব্রাঈল
আ.কে প্রেরণ করেছি (وَإِنَّا لَهُ) আর আমিই তার, কুরআনের
(لَحَافِظُونَ)
সংরক্ষক, রক্ষাকারী, শয়তানদের থেকে। যাতে তারা এতে কোন কিছু সংযোজন করতে না পারে এবং
এটা থেকে কিছু হ্রাস করতেও না পারে এবং এর বিধানাবলী পরিবর্তন করতে না পারে।
•
কেহ কেহ
বলেনঃ وَإِنَّا
لَهُ لَحَافِظُونَ এর শব্দটির সর্বনাম (যমীর) রাসূল সা. এর দিকে নির্দেশিত হয়েছে। অর্থাৎ কুরআন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা নাযিল করেছেন এবং রাসূল সা. এর রক্ষকও তিনি আল্লাহ। যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা কুরআনে বলছেনঃ
وَاللَّهُ
يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ
“মানুষের অনিষ্টকারিতা থেকে
তোমাকে আল্লাহ রক্ষা করবেন।” (সূরা
আল মায়িদাহঃ ৬৭)
• ইবনে আব্বাস রা. বলেনঃ (وَإِنَّا لَهُ
لَحَافِظُونَ) আমি তার সংরক্ষক অর্থ মুহাম্মদ সা.কে
রক্ষাকারী কাফিরদের হাত থেকে এবং শয়তানদের থেকে।
• কুরআন এক অলৌকিক কিতাব-যার মাঝে রয়েছে নানান রকমের অলৌকিত্ব।
যেমনঃ
১. কোন মানুষ
এই কুরআনের সূরার মতো আরেকটি সূরা তৈরীর চ্যালেঞ্জ আজ অবধি গ্রহণ করতে পারেনি। কুরআনের
চ্যালেঞ্জ হলোঃ
وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ
مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا
شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ. فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي
وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ ۖ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ.
“আর যে
কিতাবটি আমি আমার বান্দার ওপর নাযিল করেছি সেটি আমার কিনা-এ ব্যাপারে যদি তোমরা
সন্দেহ পোষণ করে থাকো তাহলে তার মতো একটি সূরা তৈরি করে আনো এবং নিজেদের সমস্ত
সমর্থক গোষ্টীকে ডেকে আনো–এক আল্লাহকে ছাড়া আর যার যার চাও তার
সাহায্য নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে এ কাজটি করে
দেখাও। কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো আর
নিসন্দেহে কখনই তোমরা এটা করতে পারবে না, তাহলে ভয়
করো সেই আগুনকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা তৈরি রাখা হয়েছে সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য।” (সূরা আল বাকারাহঃ ২৩-২৪)
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ
ۖ قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّثْلِهِ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللَّهِ
إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾﴿بَلْ كَذَّبُوا بِمَا لَمْ يُحِيطُوا بِعِلْمِهِ وَلَمَّا
يَأْتِهِمْ تَأْوِيلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَانظُرْ كَيْفَ
كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِينَ
তারা কি একথা বলে, পয়ম্বর নিজেই এটা রচনা করেছে?বলো, “তোমাদের এ দোষারুপের ব্যাপারে তোমরা যতি
সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে এরই মতো একটি সূরা রচনা করে আনো এবং এক আল্লাহকে বাদ
দিয়ে যাকে ডাকতে পারো সাহায্যের জন্য ডেকে নাও”। আসল ব্যাপার হচ্ছে, যে জিনিসটি এদের জ্ঞানের আওতায় আসেনি এবং যার পরিমাণও এদের সামনে নেই তাকে
এরা (অনর্থক আন্দাজে) মিথ্যা বলে। এমনিভাবে এদের
আগের লোকেরাও মিথ্যা আরোপ করেছে। কাজেই
দেখো জালেমদের পরিনাম কী হয়েছে! (সূরা ইউনুসঃ ৩৮-৩৯)
২. এই কুরআনে কখনো কেউ কোন কমবেশী করতে পারেনি এবং পারবে
না। এর বিশুদ্ধতা, ভাষালংকার ও সর্বব্যাপকতার মোকাবেলা কেউ করতে পারে না।
• কুরআনের
বিশুদ্ধতার ব্যাপারে খলিফা মামুনের দরবারের একটি ঘটনাঃ
খলিফা মামুন রশীদের দরবারে মাঝে
মাঝে শিক্ষা বিষয়ক তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আসর বসতো। যাতে জ্ঞান বিজ্ঞানের
বিভিন্ন শাখার পন্ডিতরা হাজির হতেন। এমনি একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে একজন ইহুদী পন্ডিত
আসলেন এবং অত্যন্ত প্রাঞ্জল, অলংকারপূর্ণ ও বিজ্ঞতাসূলভ আলোচনা পেশ করলেন। সভা শেষে
মামুন তাকে জিজ্ঞেস করলে, আপনি কি ইহুদী? সে স্বীকার করলে খলিফা বললেনঃ আপনি মুসলমান
হয়ে গেলে আপনার সাথে চমৎকার ব্যবহার করা হবে।
সে তার পৈতৃক ধর্ম বিসর্জন দিতে
অপাগতা প্রকাশ করে চলে গেল এবং এক বছর পর একই ধরণের আরেকটি সভায় উপস্থিত হয়ে ইসলামী
ফিকহ সম্পর্কে সারগর্ভ ও যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করলো। একই ভাবে খলিফা তাকে ডাকলেন
এবং বললেন, আপনি তো ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এখন মুসলমান হওয়ার কি
কারণ ঘটল?
সে বললো, সে বিভিন্ন ধর্মের উপর
একজন গবেষক এবং সে একজন হস্তলেখা বিশারদ। স্বহস্তে গ্রন্থ লিখে চড়াদামে বিক্রি করে।
সে পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন
সময়ে তাওরাত ও ইঞ্জিলের ৩টি করে কপি লিখে এবং লিখার সময় তাওরাত ও ইঞ্জিলের মধ্যে নিজের
মতো করে কমবেশ করে ফেলে। ইহুদী ও খৃষ্টানদের কাছে তাদের উপাসনালয়ের সামনে চড়াদামে বিক্রি
করে।
অবশেষে সে কুরআনেরও তিনটি কপি
লিখে এবং লিখার সময় কুরআনের মাঝেও কমবেশী করে নিজের মতো করে লিখে নেয়। কুরআন গুলো অত্যন্ত
সুন্দর করে লিখার পরও বিক্রির জন্য যখন মুসলমানদের কাছে পেশ করলাম। যেই কুরআনের কপি
গুলো দেখলো, সে হাতে নিয়ে তা নির্ভূল আছে কি না তা যাচাই করলো এবং বেশকম দেখার পর কপি
গুলো ফিরত দিল। কেউ আমার লিখা কুরআন কিনলো না।
তাদের এই আচরণ দেখ ইহুদী এই সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করলো যে, এই গ্রন্থটি হুবহু সংরক্ষিত আছে এবং আল্লাহ নিজেই এর হেফাজত করছেন।
এই বিবেচনা থেকে সে মুসলমান হয়ে গেল।
•
সুফিয়ান
ইবনে ওয়ায়না বলেনঃ কুরআনে তাওরাত ও ইঞ্জিলের আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ
إِنَّا أَنزَلْنَا التَّوْرَاةَ
فِيهَا هُدًى وَنُورٌ ۚ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ
هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِن كِتَابِ اللَّهِ
وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَاءَ ۚ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا
بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ
هُمُ الْكَافِرُونَ
“আমি তাওরাত নাযিল করেছি। তাতে
ছিল পথ নির্দেশ ও আলো। সমস্ত নবী, যারা
মুসলিম ছিল, সে অনুযায়ী এ ইহুদী হয়ে যাওয়া লোকদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা করতো। আর এভাবে রব্বানী ও আহবারও (এরি ওপর তাদের ফায়সালার
ভিত্তি স্থাপন করতো)। কারণ তাদেরকে আল্লাহর
কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এবং তারা ছিল এর ওপর সাক্ষী। কাজেই (হে ইহুদী গোষ্ঠী!) তোমরা মানুষকে ভয় করো না বরং
আমাকে ভয় করো এবং সামান্য তুচ্ছ মূল্যের বিনিময়ে আমার আয়াত বিক্রি করা পরিহার করো। আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী যারা ফায়সালা করে না তারাই
কাফের।
(সূরা আল মায়িদাহঃ ৩৯)
ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে আল্লাহ তাওরাত
ও ইঞ্জিলের হেফাজতের দায়িত্ব দেয়ার পর তারা সে দায়িত্ব পালন করেনি। বরং ঐ কিতাব গুলো
তারা বিকৃত ও পরিবর্তিত করেছে। ফলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা কুরআন হেফাজতের দায়িত্ব
নিজের কাছে রেখে বললেনঃ (وَإِنَّا لَهُ
لَحَافِظُونَ) আমিই এর হেফাজতকারী।
﴿وَلَقَدْ
أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِي شِيَعِ الْأَوَّلِينَ﴾
১০। হে
মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে আমি অতীতের অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম।
•
এ পর্যায়ে
আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সান্তনা
দিয়ে বলছেনঃ হে নবী! মানুষ
যে তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন
করছে, এতে করে অবাক হবার
কিছু নাই। বরং
তোমার আগে যে সব নবী
ও রাসূল এসেছিলেন, তাদেরকেও এই ভাবে
মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছে।
•
شِيَعٌ হলো شِيْعَةٌ এর বহুবছর। যার অর্থ হলো
কারো অনুসারী বা সাহায্যকারী হওয়া। বিশেষ বিশ্বাস ও মতবাদে ঐক্যমত প্রাষণকারী সম্প্রদায়কে
شِيْعَةٌ বলা হয়।
•
شِيَعِ الْأَوَّلِينَ মানে الأمم
الماضية (পূর্ববর্তী
জাতি সমূহ)
﴿وَمَا
يَأْتِيهِم مِّن رَّسُولٍ إِلَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾
১১। তাদের
কাছে কোনো রাসূল এসেছে এবং তারা তাকে বিদ্রূপ করেনি, এমনটি
কখনো হয়নি।
•
এই আয়াতটি
আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় বর্ণনা
করা হচ্ছে যে, আগেকার নবী
রাসূলকে কিভাবে বিরোধীতা করা
হয়েছে।
•
আগে যে সব রাসূলকে
পাঠানো হয়েছে, তাদেরকে নিয়ে
উপহাস করা হয়েছে-ঠাট্ট্রা বিদ্রুপ
করা হয়েছে। বিধায়
এটা নতুন কিছু নয়।
﴿كَذَٰلِكَ
نَسْلُكُهُ فِي قُلُوبِ الْمُجْرِمِينَ﴾
১২। এ বাণীকে
অপরাধীদের অন্তরে আমি এভাবেই (লৌহ শলাকার মতো) প্রবেশ করাই।’
•
আল্লাহর রাসূলের
সাথে উপহাস করা বা তাকে
মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পরিণাম
সম্পর্কে বলা হচ্ছেঃ হঠকারিতা
ও অহংকারের কারণ আল্লাহ অপরাধী
ও পাপীদের অন্তরে রাসূলদেরকে অবিশ্বাস
করা ও মিথ্যা প্রতিপন্ন
করার খেয়াল জাগিয়ে তুলেন। আর এতে করে তারা
মজা ও আনন্দ উপভোগ
করে।
•
سَلَكَ আরবী ভাষায় যার অর্থ হচ্ছেঃ
-
কোন জিনিসকে
অন্য জিনিসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া।
-
অনুপ্রবেশ
করানো।
-
চালিয়ে
দেয়া।
- গলিয়ে দেয়া। যেমনঃ
সুঁইয়ের ছিদ্রে সূতো গলিয়ে দেয়া হয়।
- এই সব অর্থকে বিবেচনায় নিয়ে আয়াতের অর্থ দাড়ায়ঃ “বাণী”
হৃদয়ের শীতলতা ও আত্মার খাদ্য হয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু অপরাধীদের অন্তরে তা বারুদের মত আঘাত করে এবং তা
শুনে তাদের মনে এমন আগুন জ্বলে ওঠে যেন মনে হয় একটি গরম শলাকা তাদের বুকে বিদ্ধ
হয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে।
•
এখানে الْمُجْرِمِينَ শব্দের
অর্থ হলোঃ الذين
عاندوا، واستكبروا عن اتباع الهدى - যারা হেদায়াত কবুল
করার ব্যাপারে লি একগুঁয়ে
ও অহংকারী।
•
হযরত আনাস
ও হাসান বসরী বলেনঃ الْمُجْرِمِينَ দ্বারা
মুশরিকদের বুঝানো হয়েছে। ইবনে আব্বাস রা. বলেনঃ الْمُجْرِمِينَ মানে অপরাধীদের অন্তরে, মুশরিকদের অন্তরে।
﴿لَا
يُؤْمِنُونَ بِهِ ۖ وَقَدْ خَلَتْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ﴾
১৩। তারা এর
প্রতি ঈমান আনে না।৭ এ ধরনের
লোকদের এ রীতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।
•
সূরার ১২ নম্বর
আয়াত نَسْلُكُهُ (আমি তাকে প্রবেশ করাই বা চালাই) শব্দের (هُ) সর্বনাম, সূরার ১১ নম্বর
আয়াতে يَسْتَهْزِئُونَ শব্দের
মূলশব্দ استهزاء (বিদ্রূপ) এর সাথে সংযুক্ত সর্বনাম এবং لَا يُؤْمِنُونَ
بِهِ (তারা এর প্রতি ঈমান আনে না) এর মধ্যে ব্যবহৃত সর্বনাম-এই
সকল সর্বনামকে الذِّكْرَ তথা আল্লাহর বাণী কুরআনের সাথে
সংযুক্ত করেছেন অনুবাদক ও তাফসীরকারকগন। ফলে তারা এর অর্থ করেছেনঃ “আমি
এভাবে এ বিদ্রূপকে অপরাধীদের অন্তরে প্রবেশ করিয়ে দেই এবং তারা এ বাণীর প্রতি ঈমান
আনে না।”
•
যারা
সত্যকে বিশ্বাস করতে চায় না, তাদের অবস্থা হলো তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায়। বিধায়
তাদের পরিণামও হবে তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায়। যেমন করে পূর্ববর্তীদেরকে আযাব দিয়ে
ধ্বংস করা হয়েছে, তাদেরকেও এমনতর আযাবে সম্মুখীন করা হবে। আর দুনিয়া ও আখেরাতে যেমন
নবী ও তাদের অনুসারীদের আল্লাহ নিরাপত্তা প্রদান করেছিলেন, তেমনি নবী মুহাম্মদ সা. এবং তার অনুসারীদেরকেও আল্লাহ
নিরাপত্তা প্রদান করবেন।
﴿وَلَوْ
فَتَحْنَا عَلَيْهِم بَابًا مِّنَ السَّمَاءِ فَظَلُّوا فِيهِ يَعْرُجُونَ﴾
১৪। যদি আমি
তাদের সামনে আকাশের কোনো দরজা খুলে দিতাম এবং তারা দিন দুপুরে তাতে আরোহণও করতে
থাকতো।
•
আল্লাহ কাফেরদের
অবাধ্যতা ও হঠকারিতা এবং
অহংকারের চূড়ান্ত পর্যায় উল্লেখ
করে বলছেন যে, আসমানের দরজা
যদি এই কাফেরদের সামনে
খুলে দেয়া হতো এবং
সেই দিয়ে যদি তারা
দিন দুপুরে আকাশেও আরোহন
করতো, তাতেও তারা ঈমান আনতো
না। তারা সত্যকে
স্বীকার করতো না।
﴿لَقَالُوا
إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَّسْحُورُونَ﴾
১৫। তবুও তারা
একথাই বলতো, আমাদের দৃষ্টি বিভ্রম হচ্ছে বরং
আমাদের ওপর যাদু করা হয়েছে।
• আগের আয়াতের বিস্তারিত বলা হচ্ছে যে, যদি কাফেরদের আসমানের দরজা খুলে দেয়ার পর সেই আসমানে তারা আরোহণ করতো,
তখন তারা বলতো যে, তাদের চোঁখের মধ্যে আবরণ ঢেলে
দেয়া হয়েছে বা তাদেরকে সম্মোহিত করা হয়েছে। এমনকি তারা বলতো, তাদের উপর যাদু করা
হয়েছে, তাদেরকে যাদু করে বোকা বানানো হয়েছে।
আয়াত সমূহ থেকে শিক্ষাঃ
• কুরআন একটি সুস্পষ্ট বিধান সম্বলিত কিতাব। যার প্রতিটি আয়াতের
বক্তব্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট।
• কুরআন একটি বিশুদ্ধ ও নির্ভূল কিতাব। যেমন নাযিল হয়েছে তেমন
আছে এবং তেমনি থাকবে।
• কুরআনের দাওয়াত, রাসূলের দাওয়াত অস্বীকারকারীরা দুনিয়া ও আখেরাতে
দ্বীন কবুল না করার জন্য প্রস্তাবে।
• দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করলে আপনার বিরোধীতা করা চিরন্তণ বিষয়।
যা সকল নবী রাসূলকে করা হয়েছে। তাই এতে হতাশ না হয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।
•
দ্বীনের বিরোধীতাকারীদের যখন
তখন পাকড়াও করা আল্লাহর চিরন্তন নিয়মের বিরোধী। বিধায় তাদের উন্নতি ও দম্ভ দেখে হতাশার
কিছু নেই। বরং তারা নির্ধারিত সময়ে ফল ভোগ করবেই।
1 Comments