তেলাওয়াত ও অনুবাদঃ
﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ
مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ﴾
২৬। আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি
শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি থেকে।
﴿وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ
مِن قَبْلُ مِن نَّارِ السَّمُومِ﴾
২৭। আর এর আগে জিনদের সৃষ্টি
করেছি আগুনের শিখা থেকে।
﴿وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ
لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ﴾
২৮। তারপর তখনকার কথা স্মরণ করো
যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, আমি শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি
থেকে একটি মানুষ সৃষ্টি করছি।
﴿فَإِذَا سَوَّيْتُهُ
وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ﴾
২৯। যখন আমি তাকে পূর্ণ অবয়ব দান
করবো এবং তার মধ্যে আমার রূহ থেকে কিছু ফুঁক দেবো। তখন
তোমরা সবাই তার সামনে সিজদাবনত হয়ো।
﴿فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ
كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ﴾
৩০। সেমতে সকল ফেরেশতা একযোগে
তাকে সিজদা করলো,
﴿إِلَّا إِبْلِيسَ
أَبَىٰ أَن يَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ﴾
৩১। ইবলীস ছাড়া, কারণ সে
সিজদাকারীদের অন্তরভুক্ত হতে অস্বীকার করলো।
﴿قَالَ يَا إِبْلِيسُ
مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ﴾
৩২। আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, “হে ইবলীস!
তোমার কি হলো, তুমি সিজদাকারীদের অন্তরভুক্ত হলে না?”
﴿قَالَ لَمْ أَكُن
لِّأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ﴾
৩৩। সে জবাব দিল, “এমন একটি
মানুষকে সিজদা করা আমার মনোপূত নয় যাকে তুমি শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি থেকে সৃষ্টি
করেছো।”
﴿قَالَ فَاخْرُجْ
مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ﴾
৩৪। আল্লাহ বললেন, “তবে তুমি
বের হয়ে যাও এখান থেকে, কেননা তুমি ধিকৃত।
﴿وَإِنَّ عَلَيْكَ
اللَّعْنَةَ إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ﴾
৩৫। আর এখন কর্মফল দিবস পর্যন্ত
তোমার ওপর অভিসম্পাত!
﴿قَالَ رَبِّ فَأَنظِرْنِي
إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ﴾
৩৬। সে আরয করলো, হে আমার
রব! যদি তাই হয়, তাহলে সেই দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও
যেদিন সকল মানুষকে পুনর্বার উঠানো হবে।
﴿قَالَ فَإِنَّكَ
مِنَ الْمُنظَرِينَ﴾
৩৭। বললেন, “ঠিক আছে, তোমাকে অবকাশ দেয়া হলো।
﴿إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ
الْمَعْلُومِ﴾
৩৮। সেদিন পর্যন্ত যার সময় আমার
জানা আছে।
﴿قَالَ رَبِّ بِمَا
أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ﴾
৩৯। সে বললো, “হে আমার রব!
তুমি যেমন আমাকে বিপথগামী করলে ঠিক তেমনিভাবে আমি পৃথিবীতে এদের জন্য প্রলোভন
সৃষ্টি করে এদের সবাইকে বিপথগামী করবো,
﴿إِلَّا عِبَادَكَ
مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ﴾
৪০। তবে এদের মধ্য থেকে তোমার
যেসব বান্দাকে তুমি নিজের জন্য নির্বাচিত করে নিয়েছো তাদের ছাড়া।
﴿قَالَ هَٰذَا صِرَاطٌ
عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ﴾
৪১। বললেন, এটিই
আমার নিকট পৌঁছুবার সোজা পথ।
﴿إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ
لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ﴾
৪২। অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত
বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোনো জোর খাটবে না। তোমার
জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে
﴿وَإِنَّ جَهَنَّمَ
لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ﴾
৪৩। এবং তাদের সবার জন্য রয়েছে
জাহান্নামের শাস্তির অংগীকার।
﴿لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ
لِّكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ﴾
৪৪। এ জাহান্নাম (ইবলীসের
অনুসারীদের জন্য যার শাস্তির অংগীকার করা হয়েছে) সাতটি দরজা বিশিষ্ট। প্রত্যেকটি
দরজার জন্য তাদের মধ্য থেকে একটি অংশ নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে।
সূরার নামকরণঃ
• সূরার ৮০ নম্বর আয়াতঃ
وَلَقَدْ كَذَّبَ أَصْحَابُ
الْحِجْرِ الْمُرْسَلِينَ এই আয়াতের الْحِجْرِ (আল হিজর) শব্দকে
এই সূরার নাম হিসাবে
গ্রহণ করা হয়েছে।
আল হিজর সম্পর্কে কিছু কথাঃ
•
আল হিজর
হলো আরবের প্রচীন জাতি গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় জাতি সমুদ জাতির রাজধানী শহর। আরবের
প্রাচীন জাতির মধ্যে প্রথম হলো আদ জাতি।
•
সৌদী আরবের
মদীনা ও তাবুকের মাঝখানে
মদীনার উত্তর পশ্চিমে আলউ’লা শহর থেকে কয়েক মাইল দূরে হিজায
রেলওয়ে স্টেশন ‘মাদায়েদ আস সালেহ’। এখানেই
ছিল সামুদ জাতির কেন্দ্রীয়
শহর আল হিজর।
•
এখনো
যেখানে শহরের কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
•
সামুদ
জাতির লোকের পাহাড় কেটে বড় বড় ইমারত নির্মাণ করেছিল। যার বিস্তৃতি ছিল হাজার হাজার
একর এলাকা। যার অধিবাসী সংখ্যা ৪/৫ লাখের কম ছিল না।
•
সড়কের
পাশে জায়গাটির অবস্থান হলেও এই জায়গায় কেউ অবস্থান করেন না। তাবুক যুদ্ধে সময়
রাসূল সা. তার সাহাবীদের নিয়ে এই এলাকা অতিক্রম করেন এবং তখন তিনি সাহাবীদেরকে এই
এলাকাগুলো দেখিয়ে এর শিক্ষণীয় বিষয়গুলো নির্দেশ করেন।তিনি একটি কুয়ার দেখিয়ে বলেন,
এই কুয়া থেকে হযরত সালেহ আ. এর উটনী পানি পান করতো। তিনি মুসলমানদেরকে অন্যান্য
কুয়া থেকে পানি পান না করে এই কুয়া থেকে পানি পান করতে বলেন।
•
রাসূল সা. একটি
গিরিপথ দেখিয়ে বলেন, এই পথ দিয়ে
সালেহ আ. এর উটনী পানি
পান করতে আসতো। স্থানটি
আজ অবধি ফাজ্জুন নাকাহ
বা উটনীর পথ নামে
খ্যাত।
•
উপস্থিত সাহাবীরা
এই এলাকা ঘুরে ফিরে
দেখছিলেন। তখন রাসূল
সা.
তাদের জড়ো করে একটি
ভাষণ দিলেন এবং সামুদ
জাতির ভয়াবহ পরিণাম থেকে
শিক্ষা গ্রহণের জন্য নসিহত
করলেন এবং বললেন, এখানে আল্লাহর
আযাব নাযিল হয়েছিল। তাই
এটা ভ্রমণের জায়গা নয়-এটা
কান্নার জায়গা। স্থানটি
দ্রুত অতিক্রম করে চলে
যাও।
•
প্রখ্যাত
পর্যটক ইবনে বতুতা ৮ম হিজরীতে যখন হজ্জে যান, তখন তিনি এখানে যান এবং এ সম্পর্কে
লিখেনঃ “এখানে লাল রংয়ের পাহাড়গুলোতে সামুদ জাতির ইরামতগুলো রয়েছে। এগুলো তারা পাহাড় কেটে কেটে তার মধ্যে নির্মাণ করেছিল। এ
গৃহগুলোর কারুকাজ এখনো এমন উজ্জ্বল ও তরতাজা আছে যেন মনে হয় আজই এগুলো খোদাই করা
হয়েছে। পচাগলা মানুষের হাড় এখনো এখানকার ঘরগুলো মধ্যে পাওয়া যায়।”
•
কুরআন
নাযিলের পূর্বে এই সামুদ জাতির কাহিনী ছিল মানুষের মুখে মুখে।
•
জাহিলী
যুগের কবিতা, খুতবা এবং সাহিত্যে সামুদ জাতির
উল্লেখ ব্যাপক ভাবে করা হয়েছে।
•
আসিরিয়ার
শিলালিপি, গ্রীস, ইসকানদারীয়া ও রোমের প্রাচীন ঐতিহাসিক ও ভুগোলবিগণও সামুদ জাতির কথা উল্লেখ
করেছেন।
•
ঈসা আ. জন্মের
কিছুকাল আগ পর্যন্ত এই জাতির
কিছু মানুষ বেঁচে ছিল।
•
সামুদ জাতির
কিছু লোক রোমীয় সেনাবাহিনীতে
ভর্তি হয় এবং ‘নিবতী’দের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করে বলে রোমীয়
ঐতিহাসিকগন উল্লেখ করেন।
সূরা নাযিল হওয়ার সময়-কালঃ
•
সূরার বিষয়বস্তু
ও বর্ণনাভংগী থেকে এটা পরিস্কার বুঝা যায় যে, সূরা আল হিজর
সেই সময়ে নাযিল হয়েছে, যখন
সূরা ইব্রাহীম নাযিল হয়েছে। সূরার পটভূমি থেকে দুইটি
বিষয় পরিস্কার দেখা যাচ্ছেঃ
একঃ নবী সা. দাওয়াতী তৎপরতার
একটা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত
হয়েছে। যে কওমকে
তিনি দাওয়াত দিচ্ছেন তারা
বিরামহীন হঠকারিতা, বিদ্রূপ, বিরোধিতা, সংঘাত ও
জুলুম-নিপীড়নের সীমা অতিক্রম করেছে। বুঝানোর চাপটার শেষ হয়ে তাদেরকে সতর্ক করা এবং
ভয় দেখানোর মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
দুইঃ রাসূল সা. নিজের
কাওমের কুফরী, স্থবিরতা আর বিরোধীতার
মোকাবেলা করতে করতে ক্লান্ত
হয়ে পড়েছেন। মানসিক
ভাবে তিনি হতাশাগ্রস্থ হয়ে
পড়ছেন। আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়াতায়ালা তাকে সান্তনা দেচ্ছেন
এবং সাহস যোগাচ্ছেন।
বিষয়বস্তু ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়ঃ
•
এই সূরায়
দুইটি বিষয় আলোচিত হয়েছে। যেমনঃ
১. রাসূল সা. এর দাওয়াতকে অস্বীকারকারী, বিদ্রুপকারী এবং বাঁধাপ্রদানকারীদের সতর্ক করা।
২. রাসূল সা.কে সান্তনা প্রদান ও সাহস যোগানো।
•
এছাড়াও এই সূরাতে
বুঝানো, উপদেশ প্রদান, সতর্কবানী উচ্চাপরণ, তিরস্কার
আর নিন্দাবাদের মাধ্যমে
বুঝানো ও নসিহত, তাওহীদের পক্ষে
সংক্ষিপ্ত যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপনের
পাশাপাশি আদম আ. ও ইবলিসের
কাহিনী শুনিয়ে উপদেশ প্রদানের
সিলসিলা জারি রাখা হয়েছে।
আয়াত সমূহের ব্যাখ্যাঃ
• দারসের আলোচ্য আয়াত গুলো বিস্তারিত বুঝার জন্য পাঠকদের নিচের
ব্যাখ্যা গুলো পড়ার আগেই “আদম সৃষ্টির হাকীকত” অধ্যাপক গোলাম আযম রাহি. এর কিতাবটি পড়ে নিতে অনুরোধ
করবো।
• এখানে আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, দারসে কুরআনের পুরো অংশ
জুড়ে মানুষ সৃষ্টির সূচনা, ফেরেশতাদেরকে সেজদা করতে বলা এবং সেজদা না করার কারণে
ইবলিসের সাথে আল্লাহর কথাবার্তার বিস্তারিত এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। বিধায়, এই
বিষয়ে আমাদের জানা বিষয়গুলো স্মরণ করে ভূল ধারণা গুলো বা ভূল জানা গুলোকে সংশোধিত
করার মানসে আমাদেরকে উদ্যোগী হতে হবে।
﴿وَلَقَدْ
خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ﴾
২৬। আমি মানুষ
সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি থেকে।
•
এখান থেকে
শুরু হলো মানুষ এবং
জিন সৃষ্টি এবং আদম
সৃষ্টির সূচনায় সংঘটিত ঘটনার
বিস্তারিত বিবরণ। এই বিবরণই
দারসের আলোচ্য বিষয়।
•
শুরু করা
হচ্ছে মানুষ সৃষ্টি রহস্য
নিয়ে। বলা হচ্ছেঃ
মানুয সৃষ্টিরও আগে জিনকে
সৃষ্টি করা হয়েছে এবং
তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে
আগুনের শিখা থেকে।
•
উপরোক্ত আলোচনার
মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টির রহস্যটাকে
পরিস্কার করা হয়েছে। আর এই আলোচনা
প্রমাণ করে মানুষ কোন
বিবর্তন প্রক্রিয়া অতিক্রম করে
পশুত্বের পর্যায় অতিক্রম করে
মানবতার পর্যায়ে উন্নীতি হয়নি।
-
বিবর্তনবাদের প্রবর্তক
ডারউনি এবং তার অনুসারীরা
আর তাদের কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়ে আধুনিক
যুগের কুরআনের ব্যাখ্যাদাতাগন বলেছেন, মানুষ
পশু থেকে বিবর্তন প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে মানুষে উন্নত হয়েছে।
-
কুরআন তা প্রত্যাখ্যান
করে বলছেঃ সরাসরি মাটির
উপদান থেকে মানুষের সৃষ্টিকর্ম
শুরু হয়েছে- صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ
مَّسْنُونٍ এখানে “শুকনো
ঠনঠনে পচা মাটি” শব্দগুলো ব্যবহার করা
হয়েছে।
-
حَمَإٍ م আরবীতে এক ধরনের কালো কাদা
মাটিকে বুঝায়, যার মধ্যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়ে গেছে। আমরা ঐ মাটিকে পংক
বা পাঁক বলে থাকি। অথবা এমন মাটি যা গোলা বা মন্ড হয়ে গেছে।
-
مَّسْنُونٍ শব্দের দুই অর্থঃ
১. পরিবর্তিত। এমন পচা, যার মধ্যে পচন ধরার ফলে
চকচকে ও তেলতেলে ভাব সৃষ্টি হয়ে গেছে।
২. চিত্রিত। যা একটা নির্দিষ্ট আকৃতি ও কাঠামোতে রূপান্তরিত হয়েছে।
-
صَلْصَالٍ এমন পচা কাদা, যা শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠনঠনে করে বাজে।
o
হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রা. হযরত মুজাহিদ রাহি. এবং
হযরত কাতাদা রাহি. বলছেনঃ صَلْصَالٍ দ্বারা শুকনো মাটি বুঝানো হয়েছে।
-
এই শব্দাগুলো থেকে পরিস্কার জানা যাচ্ছে যে, গাঁজানো কাদা মাটির গোলা বা
মণ্ড থেকে প্রথমে একটি পুতুল বানানো হয় এবং পুতুলটি তৈরী হবার পর যখন শুকিয়ে যায় তখন
তার মধ্যে প্রাণ ফুঁকে দেয়া হয়।
•
কুরআনে
অন্যত্র বলা
হয়েছেঃ خَلَقَ ٱلْإِنسَـٰنَ مِن صَلْصَـٰلٍۢ
كَٱلْفَخَّارِ
“মাটির
শুকনো ঢিলের মত পচা কাদা থেকে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।” (আর রাহমানঃ ১৪)
• কুরআনে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায় বর্ণনা করা হয়েছে।
সবগুলো বর্ণনাকে একত্রিত করলে তার ক্রমবিন্যাস দাড়ায় এভাবেঃ
1. তুরাব অর্থ মাটি।
2. ত্বীন অর্থ পচা কর্দম যা মাটিতে পানি মিশিয়ে বানানো হয়।
3. ত্বীন লাযেব-আঠালো কাদামাটি। এমন কাদা, দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে যার মধ্যে আঠা সৃষ্টি হয়ে যায়।
4. حَمَإٍ مَسْنُونٍ যে কাদার মধ্যে গন্ধ
সৃষ্টি হয়ে যায়।
5. صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ كَالْفَخَّارِ পচা কাদা যা শুকিয়ে যাওয়ার পরে মাটির শুকনো ঢিলার মত হয়ে
যায়।
6. بشر মাটির এ শেষ পর্যায় থেকে যাকে বানানো হয়েছে। আল্লাহ তাআ’লা যার মধ্যে তাঁর বিশেষ রূহ ফূৎকার করেছেন। ফেরেশতাদের দিয়ে যাকে সিজদা করানো হয়েছিল এবং তার সমজাতীয় থেকে তার জোড়া
সৃষ্টি করা হয়েছিল।
7. ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ তারপর পরবর্তী সময়ে নিকৃষ্ট পানির মত সংমিশ্রিত দেহ নির্যাস থেকে তার বংশ ধারা
চালু করা হয়েছে। এ কথাটি বুঝাতে অন্য স্থানসমূহে نطفه শুক্র শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
• মানব সৃষ্টির এই পর্যায়গুলো বুঝার পর কুরআনে নিম্নোক্ত আয়াত
গুলোর প্রতি আমরা দৃষ্টি দেবোঃ
إِنَّ
مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ ۖ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ
لَهُ كُن فَيَكُونُ
“আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত
আদমের মতো। কেননা আল্লাহ তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন।” (আলে ইমরানঃ ৫৯)
إِنَّا
خَلَقْنَـٰهُم مِّن طِينٍۢ لَّازِبٍۭ
“এদেরকে
তো আমি সৃষ্টি করেছি আঠাল কাদামাটি দিয়ে।” (আস সাফফাতঃ ১১)
وَبَدَأَ
خَلْقَ ٱلْإِنسَـٰنِ مِن طِينٍۢ
“তিনি
মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন কাদামাটি থেকে।” (আস সিজদাহঃ ০৭)
• চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায় আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তার পরের পর্যায়গুলো নীচের আয়াত সমূহে বর্ণনা করা হয়েছেঃ
إِنِّى
خَـٰلِقٌۢ بَشَرًۭا مِّن طِينٍۢ - فَإِذَا سَوَّيْتُهُۥ
وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِى فَقَعُوا۟ لَهُۥ سَـٰجِدِينَ
“আমি মাটি দিয়ে একটি মানুষ
তৈরি করবো। তারপর যখন অমি তাকে
পুরোপুরি তৈরি করে ফেলবো এবং তার মধ্যে নিজের প্রাণ ফুঁকে দেবো। তখন তোমরা তার সামনে সিজদানত হয়ে যেয়ো।” (ছোয়াদঃ ৭১-৭২)
خَلَقَكُم
مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا
وَنِسَاءً
“তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি
প্রাণ থেকে। আর সেই একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন তার
জোড়া। তারপর তাদের দুজনার থেকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে
দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী।” (আন নিসাঃ ০১)
ثُمَّ
جَعَلَ نَسْلَهُۥ مِن سُلَـٰلَةٍۢ مِّن مَّآءٍۢ مَّهِينٍۢ
“তারপর তার বংশ উৎপাদন করেছেন
এমন সূত্র থেকে যা তুচ্ছ পানির মতো।” (আস
সিজদাহঃ ০৮)
فَإِنَّا
خَلَقْنَاكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ
“আমি
তোমাদের সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে, তারপর শুক্র থেকে।” (আল হাজ্জঃ ০৫)
﴿وَالْجَانَّ
خَلَقْنَاهُ مِن قَبْلُ مِن نَّارِ السَّمُومِ﴾
২৭। আর এর আগে
জিনদের সৃষ্টি করেছি আগুনের শিখা থেকে।
•
আগেই
উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুয সৃষ্টিরও আগে জিনকে
সৃষ্টি করা হয়েছে এবং
তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে
আগুনের শিখা থেকে।
•
কুরআনে
অন্যত্র বলা
হয়েছেঃ وَخَلَقَ ٱلْجَآنَّ مِن مَّارِجٍۢ مِّن نَّارٍۢ “আর
জিনদের সৃষ্টি করেছেন আগুনের শিখা থেকে।” (আর রাহমানঃ ১৫)
•
এই আয়াতে উল্লেখতি سَمُومِ হলো
গরম বাতাস। দুই গরম একসাথে মিলালে তার
অর্থ দাড়ায় প্রখর উত্তাপ। আর সূরা আর রহমানে উল্লেখিত مَّارِجٍۢ হলো ধোঁয়াবিহীন শিখা। আর نَّارٍ হলো এক বিশেষ ধরনের আগুন। কাঠ বা কয়লা জ্বালালো যে আগুন সৃষ্টি এটা সে আগুন নয়।
•
আমর ইবনে দীনার রাহি. বলেন, জ্বিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে সূর্যের আগুন থেকে।
•
সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস, যা হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেনঃ
خُلِقَتِ
الْمَلاَئِكَةُ مِنْ نُورٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ وَخُلِقَ
آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ
“ফেরেশতাদের
সৃষ্টি করা হয়েছে নূর থেকে, আর জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে ধুয়া বিহিন আগুনের
শিখা থেকে এবং আদম আ.কে সৃষ্টি করা হয়েছে তোমাদের নিকট বর্ণিত বস্তু
হতে (তথা মাটি থেকে)।
•
উপরে বর্ণিত
২৬ ও ২৭ আয়াত
এবং এর ব্যাখ্যা থেকে
জানা গেলঃ
- প্রথমে মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
- এরপর সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করার সময় সৃষ্ট মাটির সত্তাটি
অস্থি-মাংসে তৈরী জীবন্ত মানুষের আকৃতি লাভ করেছে।
- এর পরবর্তী সময়ে অস্তি-মাংসের মানুষের বংশধারা
চালু রাখা হয়েছে শুক্রের সাহায্যে।
- একই ভাবে, জিনকে প্রথমে আগুনের শিখা থেকে
সৃষ্টি করা হয়।
- পরবর্তীতে জিনদের বংশধারাও সৃষ্টি
হয়েছে একই প্রক্রিয়ায়।
- মানব জাতির কাছে আদমের
মর্যাদা যেমন, জ্বীন জাতির
কাছে জিনের মর্যাদাও তেমন। মাটি থেকে আদম সৃষ্টির
পর আদমের বংশ থেকে
জন্মগ্রহণকারী মানুষের দেহের আর সেই
মাটির সাথে কোন সম্পর্ক
যেমন থাকলো না, তেমনি আগুন
থেকে সৃষ্টি হওয়া জিনের
সাথে জিনের বংশদের সাথে
সেই আগুনের কোন সম্পর্ক
নাই।
- বর্তমান মানব সন্তানের শরীরের
পুরো অংশ কিন্তু মাটির
নির্যাস থেকে সৃষ্ট। মাটির
সেই সবে অংশকে রক্ত-মাংসে
রূপান্তরিত করা হয়েছে। মানুষ
যা খায়, তা মাটি
থেকে উৎপন্ন হয়। আর তা থেকেই
মানুষের শুক্র তৈরী হয়। জিনদের অবস্থানও একই ধরণের। এখন যেমন মাটির স্তুপ
নেই,
তেমনি আগুনের শিখাও নেই।
﴿وَإِذْ
قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ
مَّسْنُونٍ﴾
২৮। তারপর তখনকার কথা স্মরণ করো যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, আমি শুকনো ঠনঠনে পচা মাটি থেকে একটি মানুষ সৃষ্টি করছি।
•
উপরের আলোচনা
থেকে আমরা আরো ২টি
বিষয় জানলামঃ
1. জিনেরা কোন অশরীরি আত্মিক
সত্তা নয়, বরং তাদেরও
এক ধরণের জড় দেহ
আছে। যেহেতু আগুনের
উপাদান থেকে তৈরী, তাই মাটির
উপাদান থেকে তৈরী মানুষের
দৃষ্টিতে পড়ে না। তাছাড়া জিনেরদ গতি
অতি দ্রুত হওয়া, অতি সহজে
তারা নানাবিধ আকার-আকৃতি গ্রহণ
করা ইত্যাদি কারণে মাটির
উপাদানে গঠিত বস্তু সেখানে
প্রবেশ করতে পারে না বা প্রবেশ
করলেও অনুভূত হয় না, দৃষ্টিগোচর
হয় না।
কুরআনে বলা হয়েছেঃ إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا
تَرَوْنَهُمْ
“শয়তান ও তার দলবল এমন অবস্থান
থেকে তোমাদের দেখছে যেখানে তোমরা তাদের দেখতে পাও না” (আল আ’রাফঃ ২৭)
2. জিনরা মানুষ থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র সৃষ্টির সাথে সাথে
তাদের সৃষ্টি উপাদান মানুষ, জীবজন্তু, উদ্ভিদরাজি এবং চেতনা প্রদার্থ থেকে
সম্পূর্ণ ভিন্ন।
•
জিনেরা
মানুষেরই একটি শ্রেণী এমন ধারণা একটি ভ্রান্ত ধারণা। ভ্রান্তধারণাকারীরা মনে করেন,
মাটি থেকে সৃষ্টি আর আগুন থেকে সৃষ্টির মানে হলো তারা দুই মেজাজের মানুষ। যে সব
মানুষের নম্র মেজাজের, তারা সত্যিকার অর্থে মানুষ। আর যাদের মেজাজ অগ্নিস্ফুলিংগের
মত গরম, এরাও মানুষ। তবে ওরাই শয়তান। তাদের বক্তব্য হলোঃ মানুষদের একটি শ্রেণীকে
পঁচা আঠাল মাটির শুকনো ঢিলা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে-ওরা প্রকৃত মানুষ। আরেক শ্রেণীর
মানুষ, যাদেরকে জিন বলা হয়-এদেরকে নিরেট অগ্নি শিখা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
•
কিন্তু এই ধরণের
তাফসীর কুরআনে ভূল তাফসীর
এবং কুরআনের বিকৃতি সাধনকারী
তাফসীর। বরং উপরের
আলোচনায় স্পষ্ট করা হয়েছে
যে,
কুরআন মানুষের মাটি থেকে
সৃষ্টি হওয়াটা কত স্পষ্ট
ও বিস্তারিত বর্ণনা করে।
•
এখন আল্লাহ
সেই ঐতিহাসিক সমাবেশের বর্ণনা
শুরু করছেন। যেখানে
মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা
করা হয়, তাদের মর্যাদা
বর্ণনা করা হয় এবং
ফেরেশতাদের নির্দেশ দেয়া হয় আদমকে
সেজদা করতে।
﴿فَإِذَا
سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ﴾
২৯। যখন আমি তাকে পূর্ণ অবয়ব দান করবো এবং তার মধ্যে আমার রূহ থেকে কিছু ফুঁক দেবো। তখন তোমরা সবাই তার সামনে সিজদাবনত হয়ো।
• فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي - যখন আমি তাকে পূর্ণ অবয়ব দান করবো এবং তার মধ্যে
আমার রূহ থেকে কিছু ফুঁক দেবো।
-
رُّوحِ (রুহ) কি?
রুহ এর পরিচয় দেয়া হয়েছে কুরআনের অন্য একটি আয়াতেঃ
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ ۖ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي
وَمَا أُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا
এরা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। বলে দাও, “এ রূহ আমার রবের হুকুমে আসে কিন্তু তোমরা
সামান্য জ্ঞানই লাভ করেছো।” (বনী ইসরাঈলঃ
৮৫)
-
رُّوحِ - রুহ মৌলিক পদার্থ না যৌগিক পদার্থ?
o এসম্পর্কে দার্শিনিকদের মাঝে রয়েছে মতপার্থক্য এবং এই
সংখ্যা এক হাজারের উপরে।
o ইমাম গাজ্জালী, ইমাম রাযী ও সুফীবাদ কেন্দ্রীক দার্শিনিকদের
মতে, রুহ একটি সুক্ষ্ম মৌলিক পদার্থ-যৌগিক পদার্থ নয়।
o অধিকাংশ ইসলামিক স্কলার মনে করেন, রুহ একটি সুক্ষ্ম দেহ বিশিষ্ট বস্তু। তাদের মতে, রুহকে
ফুঁক মারার কথা আয়াতে বলা হয়েছে। আর ফুঁক দেয়া তখনই সম্ভব, যখন তা কোন দেহ বা আঁকার সম্পন্ন
হবে। রুহকে পদার্থ হিসাবে গ্রহণ
করলে সেই পদার্থকে ফুঁক প্রদানের মাধ্যমে দেহের সাথে সম্পর্কিত করা হবে।
o কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী বলেন, রূহ দুই প্রকার। ১. স্বর্গজাত। ২. মর্ত্যজাত।
১. স্বর্গজাত রূহ আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি,যার রয়েছে ৫টি স্তর। ১. ক্বলব। ২. রূহ। ৩. সির। ৪. খফী। ৫. আখফা। যার সবক’টি আল্লাহ পাকের সুক্ষ্ম আদেশ। এই আদেশ সমূহের একটি হলোঃ قُلِ الرُّوحُ مِنْ
أَمْرِ رَبِّي
২. মর্ত্যজাত রূহ সুক্ষ্ম বাস্পের মতো,
যা মানবদেহের উপাদান অগ্নি, পানি, মৃত্তিকা ও বায়ু। মর্ত্যজাত রূহকে বলা হয় নাফস।
o আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা স্বার্গজাত রূহের আয়না বানিয়েছেন
মর্ত্যজাত রূহকে। ফলে স্বর্গজাত রূপে প্রভাব
পড়ে নাফসের উপর। আর সেই নফসের গুণাগুণ আর প্রতিক্রিয়া
মানুষের হৃদপিন্ডে সংযুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয় হায়াত ও মাউত। ফলে মানুষের হায়াত ও মাউত হৃদপিন্ডের সাথে সংযুক্ত। সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে মানুষের মৃত্যু হয়। আমরা বলি হৃদ পিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু
বরণ করেছে। আবার মানুষ বেঁচে আছে, না মরে গেছে তা বুঝার জন্য আমরা হৃদপিন্ডের স্পন্দনকে পরীক্ষা করি।
-
এই আয়াত থেকে
আমরা জানলাম, মানুষের মধ্যে যে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়েছে তথা
প্রাণের সঞ্চার করা হয়েছে, তাহলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার
গুণাবলীর একটি প্রতিচ্ছায়া।
-
প্রাণ কি? জীবন, জ্ঞান, শক্তি, সামর্থ, সংকল্প এবং অন্যান্য যত গুণাবলী মানুষের মধ্যে
পাওয়া যায়, এর সব মিলেই প্রাণ।আল্লাহর রূহ থেকে প্রতিচ্ছায়া প্রাপ্তির কারণেই মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে
গণ্য হয়েছে এবং ফেরেশতা সহ পৃথিবীর সকল সৃষ্টি মানুষকে সিজদা করেছে।
- সৃষ্টির মাঝে যত গুণ পাওয়া যায়, তার প্রত্যেকটির উৎস বা উৎপত্তি আল্লাহর কোন না কোন গুণ। হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত একটি হাদীসে বলা
হয়েছে। তিনি বলেন আমি রাসূল সা.কে বলতে শুনেছিঃ
جَعَلَ اللَّهُ
الرَّحْمَةَ مِائَةَ جُزْءٍ، فَأَمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ جُزْءًا،
وَأَنْزَلَ فِي الأَرْضِ جُزْءًا وَاحِدًا، فَمِنْ ذَلِكَ الْجُزْءِ يَتَرَاحَمُ
الْخَلْقُ، حَتَّى تَرْفَعَ الْفَرَسُ حَافِرَهَا عَنْ وَلَدِهَا خَشْيَةَ أَنْ
تُصِيبَهُ.
“আল্লাহ রহমত একশ ভাগে ভাগ করেছেন। তার মধ্যে নিরানব্বই ভাগ
তিনি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। আর একভাগ নাযিল করেছেন। ঐ একভাগের কারণেই সৃষ্ট জগত
একে অন্যের উপর দয়া করে। এমনকি ঘোড়া তার বাচ্চার উপর থেকে পা তুলে নেয় এ ভয়ে যে, সে ব্যথা পাবে।” (বুখারী)
-
আল্লাহর গুণাবলীর
প্রতিচ্ছায়া যতটুকু মানুষের উপর ফেলা হয়েছে, তেমন করে অন্যান্য
প্রাণীর উপর ফেলা হয়নি বলে মানুষের প্রাধান্য ও শ্রেষ্টত্ব।
-
আল্লাহর গুণাবলীর
একটু ছায়া পাওয়া আল্লাহর সার্বভৌমত্বে মানুষের অংশীদার হওয়া নয়।
•
فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ
- তখন তোমরা সবাই তার সামনে সিজদাবনত হয়ো।
﴿فَسَجَدَ
الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ﴾
৩০। সেমতে সকল ফেরেশতা একযোগে তাকে সিজদা করলো।
• فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ - সেমতে
সকল ফেরেশতা একযোগে তাকে সিজদা করলো।
﴿إِلَّا
إِبْلِيسَ أَبَىٰ أَن يَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ﴾
৩১। ইবলীস ছাড়া, কারণ সে সিজদাকারীদের অন্তরভুক্ত হতে অস্বীকার করলো।
•
إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ أَن
يَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ - ইবলীস ছাড়া, কারণ সে সিজদাকারীদের
অন্তরভুক্ত হতে অস্বীকার করলো।
- এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলা হয়েছে
কুরআনের আরো বিভিন্ন আয়াতে। যেমনঃ
وَإِذْ قُلْنَا
لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ
وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
তারপর যখন ফেরেশতাদের হুকুম দিলাম, আদমের সামনে নত হও, তখন সবাই অবনত হলো, কিন্তু ইবলিস অস্বীকার করলো। সে
নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মেতে উঠলো এবং নাফরমানদের অন্তরভুক্ত হলো। (আল বাকারাহঃ ৩৪)
وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ ثُمَّ
صَوَّرْنَاكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا
إِبْلِيسَ لَمْ يَكُن مِّنَ السَّاجِدِينَ
আমি তোমাদের সৃষ্টির সূচনা করলাম তারপর তোমাদের আকৃতি দান
করলাম অতপর ফেরেশতাদের বললাম,আদমকে সিজদা করো। এ নির্দেশ অনুযায়ী সবাই সিজদা করলো। কিন্তু ইবলীস সিজদাকারীদের অন্তরভুক্ত হলো না। (আল আরাফঃ ১১)
﴿قَالَ
يَا إِبْلِيسُ مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ﴾
৩২। আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, “হে ইবলীস! তোমার কি হলো, তুমি সিজদাকারীদের অন্তরভুক্ত হলে না?”
• قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ - আল্লাহ
জিজ্ঞেস করলেন, “হে ইবলীস!
তোমার কি হলো, তুমি
সিজদাকারীদের অন্তরভুক্ত হলে না?”
- এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলা হয়েছে
কুরআনের আরো বিভিন্ন আয়াতে। যেমনঃ قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا
تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ
আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, “আমি যখন
তোকে হুকুম দিয়েছিলাম তখন সিজদা করতে তোকে বাধা দিয়েছিল কিসে”?। (আল আরাফঃ ১২)
﴿قَالَ
لَمْ أَكُن لِّأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ﴾
৩৩। সে জবাব দিল, “এমন একটি মানুষকে সিজদা করা আমার মনোপূত নয় যাকে তুমি শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছো।”
• قَالَ لَمْ أَكُن لِّأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ
حَمَإٍ مَّسْنُونٍ - সে জবাব দিল, “এমন একটি মানুষকে সিজদা করা
আমার মনোপূত নয় যাকে তুমি শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছো।”
-
এ বিষয়ে বিস্তারিত
কথা বলা হয়েছে কুরআনের আরো বিভিন্ন আয়াতে। যেমনঃ
قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ
خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ
সে জবাব দিলঃ “আমি তার
চাইতে শ্রেষ্ঠ। আমাকে আগুন
থেকে সৃষ্টি করেছো এবং ওকে সৃষ্টি করেছো মাটি থেকে”। (আল আরাফঃ ১২)
قَالَ أَنَا۠ خَيْرٌۭ مِّنْهُ
خَلَقْتَنِى مِن نَّارٍۢ وَخَلَقْتَهُۥ مِن طِينٍۢ
সে জবাব দিলঃ “আমি তার তুলনায়
শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আগুন থেকে এবং তাকে মাটি
থেকে।” (ছোয়াদঃ ৭৬)
قَالَ أَرَأَيْتَكَ
هَٰذَا الَّذِي كَرَّمْتَ عَلَيَّ
তারপর সে বললো, দেখোতো ভালো করে,
তুমি যে একে আমার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছো, এ কি
এর যোগ্য ছিল? (বনী ইসরাঈলঃ ৬২)
﴿قَالَ
فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ﴾
৩৪। আল্লাহ বললেন, “তবে তুমি বের হয়ে যাও এখান থেকে, কেননা তুমি ধিকৃত।
• قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ - আল্লাহ
বললেন, “তবে তুমি
বের হয়ে যাও এখান থেকে, কেননা তুমি ধিকৃত।
-
এ বিষয়ে বিস্তারিত
কথা বলা হয়েছে কুরআনের আরো বিভিন্ন আয়াতে। যেমনঃ
قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا
يَكُونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِينَ
তিনি বললেনঃ “ঠিক আছে, তুই এখান থেকে নীচে নেমে যা। এখানে অহংকার করার অধিকার তোর নেই। বের হয়ে যা। আসলে
তুই এমন লোকদের অন্তরভুক্ত, যারা নিজেরাই নিজেদেরকে
লাঞ্ছিত করতে চায়”। (আল আরাফঃ ১৩)
﴿وَإِنَّ
عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ﴾
৩৫। আর এখন কর্মফল দিবস পর্যন্ত তোমার ওপর অভিসম্পাত!
• وَإِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ
- আর এখন কর্মফল দিবস পর্যন্ত তোমার ওপর অভিসম্পাত!
-
ইবলিসের অভিসপ্ত জীবনের মেয়াদ হলো কিয়ামত পর্যন্ত। অতীতে সে অভিসপ্ত ছিল, এখন আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এটা তার জন্য তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত-তার রিমান্ডকালীন জীবন। এটা তার চূড়ান্ত বিচার নয়, তার অপরাধের শাস্তি নয়।
-
কিয়ামত
পর্যন্ত অভিশপ্ত থাকার পর যখন আদালতে কিয়ামতে আদালত বসবে, তখন আদালতে আখেরাতে তাকে
তার নাফরমানীর শাস্তি প্রদান করা হবে।
-
সায়িদ
বিন জুবাইর বর্ণনা করেন যে, যখন আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতায়ালা যখন ইবলিসকে লানত প্রদানের ঘোষনা দিলেন, তখন সাথে সাথে তার আকৃতি পরিবর্তন হয়ে গেল এবং সে শোকে বিলাপ করতে শুরু করলো। দুনিয়াতে শোক ও বিলাপের সূচনা সেখান থেকেই শুরু হলো।
﴿قَالَ
رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ﴾
৩৬। সে আরয করলো, হে আমার রব! যদি তাই হয়, তাহলে সেই দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও যেদিন সকল মানুষকে পুনর্বার উঠানো হবে।
• قَالَ رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
- সে আরয করলো, হে আমার রব! যদি তাই হয়, তাহলে সেই দিন পর্যন্ত আমাকে
অবকাশ দাও যেদিন সকল মানুষকে পুনর্বার উঠানো হবে।
قَالَ أَنظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ
يُبْعَثُونَ
সে বললঃ “আমাকে সেই দিন পর্যন্ত
অবকাশ দাও যখন এদের সবাইকে পুনর্বার ওঠানো হবে”। (আল আরাফঃ ১৪)
-
ইবলিস
শোকে এবং হিংসার আগুনে বিদগ্ধ হয়ে আল্লাহর কাছে এই আবেদন করলো যে, তাকে যেন কিয়ামত অবধি সময় দেয়া হয়।
﴿قَالَ
فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ﴾
৩৭। বললেন, “ঠিক আছে, তোমাকে অবকাশ দেয়া হলো।
• قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ - বললেন, “ঠিক আছে, তোমাকে অবকাশ দেয়া হলো।
-
এ বিষয়ে বিস্তারিত
কথা বলা হয়েছে কুরআনের আরো বিভিন্ন আয়াতে। যেমনঃ قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ
তিনি বললেনঃ “তোকে অবকাশ দেয়া হলো”। (আল আরাফঃ
১৫)
﴿إِلَىٰ
يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ﴾
৩৮। সেদিন পর্যন্ত যার সময় আমার জানা আছে।
• إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ - সেদিন
পর্যন্ত যার সময় আমার জানা আছে।
﴿قَالَ
رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ
أَجْمَعِينَ﴾
৩৯। সে বললো, “হে আমার রব! তুমি যেমন আমাকে বিপথগামী করলে ঠিক তেমনিভাবে আমি পৃথিবীতে এদের জন্য প্রলোভন সৃষ্টি করে এদের সবাইকে বিপথগামী করবো।
• قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ
وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ - সে বললো, “হে আমার রব! তুমি যেমন আমাকে বিপথগামী
করলে ঠিক তেমনিভাবে আমি পৃথিবীতে এদের জন্য প্রলোভন সৃষ্টি করে এদের সবাইকে
বিপথগামী করবো,
-
এটা হলো
প্রাপ্ত ক্ষমতার প্রেক্ষিতে ইবলিসের চ্যালেঞ্জ। আর তাহলোঃ
o
আমি যেমন একটি নগন্য ও হীন সৃষ্টিকে সিজদা না করে আপনার হুকুম অমান্য করতে বাধ্য হলাম, তোমার এই সৃষ্টির সামনে আমি দুনিয়াটাকে চিত্তাকর্ষক আর মনোমগ্ধকর হিসাবে উপস্থাপন করবো, যাতে তারা প্রতারিত হয়ে আমার মতো তোমার নাফরমানী করতে বাদ্য হয়।
o
ইবলিসের টার্গেট ছিল দুনিয়ার জীবনের সুখ আনন্দ, আরাম আয়েশ, ভোগ বিলাস ইত্যাদিকে মানুষের কাছে চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয় করে তুলা, যাতে সে যে উদ্দেশ্যে দুনিয়ায় এসেছে এসই খেলাফতের দায়িত্ব ও পরকালের জবাবদিহিতার কথা ভুলে যায়, আল।লাহকে ভুলে যায়। কিংবা এগুলো স্মরণ থাকার পরও আল্লাহ ও তার বিধানের বিরোধীতা করে।
-
এ বিষয়ে বিস্তারিত
কথা বলা হয়েছে কুরআনের আরো বিভিন্ন আয়াতে। যেমনঃ
قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي
لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ
সে বললোঃ “তুমি যেমন আমাকে
গোমরাহীতে নিক্ষেপ করছো তেমনি আমি ও এখন তোমার সরল-সত্য পথে এ লোকদের জন্যে
ওঁত পেতে বসে থাকবো,
ثُمَّ لَآتِيَنَّهُم مِّن
بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَائِلِهِمْ ۖ وَلَا
تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ
সামনে-পেছনে, ডাইনে-বাঁয়ে, সবদিক থেকে এদেরকে ঘিরে ধরবো এবং এদের অধিকাংশকে তুমি শোকর গুজার পাবে
না”। (আল আরাফঃ ১৬-১৭)
﴿إِلَّا
عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ﴾
৪০। তবে এদের মধ্য থেকে তোমার যেসব বান্দাকে তুমি নিজের জন্য নির্বাচিত করে নিয়েছো তাদের ছাড়া।
• إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ - তবে এদের
মধ্য থেকে তোমার যেসব বান্দাকে তুমি নিজের জন্য নির্বাচিত করে নিয়েছো তাদের ছাড়া।
لَأَحْتَنِكَنَّ
ذُرِّيَّتَهُ إِلَّا قَلِيلًا
“তাহলে আমি তার সমস্ত সন্তান সন্ততির মূলোচ্ছেদ করে দেবো,৭৫ মাত্র সামান্য কজনই আমার হাত থেকে
নিস্তার পাবে।” (বনী ইসরাঈলঃ ৬২)
- মুখলিসিনরা কিভাবে রক্ষা পাবে, সে সম্পর্কে কুরআন বলছেঃ
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۚ إِنَّهُ
سَمِيعٌ عَلِيمٌ، إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ
تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ، وَإِخْوَانُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِي الْغَيِّ ثُمَّ
لَا يُقْصِرُونَ
“যদি কখনো শয়তান তোমাকে উত্তেজিত করে তাহলে আল্লাহর আশ্রয় চাও। তিনি সবকিছু শোনেন এবং জানেন। প্রকৃতপক্ষে যারা মুত্তাকী, তাদেরকে
যদি কখনো শয়তানের প্রভাবে অসৎ চিন্তা স্পর্শও করে যায় তাহলে তারা তখনই সতর্ক হয়ে
উঠে তারপর তারা নিজেদের সঠিক কর্মপদ্ধতি পরিষ্কার দেখতে পায়। আর তাদের অর্থাৎ (শয়তানের) ভাই-বন্ধুরা তো তাদেরকে তাদের বাঁকা পথেই টেনে নিয়ে যেতে থাকে এবং
তাদেরকে বিভ্রান্ত করার ব্যাপারে তারা কোন ত্রুটি করে না। (আল আ’রাফঃ ২০০-২০২)
﴿قَالَ
هَٰذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ﴾
৪১। বললেন, এটিই আমার নিকট পৌঁছুবার সোজা পথ।
• قَالَ هَٰذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ - বললেন, এটিই আমার নিকট পৌঁছুবার সোজা
পথ।
- শয়তানের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায়
আল্লাহ মানুষদেরকে অথবা মুখলিস
বান্দাদেরকে তার নিকটে পৌছার
পথ বলে দিলেন যে, এটাই আমার
কাছে পৌছার সরল পথ।
وَعَلَى ٱللَّهِ قَصْدُ ٱلسَّبِيلِ
“সোজা পথ দেখাবার দায়িত্ব আল্লাহর ওপরই।” (আন নাহলঃ ৯)
(কায়িস
বিন উবাদাহ, মুহাম্মদ বিন শিরিন
এবং কাতাদা প্রমুখ মুফাস্সির
বলেনঃ এই আয়াতে যে রাস্তার
কথা বলা হয়েছে, সেটাই সঠিক
সরল পথ-هذا صِراط عَلِيٌّ
مستقيمٌ)
- এর দুইটি অর্থঃ
১.
এটি আমার নিকট পৌছবার
সোজা পথ।
২.
একথা ঠিক, আমি এটা মেনে
চলবো।
-
সরল পথে সন্ধান
দিয়ে আল্লাহ এটাও জানিয়ে দিলেন যে, إِنَّ رَبَّكَ لَبِٱلْمِرْصَادِ
“আসলে তোমার রব অবশ্যই সতর্ক
দৃষ্টি রাখেন। (আল ফাজরঃ ১৪)
﴿إِنَّ
عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ﴾
৪২। অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোনো জোর খাটবে না। তোমার জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে।
• إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ
مِنَ الْغَاوِينَ - অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত
বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোনো জোর খাটবে না। তোমার
জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে।
-
এই আয়াতের
দুইটি অর্থ হতে
পারেঃ
১.
অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোনো
জোর খাটবে না। তোমার জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে।
২. আমার বান্দাদের (অর্থাৎ সাধারণ মানুষদের) ওপর তোমার কোন
কর্তৃত্ব থাকবে না। তুমি তাদেরকে জবরদস্তি নাফরমান বানাতে পারবে না। তবে তারা
নিজেরাই বিভ্রান্ত হবে এবং নিজেরাই তোমার অনুসরণ করতে চাইবে তাদেরকে তোমার পথে
চলার জন্য ছেড়ে দেয়া হবে। তোমার পথ থেকে তাদেরকে আমি জোর
করে বিরত রাখার চেষ্টা করবো না।
আর এই দুইটি অর্থ থেকে আমরা জানলামঃ
১. আল্লাহর কাছে পৌছবার সোজা
পথ হলো বন্দেগীর পথ। যারা বন্দেগীর পথ অবলম্বন করবে, শয়তানের কর্তৃত্ব তাদের উপর চলবে না। আল্লাহ তাদেরকে হেফাজত করে নেবেন। আর
শয়তানও এই কথার স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, যারা
বন্দেগীর পথ অবলম্বণ করবে, তাদেরকে সে শিকার করতে
পারবে না। বরং যারা বন্দেগীর পথ থেকে সরে যাবে, নিজেদের কল্যাণ আর সৌভাগ্যের পথ যারা হারিয়ে ফেলবে, তারা শয়তানের শিকার হবে। সে তাদেরকে পথ ভূলিয়ে হেদায়াত থেকে দূরে নিয়ে দূর
থেকে দূরান্তরে নিয়ে যাবে।
২.
বিভ্রান্ত করা জন্য শয়তানের
কর্মপদ্ধতি হলো, দুনিয়ার জীবনকে
মানুষের সামনে সুদৃশ্য, সুন্দর এবং লোভনীয়
করে তোলা। যা তাদেরকে
আল্লাহ থেকে গাফিল করবে, বন্দেগীর
পথ থেকে বিচ্যুত করবে। আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়াতালা শয়তানের এই কর্মপদ্ধতিকে
স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, তোমাকে কেবল
ধোঁকা দেয়ার ক্ষমতা দেয়া
হচ্ছে। কিন্তু হাত ধরে জোর করে নিজের
দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার
ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে না। বিধায়, যে নিজেকে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা
বানাতে পাবে, শয়তান তাকে
নিজের তালিকায় রাখবে না। কেবল যে নিজে বিভ্রান্ত
হবে,
সে শয়তানের অনুসারী হবে। যে বিভ্রান্ত
হবে না, সে শয়তানের
অনুসরণ করবে না।
-
এ বিষয়ে বিস্তারিত
কথা বলা হয়েছে কুরআনের আরো বিভিন্ন আয়াতে। যেমনঃ
قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا
مَّدْحُورًا ۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمْ
أَجْمَعِينَ
আল্লাহ বললেনঃ “বের হয়ে যা
এখান থেকে লাঞ্ছিত ও ধিকৃত অবস্থায়। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখিস, এদের মধ্য থেকে যারাই তোর
অনুসরণ করবে তাদেরকে এবং তোকে দিয়ে আমি জাহান্নাম ভরে দেবো। (আল আরাফঃ ১৮)
﴿وَإِنَّ
جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ﴾
৪৩। এবং তাদের সবার জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তির অংগীকার।
• وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ
- এবং তাদের সবার জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তির অংগীকার।
- শয়তানের পথ যারা ধরবেন, তাদের
শাস্তি বিষয়ে এখানে বর্ণনা
করা হচ্ছে।
- ইতিপূর্বে আলোচিত ৪২টি আয়াতের
উপসংহার বলা যেতে পারে
এই আয়াতকে। এখানে আদম আর ইবলিসের
কাহিনী বর্ণনা করে মানুষকে
বুঝানো হচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের
আদি শুত্রুর ফাঁদে আটকা
পড়ে গেছে। তোমাদের
আদি শত্রু ইবলিস তার নিজের
হিংসা চরিতার্থ করার জন্য
তোমাদেরকে গর্তে নামিয়ে দিতে
চায়। আর নবী সা. তোমাদেরকে
সেই গর্ত থেকে উঠিয়ে
উন্নতির চরম শিখরে পৌছাতে
চান। তোমরা চরম নির্বুদ্ধিতার
পরিচয় দিচ্ছো, তোমরা নিজেদের
শত্রুকে বন্ধু আর কল্যাণকামীকে
শত্রু মনে করছো।
- একই সাথে এই কাহিনী
বর্ণনার মাধ্যেমে মানুষের মুক্তির
পথ আল্লাহর বন্দেগীকে তুলে ধরা হয়েছে। আর এই পথ পরিহার তথা শয়তানের পথে চললে
সেই পথ সোজা জাহান্নামের
দিকে গেছে, এই সত্যতি
স্মরণ করে দেয়া হচ্ছে।
- কুরআনে অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ وَمَن يَكْفُرْ بِهِ مِنَ
الْأَحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ
“আর মানব গোষ্ঠীর মধ্য থেকে যে-ই একে অস্বীকার করে তার জন্য
যে জায়গার ওয়াদা করা হয়েছে তা হচ্ছে জাহান্নাম। ” (হুদঃ ১৭)
- এই কাহিনীর মাধ্যমে আরো বুঝানো
হচ্ছে নিজেদের ভূলের জন্য
তোমরা নিজেরা দায়ী। শয়তান
তো তার ডিউটি করবেই। ধোঁকা
দেয়াইতো তার ডিউটি। কিন্তু
সেই ধোঁকায় না পড়াই
তোমাদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্বে
অবহেলার দায়দায়িত্বও তোমাদের
। কুরআনের অন্যত্র এই বিষয়টা
বলা হয়েছে এভাবেঃ
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ إِنَّ اللَّهَ وَعَدَكُمْ
وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدتُّكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ ۖ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُم مِّن
سُلْطَانٍ إِلَّا أَن دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي ۖ فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوا
أَنفُسَكُم ۖ مَّا أَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَمَا أَنتُم بِمُصْرِخِيَّ ۖ إِنِّي كَفَرْتُ
بِمَا أَشْرَكْتُمُونِ مِن قَبْلُ ۗ إِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“আর যখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে তখন শয়তান বলবে, “সত্যি
বলতে কি আল্লাহ তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করে ছিলেন তা সব সত্যি ছিল এবং আমি যেসব
ওয়াদা করেছিলাম তার মধ্য থেকে একটিও পুরা করিনি। তোমাদের
ওপর আমার তো কোন জোর ছিল না,
আমি তোমাদের আমার পথের দিকে আহ্বান জানানো ছাড়া আর কিছুই
করিনি এবং তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলে। এখন আমার নিন্দাবাদ করো না, নিজেরাই নিজেদের নিন্দাবাদ করো। এখানে না আমি তোমাদের অভিযোগের প্রতিকার করতে পারি আর না তোমরা আমার। ইতিপূর্বে তোমরা যে আমাকে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও
কতৃত্বের শরীক করেছিলে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, এ ধরনের
জালেমদের জন্য তো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবধারিত।” (ইব্রাহীমঃ ২২)
﴿لَهَا
سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِّكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ﴾
৪৪। এ জাহান্নাম (ইবলীসের অনুসারীদের জন্য যার শাস্তির অংগীকার করা হয়েছে) সাতটি দরজা বিশিষ্ট। প্রত্যেকটি দরজার জন্য তাদের মধ্য থেকে একটি অংশ নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে।
• لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِّكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ
- এ জাহান্নাম (ইবলীসের অনুসারীদের জন্য যার শাস্তির
অংগীকার করা হয়েছে) সাতটি দরজা বিশিষ্ট। প্রত্যেকটি
দরজার জন্য তাদের মধ্য থেকে একটি অংশ নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে।
-
যারা
নিজেদের গোমরাহী আর গোনাহের কারণ হিসাবে নিজেদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করে নেয়,
তাদের কাজের উপরে জাহান্নামে ক্লাসিফিকেশন করা হবে। যেমনঃ
o
নাস্তিকদের
জন্য এক ধরণের জাহান্নাম।
o
মুশরিকদের
জন্য আরেক ধরণের জাহান্নাম।
o
মুনাফিকদের
জন্য ভিন্ন ধরণের জাহান্নাম।
o
প্রবৃত্তি
পূজা, অশ্লীলতা ও ফাসেকীর জন্য আরেক নমুনার জাহান্নাম।
o
জুলুম,
নিপীড়ন ও নিগ্রহ ইত্যাদির জন্য ভিন্ন প্রকৃতির জাহান্নাম।
o
গোমরাহীর
প্রচার, কুফুরীর প্রতিষ্ঠার জন্য আরেক প্রকৃতির জাহান্নাম।
o
অশ্লীলতা
ও নৈতিকতা বিরোধী কাজের প্রচারের জন্য ভিন্ন আরেক প্রকৃতির জাহান্নাম।
অপরাধের
ধরণ অনুযায়ী জাহান্নাম নির্ধারিত হবে এবং নির্ধারিত সাতটি গেইটে তাদেরকে
ক্লাসিফিকেশন করে স্বাগত জানানো হবে।
-
জাহান্নামের
৭টি দরজা সম্পর্কে হাদীসে বর্ণি হয়েছে, ইবনে উমর রা.
থেকে তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেনঃ
لِجَهَنَّمَ سَبْعَةُ
أَبْوَابٍ بَابٌ مِنْهَا لِمَنْ سَلَّ السَّيْفَ عَلَى أُمَّتِي أَوْ قَالَ عَلَى
أُمَّةِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم.
“জাহান্নামের সাতটি দরজা আছে। তার মধ্যে একটি দরজা সেইসব লোকদের জন্য যারা আমার উম্মাতের বিরুদ্ধে, অথবা
বলেছেনঃ মুহাম্মাদ সা. এর উন্মাতের বিপক্ষে তলোয়ার চালিয়েছে।” (তিরমিযি)
-
আবু সামুরা
ইবনে জুনদুব নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন যে,
إن من أهل النار من تأخذه النار إلى كعبيه، وإن منهم من تأخذه النار
إلى حجزته، ومنهم من تأخذه النار إلى تراقيه، منازلهم بأعمالهم
“জাহান্নামবাসীদের আগুন কারো হাটু পর্যন্ত ধরবে, কারো কমর পর্যন্ত, কারো কাঁধ পর্যন্ত। এসব তাদের আমল অনুপাতে হবে।”
-
হযরত আলী
রা. বলেছেনঃ
أبواب جهنم سبعة، بعضها
فوق بعض، فيمتلىء الأول، ثم الثاني، ثم الثالث، حتى تمتلىء كلها
“জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে। তা একটির উপরে একটি। প্রথমে প্রথম দরজা পূর্ণ করা হবে, তারপর দ্বিতীয়টি,
তারপর তৃতীয়টি। এভাবে সবক’টি দরজা পূর্ণ হয়ে যাবে।
-
হযরত ইকরামা
রাহি. জাহান্নামের সাতটি দরজা বলতে সাতটি স্তর বলে উল্লেখ করেছেন।
-
ইমাম ইবনু
জারীর রাহি. জাহান্নামের সাতটি দরজার নাম উল্লেখ করেছেন। ইবনে আব্বাস থেকেও অনুরূপ নাম পাওয়া যায়। আর তা হলোঃ
১. জাহান্নাম (جنهم)। ২. লাযা (لظى)। ৩. আল হুতামাহ
(الحطمة)। ৪. আস সাঈর
(السعير)। ৫. সাকার (سقر)। ৬. আল জাহীম
(الجحيم)। ৭. আল হাবীয়াহ
(الهاوية)।
আয়াত সমূহ থেকে শিক্ষাঃ
• মানুষ এবং জিন পৃথক পৃথক সৃষ্টি। তাদের কাজও পৃথক, দায়িত্বও
পৃথক। জিনেরা বা জিনদের কেউ একজন কখনো মানুষ নয়।
• মানুষের রূহ আল্লাহর গুণে গুণান্বিত।
• ইবলিসের কাজ ধোঁকা দেয়া, মানুষের কাজ ধোঁকা সম্পর্কে সতর্ক
থেকে আল্লাহর নির্ধারিত পথে চলা।
• জাহান্নাম শয়তানের অনুসারীদের জন্য এবং এখানে সাত শ্রেণীর
আমলধারী লোক যাবে। বিধায় সব সময় সতর্ক থাকা, যাতে কোন আমলে যেন আমরা আক্রান্ত না
হই।
0 Comments